বাংলাদেশ
সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
কোটা সংস্কারের আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় নিহত রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাঈদের মা–বাবার হাতে সাড়ে সাত লাখ টাকার একটি চেক তুলে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদল।
আর্থিক সহায়তা প্রদানের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মণ্ডল আসাদ, অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফিরোজুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রক্টর শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ভিসি স্যারের নির্দেশে সাঈদের বাবা-মায়ের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রাখছে বিশ্বিবদ্যালয় প্রশাসন। তিনি নিজেও সাঈদের পরিবারের খোঁজ রাখছেন; পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে আজকে সাড়ে সাত লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ সহযোগিতার ধারা অব্যাহত থাকবে।’
এসময় নিহত আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এর আগে আরেকদিন আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। সে সময় ভিসি স্যার আমার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন। আমাদের খোঁজ খবর নেন। আমাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। আমি স্যারকে বলেছিলাম, আমাদের পরিবারের একজনকে যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়া হয়। ভিসি স্যার আশ্বস্ত করেছেন।’
প্রতিদিনই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেউ না কেউ খোঁজ রেখেছেন। এছাড়াও পরিচিত অপরিচিত অনেকেই সহায়তা করছেন বলেও জানান তিনি।
সাঈদের বাবা আরও বলেন, ‘আমার কলিজার টুকরা আবু সাঈদ। তার প্রাইভেট পড়ানোর (টিউশনের) জমানো টাকায় চলতাম আমরা। সন্তান হারিয়েছি, এ শোকের সান্ত্বনা নেই। পিতা হয়ে সবচেয়ে ভারী কাজ হলো সন্তানের লাশ কাঁধে নেওয়া।’
প্রসঙ্গত, গত ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাইদ।
জাবি শিক্ষকের পদত্যাগ: শাস্তি এড়ানো, না কি বিবেকের ডাকে সাড়া?
শিক্ষার্থীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাহিদুল করিম পদত্যাগ করেছেন।
বৃহস্পতিবার ই-মেইলের মাধ্যমে উপাচার্য নুরুল আলমের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন করিম।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জাহিদুল করিমের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত চলমান থাকায় সম্ভাব্য শাস্তির আশঙ্কায় পদত্যাগ করেছেন।
আরও পড়ুন: পাঞ্জাবি-পায়জামা ইস্ত্রি করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সেনা সদস্যের মৃত্যু
জনসংযোগ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২১ সালের ২৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের বিশেষ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের এমবিএ দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষা কমিটি পুনর্গঠন এবং পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের সহযোগিতার অভিযোগ উঠে তৎকালীন বিভাগীয় সভাপতি জাহিদুল করিমের বিরুদ্ধে। এঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন গ্রহণ করে ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনার পর সুপারিশ প্রদানের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী দক্ষতা ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশের ৫(ক) (২) উপধারা মোতাবেক আনুষ্ঠানিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যার কার্যক্রম বর্তমানে চলমান থাকা অবস্থায় তিনি চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করেন, জাহিদুল করিম তদন্তে শাস্তির আশঙ্কা থেকে চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি ‘উদ্দেশ্যমূলক ও দূরভিসন্ধি’ থেকে দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাকে কারণ হিসেবে অব্যাহতি পত্রে উল্লেখ করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দৃঢ়ভাবে জানায়, তার বিরুদ্ধে গঠিত আনুষ্ঠানিক তদন্ত চলবে এবং তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর তদনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে জাহিদুল করিম বলেন, তার স্ত্রী ওই ব্যাচের ছাত্রী হলেও তিনি কোনো অ্যাকাডেমিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না। তার পরীক্ষার সময় অসদুপায় অবলম্বন সম্পর্কে কিছুই জানতেন না এবং এটিকে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেন।
ব্যাচের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি (চতুর্থ এমবিএ, ২০১৭-১৮) অধ্যাপক আউয়াল আল কবির বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন।
এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তিনি বলেন, পরীক্ষায় তার (জাহিদ করিমের) অনিয়মের বিষয়টি আমি বিশ্ববিদ্যালয়কে জানিয়েছি।
আরও পড়ুন: জাবিতে পুলিশের হাতে সাংবাদিক ‘লাঞ্ছিত’
অধ্যাপক কবীর বলেন, 'এখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের আরেক অধ্যাপক ইউএনবিকে বলেন, করিমের অসদাচরণের বিষয়টি নজরে এলে বিভাগে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং পরীক্ষা কমিটির সদস্যরা তার বিরুদ্ধে তৎকালীন উপাচার্য ফারজানা ইসলামের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘তাকে বাঁচাতে তদন্ত প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করা হয় এবং তাকে শিক্ষা ছুটিতে বিদেশে পাঠানো হয়।’
