বিশেষ সংবাদ
পদ্মা সেতু: শরীয়তপুরে মৎসখাতে সোনালি সম্ভাবনার হাতছানি
পদ্মার দক্ষিণ পাড়ের শরীয়তপুরের মানুষকে 'পদ্মা সেতু' স্বপ্ন দেখাচ্ছে সোনালি সম্ভাবনার। পদ্মা সেতু চালু হলে শরীয়তপুরসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় দেশের অন্যতম মৎস্য উৎপাদনকারী শরীয়তপুর জেলার মৎস্য খাতের সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে।
মৎসজীবীরা বলছেন, পদ্মা সেতু খুলে দিলে বছরে পাঁচশ থেকে ছয়শ কোটি টাকার মাছ ঢাকার বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। পরিবহন খরচ কম ও দামে বেশি হওয়ায় লাভ বেশি হবে বলে ধারণা তাদের। বিশেষ করে পদ্মা নদীর সুরেশ্বর পয়েন্ট থেকে আহরণকৃত ইলিশসহ যে কোন মাছ খুব সহজেই পাঠানো রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্তত ৪০টি জেলায় পাঠানো যাবে। এতে উপকৃত হবেন মৎস খামারি, ব্যবসায়ী ও প্রান্তিক জেলেরাও।
জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পদ্মা ও মেঘনায় ঘেরা শরীয়তপুর জেলার ১৫ হাজার ৮৪০ হেক্টর এলাকাজুড়ে নদীতে মাছ ধরা হয়। এছাড়া ২ হাজার ৬২৬ হেক্টর জমিতে ১৫ হাজার ১৮২টি মাছের খামার রয়েছে। জেলার ছয়টি উপজেলা থেকেই মাছ সড়ক পথে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। আগে শরীয়তপুর থেকে ঢাকায় যেতে ফেরিঘাটে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হতো। অপেক্ষমাণ সময়ে গাড়িতে থাকা মাছ অনেক সময় নষ্ট হয়ে যেত। কিন্তু পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে আমূল পরিবর্তন আসবে মৎস্য ব্যবসায়। খুব দ্রুত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঢাকার বাজারে পৌঁছে যাবে মাছ। ফলে সময় ও খরচ সাশ্রয়ের মাধ্যমে ব্যবসার প্রসার ঘটবে অনেক বেশি।
পড়ুন: বাংলাদেশের উন্নয়নে পদ্মা সেতু এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত: ইইউ রাষ্ট্রদূত
পদ্মা সেতু: যানবাহনের চাপ সামলাতে প্রস্তুত খুলনার সড়কগুলো
পদ্মা সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার কয়েক কোটি মানুষের দীর্ঘদিনের একটি লালিত স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে আগামী ২৫ জুন। সেতু চালু হলেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যানবাহনের চাপ ব্যাপক বেড়ে যাবে। বিশেষ করে পদ্মা সেতু থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে বাগেরহাটের কাটাখালি, খুলনা-মোংলা, খুলনা-যশোর ও খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের ওপর চাপ পড়বে বেশি।
যানবাহনের এই অতিরিক্ত চাপ সামলাতে খুলনাঞ্চলে সড়ক-মহাসড়কগুলো কতটুকু প্রস্তুত এমন প্রশ্নের জবাবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, সঙ্গত কারণেই পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণবঙ্গে পরিবহনের অতিরিক্ত চাপ বেড়ে যাবে। বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা খুলনাঞ্চলে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে গত ২ বছর ধরে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করছি এবং সেই আলোকে প্রকল্প তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে সেগুলো বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসবে: প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, ময়লাপোতা তেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার সড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। খুলনার ফেরিঘাট থেকে আফিল গেট পর্যন্ত সড়ক ৪ অথবা ৬ লেনে উন্নীতকরণ করা হবে। প্রকল্পটির ফিজিবিলিটি এবং ডিজাইনের কাজ চলমান রয়েছে। একইভাবে খুলনা-যশোর রোডের রাজঘাট থেকে আফিলগেট হয়ে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ৪ লেন বিশিষ্ট সড়ক তৈরি করা হবে।
