��������������� ���������������
কেরানীগঞ্জে হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় আঞ্চলিক পার্ক
কেরানীগঞ্জে নির্মাণ করা হবে দেশের সবচেয়ে বড় আঞ্চলিক পার্ক। এই পার্কের প্রস্তাবিত নাম শেখ হাসিনা আঞ্চলিক পার্ক। যার আয়তন নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৪২ একর বা ১ হাজার ২৬৬ বিঘা।
শেখ হাসিনা আঞ্চলিক পার্কের বাস্তবায়ন ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানও ইতোমধ্যে নিয়োগ করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।
রাজউকের প্রধান স্থপতি মোশতাক আহমেদ জানান, প্রায় ৪৪২ একর জমি নিয়ে তৈরি হতে চলছে শেখ হাসিনা আঞ্চলিক পার্ক। নির্মাণকাজের জন্য একটি পরামর্শক দল নিয়োগ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, তারা দ্রুত পার্কের নকশা তৈরির কাজ করছে। প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের সার্বিক সহযোগিতায় পার্কের জায়গাও নির্ধারণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: জেব্রার মৃত্যুতে সাফারি পার্ক পরিদর্শনে তদন্ত কমিটি
রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বিশাল এই জায়গা জুড়ে পরিকল্পনায় পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক শহর তৈরির উদ্দেশ্যে পাঁচটি বৃহৎ আঞ্চলিক পার্ক, ৪৯টি পানিকেন্দ্রিক পার্ক, আটটি ইকোপার্ক এবং ৯টি অন্যান্য পার্ক ও খেলার মাঠ নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
তারা আরও জানান, তারই ধারাবাহিকতায় কেরানীগঞ্জ উপজেলার শুভাঢ্যা, কুল্লিরচক, বাঘৈর ও কাজীরগাঁও মৌজায় প্রায় ৪২২ একর জমি অধিগ্রহণ করে শেখ হাসিনা আঞ্চলিক পার্ক নামে প্রস্তাব করেছে ড্যাপ।
তারা জানান, এই পার্কের জন্য প্রস্তাবিত ভূমি ব্যবহার উন্মুক্ত স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। শেখ হাসিনা আঞ্চলিক পার্কের পশ্চিম পাশে ১০০ ফুট প্রশস্ত নতুন রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে রাজউকের। ইতোমধ্যে পার্কের প্রস্তাবিত নাম ও প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
ঢাকা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু জানান, রাজধানীর মিরপুর জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান ও জাতীয় চিড়িয়াখানার সঙ্গে ২০৮ একর অথবা ৬২৪ বিঘার ওই জমিতে উদ্যান গড়ে ওঠেছে ১৯৬১ সালে।
তিনি জানান, সে আয়তনের পরে রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে রাজাধানীর রমনা পার্ক। যার আয়তন সাড়ে ৬৮ একর অথবা ২০৫ বিঘা জমির ওপর উদ্ভিদ উদ্যান ও রমনা পার্ককে পেছনে ফেলে আয়তনের দিক থেকে এবার নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হবে কেরানীগঞ্জের শেখ হাসিনা আঞ্চলিক পার্কে।
রাজউকের বেশ কয়েক জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, রাজউকের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল ও স্থানীয় এমপি এবং উপজেলা চেয়ারম্যান বেশ কয়েক বার প্রস্তাবিত পার্কের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করেছেন।
রাজউকের সদস্য ও প্রকল্প পরিকল্পনাকারী মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) সামসুদ্দীন আহমেদ চৌধুরী এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. আল আমীনসহ অন্যরা সঙ্গে ছিলেন।
রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদসহ রাজউকের প্রকল্প প্রতিনিধি দল জমি অধিগ্রহণ ও এলাকার সীমানা নির্ধারণ করেছেন। অল্প সময়ের মধ্যে আঞ্চলিক পার্কের নির্মাণকাজ শুরু হবে বলে জানান তারা।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের প্রথম প্রিমিয়াম ওয়াটার পার্ক ‘মানা বে’র উদ্বোধন
কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেষে হবে দৃষ্টিনন্দন বিনোদন পার্ক ও খেলার মাঠ
পাটের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার অভিযোগ, চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা
মাগুরা জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে পাটের দাম কমে গেছে। পাটচাষিরা বলছেন, সিন্ডিকেটদের প্রভাবে কমে গেছে পাটের দাম।
ফলে হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা। অনেকে আগামী বছর পাট না চাষ করার সিদ্ধান্তের কথা জানাচ্ছেন।
প্রতি মণ পাট ১ হাজার ৮০০ থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাতে করে খরচ উঠছে না চাষিদের।
আরও পড়ুন: পানির জন্য হাহাকার, গাইবান্ধায় পাটচাষিরা বিপাকে
স্থানীয় পাট ব্যবসায়ীরা বলছেন, মহাজনরা কমমূল্য দিচ্ছে, তাই আমরাও কমমূল্যে ক্রয় করছি। এদিকে পাটচাষিরা বলছেন, সিন্ডিকেটদের প্রভাবে কমে গেছে পাটের দাম।
মাগুরা জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শালিখা উপজেলা সদর আড়পাড়ায় প্রতি শনি ও বুধবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পাটচাষিরা পাট বিক্রি করতে আসেন। তবে কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পেয়ে অনেকেই পাট ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে।
অনেকে আবার অর্থের প্রয়োজনে বাধ্যহয়েই স্বল্প মূল্যে বিক্রি করে উঠাচ্ছেন পাটচাষের খরচ। তবে প্রত্যাশিত মূল্য না পাওয়ায় উৎসাহ হারাচ্ছেন তারা।
আড়পাডা ইউনিয়নের দিঘী গ্রামের পাটচাষি অছিউদ্দিন মোল্যা বলেন, এ বছর দুই একর জমিতে পাট বুনেছি। পাট বুনা থেকে শুরু করে ধোয়া ও শুকানো পর্যন্ত যে খরচ হয়েছে, মণ প্রতি ২ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করলে সেই খরচ উঠবে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে পাটের দাম কমে যাওয়ায় কৃষকরা হতাশ