'শিক্ষক সমাজের বিবেক নষ্ট হয়েছে'
এর আগে গত ২৫ জুলাই সহযোগী অধ্যাপক জাহিদুল করিম ই-মেইলের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র জমা দেন। সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারের বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে তিনি স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়তে চান বলে জানান।
চিঠিতে তিনি লিখেছেন, তিনি প্রায় ১৪ বছর ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষকতা করছেন।
দেশে সাম্প্রতিক সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা সম্পর্কে সরকারের অবহেলা এবং তার সহকর্মী শিক্ষকদের 'পক্ষপাতদুষ্ট মনোভাব' তাকে গভীরভাবে ব্যথিত করেছে।
তিনি সর্বদা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিতে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কোটা সংস্কারের ন্যায্য দাবির বিরুদ্ধে সরকারের আগ্রাসী অবস্থানের কারণে অনেক শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছেন।
সরকার চাইলে দ্রুত শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিতে পারত, তাহলে এত প্রাণ হানির ঘটনা ঘটত না। যেসব শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে, তাদের নিয়ে তাদের পরিবারের অনেক স্বপ্ন ছিল। সন্তান হারানোর বেদনায় তারা আজ দিশেহারা। তাদের সাথে সাথে সমগ্র জাতি আজ শোকাহত। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগ, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি যে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, তা এই জাতির জন্য একটি কালো অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে।
স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে হত্যা এবং কিছু সংখ্যক প্রতিবাদী শিক্ষকদের রক্তাক্ত করার মধ্যদিয়ে ১৯৭১ সালের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে।
‘এই হত্যাকাণ্ড দেখেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শিক্ষকদের আমি নির্লিপ্ত থাকতে দেখেছি। শিক্ষকদের ভূমিকা আজ জাতির কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। রাজনৈতিক দলীয় করণের কারণে শিক্ষক সমাজের বিবেক লোপ পেয়েছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক ভুলুণ্ঠিত হয়েছে। শহীদ সব শিক্ষার্থী এবং আহত সব শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা প্রকাশ করছি এবং তাদের জন্য দোয়া করছি। সমগ্র বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজের মূল্যবোধ এবং নৈতিকতাবোধ কে জাগ্রত করতে আমি সহযোগী অধ্যাপক, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিস বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিচ্ছি।’
আরও পড়ুন: সার্ক কালচারাল সেন্টারের উপপরিচালক হলেন জাবি অধ্যাপক
রিমান্ড শেষে কারাগারে নুরুল হক নুর
রাজধানীর বনানীতে সেতু ভবনে হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুরকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাকিল আহমেদ শুনানি শেষে জামিন আবেদন নাকচ করে নুরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আরও পড়ুন: এমপি আনার হত্যা: গ্রেপ্তার ৩ আসামি ৮ দিনের রিমান্ডে
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের পরিদর্শক আবু সাইদ মিয়া পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে নুরকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।
নুরের পক্ষে খাদেমুল ইসলাম জামিন চেয়ে শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে। শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে নুরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত ২১ জুলাই নুরের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন আদালত।
আরও পড়ুন: এমপি আনার হত্যা: দুই আসামি ৬ দিনের রিমান্ডে
বারিধারায় কনস্টেবল হত্যা: সাত দিনের রিমান্ডে কাওসার
জীবন নিয়ে খেলা বন্ধে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বন্ধ করতে দেশে সাম্প্রতিক সহিংসতায় জড়িতদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (জুলাই ২৬) বিকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় আহতদের খোঁজখবর নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) জরুরি বিভাগ পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘অত্যন্ত বেদনাদায়ক অবস্থা, আজকে এতগুলো মানুষ আহত-নিহত।’
এ ধরনের জঘন্য অপরাধে জড়িত অপরাধীদের খুঁজে বের করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশবাসীকে বলবো যারা এ ধরনের জঘন্য কাজ করে, কোথায় কে আছে খুঁজে বের করতে হবে। তাদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে, যেন আর কখনো এদেশের মানুষের জীবন নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে।’
‘যেটা আমি কখনো চাইনি। কখনোই চাইনি এভাবে মানুষ আপনজন হারাবে, এভাবে মৃত্যুর মিছিল হবে এটা কখনো চাইনি। আজকে বাংলাদেশে সেটাই করল।’
আরও পড়ুন: সহিংসতায় জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করুন: বিটিভি পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী
তিনি জানান, তার সরকার জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এবং জনগণের উন্নত জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
‘আমার প্রশ্ন হচ্ছে তারা এ থেকে কী অর্জন করেছে? এত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন! এতগুলো পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে!’