সওজ এর এই কর্মকর্তা জানান, খুলনা জেলখানা খেয়াঘাটে ব্রিজ বা ট্যানেল নির্মাণের ফিজিবিলিটি স্টাডি চলমান রয়েছে। একই সঙ্গে এই প্রকল্পের আওতায় খুলনা রেলস্টেশন পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা হাইওয়ের গোপালগঞ্জের চন্দ্রদিঘলিয়া পয়েন্ট পর্যন্ত ৪ লেন সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রস্তাবিত ৪ লেন বিশিষ্ট এ সড়কটি নির্মিত হলে ঢাকা থেকে খুলনার দূরত্ব আনুমানিক আরও ৩৫ কিলোমিটার কমে যাবে। ঢাকা থেকে খুলনায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টায় যাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতুর উদ্বোধন: ফরিদপুরে ২ দিনব্যাপী কর্মসূচি
এছাড়া তেরখাদা উপজেলা খুলনা জেলা শহরের সাথে যুক্ত হবে। তেরখাদা এলাকার পরিত্যক্ত জলাবদ্ধ বিলে শিল্পায়নের ফলে ব্যাপক কর্মসংস্থান হবে। খুলনা থেকে গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম ও বরিশালের দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার কমে যাবে। এতে সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্প বিকশিত হবে। ঢাকা থেকে খুলনার আকাশপথের চেয়ে সড়কপথে যোগাযোগ সহজ ও দ্রুততর হবে।
তিনি আরও জানান, দৌলতদিয়া-ফরিদপুর (গোয়ালচামট)-মাগুরা-ঝিনাইদহ-যশোর-খুলনা-মংলা-(দ্বিগরাজ) সড়কের আফিলগেট থেকে পাওয়ার হাউজ পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার সড়ক ৬ লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। খুলনা শহর বাইপাস এবং গল্লামারি-বটিয়াঘাটা-দাকোপ নলিয়ান ফরেস্ট সড়কের সাচিবুনিয়া নামক স্থানে ইন্টারসেকশন নির্মাণ করা হবে। গল্লামারি-বটিয়াঘাটা-দাকোপ-নলিয়ান ফরেস্ট সড়কের ফেরিঘাটে চুনকুড়ি সেতু এবং একইভাবে গল্লামারি-বটিয়াঘাটা-দাকোপ-নলিয়ান ফরেস্ট সড়কের পানখালী ফেরিঘাটে ঝমঝপিয়া সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সেতু দুটি নির্মিত হলে এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ পদ্মা সেতুর সুফল ভোগ করতে পারবে।
পদ্মা সেতু চালু হলে এ অঞ্চলে পরিবহনের বাড়তি চাপের কথা মাথায় রেখে ইতোমধ্যে খুলনা জোনের আওতাধীন মহাসড়কে পাঁচটি কংক্রিট সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান সওজ’র এই প্রকৌশলী।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু মর্যাদার প্রতীক, এর ওপর অনেকটাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে: জয়
কক্সবাজার পাহাড়ে ১২ হাজার পরিবারের ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস
কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে ১২ হাজারের বেশি পরিবার। কক্সবাজার ‘পাহাড় ধস প্রবণ’ জেলা হওয়ায় প্রতিবছর পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ে। গত বছরও জেলায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়। ঝুঁকিপূর্ণ বসতির কারণে এবারও মৃত্যুর আশংকা করছেন পাহাড়ে বসবাসকারীরা। তবে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, ভারি বর্ষণ হলে পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি সরিয়ে নেয়া হবে।
উখিয়া টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বাদ দিয়ে কক্সবাজার জেলায় স্থানীয় বাসিন্দাদের ১২ হাজারের বেশি পরিবার পাহাড়ের তলদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। এর মধ্যে অতিঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে প্রায় ৫ হাজার পরিবার।
কক্সবাজার শহর ও শহরতলিতে প্রায় ৭ হাজার পরিবার ও জেলায় বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় আরও ৫ হাজার পরিবার পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। পাহাড়ে হাজার হাজার ঝুঁকিপূর্ণ বসতি থাকার কারণে পাহাড় ধসের আশংকা রয়েছে।
কক্সবাজার শহর ও শহরতলির লাইট হাউজ, সৈকত পাড়া, সার্কিট হাউস সংলগ্ন, মোহাজের পাড়া, দক্ষিণ ঘোনারপাড়া, বাদশাঘোনা, বৈদ্যঘোনা, মধ্যম ঘোনারপাড়া, পাহাড়তলি, কলাতলী আদর্শগ্রাম, ঝরিঝরিকুয়া, সদর উপজেলা অফিস সংলগ্ন, লিংকরোড পাহাড়ি এলাকায় হাজার হাজার পরিবার ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে।
পড়ুন: চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে প্রাণহানী ঠেকাতে খোলা হল ১৯ আশ্রয়কেন্দ্র
বেনাপোল বন্দর দিয়ে বাণিজ্য বাড়াবে পদ্মা সেতু
দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানিতে গতি আসবে। ঘটবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধি। বেনাপোল বন্দর থেকে পণ্যবোঝাই ট্রাক দ্রুত সময়ে পৌঁছে যাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। ফলে একদিকে যেমন পরিবহন খরচ কমবে, অন্যদিকে বাজারে পণ্যের মূল্যও কমে যাবে- এমনটি বলছিলেন বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামছুর রহমান।
দেশের সিংহভাগ কলকারখানা ও তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল শতকরা ৮০ ভাগ আমদানি হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। বন্দর থেকে খালাস করা কাঁচামাল দ্রুত সময়ে শিল্প কলকারখানায় পৌঁছে গেলে পণ্যের উৎপাদন খরচও কমে যাবে।শিল্প-কলকারখানা প্রসারিত হবে। কৃষিজাত পণ্যের বাজার প্রসারিত হবে। এ অঞ্চলের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য স্বল্প সময়ে় এবং অল্প খরচে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে অধিক মুনাফা পাবে। বেনাপোল স্থলবন্দরের কার্যকারিতা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। এ অঞ্চলের সামগ্রিক যাতায়াত ব্যবস্থা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের আমূল পরিবর্তন হবে। জিডিপি এবং রাজস্ব আয় দুইই বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে বেনাপোল কাস্টমস হাউস থেকে সরকার প্রতিবছর ছয় হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে থাকে। পদ্মা সেতুর কারণে সরকারের রাজস্ব আয় বেড়ে দাঁড়াবে ১০ হাজার কেটি টাকায়।
বেনাপোল আামদানি- রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন জানান, বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারীদের চাওয়া পদ্মা বহুমুখী সেতু চালু হওয়ার মধ্যে দিয়ে আমাদের দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ এবং কম সময় লাগার কারণে দেশে অন্যতম বেনাপোল বন্দর ব্যবহারে আমদানি ও রপ্তানিকারকরা উৎসাহিত হবেন। আমদানি ও রপ্তানিকারকদের আর্থিক সাশ্রয়ও হবে।
ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ জানান, এই সেতু ব্যবসা ও বাণিজ্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। দেশ থেকে রপ্তানি বাড়বে দ্বিগুণ। শুধু ব্যবসা বাণিজ্য নয়, সকল দিকেই পদ্মা সেতুর প্রভাব পড়বে। বেনাপোল বন্দরের হারানো গৌরব ফিরে পাবে বলে প্রত্যাশা তার।
ভারত বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’র ডাইরেক্টর মতিয়ার রহমান বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের জন্য দূর্গম পথ ছিল ঢাকা। বেনাপোল থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে ৮/১০ ঘন্টা সময় লেগে যেত। প্রতি বছর শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশার কারণে পদ্মার দু’পাড়ে শত শত যানবাহন এবং হাজার হাজার মানুষের দূর্ভোগ দেখেছি। এ অঞ্চলের মেধাবীরা ঢাকার সংগে উন্নত সড়ক যোগাযোগ না থাকায় ইচ্ছা থাকা সত্বেও ঢাকায় গিয়ে পড়াশুনা করতে পারেনি। বহু রোগী সময় মতো পদ্মা নদী পার হতে না পেরে মৃত্যুবরণ করেছে ফেরি ঘাটেই।
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার আব্দুর রশিদ মিয়া জানান, পদ্মা সেতু ছিল দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন। সরকার নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করায় এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য খুলে যাবে। বেনাপোল বন্দর দিয়ে দ্রুত ও কম খরচে পণ্য খালাস করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে বাড়বে যাত্রী পারাপার। বর্তমানে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন ১০ হাজার যাত্রী ভারতে যাতায়াত করছে। পাদ্মা সেতু চালু হলে যাত্রী পারাপার বাড়বে , সেই সঙ্গে বাড়বে সরকারের রাজস্ব আয়।
বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. আজিজুর রহমান জানান, পদ্মা সেতু চালু হচ্ছে এটা খুবই আনন্দের বিষয়। বেনাপোল দিয়ে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়বে দ্বিগুণ। বেনাপোল দিয়ে রেলপথে মালামাল আমদানি বেড়েছে। পদ্মা সেতু দিয়ে পণ্য খলাসের পর দ্রুত সময়ে রেল যোগে পণ্য পৌঁছে যাবে ব্যবসায়ীদের কাছে। ফলে সরকারের রাজস্ব আয়ও বেড়ে দ্বিগুণ হবে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু: ফরিদপুরের অর্থনৈতিক দ্বার উন্মোচিত