বরইচারা গ্রামের পাটচাষি উৎপল বিশ্বাস বলেন, এভাবে পাটের দাম কমে যাবে আগে জানলে পাট বুনতাম না। প্রতি হাটে পাটের দাম মণ প্রতি দুইশ’ টাকা কমে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন পাটচাষিরা।
পাটের দাম কম থাকায় হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের পাট যেন হয়ে উঠেছে কৃষকের গলার কাঁটা। না পারছেন ফেলতে, না পারছেন ভালো দামে বিক্রি করতে।
ফলে অনেকেই আগামী বছর পাটচাষ থেকে বিরত থাকবেন বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
৩ মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় সুন্দরবনে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়
সুন্দরবনে এবার পর্যটন মওসুম শুরুর পর থেকে দেশি পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। এছাড়া ভরা মৌসুমে সুন্দরবনের সৌন্দর্য দেখে অভিভূত হচ্ছেন বিদেশি পর্যটকরাও।
একটানা ৩ মাস বন্ধ থাকার পর ১ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে বনজীবী ও দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে সুন্দরবন।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে মাছ ধরা ও পর্যটনে ৩ মাসের নিষেধাজ্ঞা ১ জুন থেকে
সুন্দরবনের অভ্যন্তরে বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে এখন পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। আগত পর্যটকদের মধ্যে বড় একটি অংশ বিদেশি।
সুন্দরী ইকো রিসোর্টের পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের আতিথেয়তা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরাই আমাদের স্বপ্ন। ঢাংমারি এমন একটা গ্রাম যেখানে গড়ে উঠেছে কিছু ইকো রিসোর্ট যাদের মাধ্যমে এই স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: প্রথম তিন সপ্তাহে ৫ কোটি টাকার বেশি টোল আদায়
ঢাকা (এম জাহাঙ্গীর আলম), ২৫ সেপ্টেম্বর (ইউএনবি)-
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে গত ৩ সেপ্টেম্বর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার পর থেকে ৫ কোটি টাকার বেশি টোল আদায় করেছে কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এএইচএমএস আখতার জানান, রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টা পর্যন্ত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে মোট ৬ লাখ ২১ হাজার ১৫২টি যানবাহন চলাচল করেছে।
গত ২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার গাড়িবহরে থাকা ২৫টি গাড়ির জন্য প্রতিটি গাড়ির জন্য ৮০ টাকা হারে দুই হাজার টাকা টোল পরিশোধের মধ্য দিয়ে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর-ফার্মগেট অংশের উদ্বোধন করেন।
আরও পড়ুন: যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
গত ৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টায় বিমানবন্দর থেকে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ফার্মগেট পর্যন্ত অংশটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয় কর্তৃপক্ষ। এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেটে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ১০ থেকে ১২ মিনিট।
প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আখতার বলেন, আমরা আগে ধারণা করেছিলাম প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০ হাজার যানবাহন এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করবে।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ হলে রাজধানীর কাওলা থেকে কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে কুতুবখালী এলাকা পর্যন্ত চলাচল করবে।
আখতার ইউএনবিকে বলেন, আমরা আশা করছি এটি সম্পন্ন হলে প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার যানবাহন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে পারবে।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক বলেন, এক্সপ্রেসওয়ের নকশা অনুযায়ী যানবাহন ৮০ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতিতে চলতে পারে, কিন্তু তারা র্যাম্পে ৬০ কিলোমিটার/ঘণ্টা এবং ৪০ কিমি/ঘণ্টা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রেখেছে।
তারা এখনও গতিসীমা লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ শুরু করতে পারেনি। যদিও ইতোমধ্যে এক্সপ্রেসওয়েতে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং অন্যান্য সরঞ্জাম স্থাপন করা হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে বাস চলাচল শুরু করেছে। যাত্রীরা এখন মাত্র ৩৫ টাকায় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পার হচ্ছেন।
এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের খেজুর বাগান থেকে জসিমউদ্দিন রোড পর্যন্ত নতুন বাস রুটের ঘোষণা দেন বিআরটিসির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে তিনটি ডিপো থেকে মোট আটটি বাস চলাচলের কথা ছিল। এক্সপ্রেসওয়ের উভয় প্রান্ত থেকে যাত্রীরা বাসে উঠতে পারবেন।
তবে এক্সপ্রেস হাইওয়েতে চলাচলকারী বিআরটিসি বাসের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২টিতে।
উত্তরা-ফার্মগেট বিআরটিসি বাস রুটের ফার্মগেট বাস কাউন্টারে কর্মরত বিআরটিসি বাস কাউন্টারের কর্মী বিশ্বজিৎ বলেন, যাত্রী সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় যাত্রীরা সন্তুষ্ট, আমরাও সন্তুষ্ট।