প্রধানমন্ত্রী এসময় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
তিনি বলেন, ‘(আহতদের) চিকিৎসার জন্য যা যা প্রয়োজন সরকার করে যাচ্ছে এবং করবে। চিকিৎসা শেষে তাদের অন্তত আয় রুজির ব্যবস্থা যাতে হয় সেটাও আমরা করব।’
চিকিৎসক থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী সবাই আহতদের খোঁজখবর রাখছেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। জঙ্গিবাদ ও জুলুম থেকে মুক্তির জন্য এসময় দেশবাসীকে দোয়া করার আহ্বান জানান তিনি।
জামায়াত-শিবির ও বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ জামায়াত-শিবির, বিএনপি, ছাত্রদল- তারাই এই সুযোগ নিয়ে, কোটা আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে দেশব্যাপী ধ্বংসাত্মক কাজ করে যাচ্ছে। এদের মধ্যে কোনো মনুষ্যত্ববোধ নেই, দেশের প্রতি কোনো মায়া-মমতা নেই, কোনো দায়িত্ববোধ নেই। মানুষকে এরা মানুষ হিসেবেই গণ্য করে না।’
এই বর্বরতার বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বলেন, ‘আমরা (শিক্ষার্থীদের সব দাবি) মেনে নিয়েছি। তাহলে আবার আন্দোলন কেন? এটা কি জঙ্গিবাদের সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য?’
এসময় আহতদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: সাম্প্রতিক সংঘর্ষে আহতদের দেখতে ঢামেক হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ।
এর আগে, এদিন সকালে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবন পরিদর্শনে যান প্রধানমন্ত্রী। তার আগে, বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শন করেন তিনি।
দেশে ডেঙ্গুতে আরও ১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ১৪৮
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশে শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
তবে এই সময়ের মধ্যে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪৮ জন।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গুতে আরও ২৫ জন আক্রান্ত
এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩০ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালে নতুন করে ভর্তি হয়েছেন আরও ১১৮ জন রোগী।
চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৫১ জনের। এদের মধ্যে পুরুষ ৪৭ দশমিক ১ শতাংশ ও নারী ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৫ হাজার ৩৯৮ জন।
এর মধ্যে পুরুষ ৬০ দশমিক ৯ শতাংশ ও নারী ৩৯ দশমিক ১ শতাংশ।
আরও পড়ুন: দেশে আরও ২৬৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত
ডেঙ্গুতে আরও ১৭৪ জন আক্রান্ত
সাম্প্রতিক সংঘর্ষে আহতদের দেখতে ঢামেক হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী
সম্প্রতি দেশব্যাপী সংঘর্ষে আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ঢামেকের জরুরি বিভাগে যান তিনি।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় হামলার শিকার হয়ে আহতদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন।
আরও পড়ুন: বিটিভি ভবনের ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী আহতদের সুচিকিৎসার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকালে রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে ভাঙা মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শন করেন। আজ সকালে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবন পরিদর্শন করেন। সহিংসতার সময় এসব স্থাপনায় হামলার ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেখতে তিনি এসব স্থাপনা পরিদর্শনে যান।
এসময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী রোকেয়া সুলতানা, স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: সহিংসতায় জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করুন: বিটিভি পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী
দেশে করোনায় ১ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ৫
দেশে শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
তবে নতুন করে ৫ জনের শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ২৯৮ জনে।
আরও পড়ুন: দেশে আরও ১১ জনের করোনা শনাক্ত
এখন পর্যন্ত ভাইরাসটিতে মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৪৯৯ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। একই সময় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
আরও পড়ুন: দেশে আরও ৬ জনের করোনা শনাক্ত
মোট পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১৪ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৮ হাজার ৮৭৯ জনে।
আরও পড়ুন: দেশে আরও ৮ জনের করোনা শনাক্ত ইউএনবি নিউজ ঢাকা PUBLISH-
ভারতীয় শিক্ষার্থীদের নিরাপদে ফিরতে ঢাকার সহযোগিতার প্রশংসা দিল্লির