পদ্মা সেতু: উদ্বোধনকে ঘিরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
পদ্মা সেতুকে ঘিরে মাদারীপুরে উন্নয়নের ছোঁয়া
পদ্মা সেতু: উদ্বোধনকে ঘিরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের একদিন পর ২৬ জুন সকাল থেকে বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হলে দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে।
দেশের এই বৃহত্তম অবকাঠামো প্রকল্পের চূড়ান্ত রূপ দিতে প্রকৌশলী ও কর্মীরা ২১ ঘন্টা করে কাজ করছেন। এই সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার ভ্রমণ সময়কে কমিয়ে আনবে অনেকটা।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি বাংলাদেশের সমগ্র দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বৃদ্ধি করবে বলেও আশা করা হচ্ছে।
চলছে শেষ পর্যায়ে কাজ
পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক (পিডি) শফিকুল ইসলাম বলেন, চূড়ান্ত রূপ দিতে ছোটখাটো কিছু বিষয়ে কাজ করছেন তারা। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে সব ধরনের কাজ সম্পন্ন করা হবে।
তিনি বলেন, ৪০টি পিলারের এ্ই সেতুতে ৪০০ লাইট থাকবে যেগুলো ফাইন টিউনিং প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা করা হচ্ছে।
প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, আমাদের অনেক ল্যাম্পপোস্টের দিক ঠিক করতে হবে এবং আবার পরীক্ষা করা হবে। এছাড়া সেতুর দুই প্রান্তের সংযোগ সড়কে আরও ২০০টি স্ট্রিট লাইট স্থাপন ও বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ চলছে।
উদ্বোধন ও আমন্ত্রণ
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) রূপম আনোয়ার ইউএনবিকে বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রায় তিন ৫০০ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। আমন্ত্রণপত্র পাঠানোর কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতুকে ঘিরে মাদারীপুরে উন্নয়নের ছোঁয়া
তিনি আরও জানান, যাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে তাদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। আগামী সপ্তাহ থেকে আমন্ত্রণ জানানো শুরু হবে।
তিনি বলেন, ‘সরকারি ও বিরোধী দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য), সংবাদপত্র, সংবাদ সংস্থা, টিভি অনলাইন রেডিও সম্পাদক, সিনিয়র সাংবাদিক এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে এদিন আমন্ত্রণ জানানো হবে।
আগামী ২৫ জুন সকাল ১০টায় পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পিডি শফিকুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি প্রথম টোল পরিশোধ করে চার লেনের সেতু পার হবে। জাজিরা প্রান্তে উদ্বোধনের পর একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হবে যেখানে প্রায় ১০ লাখ লোক সমাগম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, উদ্বোধনের আগে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে আমন্ত্রণ, বিনোদন, যানবাহন ও পরিবহনসহ বিভিন্ন বিষয়ে ১৮টি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য ২৬ জুন থেকে খুলে দেয়া হবে: ওবায়দুল কাদের
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানকালে নির্দিষ্ট যানবাহন ছাড়া কোনো প্রবেশ থাকবে না।
ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনুমতি দিলেই সেতুতে লোকজন উঠতে পারবে।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উদ্বোধনের দিন দুপুর থেকে পদ্মা সেতু খোলা থাকবে। এ সময়ে কী করা হবে তা নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা চলছে।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে কবে থেকে যানবাহন চলাচল করতে পারবে এবং কতদিন সাধারণ মানুষকে প্রবেশাধিকার দেয়া হবে সে বিষয়ে সরকার গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবে।
পদ্মা সেতুকে ঘিরে মাদারীপুরে উন্নয়নের ছোঁয়া
আগামী ২৫ জুন খুলছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। বহু প্রতিক্ষিত ও গৌরবের এই সেতু ঘিরে মাদারীপুর অঞ্চলের মানুষের মধ্য সঞ্চার হয়েছে নতুন প্রাণের।পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে এখানে শিল্প ও পরিবহন খাতে ইতোমধ্যে ব্যাপক বিনিয়োগ শুরু হয়েছে।
মাদারীপুর চেম্বার অব কমার্স সূত্র জানায়, মাদারীপুর সদর, শিবচরসহ জেলার চারটি উপজেলায় ইতোমধ্যে ৬০ জন শিল্প উদ্যোক্তা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য বিসিক এর মাধ্যমে আবেদন করেছে। মাদারীপুর চেম্বার অব কমার্স এর সিনিয়র সহ সভাপতি বাবুল চন্দ্র দাস বলেন,পদ্মা সেতুর কারণে এখানে শিল্প উদ্যোক্তার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা দুই বছর আগে ছিল শূন্যের কোটায়।
এদিকে মাদারীপুর বাস মালিক সমিতি মাদারীপুর - ঢাকা রুটে যাত্রী পরিবহনের জন্য কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। সমিতির বর্তমান ২২ টি বাস থাকলেও পদ্মা সেতু চালুর পর এই রুটে আরও ২৫টি নতুন বাস নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাসের বডি ও কাঠামো প্রস্তুত করার জন্য মাদারীপুরের বিভিন্ন গ্যারেজে মিস্তিরিরা দিন- রাত ব্যস্ত সময় পার করছে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু: ফরিদপুরের অর্থনৈতিক দ্বার উন্মোচিত
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মালিক সমিতির একজন সদস্য বলেন,উন্নত যাত্রী সেবায় মাদারীপুর - ঢাকা রুটে এসিসহ নতুন নতুন পরিবহনকে স্বাগত জানাই।
এদিকে মাদারীপুর -ঢাকা রুটে সার্বিক,চন্দ্রা ও সোনালী পরিবহনের প্রায় শতাধিক বাস চলাচল করে।এর মধ্য সার্বিক পরিবহনের ৫৭ টি গাড়ি রয়েছে।
সার্বিক পরিবহনের ম্যানেজার গোপাল বাবু জানান, সার্বিক পরিবহন এই রুটে আরও ১৪টি নতুন বাস চালু করতে যাচ্ছে। এর মধ্য চারটি এসি, চারটি চেয়ার কোচ ও ছয় পরিবহন বাস রয়েছে ।
পদ্মা সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে অবস্হিত মাদারীপুর জেলার অনেক লোক মেস ভাড়া থেকে ঢাকা ও মাদারীপুর চাকরি করে থাকে। পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকা- মাদারীপুর যাতায়াতে সাড়ে চার ঘন্টার পরিবর্তে মাত্র আড়াই ঘণ্টা সময় লাগবে। এতে এই রুটে যাত্রী সংখ্যা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে। এদিকে এই সড়কের বিভিন্ন স্টান্ডে নতুন নতুন বাস কাউন্টার গড়ে উঠেছে।
বাস সুপারভাইজার সেলিম মোল্লা বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে জেলার একমাত্র পরিবহন সেক্টরেই এক হাজার লোকের কর্মসংস্হান সৃষ্টি হবে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য ২৬ জুন থেকে খুলে দেয়া হবে: ওবায়দুল কাদের
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন: ২৫ জুনের এসএসসি পরীক্ষা ২৪ জুন
সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার বিস্ফোরণে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়
সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোর ভয়াবহ বিস্ফোরণের ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে আশেপাশের এলাকার বাসিন্দারা।ঘটনার এক সপ্তাহ পর পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপশি স্থানীয় বাসিন্দাদের শরীরে নানা উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। আগুন লাগার পর অন্তত ৬৫ ঘণ্টা লাগে নিয়ন্ত্রণে আনতে। আর পুরোপুরি নেভাতে লেগেছে ৯৫ ঘণ্টার বেশি। তারপরও কালো ধোঁয়ার নির্গমন বন্ধ হয়নি।এতে চোখের যন্ত্রণার পাশাপাশি শ্বাসকষ্টে ভুগছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।এমনিতে আগুন ও বিস্ফোরণের পরপরই আতঙ্কিত হয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে গেছেন অনেকে। তারা যেমন বসতবাড়িতে ফেরেননি, তেমনি বাকি যারা বাড়িতে ছিলেন তারাও গ্রাম ছাড়ছেন অসুস্থতার ভয়ে।ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, কন্টেইনার ডিপোটিতে ‘হাইড্রোজেন পারক্সাইড’ নামের বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক ছিল। হাইড্রোজেন পারক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ। এটি যদি উত্তপ্ত করা হয়, তাহলে তাপীয় বিয়োজনে হাইড্রোজেন পারক্সাইড বিস্ফোরকের আচরণ করে। আগুন লাগার পর কন্টেইনারগুলোয় বিস্ফোরণ ঘটে।
আরও পড়ুন: সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ: বিএম কন্টেইনার ডিপো থেকে দেহাবশেষ উদ্ধার
গত ৪ জুন শনিবার রাতের বিকট বিস্ফোরণের পর কন্টেইনারে থাকা বিষাক্ত রাসায়নিক মিশে গেছে বাতাসে। আবার পানির সঙ্গে মিশে চলে গেছে বিভিন্ন খাল হয়ে বঙ্গোপসাগরে। বিস্ফোরণের পর থেকেই সীতাকুণ্ডের ওই এলাকায় ঝাঁজালো গন্ধ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই চোখে ঝাপসা দেখছেন; কারও কারও চামড়া বিবর্ণ বা লাল হয়ে গেছে। শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা, বমিসহ দেখা দিচ্ছে নিত্যনতুন নানা উপসর্গ।বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও পরিবেশবিদরা বলছেন, সীতাকুণ্ডের এই এলাকায় প্রকৃতি বা পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকিতে পড়তে পারে। সেটা স্বল্পমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। এ অবস্থায় ভারী বৃষ্টিপাত হলে বায়ুদূষণ কমে পরিবেশ কিছুটা স্বাভাবিক হবে। তবে রাসায়নিক মিশ্রিত পানি খালগুলোতে গিয়ে দূষণ সৃষ্টি হতে পারে। সব মিলিয়ে জনস্বাস্থ্যের ওপর নিঃসন্দেহে বিরূপ প্রভাব পড়বে। তারা আরও বলছেন, সীতাকুণ্ডের বাতাসে কী পরিমাণ রাসায়নিক উপাদান রয়েছে, সেটা পরিমাপ করে দেখতে পারে পরিবেশ অধিদপ্তর। ওই এলাকার বাতাসে পিপিএমের (পার্টস পার মিলিয়ন) মাত্রা বেশি হলে অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব পড়বে।সরেজমিন দেখা গেছে, ডিপোর প্রবেশপথে দক্ষিণ পাশে গভীর ও চওড়া একটি নালা। হাইড্রোজেন পার অক্সাইড মিশ্রিত পানি যাতে খাল-বিলে গিয়ে দূষণ ঘটাতে না পারে সেজন্য নালার মাঝ বরাবর বালির বস্তা ফেলে বাঁধ নির্মাণ করেছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা। ঘটনার পরদিন তৈরি করা ওই বাঁধ সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
বিএম কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনায় আগুন, উত্তাপ ও ধোঁয়া প্রত্যক্ষভাবে ছড়িয়েছে আড়াই বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে। আর এর দূরবর্তী প্রভাব পড়েছে ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকায়। বিস্ফোরণে পুরো এলাকায় রাসায়নিকের বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে।
বিএম ডিপোর পাশ্ববর্তি মোল্লাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রমজান হোসেন জানান, ভয়াবহ আগুনে আশপাশের এলাকাগুলোয় রাসায়নিকের পোড়া গন্ধে থাকা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। তার পাঁচ বছরের সন্তান ধোঁয়ায় অসুস্থবোধ করলে আরেক আত্মীয়ের বাড়িতে পরিবারকে রেখে এসেছেন বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ: ফায়ার সার্ভিসের আরও এক কর্মীর মৃত্যু
পদ্মা সেতু: ফরিদপুরের অর্থনৈতিক দ্বার উন্মোচিত
আগামী ২৫ জুন বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলায় অর্থনৈতিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে।
২০১৪ সালে দেশের বৃহত্তম অবকাঠামো ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শুরুর পর থেকেই ফরিদপুরবাসীর মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।
ফরিদপুর এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য ২০টি জেলায় ডাবল ডেকার সেতুটি উদ্বোধনের পরে তাদের জীবনযাত্রায় একটি বিশাল পরিবর্তনের আশা করা করছে। নিচের ডেক বরাবর রেলওয়ে ট্র্যাক স্থাপন করা হচ্ছে এবং উপরের ডেক যানবাহনের জন্য নির্মিত হয়েছে। সেতুটি ছয় লেনের মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে যুক্ত।
কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সেতুটি চালু হলেও ট্রেন চলাচল শুরু হতে কিছুটা সময় লাগবে।
আরও পড়ুন: ভুক্তভোগী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে কাজ করছে পুলিশের সাইবার টিম
ইতোমধ্যে ফরিদপুর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে কারণ শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ীরা কারখানা স্থাপনের জন্য ইতোমধ্যে জমি কিনতে শুরু করেছেন, যা জেলার মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে অনেকটাই উন্নতি করবে।
ভুক্তভোগী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে কাজ করছে পুলিশের সাইবার টিম
ভুল নম্বরে চলে যাওয়া টাকা ও প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া অর্থ ফিরিয়ে দেয়া এবং চুরি বা হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধারসহ বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করছে খুলনা সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল।
তথ্যপ্রযুক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে এবং নিজেদের ঐকান্তিক চেষ্টায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করে ভুক্তভোগী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে কাজ করছে পুলিশের এই টিম।
খুলনা সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ মে খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা থানা এলাকার তাজমুল হক একটি নম্বরে বিকাশে ১০ হাজার টাকা ক্যাশ ইন করতে গিয়ে একটি ডিজিট ভুল করলে ওই টাকা অন্য নম্বরে চলে যায়। তার এলাকার বিট পুলিশিংয়ের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন যে খুলনা জেলার সাইবার সেল এ বিষয়ে কাজ করে ভুক্তভোগী লোকজনকে সহায়তা করে থাকে। তখন তিনি বিষয়টি নিয়ে বটিয়াঘাটা থানায় একটি জিডি করেন।
আরও পড়ুন: গরমে ঠাকুরগাঁওয়ে কদর বেড়েছে তালশাঁসের
একই রকম ঘটনায় মো. শরিফুল ইসলামের সাত হাজার টাকা ভুল নম্বরে চলে যাওয়ার বিষয়ে তিনি ফুলতলা থানায় ২১ মে একটি জিডি করেন। সাইবার টিমের চেষ্টা ও তথ্যপ্রযুক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে বটিয়াঘাটা ও ফুলতলা থানার সহায়তায় তাজমুল ও শরিফুলের মোট ১৭ হাজার টাকা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। তারা উদ্ধার হওয়া টাকা পেয়ে উচ্ছ্বসিত হন এবং পুলিশের এই কাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনা রেঞ্জের আওতাধীন খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর এই ১০ জেলায় সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল কাজ করছে। ১০টি ইউনিটে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন ৯৪ জন সদস্য। ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর থেকে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল চালু হয়।
খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) সুশান্ত সরকার জানান, খুলনা সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল উদ্বোধনের পর থেকে গত ৩১ মে পর্যন্ত মোট প্রাপ্ত অভিযোগ বা জিডির সংখ্যা ৪৭৩টি। এর মধ্যে ২৭৯টি নিষ্পত্তির সংখ্যা। বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন।
তিনি বলেন, খুলনা পুলিশ সুপারের নির্দেশনা অনুযায়ী সাইবার টিম মানুষের সেবা প্রদানে কাজ করে চলেছেন। তাদের অভিযোগ বা জিডি আমলে নিয়ে দৈনন্দিন এসব কাজ করে যাচ্ছে। গত ৬ জুন রূপসা, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া ও দিঘলিয়া থানা এলাকা থেকে হারানো ১৩টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে ভুক্তভোগীদের হস্তান্তর করা হয়েছে। এভাবে প্রতিনিয়ত কাজ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: নিজেদের প্রচেষ্টায় স্বাবলম্বী হচ্ছে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, সম্প্রতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফাহিম রহমান রাফি নামে এক শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোন হারিয়ে যায়। তিনি থানায় জিডি করার পর খুলনা সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম অফিসে এসে অভিযোগ দেয়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তার মোবাইল ফোনটি কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে উদ্ধার করা হয়।
পদ্মা সেতু: শরীয়তপুরে পরিবহন খাতে ব্যাপক পরিবর্তনের প্রত্যাশা
পদ্মা সেতুর সাথে সংযুক্ত দুটি জেলার অন্যতম শরীয়তপুরের পরিবহন মালিকরা আশা প্রকাশ করেছেন যে, ২৫ জুন বহুল প্রতীক্ষিত সেতুটি উদ্বোধনের পর জেলার পরিবহন খাতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে।
সেতুটি উদ্বোধনের পর শরীয়তপুর ও রাজধানী ঢাকার মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ চালু হবে। যানবাহন চলাচলের প্রথম দিন থেকেই পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে নতুন বাস চালু করতে জেলার পরিবহন মালিকরা ইতোমধ্যে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন।
সম্প্রতি শরীয়তপুর পৌরসভা বাস টার্মিনালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাস টার্মিনালের দুই পাশে দুটি কারখানায় চলছে নতুন বাস নির্মাণের কর্মযজ্ঞ। তারা ভলভো, অশোক লিল্যান্ড, টাটা কোম্পানির বাসের চেসিস কিনে বডি তৈরির কাজ করছেন। শরীয়তপুর ছাড়াও ঢাকা ও সাভারে বাসের বডি প্রস্তুত করা হচ্ছে।
তবে শরীয়তপুরে তৈরিকৃত বাসগুলো কতটা মানসম্মত হবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান স্থানীয় যাত্রীরা। তারা জানান, শরীয়তপুরের আঞ্চলিক রুটে যাতায়াতকৃত বাসগুলোর মান একদম নিম্ন মানের। এর মধ্যে অনেকগুলো একদম চলাচলের অনুপোযোগী। তাই ঢাকা-শরীয়তপুর রুটে মানসম্মত বাস চালুর দাবি তাদের।
জেলা বাস মালিক সমিতির সূত্রে জানা যায়, কয়েকটি প্রাইভেট কোম্পানি শরীয়তপুর থেকে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ সরাসরি বাস চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস, শরীয়তপুর পদ্মা ট্রাভেলস, শরীয়তপুর পরিবহন ও গ্লোরি পরিবহন। প্রতিটি কোম্পানি নতুন বাস আনার পরিকল্পনা করছে। তাদের মধ্যে পদ্মা ট্রাভেলস ও শরীয়তপুর পরিবহনের কয়েকটি বাস এরই মধ্যে ঢাকা থেকে মাওয়া ঘাট পর্যন্ত চলাচল করছে।
পড়ুন: পদ্মা সেতু যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটাবে: কামাল
কোম্পানিগুলো প্রাথমিকভাবে ৩০০টি বাস প্রস্তুত করছে। যার একেকটিতে খরচ পড়ছে ৮০ লাখ থেকে ৯০ লাখ টাকা। এতে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন পরিবহন মালিকরা।
বাস মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক আহমেদ তালুকদার বিলেন, ‘পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন থেকেই আমরা ঢাকার সঙ্গে সরাসরি বাস চালু হওয়ার আশা করছি। কয়েকটি পরিবহন ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে। ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কে যাদের রুট পারমিট আছে, শুধুমাত্র তারাই এই রুটে বাস নামাতে পারবেন।’
শরীয়তপুর পদ্মা ট্রাভেলসের চেয়ারম্যান ও নড়িয়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত কয়েকটি বাস পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছি। পদ্মা সেতুতে যান চলাচলের শুরুর দিন থেকেই শরীয়তপুর থেকে ঢাকাতে সরাসরি বাস সার্ভিস চালু করার আশা করছি।’
শরীয়তপুর পরিবহনের পরিচালক এরশাদুজ্জামান বলেন, ‘গত বছরের শুরু থেকেই আমরা মাওয়া-সায়দাবাদ রুটে পরীক্ষামূলকভাবে বাস চালু করেছি। পদ্মা সেতু চালু হলে আমরা ঢাকা-শরীয়তপুর রুটে সরাসরি বাস চালু করবো। আমাদের এসি ও নন-এসি দু’ধরনের বাস চলবে। আমরা যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট থাকবো।’
শরীয়তপুর সুপার সার্ভিসের পরিচালক খালেক পালোয়ান বলেন, ‘টানা দুই বছর করোনার ধাক্কা সামলাতে গিয়ে নাজেহাল অবস্থা শরীয়তপুরের পরিবহন মালিকদের। তবে সেতু চালু হলে ব্যবসা বাণিজ্য বাড়বে এই আশায় রয়েছি। তাই অনেক কষ্ট করে নতুন করে বিনিয়োগ করেছি। আশা করছি পদ্মা সেতুর সুফল পাবো আমরা’
শরীয়তপুর জেলা শহরের বাসিন্দা আব্বাস কোতোয়াল বলেন, ‘এতদিন শরীয়তপুর থেকে ঢাকাতে সরাসরি কোন বাস ছিল না। নৌপথে ঢাকা যাতায়াতে দুর্ভোগ ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় শরীয়তপুর থেকে ঢাকাতে সরাসরি বাস চলাচল করবে। এতে আমাদের দুর্ভোগ কমবে।’
বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু আগামী ২৫ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পড়ুন: পদ্মা সেতু যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটাবে: কামাল
পূজাও নেই, জন্মদিনের আয়োজনও নেই