তিনি আরও বলেন, ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে আটটি দোতলা বাস চলাচল শুরু করে।
আরও পড়ুন: ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চালু হলো বিআরটিসির বাস
বিশ্বজিৎ জানান, ফার্মগেট বাস কাউন্টার থেকে উত্তরা পর্যন্ত প্রতি ১০ মিনিটে একটি করে বাস চলাচল করছে। এক্সপ্রেসওয়ের উভয় প্রান্তে যানজটের কারণে বাসগুলে কখনও কখনও দেরি করে।
তিনি বলেন, যাত্রীদের সেবা আরও উন্নত করতে আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। যাত্রী সংখ্যা বাড়ানোর জন্য রুটে বাসের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে, শিগগিরই বাসের সময়সূচি কঠোরভাবে বজায় রাখা যেতে পারে।
তানজিলা রহমান নামে এক যাত্রী রবিবার বিকালে ফার্মগেট বিআরটিসি এক্সপ্রেসওয়ে বাস কাউন্টার থেকে উত্তরায় যাওয়ার জন্য টিকিট কিনছিলেন।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি সকালে একটি চাকরির সাক্ষাৎকারের জন্য এসেছিলেন এবং তিনি বিমানবন্দর থেকে মাত্র ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে ইন্দিরা রোডে পৌঁছেন। আমি পরিষেবাটি খুব ভালো লেগেছে। বিমানবন্দর থেকে এখানে পৌঁছাতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম সময় লেগেছে। আমি একই পথ দিয়ে ফিরে যাচ্ছি।
রায়হান নামে আরেক যাত্রী জানান, আগে বাসা থেকে কারওয়ানবাজারে অফিসে পৌঁছাতে অন্তত দেড় ঘণ্টা পথ পাড়ি দিতে হতো। তিনি বলেন, এটি তার জন্য একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা যে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে তিনি মাত্র ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে তার অফিসে পৌঁছাতে সক্ষম হন।
আরেক যাত্রী রাফিউজ্জামান রিয়ন বলেন, লোকাল বাসে অনেক বেশি স্টপেজ থাকে, অনেক বেশি সময় লাগে এবং তারা প্রায়ই বেশি ভাড়া আদায় করে।
তিনি বলেন, বিআরটিসি এক্সপ্রেসওয়ে রুটে ই-টিকিটিং ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়, তাই ফি ন্যায্য থাকে। বিআরটিসি বাসের সিটকে আরও আরামদায়ক করে তুলতে পারে। এছাড়াও, যদি এই রুটে আরও কয়েকটি স্টপ থাকে তবে এটি আরও বেশি সংখ্যক যাত্রীকে সহায়তা করবে।
ইউএনবির প্রতিবেদক তৌফিক হোসেন মবিন একটি এক্সপ্রেসওয়ে বাসে চড়েছিলেন। দুপুর ১টা ১০ মিনিটে ফার্মগেট থেকে উত্তরার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। বিজয় সরণিতে যানজটের কারণে বাসটি প্রথমে ধীর গতির ছিল, এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে ২৩ মিনিট সময় লেগেছিল।
এরপর বাসটি এক্সপ্রেসওয়ের শেষ প্রান্তে পৌঁছাতে মাত্র ১৭ মিনিট সময় নিলেও অপর প্রান্তে যানজটের কারণে তিনি আবার ধীরগতিতে চলতে থাকে এবং দুপুর ১টা ৫১ মিনিটে বিমানবন্দরে বাস থেকে নেমে যান।
আরও পড়ুন: ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হওয়ার পর ল্যান্ডিং পয়েন্টগুলোতে যানজট
উদ্বোধনের অপেক্ষায় বঙ্গবন্ধু টানেল, টোলের হার চূড়ান্ত
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের প্রাথমিক নির্মাণকাজ সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।
মূল টানেলটি যানবাহন চলাচলের জন্য পুরোপুরি সজ্জিত ও প্রস্তুত। এটি দেশের প্রথম পানির নিচের টানেল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে টানেলটি উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে সমাবেশে ভাষণ দেবেন।
পরের দিন থেকে সুড়ঙ্গটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। যা এই অঞ্চলের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য পরিবহন মাইলফলক হবে।
এ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, টানেলের প্রাথমিক নির্মাণকাজ সফলভাবে শেষ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে টানেলের মধ্যে প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো সমাধানের দিকে মনোনিবেশ করা হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এই অসাধারণ প্রকল্পের উদ্বোধন পানির নিচে টানেলের যুগে বাংলাদেশের প্রবেশের সূচনা করছে।
তিনি বলেন, এই ‘স্মরণীয় অর্জন’ দেশের অভ্যন্তরে যোগাযোগের একটি নতুন যুগের সূচনা করবে, যা জাতির জন্য গর্বের বিষয়।
সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন ইউএনবিকে বলেন, প্রাথমিকভাবে টানেলটি যানবাহন চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।
তিনি বলেন, চলমান প্রচেষ্টায় ফায়ার সার্ভিস এবং থানা ভবনের মতো প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপনসহ বিভিন্ন দিক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। টানেল প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৯৮ শতাংশ।
তিনি আরও বলেন, উদ্বোধনের পরও আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুন: ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী: কাদের
তিনি বলেন, একটি পুলিশ স্টেশন, একটি ডাম্পিং এলাকা এবং একটি স্টেশন স্থাপনের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং এর জন্য জায়গা সহজেই পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি বলেন, যারা এই অভিযানের সঙ্গে জড়িত এবং যারা রক্ষণাবেক্ষণ করবেন তাদের নিজস্ব গাড়ি থাকবে।
সচিব বলেন, নিরবচ্ছিন্ন পরিবহন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে টানেল এলাকার অভ্যন্তরে এবং এর আশেপাশে যানবাহন চলাচল পরিচালনার জন্য ট্রাফিক বিভাগ একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।
টানেলের অভ্যন্তরে যানবাহনগুলো ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম হবে।