ভারতীয় ৬ হাজার ৭০০ শিক্ষার্থী নিরাপদে দেশে ফিরে যেতে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে যে 'চমৎকার সহযোগিতা’ পেয়েছেন তার ভূয়সী প্রশংসা করেছে ভারত।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
তিনি বলেন, 'এ পর্যন্ত আমাদের ৬ হাজার ৭০০ ভারতীয় শিক্ষার্থী বাংলাদেশ থেকে ফিরে এসেছেন। আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে চমৎকার সহযোগিতা পেয়েছি।’
আরও পড়ুন: ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস সচল, জরুরি নয় এমন কর্মীদের স্বেচ্ছায় প্রস্থানের অনুমোদন: স্টেট ডিপার্টমেন্ট
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সমর্থন ও সহযোগিতায় তারা তাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপদে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়েছেন। এজন্য তারা 'গভীরভাবে' কৃতজ্ঞ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতে সম্পর্ক দৃঢ়, উষ্ণ ও অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ। ‘এভাবেই আমরা দেশটির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে দেখি।’
তিনি বলেন, ভারতের হাইকমিশন সীমান্ত ক্রসিং পয়েন্ট বা বিমানবন্দরে তাদের নিরাপদ ও সুরক্ষিত ভ্রমণের ব্যবস্থা করেছে।
আরও পড়ুন: চলমান পরিস্থিতিকে বাংলাদেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ হিসেবে পুনর্ব্যক্ত করেছে ভারত
মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের হাইকমিশন ও সহকারী হাইকমিশনের বেশ কয়েকটি হেল্পলাইন রয়েছে। তারা সার্বক্ষণিক হেল্পলাইন পরিচালনা করছে এবং সেখানে থাকা আমাদের সব লোক, শিক্ষার্থী ও আমাদের নাগরিকরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। তারা যেকোনো সহায়তার অনুরোধ করলে, তা দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসেবে তাদের সঙ্গে অত্যন্ত উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে বলে অনুভব করে। ‘আমরা আশাবাদী, দেশের পরিস্থিতি শিগগিরই স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’
ভারত বাংলাদেশের ঘটনাবলী 'নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ' করছে এবং ভারত দেশটির চলমান পরিস্থিতিকে বাংলাদেশের 'অভ্যন্তরীণ বিষয়' বলে মনে করে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ন্যায়বিচার ও মূল্যবোধ নবায়নের আশাবাদ ইইউ রাষ্ট্রদূতের
নজিরবিহীন প্রাণহানি সুশাসনের ঘাটতির নির্মম চিত্র: টিআইবি
সাম্প্রতিক সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনে নিপীড়ন, নজিরবিহীন মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ সুশাসনের ব্যাপক ঘাটতি তুলে ধরে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি জোর দিয়ে বলেছে, ভিন্নমত ও দাবি আদায়ের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অপরাধ নয়, সাংবিধানিক অধিকার।
এ সংকট থেকে শিক্ষা নিয়ে অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের বলপ্রয়োগপূর্বক দমন, অপহরণ ও নির্যাতন বন্ধ করে তাদের সব ন্যায্য দাবি মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী পর্যবেক্ষণ সংস্থাটি।
একইসঙ্গে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য সমন্বয়কদের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানায় টিআইবি।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে নজিরবিহীন সহিংসতায় রূপান্তর করায় এখন পর্যন্ত ২শরও বেশি প্রাণহানি হয়েছে।
যৌক্তিক দাবিতে একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অযৌক্তিক, অপ্রয়োজনীয় ও অবৈধ বলপ্রয়োগের কারণে এমন রক্তক্ষয়ী অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সংবিধান দেশের জনগণকে ভিন্নমত প্রকাশ, সমাবেশ, প্রতিবাদ ও দাবি আদায়ের আন্দোলনের অংশ হিসেবে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করার অধিকার দেয়। বিষয়টি নিজেকে গণতান্ত্রিক দাবি করা সরকারকে মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে, এর চেয়ে হতাশাজনক আর কী হতে পারে! একটি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিপুলসংখ্যক প্রাণহানি, হাজার হাজার আহত ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি সুশাসন ও জবাবদিহির প্রকট ঘাটতির দৃষ্টান্ত তুলে ধরছে।’
তিনি আরও বলেন, “গণমাধ্যমে এমন বহু শিশু-কিশোরসহ সাধারণ মানুষের মৃত্যুর ঘটনা উঠে আসছে, যারা আন্দোলনরত ছিলেন না। ‘পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক’ ছোড়া গুলিতে হত্যার পাশাপাশি নিজের বাড়িতে বা ছাদে দাঁড়িয়ে গুলিতে নিহত হওয়া সকল মৃত্যুর পিছনে যারা দায়ী, তাদের বিচার হবে কি?”
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হচ্ছে এমন তথ্য গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে টিআইবি নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে দ্বারা শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা, নাগরিকের প্রতিবাদ বা আন্দোলনের সাংবিধানিক অধিকারের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের শামিল। সরকারকে অবিলম্বে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সব যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে গঠনমূলক সংলাপের মাধ্যমে সব পক্ষের মধ্যে একটি আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’
পাশাপাশি, শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য একটি সর্বসম্মত রোডম্যাপ তৈরি ও বাস্তবায়ন করে দেশব্যাপী চলমান অস্থিরতা ও আতঙ্ক দূর করতে আহ্বান জানান ড. জামান।
তিনি আরও বলেন, ‘সহিংসতার অভিযোগে যেভাবে ঢালাও মামলা ও গ্রেপ্তার চলছে, তা কতটা আইনি প্রক্রিয়া মেনে করা হচ্ছে, সেটি দেখতে হবে। এটি যেন কোনোভাবেই নিরীহ মানুষকে হয়রানি ও গ্রেপ্তার উৎসবে পরিণত না হয়।’
বিক্ষোভ বা আন্দোলন দমনের হাতিয়ার হিসেবে ইন্টারনেট বন্ধ করাকে সরকারের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হিসেবে উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, জনগণের ডিজিটাল অধিকার লঙ্ঘন করে দেশকে বর্হিবিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে অবাধ তথ্য ও মতপ্রকাশ রোধ করা হয়েছে। দেশজুড়ে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে আর্থিক লেনদেন ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা, রপ্তানি ও শিল্প উৎপাদনকে ব্যাপক ক্ষতির মুখে ফেলা হয়েছে। গ্যাস-বিদ্যুতের মতো সেবা পেতে নাগরিকদের অহেতুক হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে।’
ইন্টারনেট বন্ধ রাখা সরকারের সবিরোধী ও সাময়িক সুবিধার স্বার্থে অদূরদর্শিতার প্রমাণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা স্থিতিশীল করা ও তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতে মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পুরোদমে চালু করতে সরকারকে আহ্বান জানায় টিআইবি।
আন্দোলন চলাকালে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিরাপত্তা প্রশ্নের জন্ম দেয় উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এমন সংকটে সরকার ভিন্নমত দমনের নীতি থেকে সরে এসে গণতান্ত্রিক ও সুশাসনমুখী পথ অবলম্বন করবে বলে আশা করে টিআইবি।
সহিংসতায় জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করুন: বিটিভি পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী
সাম্প্রতিক সহিংসতায় জড়িতদের দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে খুঁজে বের করে শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিতে সরকারকে সহযোগিতা করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, 'আমি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাই, যারা এই ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করতে সহযোগিতা করুন।’
শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকালে রাজধানীর রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবনের ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শনকালে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: বিটিভি ভবনের ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
সম্প্রতি সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের দেওয়া আগুনে বিটিভি ভবনের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা সারাদেশ থেকে জড়ো হয়ে রাজধানীতে এসব হামলা চালিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে তারা এসব করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন বিটিভিকে ক্যামেরাসহ সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করেন তিনি। ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর তিনি টেলিভিশন সেন্টারটিকে আরও আধুনিকায়ন করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু এখন বাংলার মানুষ একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞের মতো ভয়াবহ দৃশ্য দেখছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীও টেলিভিশনে হামলা চালায়নি। কিন্তু এই হামলাকারীরা টেলিভিশনে আগুন ধরিয়ে দিয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে; ধ্বংসের হাত থেকে কিছুই রেহাই পায়নি।
প্রত্যেক বাঙালির জন্য গর্বের মেট্রোরেলেও তারা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ওরা কারা? এরা কি এ দেশের মানুষ? যারা দেশকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে এসব হামলা চালিয়েছে, তারা কি এ দেশে জন্মেছে?’
এরা পানি শোধনাগার, পয়োনিষ্কাশন ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ও সিটি করপোরেশনের ময়লার ট্রাকেও হামলা চালিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা এমন স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে যা জনগণের সেবায় নিয়োজিত।
এ সময় হামলাকারীদের মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সহিংসতার সময় প্রায় ৩ হাজার ৮০০ পরিবহন গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
এবারের অগ্নিসন্ত্রাসের চরিত্র ভিন্ন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এবার তারা গানপাউডার ব্যবহার করেছে, তাই কিছুক্ষণের মধ্যে এসব জিনিস পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’
বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমরা যখন বাংলাদেশকে একটি মর্যাদার আসনে নিয়ে গেছি, তখন এটা (ধ্বংসযজ্ঞ) কি এর (সরকারের সাফল্য) পুরস্কার? তারা যে প্রতিষ্ঠানগুলো পুড়িয়ে দিয়েছে সেগুলোর সুফল কি তারা ভোগ করেনি?
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার চাহিদার তুলনায় কোটা অনেক কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু লক্ষ্য করা গেছে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে তাদের তীব্র ক্ষোভ।
তিনি বলেন, ‘আপাতদৃষ্টিতে ৯৮ শতাংশ চাকরি মেধার ভিত্তিতে হবে কারণ (প্রথম প্রজন্মের) মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৫ শতাংশ কোটার বেশিরভাগই অব্যবহৃত থাকবে। তারপরও তারা (আন্দোলনকারীরা) সন্তুষ্ট নয়।’
তার বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১৪ জুলাই তার সংবাদ সম্মেলনের ছয়-সাত ঘণ্টা পর হঠাৎ করেই তারা নিজেদের রাজাকার পরিচয় দিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।
তিনি বলেন, ‘আমি তাদের রাজাকার বলিনি। তারাই স্লোগানে নিজেদের রাজাকার পরিচয় দেয়।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, লন্ডনে তার দলের নেতাদের ওপর হামলা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৫৭ বাংলাদেশিকে এবং সৌদি আরবে ২০ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
যেহেতু তারা ওইসব দেশের আইন অনুযায়ী সাজা পেয়েছে, তাই সেখানে বাংলাদেশের কিছু করার নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আরও ২০-২২ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিকের নিরাপদ ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে শেখ হাসিনা এসব ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বার্তা পাঠিয়েছেন বলে জানান।
তিনি বলেন, সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ ভয়াবহ জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। তাদের জীবন ও জীবিকাকে প্রভাবিত করেছে এবং বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাই দোষীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দায়িত্ব এদেশের মানুষের ওপর তুলে দিলাম। বিভ্রান্তি ও অপপ্রচার চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে দেওয়া উচিত নয় তাদের (বিক্ষোভকারীদের)।’
এসময় রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন কেন্দ্রটির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এবং বিটিভির মহাপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এছাড়াও রাজধানীর রামপুরায় একই প্রাঙ্গণে অবস্থিত বিটিভি ভবন ও বিটিভির প্রধান কার্যালয়ে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র নিয়ে একটি ভিডিও প্রেজেন্টেশন দেখানো হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: অপরাধীদের রুখতে জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে: মেট্রোরেলে তাণ্ডব প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী