বিশেষ সংবাদ
প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা: বছর শেষে বাড়ছে আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্ব
আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের জনপ্রশাসনে বড় ধরনের অস্থিরতা ও কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে। বছরের শেষের দিকে আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্ব তীব্র হওয়ায় এখনও বিশৃঙ্খলার অবসান হয়নি।
পদোন্নতি, পোস্টিং এবং পূর্ববর্তী সরকারের অধীনে বঞ্চিত হওয়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং অন্যান্যদের নিয়োগের বিষয়গুলো গত চার মাস ধরে আলোচনায় ছিল এবং অনেক সিদ্ধান্ত বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
সর্বশেষ বিতর্কটি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরে উঠেছে। এটি উত্থাপনের পর সিভিল সার্ভিসের বিভিন্ন ক্যাডারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে সরকারি সেবা সহজীকরণের জন্য কমিশন গঠন করা হলেও এটি এখন কর্মকর্তাদের নিজস্ব স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে।
সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে রবিবার প্রশাসনিক ক্যাডারের কর্মকর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এমনকি প্রতিবাদে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বাইরে কয়েকশ’ কর্মকর্তা বিরল বিক্ষোভ করেন।
অন্যান্য ২৫টি পদের ক্যাডারের প্রতিনিধিত্বকারী ইন্টার-ক্যাডার ডিসপারিটি রেজ্যুলিউশন কাউন্সিল, মানববন্ধন ও সমাবেশসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
খসড়া প্রস্তাবে উপসচিব পদের ৫০ শতাংশ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা এবং বাকি ৫০ শতাংশ অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে বণ্টনের সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমানে এসব পদের ৭৫ শতাংশ প্রশাসন ক্যাডারের জন্য এবং ২৫ শতাংশ অন্যান্য পদের জন্য সংরক্ষিত।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে বিশৃঙ্খলা
অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারেনি।
ঘন ঘন বদলি আদেশ বাতিল এবং পোস্টিংয়ে অসঙ্গতির মতো বিশৃঙ্খলার ঘটনাগুলো সমন্বয়ের অভাবেরই বহিঃপ্রকাশ।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পূর্ববর্তী সরকারের আমলে করা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করেছে। পরে সরকার ১৪টি মন্ত্রণালয়ে চুক্তিভিত্তিক সচিব নিয়োগ দেয়।
গত সাড়ে চার মাসে কোনো কর্মকর্তাকে বদলি করে আবার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে। তদবির করে কেউ কেউ বদলির আদেশ প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। আবার সমন্বয়হীনতার কারণে বদলির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হচ্ছে সরকারকে। এতে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে।
প্রশাসনিক তৎপরতায় ধীরগতি
চলমান বিঘ্নের কারণে প্রশাসনিক কার্যক্রম উল্লেখযোগ্যভাবে ধীর হয়ে পড়েছে।
ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগতে পারে।
গণপদোন্নতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত চার মাসে ৫৩৭ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৩ জন সচিব, ১৭ জন গ্রেড-১, ১৩৫ জন অতিরিক্ত সচিব, ২২৮ জন যুগ্ম সচিব এবং ১৩৪ জন উপসচিব রয়েছেন।
এখন এসব পদোন্নতির মানদণ্ড নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব ও দুর্নীতির অভিযোগে উঠেছে।
গ্রেপ্তারের ভয় ও অনিশ্চয়তা
গত চার মাসে সাবেক সচিবসহ ১২ জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আরও বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর ফলে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা আরও বেড়েছে।
সচিবের পদ শূন্য হওয়ায় ব্যাহত কার্যক্রম
স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সেতু বিভাগ- এই চারটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সচিববিহীন থাকায় তাদের কর্মকাণ্ড ও পরিচালনায় বিঘ্ন হচ্ছে।
সংস্কার কমিটি আগেই 'বঞ্চিত' ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে সচিব পদে ১১৯ জনসহ বিভিন্ন পদে পদোন্নতির সুপারিশ করেছে।
৩৬৯ দিন আগে
জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার নির্বাচন কমিশনের
দেশের গণতান্ত্রিক যাত্রাকে উৎসবমুখর করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাছির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এরই মধ্যে একটি সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনি সামগ্রী কেনার প্রক্রিয়া শুরু করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
হালনাগাদ ও শক্তিশালী ভোটার তালিকা নিশ্চিত করতে মার্চের পরিবর্তে জানুয়ারিতে নাগরিকদের ঘরে ঘরে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ অভিযান দ্রুত বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনাও চলছে।
বৃহস্পতিবার(১৯ ডিসেম্বর) সিইসির সভাপতিত্বে কমিশনের তাৎক্ষণিক বৈঠকে এসব সিন্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
বৈঠকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ, নির্বাচনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়।
সুবিন্যস্ত ক্রয়ের সময়সীমা
ইসি মনে করে, সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছয় থেকে সাত মাসের মধ্যে সচিবালয় প্রয়োজনীয় সব উপকরণ নিশ্চিত করতে পারবে।
কর্মকর্তারা সময়সীমা মেনে চলার জন্য সূক্ষ্ম পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।
বৈঠকে নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় মজুদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়। এখন পর্যন্ত ইসির রয়েছে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, অমোচনীয় কালির কলম, অফিসিয়াল এবং মার্কিং সিল, স্ট্যাম্প প্যাড, চার্জার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস।
আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনি বক্তব্য হতাশাজনক: ফখরুল
প্রত্যাশিত প্রয়োজনীয়তার বিপরীতে বিদ্যমান মজুদের পর্যালোচনা ক্রয় প্রক্রিয়াটির তাৎপর্যকে জোর দিয়েছে।
অমোচনীয় কালি, একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা অবশ্যই আমদানি করতে হবে। এটি সরবরাহের জন্য সাধারণত ৭০ দিন পর্যন্ত সময় দরকার হয়। তবে ইসি উল্লেখ করেছে যে কিছু ঠিকাদার অতীতে প্রক্রিয়াটি দ্রুত করেছে, যা একটি দক্ষ পরিবর্তনের আশা জাগিয়েছে।
নির্বাচনের সময়সীমার সঙ্গে মেলানো
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন, ২০২৫ সালের শেষের দিকে অথবা ২০২৬ সালের শুরুতে ১৩তম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
এর জবাবে সিইসি এ এম এম নাছির উদ্দিন ইসি কর্মকর্তাদের এই নির্ধারিত সময়সীমার সঙ্গে প্রস্তুতি সমন্বয় করার নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন: নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠকে ইসি
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতার ওপর আস্থা প্রকাশ করে সিইসি বলেন, 'প্রধান উপদেষ্টার প্রস্তাবিত সময়সীমা অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত থাকব।’
ভোটার তালিকা হালনাগাদ
নির্বাচন কমিশণ ভোটার তালিকার বার্ষিক হালনাগাদ ত্বরান্বিত করতে প্রস্তুত।
ঐতিহ্যগতভাবে, ২ জানুয়ারি একটি খসড়া তালিকা প্রকাশ করে জনগণের প্রতিক্রিয়া আহ্বান করা হয়। এরপর ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগে যেকোনো অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়।
তথ্য সংগ্রহ অভিযানের প্রস্তাবিত আগাম শুরু সঠিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভোটার তালিকা নিশ্চিত করতে ইসির অঙ্গীকারকে তুলে ধরে।
বৃহস্পতিবারের বৈঠকে চারজন নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের সুষ্ঠু প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে সম্মিলিত প্রচেষ্টার অঙ্গীকার করেছেন।
আরও পড়ুন: ইসিতেই এনআইডি নিবন্ধনের কাজ রাখার দাবি কর্মকর্তাদের
৩৭৪ দিন আগে
মানিকগঞ্জে যমুনায় বালু উত্তোলন, হুমকির মুখে ফসলি জমিসহ নানা স্থাপনা
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার যুমনা নদীর আলোকদিয়া চরে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে অবাধে চলছে বালু উত্তোলন। চারটি ড্রেজার ও দুইটি শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু তোলার কাজ চলছে।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় আলোকদিয়া চরের নদী তীরবর্তী বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে আলোকদিয়া চরের মুজিব কেল্লা, কয়েকটি স্কুল, মসজিদ, হাট-বাজারের বিভিন্ন স্থাপনা।
এভাবে বালু তোলা বন্ধে নৌপরিবহ উপদেষ্টা ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে দেখা যায়, শিবালয়ের দক্ষিণ তেওতা এলাকায় সরকারিভাবে বালুমহাল ইজারা দেওয়া জায়গা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে যমুনা নদীর পশ্চিম পাশে রয়েছে বালু উত্তোলনের ৬টি মেশিন ও বেশ কয়েকটি বাল্কহেড।
বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির (পিজিসিবির) বিদ্যুতের পিলারের পাশে ছয়টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করে বাল্কহেডে ভরা হচ্ছে। এসব বালু বাল্কহেডে করে অন্য জেলায় নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।
ইজারা দেওয়া নির্ধারিত স্থানের বাইরে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর পাড়ে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙ্ন। এরই মধ্যে ভাঙনে নদীতে চলে গেছে একটি মসজিদ, বহু কৃষিজমি ও বসতবাড়ি। ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে দুইটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মসজিদ, তিন কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারিভাবে নির্মিত মুজিব কিল্লা। ভাঙনের শিকার কয়েকটি পরিবার ঘরের চাল, বেড়া, আসবাবপত্র নৌকায় করে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
ভাঙনের শিকার হয়ে একটি মসজিদের আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন এলাকাবাসী। তারা জানান, প্রতি মুহূর্তে কৃষি জমি ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে।
ভাঙনের শিকার ছলিম উদ্দিন বলেন, এখন শীতকাল। ‘সাধারনত নদী ভাঙন কম থাকে। কিন্তু নদীতে ড্রেজারে বালু তোলার কারণে নদীর পাড় ভাঙছে। অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে ভাঙন তীব্র হয়েছে। ফলে কয়েকটি পরিবার মিলে আমরা অন্যত্র সরে যাচ্ছি।’
শিবালয়ের আলোকদিয়া চরের একাধিক বাসিন্দা জানান, বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির বিদ্যুতের পিলারের পাশ থেকে ৬টি কাটার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বালু উত্তোলন করা হয়। এলাকার কেউ বাধা দিতে গেলে মারধরসহ বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রানির হুমকি দেয় তারা। ভয়ে এখন কেউ কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না।
আলোকদিয়া চরের বাসিন্দা জামাল হোসেন বলেন, অসাধু বালু ব্যবসায়ীদের বিদ্যুতের পিলারের পাশ থেকে বালু তোলা বন্ধে বার বার নিষেধ করা সত্ত্বেও বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। বাধ্য হয়ে এলাকাবাসীর প্রশাসন বরাবর একাধিক বার অভিযোগ করেছে। অবৈধ ড্রেজারের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না প্রশাসন।
ড্রেজার মেশিনে কর্মরত শ্রমিক তৈয়ব আলী বলেন, মেসার্স তাকবীর এন্টারপ্রাইজের নামে বালুমহাল ইজারা নিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এসব দেখাশুনা করেন স্থানীয় বাবু মাতবর, জালাল মাতবর ও রাজবাড়ীর ধাওয়াপাড়া এলাকার মুক্তার হোসেন। প্রতিটি বাল্কহেড ভরতে তাদের ৫ থেকে ৭ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়।
৩৭৫ দিন আগে
যশোরে জেঁকে বসেছে শীত, গরম কাপড়ের দোকানে ভিড়
যশোরাঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত। শীতের সঙ্গে বইছে মৃদু বাতাস। গত শনিবার থেকে শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করেছে।
রাতে ও সকালে প্রচণ।ড ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। ঠান্ডা থেকে পরিত্রাণ পেতে গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা।
যশোর শহরের মুজিব সড়কের ফুটপাতের দোকান, জেলা পরিষদের পুরোনো কাপড়ের মার্কেট, কালেক্টরেট মার্কেটে শীতের পোশাক বিক্রি শুরু হয়েছে। সম্প্রতি শহরের মুজিব সড়কের ফুটপাতের দোকান, জেলা পরিষদের পুরাতন কাপড়ের মার্কেটের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের প্রচুর ভিড় দেখা গেছে।শহরের ফুটপাত, জেলা পরিষদ পুরাতন কাপড়েরর মার্কেটে সকাল থেকে ক্রেতাদের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। তারা বিভিন্ন দোকান ঘুরে নিজেদের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য পছন্দ মতো শীতের পোশাক কিনছেন।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দোকানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে সোয়েটার, হুডি, জ্যাকেট, পায়জামা, ফুলহাতা গেঞ্জিসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক।
আরও পড়ুন: শীতে কাঁপছে চুয়াডাঙ্গা
সোয়েটার ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা, হুডি ২৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা, টুপিয়ালাগেঞ্জি ১৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা, জ্যাকেট ৩০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা, জগাজ পায়জামা ১০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা, ফুলহাতা গেঞ্জি ৬০ টাকা ১০০ টাকা দারে বিক্রি হচ্ছে।মুজিব সড়কের ফুটপাতের দোকানদার আরিফ হোসেন বলেন, বাচ্চাদের হুডি, পায়জামা ও ফুলহাতা গেঞ্জি বেশি বিক্রি হচ্ছে। বেশি শীত অনুভূত হওয়ার কারণে শীতের পোশাক বেচাকেনা শুরু হয়েছে। বিক্রিও খারাপ হচ্ছে না।
একই কথা জানান সিয়াম নামে আরেক দোকানদার। তিনি বলেন, গত শনিবার থেকে বেচাবিক্রি বেড়েছে।
ক্রেতাদের নজর কাড়তে বিভিন্ন ধরনের শীতের পোশাক সাজিয়ে রেখেছেন দোকানদাররা।জেলা পরিষদ মার্কেটে গিয়েও দেখা গেছে ক্রেতাদের বেশ ভিড় ছিল। এ মার্কেটের ব্যবসায়ী হারুন গাজী বলেন, এখন বেশি শীত অনুভূত হওয়ার কারণে বাচ্চাদের সোয়েটার, জ্যাকেট, হুডি বেশি বিক্রি হচ্ছে। বড়দের পোশাক তেমন বিক্রি হচ্ছে না।
অপর দোকানদার আরমান হোসেন বলেন, শীত একটু বেশি পড়ায় শীতের পোশাক বেচাকেনা শুরু হয়েছে। সামনের পৌষ মাসে বেশি শীত পড়তে পারে,ওই সময় বেচাকেনা আরও বাড়তে পারে। গত বছরের তুলনায় এবারে বেচাকেনা ভালো।বাজারে শীতের কাপড় কিনতে আসেন সায়েরা খাতুন নামে এক নারী। তিনি বলেন, ‘শীত বেশি পড়ছে। আমার মেয়ের জন্য শীতের পোশাক কিনতে এসেছি। মেয়ের জন্য একটি সোয়েটার ও টুপি কিনেছি।’শমসের আলী নামে এক ক্রেতা জানান, বাড়িতে ছোট্ট ছেলে মেয়ে ও নাতিপুতি আছে। তাদের জন্য শীতের পোশাক কিনেছেন।
পপি খাতুন ও আসমা বেগম নামে আরও দুই ক্রেতা জানান, তারা তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য শীতের পোশাক কিনেছেন। তবে পুরোনো কাপড়ের দাম খুব বেশি না হলেও নতুন পোশাকের দাম গত বছরের তুলানায় বেশি।
আরও পড়ুন: শীতে বিপর্যস্ত মেহেরপুরবাসী, হাসপাতালে ভর্তি ১৩৫০ রোগী
৩৭৫ দিন আগে
নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ইঙ্গিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিএনপির
জাতীয় নির্বাচন ২০২৫ সালের শুরুতে বা কৌশলগতভাবে বিলম্বিত করে ২০২৬ সালের দিকে নেওয়ার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক ইঙ্গিত বিএনপির মধ্যে তুমুল মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।
যদিও কিছু নেতা সতর্কতার সঙ্গে দীর্ঘায়িত রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা অবসানের পদক্ষেপ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার সংকেতটিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে অন্যরা সংশয় প্রকাশ করে এটিকে ‘রোডম্যাপ ছাড়া একটি অসম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতি’ বলে অভিহিত করেছেন।
বিএনপি সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দ্রুত নির্বাচন অতি প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সমাধানের পথ তৈরি করতে পারে। আর বিলম্বিত নির্বাচন হতে পারে সময় কেনা এবং সরকারের প্রভাব বাড়ানোর কৌশলগত চেষ্টা।
বিএনপি নেতারা বলছেন, ‘সময়সীমা নিয়ে কয়েক মাসের অস্পষ্টতার পরে অবশেষে নির্বাচনের কথা শুনে ভাল লাগছে - তাড়াহুড়ো বা বিলম্বিত হোক না কেন - একটি কৌশলগত ভারসাম্যের কাজ বলে মনে হচ্ছে। সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ছাড়া আমরা সরকারের আসল উদ্দেশ্য অনুমান করতে পারছি।’
মিশ্র প্রতিক্রিয়া দলের মধ্যে আশা এবং সন্দেহ উভয়ই তুলে ধরে। বিএনপি নেতারা সম্ভাব্য আগাম শোডাউনের প্রস্তুতি বা দীর্ঘ অপেক্ষার জন্য প্রস্তুত হওয়ার চ্যালেঞ্জগুলো মূল্যায়ন করেন। এটি তাদের নিচের পর্যায়ে রাজনৈতিক ভিত্তি পরিবর্তন করতে পারে।
দলটির নেতারা বলেন, বিএনপি আগামী ৪-৫ মাসের মধ্যে নির্বাচনি সংস্কার কাজ শেষ করতে চায় এবং আগামী বছরের আগস্টের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। যাতে সরকারকে এক বছরের মেয়াদ পূর্ণ করার সুযোগ দেওয়া হয়।
তারা আরও মনে করেন, ২০২৬ সালের শুরুর দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলে প্রধান উপদেষ্টা যে উল্লেখ করেছেন, তা তার সরকারের মেয়াদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার কৌশলের অংশ হতে পারে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে সরকার সম্মত হতে পারে।
তারা বলছেন, অন্য রাজনৈতিক দলগুলো এতটুকু সময় দিতে রাজি হলে বর্তমান সরকারকে আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ দিতে পারেন তারা।
এর আগে সোমবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ২০২৫ সালের শেষের দিকে বা ২০২৬ সালের প্রথম দিকে ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে।
টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, 'বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে, ২০২৫ সালের শেষ থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে।’ ড. ইউনূস নির্বাচনের আগেই সব ধরনের সংস্কার সম্পন্ন করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, 'প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ভাষণে আগামী নির্বাচন সম্পর্কে যা বলেছেন তাতে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই, কারণ তিনি কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বা রোডম্যাপ পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেননি। তবে আমরা কিছুটা স্বস্তি বোধ করছি এবং আশা করছি সরকার অন্তত নির্বাচন নিয়ে ভাবছে।’
তিনি বলেন, তাদের দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, সরকার আন্তরিক হলে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে। ‘আমরা আরও বিশ্বাস করি, সরকারের এক বছর মেয়াদ প্রয়োজনীয় নির্বাচনি ও অন্যান্য সংস্কার করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটি যৌক্তিক সময়সীমা। কিন্তু সরকারের ভেতরের কিছু লোক সংস্কারের নামে সময় কিনতে চায়, শুধু ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকারের গঠিত বিভিন্ন সংস্কার কমিশন চলতি মাসের শেষের দিকে তাদের প্রস্তাব নিয়ে আসতে পারে।
তিনি বলেন, ‘পরে সরকার এসব প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারে এবং ঐকমত্যের মাধ্যমে সংস্কারের একটি রূপরেখা তৈরি করতে পারে। যে রাজনৈতিক সরকার নির্বাচনে জনগণের ভোটে সরকার গঠন করতে পারবে, সেই রাজনৈতিক সরকার তখন সংসদে সংস্কার কাঠামো বাস্তবায়ন করবে। এটাই প্রক্রিয়া হওয়া উচিত, কিন্তু সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার অভিপ্রায়ে এটাকে জটিল করে তুলছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে শেখ হাসিনার শাসনবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে যেসব রাজনৈতিক দল তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে তাদের সঙ্গে তারা এখন কথা বলবেন। তিনি বলেন, 'আমরা সবাই আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে কথা বলব। খুব বেশি হলে নির্বাচনের জন্য আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। আমরা মনে করি, সরকার চূড়ান্তভাবে আগামী বছরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে সম্মত হতে পারে।’
তিনি বলেন, তাদের স্থায়ী কমিটি তাদের পরবর্তী বৈঠকে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করবে এবং তাদের পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে কাজ করবে।
যোগাযোগ করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন আন্তরিক হলে আগামী ডিসেম্বরের আগেই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব।
তিনি বলেন, সরকারের উচিত যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, কারণ সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে এবং বিদ্যমান সমস্যা থেকে উত্তরণের মাধ্যমে দেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে একটি নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন।
মোশাররফ বলেন, ‘নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করা হলে জনগণ নির্বাচনমুখী হয়ে উঠবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে থাকলে তারা ষড়যন্ত্র বরদাশত করবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বুঝতে হবে, আগাম নির্বাচন তাদের জন্য এবং দেশের জনগণের জন্য লাভজনক হবে।’
দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার পর সরকারের কার্যক্রম তারা সতর্কতার সঙ্গে তদারকি করবেন।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন আয়োজনে খুব বেশি সময় লাগার কথা নয়। সরকার আন্তরিক হলে জনগণের ইচ্ছার আলোকে দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব।’
খসরু বলেন, সরকার সংস্কারের রূপরেখা দিতে পারে। কিন্তু নির্বাচিত সরকারই সংসদের মাধ্যমে এসব সংস্কার বাস্তবায়ন করবে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমুন্নত রাখবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে শুধু নির্বাচনের সময় সম্পর্কে একটি ধারণা দিয়েছেন, 'কোনো সুস্পষ্ট রোডম্যাপ নেই।’
সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য কত সময় প্রয়োজন তা তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) স্পষ্ট করেননি। ‘আমরা আশা করি, তিনি একটি রোডম্যাপ দেবেন, যেখানে সংস্কার ও নির্বাচন উভয়ের সময়সীমা নির্দিষ্ট থাকব ‘
৩৭৬ দিন আগে
ইসলামী ব্যাংকিংয়ের পৃথক বিধিমালা প্রণয়ন, বিভক্ত ব্যাংকাররা
দেশে ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে পৃথক বিধিমালা প্রণয়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ নিয়ে ব্যাংকার ও বিশ্লেষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
বিধিমালা প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালক বলেন, প্রস্তাবিত বিধিমালায় প্রচলিত ব্যাংকগুলো এখন থেকে সরাসরি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং সেবা দিতে পারবে না। এর পরিবর্তে ব্যাংকগুলোকে ইসলামী ব্যাংকিং পরিচালনার জন্য সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
কর্মকর্তা বলেন, ‘এ আইন কার্যকর হলে প্রচলিত ব্যাংকগুলো শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং সেবা দিতে পারবে না।’
তবে কিছু ব্যাংকার যুক্তি দেখিয়েছেন, এই পদক্ষেপটি ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) অধীনে বাংলাদেশের দীর্ঘকালীন প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে।
১৯৮০-এর দশকে আইডিবিতে সইকারী দেশের তালিকায় যুক্ত হয় বাংলাদেশ। যা প্রচলিত ব্যাংকগুলোকে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ে প্রবর্তনকে সহজতর করেছে।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মান্নান প্রস্তাবিত নীতিমালার প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, 'প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের জন্য ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডোর পরিবর্তে সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান স্থাপনের বিষয়ে নতুন আইন (বিধিমালা) আইডিবির ঘোষণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে।’
তিনি বলেন, আইডিবির ঘোষণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকগুলোতে শরিয়াহ পরিপালন ও তহবিল ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণের জন্য একটি স্বতন্ত্র বিভাগ স্থাপন করতে পারে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রচলিত ব্যাংকগুলোর ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো ও শাখাসমূহের বর্তমান সাফল্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘উইন্ডোজ বা শাখার মাধ্যমে যেসব ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং করছে তাদের সবার অবস্থা ভালো। একটি ইসলামি অন্যটি প্রচলিত ব্যাংকিং করে তুললেই ভালো ফল পাওয়া যাবে বলে আমি মনে করি না। আমরা যদি পৃথক ব্যালান্সশিট ও আয় বিবরণী প্রস্তুত করি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করি, তাহলে এটি আরও কার্যকর ও সময়োপযোগী হবে।’
মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, 'তারা যদি সঠিকভাবে মনিটরিং করে এবং শরিয়া বোর্ড যদি যথাযথভাবে থাকে, তাহলে আমার মনে হয় এখানে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’
তবে কিছু বিশ্লেষক পরিস্থিতিকে ভিন্নভাবে দেখছেন।
আরও পড়ুন: ব্যাংকে চাকরি প্রার্থীদের বয়সসীমা বাড়াল বাংলাদেশ ব্যাংক
প্রচলিত ব্যাংকগুলোর অধীনে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের আর্থিক সক্ষমতার কথা স্বীকার করে তারা শরিয়াহ পরিপালনের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেন।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন বর্তমান চর্চার সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ‘প্রচলিত ব্যাংকের ব্যালান্স শিটও ইসলামী শাখার মতোই। এটি কতটা শরিয়া ভিত্তিক ও সঠিক?'
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী ইসলামী ব্যাংকিংয়ের বর্তমান রূপের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পৃথক বিধিবিধানের ধারণাকে সমর্থন করেন।
তিনি বলেন, 'আমি ব্যক্তিগতভাবে আলাদা আইনের পক্ষে। এখানে আমরা আসলে ব্যবসা পরিচালনার জন্য শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং করছি না। আমরা এটা করছি টাকা কামানোর জন্য। ইসলামের নামে মানুষের কাছ থেকে কিছু টাকা নিচ্ছি। যখন চালু হয়, তখন কি এটা আসলেই ইসলামী ব্যাংকিং? মোট পোর্টফোলিওর ১.০ শতাংশও পিএলএস নয়। তাহলে এটাকে ইসলামী ব্যাংকিং বলা হচ্ছে কেন?’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মতে, খসড়া আইনটি এখনও পর্যালোচনাধীন। কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনেয়ারা শিখা বলেন, আইনটি চূড়ান্ত করার আগে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা জরুরি।
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, 'আইন প্রণয়নের সময় অংশীজনদের সঙ্গে নানা ধরনের পরামর্শ ও বিশ্লেষণ করতে হয়। আন্তর্জাতিক নীতিগুলো কী? আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রচলিত ব্যাংকগুলো কখনো ইসলামিক শাখা খোলে না।’
সব অংশীজনদের মতামত নিয়ে ইসলামিক ব্যাংক কোম্পানি আইন চূড়ান্ত করা হবে।
ইসলামী ব্যাংকিং ইসলামের চেতনা, নীতি ও মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি ব্যাংকিং ব্যবস্থা, যা ইসলামী শরিয়াহর নীতি অনুসারে পরিচালিত হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশে ৩০টি প্রচলিত ব্যাংক ছাড়াও ১০টি পূর্ণাঙ্গ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। প্রচলিত এসব ব্যাংক ৩৩টি ইসলামি ব্যাংকিং শাখা এবং শরিয়াহভিত্তিক সেবার জন্য প্রায় ৭০০ উইন্ডো পরিচালনা করে।
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে কোটিপতির অ্যাকাউন্টের সংখ্যা কমেছে: বাংলাদেশ ব্যাংক
৩৭৭ দিন আগে
সুনামগঞ্জে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুস্পষ্ট নির্দেশনা সত্ত্বেও সুনামগঞ্জ জেলার হাওর (জলাভূমি) এলাকায় ফসল রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
সাধারণত আগাম বন্যা ও ভাঙন থেকে ফসল রক্ষার জন্য শস্য সুরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়। হাওর বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত জলাভূমি বাস্তুসংস্থান। অসংখ্য হাওরের জন্য সুনামগঞ্জ জেলা বিখ্যাত।
পানিসম্পদ, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সম্প্রতি হাওর পরিদর্শনে এসে অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত ফসলরক্ষা বাঁধের প্রকল্প গ্রহণ না করার স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সুনামগঞ্জ জেলায় হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়াও বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে নিয়োজিত উপজেলা কমিটিকেও অতিরিক্ত, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এসব নির্দেশনার পরও সংশ্লিষ্টরা তা মানছেন না। বেড়েই চলছে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের তালিকা। চূড়ান্ত প্রকল্পগুলো উন্মুক্ত না করে গোপন রাখা হয়েছে এমন অভিযোগও উঠেছে।
প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্টরা ৬০০ প্রকল্প নেওয়া হবে বললেও গত বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) পর্যন্ত অনুমোদিত প্রকল্পের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৭৫টি। এই সংখ্যা ৭০০’র ঘরে পৌঁছে যাবে বলে আভাস পাওয়া গেছে। এবার হাওরের অস্থায়ী ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে সরকারের কাছে ১২৫ কোটি টাকা প্রাথমিক বরাদ্দ চেয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রতি বছর হাওরের বরাদ্দে নেতাকর্মীদের বাড়ির সড়ক, স্থায়ী সড়ক নির্মাণের পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয়, অতিরিক্ত প্রকল্পও গ্রহণ করা হয় বলে হাওরবাসীর অভিযোগ আছে।
আরও পড়ুন: হাওরে ইজারা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপজেলায় কর্মরত এসও (সাবস্টেশন অফিসার) বাইরের জেলা থেকে মওসুমে বাঁধের প্রাক্কলন করতে আসা সার্ভেয়ারদের দিয়ে অক্ষত, অল্প ক্ষতিগ্রস্ত প্রকল্পেও সমান বরাদ্দের বাজেট করে নেন। এবারও একই কারণে বাঁধের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এতে সরকারি অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি অপরিকল্পিত ও অতিরিক্ত বাঁধ হাওরের স্বাভাবিক প্রকৃতিরও ক্ষতি করবে বলে বিভিন্ন ফোরামে দাবি জানিয়ে আসছেন হাওর আন্দোলনের নেতারা।
গত সপ্তাহে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছিলেন চলতি মওসুমে ৬শ’র অধিক প্রকল্প গ্রহণ করা হবে না। গত ২৬ নভেম্বর হাওর পরিদর্শনে আসেন সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি ওইদিন সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন পরিবেশের ক্ষতি করে এমন কোনো অতিরিক্ত প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না। গত ৫ ডিসেম্বর ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণসংক্রান্ত জেলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া শাল্লা উপজেলায় গিয়েও হাওরের বাঁধে প্রয়োজনের চেয়ে এবার কম টাকা লাগবে বলে মন্তব্য করে প্রচ্ছন্নভাবে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ না করার নির্দেশনা দেন। প্রকল্প বাস্তবায়নে যারা জড়িত তাদেরকেও তিনি এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দিয়ে আসেন।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৭৫টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই সংখ্যা সাতশর ঘরে গিয়ে পৌঁছাবে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে। গত বছর জেলায় ৭৩৪টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যার প্রায় শতাধিক অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত বলে সংবাদ সম্মেলন, সমাবেশ ও স্মারকলিপি দিয়ে প্রতিবাদ করেছিল হাওর বাঁচাও আন্দোলন। তারা অতিরিক্ত এই প্রকল্পের
পাশাপাশি অল্প ক্ষতিগ্রস্ত, অক্ষত প্রকল্পেও সমান বরাদ্দ দিয়ে সরকারি অর্থ হাতানোর পাঁয়তারা করা হয় এমন অভিযোগ করেছিল।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, চলতি মওসুমে ৫৩টি হাওরের ৫৩৪ কিলোমিটার ফসলরক্ষা বাঁধ সংস্কার ও মেরামতে ১২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৫৩টি হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ পুনঃনির্মাণ, সংস্কার ও মেরামত করতে পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) কাজ করবে। এবার ১০৫টি ক্লোজারেও (বড় ভাঙ্গন) কাজ করা হবে। আগামী ১৫ ডিসেম্বর ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু করে ২৮ ডিসেম্বর কাজ শেষ করার কথা।
হাওর আন্দোলনের নেতারা জানান, প্রতি বছর প্রকল্প বাড়িয়ে সরকারি বরাদ্দ লোপাটের ধান্দায় থাকা সিন্ডিকেট এবারো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে প্রকল্প বাগিয়ে নিতে তৎপর হয়ে ওঠেছে। তারা নানাভাবে তদবির করে ইতোমধ্যে সফলকামও হয়েছে। শাল্লা, দিরাই, তাহিরপুর ও শান্তিগঞ্জসহ কয়েকটি উপজেলায় প্রকাশ্যে এই তৎপরতা শুরু হয়েছে।
হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ সংক্রান্ত জেলা কমিটির সদস্য ও এবি পার্টির জেলা কমিটির আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন বলেন, প্রতি বছরই হাওরের বরাদ্দ লোপাট করতে নানা ফন্দিফিকির করা হয়। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণের সঙ্গে অল্প ক্ষতিগ্রস্ত ও অক্ষত প্রকল্পেও সমান বরাদ্দ দিয়ে নকশা করেন সার্ভেয়াররা(ভূমি জরিপকারী)। পিআইসি সিন্ডিকেটের লোকজন ঘুষ দিয়ে এসব প্রকল্প নিয়ে ব্যবসা করে। এবার সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সচেতন থেকে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প না বাড়ানোর নির্দেশনা দিলেও সেটি মানা হচ্ছেনা। ঘোড়ার মতো লাফিয়ে বাড়ছে প্রকল্প সংখ্যা। পিআইসি’র সেই সিন্ডিকেট তৎপর হয়ে ওঠেছে এবারও।
শাল্লা উপজেলা কৃষকদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক একরামুল হোসেন বলেন, যে প্রকল্পগুলো গ্রহণ করা হয়েছে কাজ শুরুর আগে এবং ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়ার আগে উন্মুক্ত করা হোক। তাহলে স্বচ্ছতা আসবে। নাহলে গোপন রেখে অনুমোদন দেওয়া হলে দুর্নীতি ও অনিয়ম থাকবেই। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলোতে আগের সিন্ডিকেট তাদের স্বজনদের নামে গ্রহণ করাচ্ছে এসব জানতে পারছি আমরা।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মোহাম্মদ মনির বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে চিঠি দিয়ে হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধের অনিয়ম না করার অনুরোধ জানিয়েছি। নীতিমালার আলোকে গণশুনানি করে পিআইসি গ্রহণের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কৃষকদের মতামত নিয়ে প্রকল্প তালিকা উন্মুক্ত করতে হবে। বাঁধের সিদ্ধান্ত নেবেন কৃষকরাই। এভাবে করা হলে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণের সুযোগ থাকবেনা। সরকারি অর্থও অপচয় হবেনা এবং প্রকৃতিরও ক্ষতি হবেনা। এবার বাঁধ নির্মাণকাজে অনিয়ম হলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, আমরা খুব সাবধানে এবার প্রকল্প গ্রহণ করছি। কোনো অনিয়ম যাতে না হয় স্পষ্ট নির্দেশনা আছে। এ পর্যন্ত ৬৭৫টি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। আরও কিছু বাড়তে পারে।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, আমরা শুরু থেকেই পিআইসি গঠন অনিয়মমুক্ত করার চেষ্টা করছি। যে মনিটরিং কমিটি করা হয়েছে তাদেরকে ১২টি উপজেলায় ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তারা ঘুরে এসে আমাদের প্রতিবেদন দেবেন। আমরা ব্যবস্থা নেব।
আরও পড়ুন: কাদের দাপটে হাওরের দেশীয় প্রজাতির ধান হারিয়ে যাচ্ছে জানালেন কৃষকেরা
৩৭৭ দিন আগে
খাগড়াছড়িতে বাড়ছে পর্যটক, কাটছে ব্যবসার মন্দা
ভরা মৌসুমে খাগড়াছড়িতে পর্যটকের সমাগম বাড়ায় প্রাণচাঞ্চল্যতা ফিরেছে পর্যটক সংশ্লিষ্ট খাতে।
বৈশ্বিক মহামারি করোনার সময় থেকেই খাগড়াছড়ির পর্যটন খাতে ধ্বস নামতে শুরু করে। আঞ্চলিক সমস্যা, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ নানান কারণে মাঝেমধ্যে বন্ধ হয়ে যায় পর্যটন স্পটগুলো। এছাড়া কয়েক দফার বন্যা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পর্যটন কেন্দ্রিক ব্যবসায় কিছুটা ধস নেমেছিল। পর্যটকের অভাবে লোকসান গুণতে থাকে বিনিয়োগকারীরা।
পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ায় আবারও আশায় বুক বাঁধছেন এ খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় পাহাড়ের পর্যটন কেন্দ্রিক সব বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় বেড়েছে পর্যটক সমাগম।
খাগড়াছড়ির আলুটিলা, রিছাং ঝর্ণা, জেলাপরিষদ পার্ক ঘুরে দেখা যায় পর্যটকে ভরপুর রয়েছে। পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছেন তারা।
তবে খাগড়াছড়ি ভ্রমণে আসা অধিকাংশ পর্যটক মূলত সাজেক পর্যটন স্পটে বেড়াতে আসেন। খাগড়াছড়িতে হাতেগোনা কয়েকটি পর্যটনস্পট হওয়ায় সাজেক আসা যাওয়ার ফাঁকে স্পটগুলো থেকে ঘুরে যান পর্যটকরা।
৩৭৯ দিন আগে
চুয়াডাঙ্গায় বাড়ছে ডায়েরিয়া রোগী, হাসপাতালে নেই স্যালাইন সেট-ক্যানোলা
রোটা ভাইরাস ও আবহাওয়াজনিত কারণে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। এরমধ্যে অধিকাংশই শিশু রোগী। চিকিৎসক ও নার্সরা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
গত ১ সপ্তাহে সদর হাসপাতালের ডায়েরিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে মোট ২৮৩ জন রোগী। এদের মধ্যে অধিকাংশই হলো শিশু ও বয়স্ক। এছাড়া প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে দুই শতাধিক রোগী।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে অর্থাৎ ৩ ডিসেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ২৮৩ রোগী ভর্তি হয়েছেন। ৯ ডিসেম্বর বিকাল ৫টা পর্যন্ত ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন ৪৩ জনের অধিক রোগী। এরমধ্যে অধিকাংশই ছিল শিশু।
আরও পড়ুন: ফেনীতে ডায়রিয়া পরিস্থিতির অবনতি, তাঁবুতে চলছে শিশুদের চিকিৎসা
ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গাইদঘাট গ্রামের রোগীর মা পলি খাতুনের ছেলে ভর্ আছে হাসপাতালে। তিনি বলেন, আমার ৮ মাসের ছেলে তিন দিন আগে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে ভর্তি করাই হাসপাতালে। রোগীর এতো চাপ যে এখানে থাকতেই সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। তারপরেও ছেলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত থাকতে তো হবেই।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার এলাকার নাজমা খাতুনের মেয়ে ভর্তি হাসপাতালে। নাজমা বলেন, গত দুদিন থেকে পাতলা মল আর বমি হচ্ছিল মেয়ের। সকালে হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। হাসপাতাল থেকে খাওয়া স্যালাইনসহ যাবতীয় ওষুধ দিলেও স্যালাইন সেট ও ক্যানোলা সাপ্লাই নেই বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এরপর বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রকিব সাদী বলেন, হাসপাতালে কলেরা স্যালাইনসহ যাবতীয় ওষুধ সাপ্লাই আছে। তবে স্যালাইন সেট ও ক্যানোলা নেই, সেটা আশা করছি অল্প কিছু দিনের মধ্যে চলে আসবে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট শিশু ডা. মাহবুবর রহমান মিলন বলেন, ইদানিং রোটা ভাইরাস ও শীতজনিত কারণে শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে ডায়রিয়া রোগী বেশি। বিশেষ করে শিশু রোগী বেশি রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। এর কোনো মেডিসিন না থাকার কারণে ৪ থেকে ৫ দিন শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত থাকছে। ৫ দিন পর ভাইরাস মারা গেলে সুস্থ হয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এক্ষেত্রে কোনো মতেই শিশুদের বাসি খাবার খাওয়ানো যাবে না। যতটা সম্ভব বাইরের খাবার এড়িয়ে চলা ভালো৷ শিশুদের প্রতি বেশি যত্ন নিতে হবে। মোটা কাপড় পরিধান করাতে হবে। রাস্তার ধারের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রতি মানুষের সচেতনতা না বাড়লে ডায়রিয়া মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যাবে।
এ চিকিৎসক জানান, ১ থেকে ৬ মাসের শিশুদের বুকের দুধ ছাড়া অন্য কিছু খাওয়ানো যাবে না। খিচুড়ি খাওয়ানোর ক্ষেত্রেও সতর্ক হতে হবে। বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে। যতটুকু সম্ভব বাচ্চাদের সতর্ক রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: সাজেকের তিনটি গ্রামে ডায়রিয়া ও জ্বরে আক্রান্ত শতাধিক
৩৮০ দিন আগে
গদখালীতে শত কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা চাষিদের
ফুলের রাজ্যখ্যাত যশোরের গদখালী অঞ্চলে ব্যাপক কর্মব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে দিন পার করছেন ফুলচাষিরা।
মূলত এই অঞ্চলে বছরজুড়ে ফুলচাষ হলেও ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচ মাস ফুলের মূল মৌসুম। সাধারণত বিজয় দিবস, ইংরেজি নববর্ষ, বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, মহান স্বাধীনতা দিবস ও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দেশে ফুলের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। আর এসব দিবস কেন্দ্র করেই গদখালীর চাষিরা ফুলের আবাদ করেন।
চলতি বছরে অতি তাপমাত্রা আর অতিবৃষ্টির ধকল কাটিয়ে এবার মৌসুমে চাষিরা অন্তত শত কোটি টাকার ফুল বিক্রির স্বপ্ন দেখছেন।
গদখালি পাইকারি বাজারে দেখা যায়, কাকডাকা ভোরেই চাষিরা বিভিন্ন যানবাহনে তাদের উৎপাদিত ফুল নিয়ে এসেছেন। ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে জমজমাট ফুলবাজার। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের দুই পাশে বিভিন্ন জাতের ফুলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ফুল বিক্রেতারা।
বাজারে দেখা গেছে, প্রতিটি গোলাপের দাম ৬ থেকে ৭ টাকা, রজনীগন্ধার স্টিকের দাম ৮ টাকা। রঙিন গ্লাডিওলাস প্রতিটির দাম মানভেদে ১৪ থেকে ১৬ টাকা, জারবেরা ১৩ থেকে ১৪ টাকা।
ফুল বাঁধাইয়ের জন্য কামিনীর প্রতি আঁটি পাতার দাম ৫৫ টাকা, জিপসির আঁটি ১০০ টাকা।
১০০টি চন্দ্রমল্লিকার ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, ১০০০ হাজার গাঁদার দাম ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, রড স্টিক প্রতি বান্ডিল ২০০ টাকা।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্যমতে, যশোরে প্রায় ৬ হাজার পরিবার ফুলচাষের সঙ্গে রয়েছেন। তারা অন্তত ১২০০ হেক্টর জমিতে ১১ ধরনের ফুল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেন। প্রতি বছর উৎপাদন করা হয় ১৫০ কোটি টাকার ফুল। দেশের মোট চাহিদার ৭০ ভাগ ফুল সরবরাহ করেন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, পানিসারা, নাভারণ, নির্বাসখোলা ও হাড়িয়া অঞ্চলের ফুলচাষিরা। মৌসুমের শুরুতে ফুলের দামও উঠতে শুরু করেছে।
বছরের অন্যান্য সময় ফুলের দাম পাওয়া গেলেও বর্ষাকালে সেগুলো তেমন বাজারে বিক্রি হয় না। তখন শ্রমিকের খরচ না ওঠায় চাষিরা ফুল গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করেন।
গদখালীরপটুয়াপাড়া গ্রামের সোহাগ দুই বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, এ বছর অসময়ে বর্ষা হয়েছে। এখন জমিতে বাড়তি পরিচর্যা করছি। সামনের অনুষ্ঠানে দাম ভালো পেলে লাভ হবে।
চাষি হেমায়েত বলেন, দেড় বিঘা জমিতে রঙিন গ্লাডিওলাস চাষ করেছি। বৃষ্টিতে অনেক গাছ মারা গেছে। প্রতি বিঘায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। দাম ভালো না পেলে আমাদের ক্ষতি হয়ে যাবে।
দেলবার হোসেন বলেন, ফুলখেতে নতুন করে নিড়ানি দিয়ে সার ও কিটনাশক স্প্রে করা হয়েছে। এখন শুধু সেচ দিতে হবে। বাজার ভালো গেলে এবছর অনেক লাভ হবে।
জারবেরা চাষি আনোয়ার হোসেন বলেন, দুই বিঘা জমিতে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ বছর সাত থেকে আট লাখ টাকার জারবেরা ফুল বিক্রির আশা করছেন তিনি।
৩৮০ দিন আগে