টানেলে কী ধরনের যানবাহন চলবে তা ঠিক করা হয়েছে। টোলও নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেতু সচিব।
সেচিব বলেন, টানেলের ধারণাটি আমাদের কাছে নতুন। এজন্য এর কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এটি অন্যান্য সেতু বা রাস্তা থেকে আলাদা। সেক্ষেত্রে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে টানেলেটি নিরাপদ থাকবে এবং যারা এটি ব্যবহার করবে তারাও নিরাপদ থাকবে।
হোসেন আরও বলেন, এই দৃষ্টিকোণ থেকে আমি মনে করি না যে এই মুহূর্তে দুই বা তিন চাকার গাড়ির জন্য এটি নিরাপদ।
টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুন-অর-রশিদ ইউএনবিকে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল চালু হলে চট্টগ্রাম শহরের পরিধি বাড়বে।
টানেলের এক প্রান্ত চট্টগ্রাম শহর এবং অপর প্রান্ত আনোয়ারা উপজেলার দিকে। টানেলের উন্নয়ন আনোয়ারাকে একটি ক্রমবর্ধমান শহরে রূপান্তরিত করছে। একই সঙ্গে আনোয়ারা উপজেলায় জমির দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
আরও পড়ুন: নির্ধারণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেলের টোল হার
আনোয়ারা উপজেলায় টানেলের টার্মিনাসে যাওয়ার রাস্তার দু'পাশে গড়ে উঠছে ছোট-বড় অসংখ্য শিল্প কারখানা। টানেলটি চালু হলে কর্ণফুলী নদী পারাপারের সময় কমে দাঁড়াবে মাত্র ৩ মিনিটে।
যেহেতু সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। টানেলটি রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের পাশাপাশি পর্যটন নগর কক্সবাজারের মধ্যে সড়ক যোগাযোগে একটি রূপান্তরমূলক পরিবর্তন আনতে প্রস্তুত।
মূল টানেলটির দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার এবং দুটি চার লেনের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার।
এ ছাড়া মূল টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার লিংক রোড এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার থাকবে।
টানেলটি কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরে অবস্থিত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত প্রথম বা উত্তর টানেলের বোরিং শুরু করেন।
২০১১ সালে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই এবং ২০১৪ সালে একটি সমঝোতা স্মারকের পর ২০১৫ সালের ৩০ জুন ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
ঠিকাদার নিয়োগের পর ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাণকাজ শুরু হয়।
বাংলাদেশ ও চীন সরকারের (জিটুজি) যৌথ অর্থায়নে মোট ১০ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
টানেলের নির্মাণকাজ করছে চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি)।
কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়ে চীনের সাংহাইয়ের অনুরূপ ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ ধারণা তৈরির লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
৩ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু টানেল ব্যবহারে মোট ১২ ধরনের যানবাহনে টোল চার্জ দিতে হবে। প্রাইভেটকারের ক্ষেত্রে ন্যূনতম টোল ফি ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পিকআপ ট্রাককে প্রতি ক্রসিংয়ে ২০০ টাকা এবং মাইক্রোবাসে ২৫০ টাকা ভাড়া নেওয়া হবে।
৩১টির কম আসনের বাসগুলোর ৩০০ টাকা এবং ৩২টির বেশি আসনের বাসগুলোর ৪০০ টাকা টোল দিতে হবে।
পাঁচ টন পর্যন্ত পণ্য বহনে সক্ষম ট্রাকের জন্য টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০০ টাকা। আট টনের ট্রাকে ৫০০ টাকা এবং ১১ টনের ট্রাকে ৬০০ টাকা দিতে হবে। তিন এক্সেল কনটেইনার ট্রেইলারের জন্য ৮০০ টাকা।
চার এক্সেলের একটি ট্রেলারের জন্য ১ হাজার টাকা। তবে প্রতিটি অতিরিক্ত এক্সেলের জন্য অতিরিক্ত ২০০ টাকা দিতে হবে।
টানেলটি যানবাহন চলাচলের জন্য চালুর দিন থেকে টোল হার কার্যকর হবে।
আরও পড়ুন: অক্টোবর-নভেম্বরে দুই ভাগে বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন: সেতুমন্ত্রী
দোহাজারী-কক্সবাজার রুটে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে ১৫ অক্টোবর
আগামী ১৫ অক্টোবর দোহাজারী-কক্সবাজার রুটে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে রেলপথের ৯২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দোহাজারী-কক্সবাজার রেল প্রকল্পের পরিচালক মফিজুর রহমান ইউএনবিকে বলেন, রেলপথমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজনের উপস্থিতিতে ট্রেনটি পরীক্ষামূলক চালানো হবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কক্সবাজার রেল লাইনের কাজ প্রায় শেষ প্রান্তে। আইকনিক রেল স্টেশন, কালভার্ট, লেভেল ক্রসিং, হাইওয়ে ক্রসিংয়ের নির্মাণ শেষ হতে চলেছে।
মফিজুর রহমান বলেন, ১০২ কিলোমিটার দোহাজারী-কক্সবাজার রেল প্রকল্প প্রায় শেষ এবং এখন এটি ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত।
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে রুটে পরক্ষিামূলক চালুর জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে এবং প্রথমে ছয়টি বগি নিয়ে একটি লোকোমোটিভ ট্রেন চালানো হবে এই রুটে। অক্টোবরের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলপথটি উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। পরে ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেললাইন স্থাপন প্রকল্পটি প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া-ভাঙ্গা রেলপথে চলল পরীক্ষামূলক পণ্যবাহী ট্রেন
প্রকল্প পরিচালক জানান, প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজারে ঝিনুকের আদলে বিশ্বমানের সর্বাধুনিক রেলওয়ে স্টেশনের নির্মাণের পাশাপাশি দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মোট ৯টি স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া, সংরক্ষিত বন এলাকায় রেললাইন স্থাপনে বন্য হাতি ও বন্যপ্রাণী চলাচলের জন্য ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে যা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম।
সম্প্রতি অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত ৪৫০ মিটার রেলপথ পুনঃসংস্কার শেষ হয়েছে। অতি দ্রুত এ রুটটির কাজ শেষ হবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।
কক্সবাজার পর্যটক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, রেলপথ চালু হলে পর্যটকের সংখ্যা তিন গুণ বাড়তে পারে।
কক্সবাজারের বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম বলেন, জেলার বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে ট্রেন পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হলেও দোহাজারী-কক্সবাজার প্রকল্প তাদের স্বপ্ন পূরণ করবে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ এবং সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১৫ অক্টোবর রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
আরও পড়ুন: মোংলা-খুলনা রেলপথের ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ, অক্টোবরে চলবে ট্রেন
বৈদেশিক আর্থিক প্রস্তাবে দরকষাকষির জন্য বাংলাদেশের একাধিক বিকল্প প্রয়োজন: জাপানি বিশেষজ্ঞ
জাপানের এক বিশেষজ্ঞের মতে, যেকোনো প্রস্তাব, বিশেষ করে আর্থিক প্রস্তাবের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আরও বেশি বিকল্প থাকা দরকার। এটি বাংলাদেশকে আরও বেশি দরকষাকষির সুযোগ দেবে।
ইন্টারন্যাশনাল হাউজ অব জাপানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং কেইও ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. কেন জিম্বো সম্প্রতি ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশকে আরও বেশি অবাধ সুযোগ-সুবিধা দিতে এ ধরনের প্রস্তাব তৈরিতে আমাদের অত্যন্ত শক্তিশালী হতে হবে। আপনার যদি দুটি বা ততোধিক বিকল্প থাকে তবে এটি আরও ভালো। আসলে আমাদের উভয়েরই আরও বিকল্প থাকা দরকার।’
জাপানের ফ্রি অ্যান্ড ওপেন ইন্দো-প্যাসিফিক (এফওআইপি) বিষয়ক নতুন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, জাপান কোনো শর্ত ছাড়াই ৫১টি আইটেম প্রস্তাব করছে এবং যেটি আকর্ষণীয় সেটি বেছে নিতে পারে বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন: নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়, মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকব: জাপানি রাষ্ট্রদূত
২০২০ সালে জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী তারো কোনোর বিশেষ উপদেষ্টা এবং ২০১৮-২০ সাল পর্যন্ত জাতীয় নিরাপত্তা সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এই জাপানি বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, চীনের প্রস্তাবগুলো নিয়মভিত্তিক এবং আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলে তারা তা বিবেচনা করবে।
তিনি বলেন, 'যদি চীন থেকে খুবই আকর্ষণীয় কোনো প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে প্রস্তাব আসে এবং জাপান বা অন্য কোনো দেশের বিকল্প কোনো প্রস্তাব না থাকে, তাহলে চীনের অর্থ নেওয়া ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনো উপায় নাও থাকতে পারে।’
এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক কেন বলেন, এফওআইপিতে অবশ্যই সহযোগিতামূলক উপাদানগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক উপাদান রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘জাপানি সংস্করণে, আপনি প্রচুর সহযোগী উপাদান খুঁজে পেতে পারেন, আমরা যে আইটেমগুলোর রূপরেখা করেছি সেগুলোর মধ্যে প্রায় অনেকগুলোই।’
জাপানি এই বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতা ও সামর্থ্য বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা একটি সক্ষমতা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করি। কোনো ধরনের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ দেখা দিলে আমরা যৌথভাবে যেন তা মোকাবিলা করতে সক্ষম হই। এটাই ভিত্তি।’
অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যাপক কেন স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন, যা বাংলাদেশের স্থিতিশীল শাসন ব্যবস্থার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা তৈরি করবে।
তিনি বলেন, 'আমি মনে করি, বাংলাদেশে আরও সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য বিনিয়োগকারীদের ইতিবাচক মানসিকতা এবং জনগণের দৃষ্টিভঙ্গির জন্য এটি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
অধ্যাপক কেন বলেন, 'আমি মনে করি, বাংলাদেশকে একটি স্থিতিশীল দেশ হিসেবে তুলে ধরতে হলে গণতন্ত্র একটি ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া, কারণ আপনাকে জনগণের কথা শুনতে হবে, সরকারে প্রতিনিধিত্ব করতে হলে জনগণের নানা রকম স্বার্থের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।’
এফওআইপি সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাপান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৬ সাল থেকে মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণাটি প্রচার করছে।
প্রফেসর কেন বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণার প্রতি গভীর মনোযোগ দিচ্ছে এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে তাদের সম্পৃক্ততা ও সহযোগিতা বাড়াচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি চলতি বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বাংলাদেশের 'ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক' ঘোষণাকে স্বাগত জানান।
আরও পড়ুন: জাপানি ব্যবসায়ীদের শিল্পকারখানা স্থাপনের জন্য জায়গা দেওয়ার প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর
অধ্যাপক কেন উল্লেখ করেন, ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণাটি ২০১০ এর দশকে আবির্ভূত হয়েছিল কারণ ১৯৮০ এর দশক থেকে এশিয়ার আঞ্চলিক ধারণাগুলো প্রকাশ হয়েছিল।
ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় নীতির প্রথম আনুষ্ঠানিক সংস্করণটি জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ভাষণ থেকে আসে। ২০১৬ সালের আগস্টে কেনিয়ার নাইরোবিতে টিআইসিএডির ষষ্ঠ অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বিষয়টি উপস্থাপন করেছিলেন।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘সুতরাং এটি আজও গুরুত্বপূর্ণ জাপানি আঞ্চলিক সম্পৃক্ততা ধারণা হিসেবে রয়ে গেছে। মার্কিন-চীন মহাশক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা অন্যান্য অনেক অঞ্চলেও প্রভাব বিস্তার করছে।’
তিনি বলেন, জাপান অর্থনৈতিক সংযোগ, প্রশাসনিক সংস্কার, নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার উপর অনেকগুলো আইটেম নিয়ে নতুন পরিকল্পনার প্রস্তাব করছে। এতে সহযোগিতার অনেকগুলো আইটেম রয়েছে যা জাপান কোনো বিশেষ শর্ত ছাড়াই সরবরাহ করতে পারে।
অধ্যাপক কেন বলেন, ‘এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অবকাঠামো তহবিল, সংযোগ বিনিয়োগসহ অনেক আইটেম অনেক দেশের জন্য রয়েছে। তারা সত্যিই পছন্দ করে বেছে নিতে পারে।এখানে অনেকগুলো বিকল্প রয়েছে্।’
তিনি বলেন, জাপানের উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশনে এটি অর্থনীতিককেন্দ্রিক বা নিরাপত্তা আওতায় যাওয়ার অনুরোধ। ‘আমি মনে করি প্রধানত অর্থনৈতিক দিক থেকে এটি অনেক বেশি ভারসাম্যপূর্ণ।’
‘স্মার্ট গ্রিড’র দিকে যেতে শীর্ষ মার্কিন পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে পাওয়ার সেল
আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সরকার প্রচলিত গ্রিড সিস্টেমকে ধীরে ধীরে স্মার্ট গ্রিডে উন্নীত করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে- প্রাথমিকভাবে স্মার্ট গ্রিড সিস্টেমটি পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এবং ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) অধীনে প্রতিষ্ঠিত হবে।
এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে, প্রাথমিকভাবে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এবং ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) অধীনে স্মার্ট গ্রিড সিস্টেম স্থাপন করা হবে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপকে (বিসিজি) নিয়োগ দিয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কারিগরি শাখা পাওয়ার সেল জাতীয় গ্রিড ও সংযুক্ত ইউটিলিটির বর্তমান অবস্থা মূল্যায়ন এবং নতুন ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা চিহ্নিত করতে জরিপ পরিচালনার জন্য তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানায় সূত্রটি।
আরও পড়ুন: আদানি প্ল্যান্ট থেকে বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে পরীক্ষামূলক বিদ্যুত সঞ্চালন শুরু
‘বাংলাদেশের পাওয়ার ইউটিলিটিগুলোর জন্য ও স্মার্ট গ্রিড রোডম্যাপের প্রযুক্তিগত সহায়তা’ শিরোনামে এরই মধ্যে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বিসিজি।
ইউএস ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির আর্থিক সহায়তায় এবং ফলোআপ হিসেবে বিজিসি এই জরিপ পরিচালনা করে। ইউএসটিডিএ পরবর্তী জরিপ ও প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য ১ জুন অনুদান হিসেবে ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিতে পাওয়ার সেলের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করেছে।
পাওয়ার সেলের কর্মকর্তারা জানান, চুক্তির আওতায় বিসিজি সামগ্রিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থার পাশাপাশি সব বিদ্যুৎ ইউটিলিটির প্রযুক্তিগত ও আর্থিক চাহিদা মূল্যায়ন করে আরও বিস্তৃত ও বিশদ অধ্যয়ন করবে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন ইউএনবিকে বলেন, "প্রকৃতপক্ষে, একটি মার্কিন পরামর্শক সংস্থা সামগ্রিক সিস্টেমকে একটি স্মার্ট গ্রিড সিস্টেমে রূপান্তর করার জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করবে। সেখানে সবকিছু ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হবে এবং বিদ্যমান ম্যানুয়াল সিস্টেমের পরিবর্তে একটি স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম স্থাপন করা হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অফ-গ্রিড নবায়নযোগ্য ও ক্যাপটিভ পাওয়ারসহ দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ২৭ হাজার ৮৩৪ মেগাওয়াট। এর মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট উৎপন্ন হয়েছিল।
ট্রান্সমিশন লাইনের দৈর্ঘ্য ১৪ হাজার ৯৩৪ সার্কিট কিলোমিটার যেখানে ৬৩ হাজার ৮৯৫টি গ্রিড সাবস্টেশন রয়েছে এবং বিতরণ লাইনের দৈর্ঘ্য ৬ লাখ ৪৩ হাজার কিলোমিটার।
আরও পড়ুন: জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলো মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিট-১
মোট গ্রাহক সংখ্যা ৪৫ দশমিক ৪ মিলিয়ন এবং সিস্টেম লস ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪০ হাজার মেগাওয়াটে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।
কর্মকর্তারা বলেন, শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পেছনে দ্রুত বর্ধনশীল সিস্টেমকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য সরকার স্মার্ট গ্রিড প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নিয়েছেন।
তারা বলেন, পরামর্শক সংস্থা বিসিজি ডিসেম্বরে পরবর্তী প্রতিবেদন জমা দেবে। যার ভিত্তিতে পিজিসিবি ও ডিপিডিসি স্মার্ট গ্রিড সিস্টেম বাস্তবায়নের জন্য পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করবে।
এদিকে প্রাথমিক জরিপসহ জমা দেওয়া প্রতিবেদনে বিজিসি সাইবার নিরাপত্তাকে একটি মূল ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এখানে পিজিসিবিসহ বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রিড নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে পিছিয়ে রয়েছে।
স্মার্ট গ্রিড প্রতিষ্ঠার রোডম্যাপ বাস্তবায়নে ৮টি মূল চ্যালেঞ্জ ও ২৮টি প্রযুক্তি সমাধান ও উদ্যোগ চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যুতের বিতরণ খাতে ১৫টি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন, অসঙ্গতিপূর্ণ বিদ্যুতের গুণমান, ম্যানুয়াল অপারেশন ও সম্পদের সীমিত দৃশ্যমানতা, সরবরাহের পরিবর্তনশীলতা বৃদ্ধি, বিলিং দক্ষতা উন্নত এবং অ-প্রযুক্তিগত ক্ষতি হ্রাস, উন্নত গ্রাহক সন্তুষ্টি, বৈদ্যুতিক গাড়ির চার্জিং পয়েন্টের অভাব এবং অসম্পূর্ণ রাজস্ব আদায়ের মতো মূল চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিসিজি বিদ্যুৎ খাতের ট্রান্সমিশন বিভাগের জন্য ৫টি চ্যালেঞ্জও চিহ্নিত করেছে।
সেগুলো হলো- উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি লস, ক্রমবর্ধমান ট্রান্সমিশন লস, গ্রিড সম্পদের ম্যানুয়াল অপারেশন ও প্রতিক্রিয়াশীল ভিএআর (ভোল্ট-অ্যাম্পস প্রতিক্রিয়াশীল) ব্যবস্থাপনা।
সবশেষে এই সেক্টরের জেনারেশন সেগমেন্টের জন্য ২টি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে।
সেগুলো হলো- উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি প্রকরণ ও পাওয়ার বাধা।
আরও পড়ুন: তিতাস গ্যাসক্ষেত্রের পুরানো কূপ থেকে দৈনিক ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ শুরু
কুড়িগ্রামে পাকিস্তান আমলে নির্মিত সেতুর মেরামত হয়নি, ভোগান্তিতে ৬ গ্রামের মানুষ
বন্যা ও ভূমিকম্পে ২০১৬ সালে ভেঙে পড়ে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বেরুবাড়ি ইউনিয়নের বেরুবাড়ী ছড়ার উপর নির্মিত সেতুটি। এতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন ৬টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ।
স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, পণ্যবাহী পরিবহন, গুরুতর অসুস্থ রোগীদের অ্যাম্বুলেন্সে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিতে না পারা এবং আগুন ধরলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে না পারায় মহাবিপাকে পড়েছেন স্থানীয়া। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দফায় দফায় অভিযোগ করেও প্রতিকার না পাওয়ায় দুর্ভোগের শিকার এসব গ্রামবাসী।
৭ বছর থেকে কেন নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন এখানকার মানুষ - এ প্রশ্ন সর্বত্র। তাই জনদুর্ভোগ নিরসনে অবিলম্বে নতুন করে সেতু নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে পাটের দাম কমে যাওয়ায় কৃষকরা হতাশ
স্থানীয়দের থেকে জানা গেছে, পাকিস্তান শাসনামলে বেরুবাড়ীর ছড়ার উপর প্রায় ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মিত হওয়ার পর থেকে আর মেরামত করা হয়নি। ২০১৬ সালে ভূমিকম্পে সেতুর পশ্চিম দিকে ২০ মিটার অংশ এবং পূর্ব দিকে ১০ মিটার অংশ ভেঙে যায়। এতে চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে সেতুটি।
একই বছর সেতুর নিচ দিয়ে একটি ট্রাক্টর যাওয়ার সময় সেতুটিতে ধাক্কা লাগে। এতে আরও ভেঙে যায় সেতুটি। চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে বেরুবাড়ী সেতুটি। ফলে নাগেশ্বরী উপজেলার সঙ্গে যোগযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন বেরুবাড়ী ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ।
২০১৭ সালে বেরুবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতা ও স্থানীয়দের সমন্বয়ে ওই সেতুর উপর কাঠ একটি সাঁকো নির্মাণ করে এলাকাবাসী। কিন্তু দীর্ঘদিন ওই কাঠের সাঁকোটি সংস্কার না করায় সেটিও ভেঙে যায় এবং সম্প্রতি বন্যায় সেতুর একটি অংশ দেবে গিয়ে সেতুটি এখন এলাকাবাসীর মরণ ফাঁদে পরিণত হয়। এমতাবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেতু পারাপার হচ্ছে স্থানীয়রা। যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা।
নাগেশ্বরী উপজেলার হাজিপাড়া, সরকারপাড়া, মন্ডলপাড়া, মিরারভিটা, চর বেরুবাড়ী, চর শালমারা, আকন্দপাড়া ও বেরুবাড়ী ইউনিয়নের প্রায় ৭ হাজারের বেশি মানুষ প্রতিদিন ওই সেতু ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া স্কুল কলেজ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বেরুবাড়ী বাজার হয়ে উপজেলা শহরে অফিস-আদালতে যেতে এই সেতু দিয়ে পারাপার হতে হয়।
স্থানীয় মিরারভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর বেরুবাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাগেশ্বরী মহিলা সরকারি কলেজ, নাগেশ্বরী সরকারি কলেজ এবং ওই ইউনিয়নের প্রায় ৫টি ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা এই সেতু দিয়ে যাতায়াত করে।
বেরুবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সোলায়মান আলী বলেন, ‘২০১৬ সালে ভূমিকম্পে সেতুটির দু’পাশে দেবে গিয়ে ভেঙে যায় এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। একাধিকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেও কাজ হচ্ছে না। সেতুতে যাতায়াতের সড়কটি আইডিভূক্ত না হওয়ায় উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার বলেছেন, জটিলতটা আছে, সেতুটি সহসাই হচ্ছে না।’
এ বিষয়ে কথা হলে কুড়িগ্রাম স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদুজ্জামান বলেন, ‘২০১৬ সালে সেতুটি ভেঙে যায় বলে শুনেছি। উপজেলা প্রকৌশলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ২৩৬টি নতুন রাস্তাকে আইডিভূক্তির তালিকায় সেতুটির নাম পাঠানো হয়েছে। যদি সড়কটি আইডিভূক্ত হয় তাহলে সেতু নির্মাণ সহজ হবে। আশা করছি সেটি দ্রুত সম্ভব হবে।’
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বন্যায় এখনো ৭০০০ পরিবার পানিবন্দি
আগারগাঁও-মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের উদ্বোধন হবে ২০ অক্টোবর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রথম মেট্রোরেল আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন করবেন আগামী ২০ অক্টোবর।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ইউএনবিকে এ তথ্য জানান।
ওইদিন প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেলের ফার্মগেট, সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশন উদ্বোধন করবেন। এ ছাড়া ঢাকা মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে ৭টি স্টেশন রয়েছে।
এগুলো হলো- বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, টিএসসি, প্রেস ক্লাব ও মতিঝিল।
মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশটি চালু হলে যাত্রীরা উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মাত্র ৩৮ মিনিটে যাতায়াত করতে পারবেন। যা ঢাকার জীবনযাত্রায় একটি অলৌকিক ঘটনা।
প্রাথমিকভাবে প্রতি ১৫ মিনিটে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পাঁচটি ট্রেন চলবে এবং সময়ের ব্যবধান কমিয়ে ধীরে ধীরে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে জানান মন্ত্রী।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক বলেন, ফার্মগেট, সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশনগুলো ২০ অক্টোবর চালু হচ্ছে।
স্টেশনের যাবতীয় কাজ শেষ হয়েছে। এখন স্টেশনে যাত্রীবাহী ওয়াকওয়ের কাজ চলছে এবং ১৫ অক্টোবরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সিদ্দিক।
আরও পড়ুন: মেট্রোরেল ও পদ্মা সেতু প্রমাণ করে আ. লীগ কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী: কাদের
প্রাথমিকভাবে সব ট্রেন মতিঝিল পর্যন্ত যাবে না। ট্রেনের নম্বর দেওয়া থাকবে। নম্বর অনুযায়ী কোন ট্রেন আগারগাঁও যাবে আর কোনটি মতিঝিল যাবে, তা শনাক্ত করা যাবে।
ডিএমটিসিএল এমডির মতে, একটি ট্রেন বাণিজ্যিকভাবে চলার আগে লাইনে তিন ধাপের পরীক্ষা চালানো হয়। ট্রায়াল রানের প্রথম ধাপ হলো দক্ষতা পরীক্ষা বা কর্মক্ষমতা পরীক্ষা। দ্বিতীয় ধাপে হবে সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন টেস্ট। চূড়ান্ত পর্যায়ে হবে ট্রায়াল রান বা পরীক্ষামূলক আন্দোলন।
সিদ্দিকী আরও বলেন, এখন আমরা দ্বিতীয় ধাপে আছি এবং উদ্বোধনের পাঁচ দিন আগে সব পরীক্ষা শেষ হবে।
মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের মতে, পুরো সিস্টেমটি চালু হলে প্রাথমিকভাবে সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পরিষেবা পাওয়া যাবে এবং তারপরে এটি রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বাড়ানো হবে।
দেশের প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। উল্লেখযোগ্যভাবে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) প্রকল্পটি সমর্থন করার জন্য ঋণ আকারে ১৯ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা প্রদান করে এবং অবশিষ্ট অর্থ বাংলাদেশ সরকার প্রদান করে।
শুরুতে, এই প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত অতিরিক্ত ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার অংশ নির্মাণের ফলে প্রতিটি স্টেশনের জন্য নতুন জমি অধিগ্রহণ এবং বিভিন্ন নতুন সুযোগ-সুবিধা সংযোজন করায় ব্যয় বেড়েছে।
২০১৭ সালে প্রকল্পের মূল নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটি ডিসেম্বর ২০২৫ এর মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর ঢাকা মেট্রোরেলের এমআরটি-৬ লাইনের উত্তরা-আগারগাঁও সেকশনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রথমে এই রুটের মাত্র ৩টি স্টেশন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল। পরে উত্তরা-আগারগাঁও রুটের ৯টি স্টেশন পর্যায়ক্রমে চালু হয়।
আরও পড়ুন: মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল রুট ২০ অক্টোবর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী