বাংলাদেশ
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ৫ ইসলামী ব্যাংক একীভূতকরণের প্রস্তাব অনুমোদন
পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংক একীভূত করে একটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক গঠনের প্রস্তাবনা নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বিষয়টি জানান।
যে পাঁচ ব্যাংক একীভূত হয়ে নতুন ব্যাংক গঠিত হবে সেগুলো হলো—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক।
পাশাপাশি ব্যাংক ও বীমা খাতে আমানত সুরক্ষা আইনকে যুগোপযোগী করে সংশোধনীও অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
মুল্যায়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী উল্লিখিত ব্যাংকগুলোর বিশাল অংকের শ্রেণীকৃত ঋণ বা বিনিয়োগ এবং মূলধন ঘাটতি থাকায় বর্ণিত ৬টি ব্যাংকের মধ্যে ৫টি ব্যাংককে মার্জার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকারি মালিকানায় শরীয়াহ্ভিত্তিক একটি ইসলামি ব্যাংক স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ বিভাগকে অনুরোধ জানিয়েছে। তবে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক পিএলসি-এর শেয়ার মালিকানা বিষয়ে উচ্চ আদালতে মামলা চলমান থাকায় আইসিবি ইসলামী ব্যাংককে উক্ত প্রক্রিয়ার আওতা বহির্ভূত রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিগত এক বছরের অধিক সময় ধরে তারল্য সহায়তা প্রদান করা সত্ত্বেও ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থার কোনও উন্নতি ঘটেনি; বরং তাদের তারল্য সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি, শ্রেণীকৃত বিনিয়োগ বা ঋণ ও অগ্রিমের হার, প্রভিশন ঘাটতি এবং তারল্য সংকট এমন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, তাদের আমানতকারী ও অন্যান্য পাওনাদারদের প্রদেয় পাওনা পরিশোধ করতে না পারায় ব্যাংকিং সেক্টরের প্রতি জনগণের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে, যা দেশের সামগ্রিক আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।
উল্লিখিত ৫টি ব্যাংক আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার সম্ভাবনা না থাকায় আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার, ব্যাংকিংখাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, আমানতকারীদের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নিমিত্ত টেকসই ঋণ প্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুযায়ী ব্যাংকিংখাতের এ ৫টি সংকটাপন্ন ব্যাংককে অতিসত্বর রেজল্যুশন প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা আবশ্যক বলে মনে করে অর্থ বিভাগ।
প্রস্তাবিত নতুন ব্যাংকটি বাণিজ্যিকভাবে ও পেশাদারত্বের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক আরও জানিয়েছে যে, প্রাথমিকভাবে প্রস্তাবিত নতুন ব্যাংকের ৪০ হাজার কোটি টাকার ‘অনুমোদিত মূলধনের’ বিপরীতে ‘পরিশোধিত মূলধন’ হিসেবে আনুমানিক ৩৫ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে।
প্রস্তাবিত নতুন ব্যাংকটির মূলধন বিষয়ে প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, বেইল ইন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের ১৫ হাজার কোটি টাকার আমানত মূলধনে রূপান্তর করা যেতে পারে এবং অবশিষ্ট ২০ হাজার কোটি টাকা সরকার মূলধন হিসেবে প্রদান করতে পারে।
প্রাথমিকভাবে ব্যাংকটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম শুরু করবে, তবে ধীরে ধীরে এর মালিকানা বেসরকারি খাতে হস্তান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা আশা করছি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ব্যাংকটি বেসরকারি খাতে হস্তান্তর করা হবে।’
একীভূতকরণ প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধানের জন্য গত ৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. কবির আহমেদের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটিতে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে প্রতিনিধিরা রয়েছেন।
৮০ দিন আগে
প্রাধ্যক্ষের বাসায় কাজ না করায় জাবির তিন কর্মচারীকে চাকরিচ্যুতির অভিযোগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজিলতুন্নেসা হলের তিন কর্মচারী প্রাধ্যক্ষের বাসায় কাজ করতে অস্বীকৃতি জানানোয় চাকরিচ্যুত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। চাকরি ফিরে পেতে তারা টানা ছয়দিন ধরে হলের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
বুধবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে ষষ্ঠ দিনের মতো হলের সামনে অবস্থান নিতে দেখা যায় চাকরিচ্যুত ওই তিন নারী কর্মচারীকে।
তারা হলের ডাইনিং এটেন্ড্যান্ট মীরা রানী রায়, চম্পা এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মী মোছা. সোমা। তিনজনই দেড় বছর আগে আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান ‘ওয়ার্ল্ড সিকিউরিটি সল্যুশন’-এর মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে কর্মরত ছিলেন।
ভুক্তভোগীরা দাবি, গেল আগস্ট মাসে হঠাৎ করেই তাদের চাকরিচ্যুত করা হয় এবং একই পদে নতুন তিনজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর আগে প্রাধ্যক্ষের বাসায় গৃহকর্মীর মতো কাজ করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর থেকেই তাদের নানা হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।
মীরা রানী রায় বলেন, ‘আমরা হলে পরিশ্রম করে কাজ করেছি। কিন্তু প্রভোস্ট স্যারের বাসায় কেন কাজ করতে যাব? সেই কারণে আমাদের চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এখন সংসার চালানোই কষ্টকর হয়ে পড়েছে।’
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এবিএম আজিজুর রহমান বলেন, ‘প্রাধ্যক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই আউটসোর্সিং কোম্পানিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল। সিদ্ধান্ত কোম্পানিই নিয়েছে।’
ওয়ার্ল্ড সিকিউরিটি সল্যুশনের ডিরেক্টর (অপারেশন) মিনারুল ইসলাম বলেন, ‘ওই তিন কর্মচারী প্রাধ্যক্ষের বাসায় কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। এ কারণেই তাদের সরানো হয়েছে।’
তবে হল কর্মচারীদের প্রাধ্যক্ষের বাসায় কাজ করানোর নিয়ম আছে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন রেখেছেন তিনি।
এর আগে, এক বিবৃতিতে ফজিলতুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কাউকে চাকরিচ্যুত করিনি। আউটসোর্সিং কর্মচারীদের নিয়োগ, বদলি বা অব্যাহতির ক্ষমতা কেবল কোম্পানির। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর দেখি, হলে ডাইনিং কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও কর্মচারী আছে, কিন্তু সুইপার নেই। তাই কোম্পানিকে নতুন সুইপার নিয়োগ দিতে বলেছিলাম।’
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের দপ্তরের তথ্যমতে, নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত তিনজনের কেউই ‘সুইপার’ পদে নয়, বরং আগের চাকরিচ্যুত কর্মচারীদের পদেই নিয়োগ পেয়েছেন, অর্থাৎ চাকরিচ্যুত তিনজনের জায়গা প্রতিস্থাপিত হয়েছেন তারা। বর্তমানে হলে চারজন কর্মচারী সুইপিংয়ের কাজ করছেন।
ভুক্তভোগীরা ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর অভিযোগ দিয়ে চাকরি পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন।
৮১ দিন আগে
ফ্যাসিবাদ-বিরোধীদের জন্য মিডিয়া অবকাঠামো উন্মুক্ত করছি: তথ্য উপদেষ্টা
ফ্যাসিবাদ-বিরোধীদের জন্য মিডিয়া কাঠামো উন্মুক্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। সেই সঙ্গে বর্তমান সরকার কোনো গণমাধ্যম বন্ধ করবে না, নতুন গণমাধ্যম অনুমোদন দেবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (৮ অক্টোবর) সচিবালয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের (অ্যাটকো) কার্যনির্বাহী কমিটির সঙ্গে বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান উপদেষ্টা।
নতুন দুটি টেলিভিশন চ্যানেল (লাইভ টিভি ও নেক্সট টিভি) অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে আনতে চাইলে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, ‘গত ১৫ বছরে যত মিডিয়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, সেটা অবশ্যই রাজনৈতিকভাবে দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন দেওয়ার পর মিডিয়াগুলো কীভাবে ভূমিকা পালন করেছে আপনারা জানেন। সেখানে অবশ্যই পক্ষপাত ছিল। মানুষকে যখন গুম-খুন করা হয়েছে তখন ওদের কোনো কনসার্ন পাওয়া যায়নি।’
মাহফুজ আলম বলেন, ‘এই সরকারের নীতি হচ্ছে কোনো মিডিয়া বন্ধ হবে না। হোয়াট ইজ দ্য প্রসেস, নতুন যে প্রজন্ম যারা এই গণঅভ্যুত্থান করেছে, যারা ফ্যাসিবাদ-বিরোধী, তাদের আপনি স্পেস ক্রিয়েট করবেন (জায়গা করে দেবেন)। আপনি নতুন মিডিয়া দেবেন। আমি সেই কাজটিই করছি। এটিই হচ্ছে সহজ উত্তর।’
তিনি বলেন, ‘আমি যেহেতু কোনো মিডিয়া বন্ধ করব না, আমি নতুন মিডিয়া দেব।’
নিয়ম অনুযায়ী সকল প্রক্রিয়া ও শর্তাবলি বিবেচনা করেই নতুন দুটি চ্যানেলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে হয়েছে বলেও দাবি করেন উপদেষ্টা। তার কথায়, ‘নতুন আইনে যদি (নতুন মিডিয়া অনুমোদন) দিতে পারতাম তবে আমার জন্য সবচেয়ে সুখকর জিনিস হতো।’
‘নতুন আইন করতে গেলে এই সরকারের আমলে এ ব্যবস্থার মধ্যে কখনোই নতুন কোনো মিডিয়া আসতে পারবে না। সুতরাং আপনার নতুন মিডিয়ার দরকার। নতুন মিডিয়া আসলে বাজার প্রতিযোগিতামূলক হবে। বাজারে যে এক রৈখিক ন্যারেটিভ, সেটা থেকে বহুস্বর, বহু ধরনের বয়ান আসবে— এটি আমরা চাই।’
আরও টেলিভিশন চ্যানেল আসবে কি না— এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত নই। আমরা চেষ্টা করছি এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা যত কম দিতে পারি। এখনো অনেকগুলো আবেদন চলমান আছে। আমরা কাজ করছি। আসার সম্ভাবনা আছে।’
ভালো কনটেন্ট দিতে পারলে টেলিভিশন চ্যানেলের সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা ফ্যাসিবাদ-বিরোধীদের জন্য মিডিয়া অবকাঠামো উন্মুক্ত করছি, তারা যাতে এখানে ঢোকে; এখানে যাতে বহু স্বর অন্তর্ভুক্ত হয়; পক্ষে-বিপক্ষের তর্কটা যাতে জমে ওঠে।’
মাহফুজ আলম আরও বলেন, ‘আমরা চাই প্রত্যেকটা মিডিয়া সেলফ রেগুলেশন শুরু করুক। আমরা মন্ত্রণালয় থেকে যদি শুরু করি, দেখতে খারাপ দেখায়। ইউনেস্কো আমাদের বলেছে, নভেম্বরের মধ্যে কিছু মিডিয়া সেলফ রেগুলেশনের কোড অব কন্ডাক্ট তৈরি করবে। ওই অনুযায়ী তারা নিজস্ব মিডিয়া চালাবেন। যাতে তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে পারেন। আমরা নিয়ন্ত্রণ চাই না।’
সাংবাদিক সুরক্ষা আইনের ওপর জোর
সাংবাদিক সুরক্ষা আইন এ সরকারের সময় হবে কি না— জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘সাংবাদিক সুরক্ষা আইন অবশ্যই করা হবে। আমি তো বলেছি, এটা আমার প্রথম অগ্রাধিকার। আমি যতদিনই থাকি আমি যাতে এ বিষয়ে দ্রুত এগোতে পারি, সেদিকে আমি এগোচ্ছি। আপনাদের সবার পরামর্শ নিয়ে এটি আমার করার ইচ্ছা। আইনটা যাতে বাস্তবায়ন হয়। বাংলাদেশ তো অনেক সুন্দর সুন্দর আইন আছে, কিন্তু বাস্তবায়ন নাই।’
অনলাইন থেকে শুরু করে অনেক আইপি টিভি রয়েছে যাদের কোনো নিবন্ধন নেই। তারা সাংবাদিকতার নামে নানা ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে। এদের আইনের কাঠামোতে আনবেন কিংবা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন কিনা— জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘ওটিটি, ইউটিউবসহ অনলাইন মিডিয়া— সবগুলো নিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে মিলে আমরা গত দুই মাস আগে মিটিং করেছি। এখন আলোচনা চলছে।’
‘আগামী সপ্তাহে আরেকটি মিটিং আছে। আমরা আশা করি একটা সমন্বিত নীতিমালার দিকে যেতে পারব। ওটিটি থেকে শুরু করে অনলাইনে যত ধরনের কনটেন্ট আছে, সেগুলোকে কীভাবে একটি নীতিমালার আওতায় আনা যায়। কোনো আইন নয়, অনুশাসন নয় যে একেবারে ইম্পোজিশন, এটা বন্ধ করে দেব ওটা রেখে দেব। বরং একটা নীতিমালা, যাতে জনগণ স্পষ্ট থাকে যে আমরা কী দেখছি।’
তিনি বলেন, ‘যেসব আউটলেটগুলো আর্থিকভাবে লাভবান হয় তাদের সরকারের অনুমোদনে আওতায় আনতে হবে— এরকম একটা প্রাথমিক বোঝাপড়া আমাদের আছে। এগুলো আমরা শুরু করলাম, দেখি করে যেতে পারি কি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা একটা বড় ইকোসিস্টেম। এটাকে অবশ্যই আমরা নীতিমালার আওতায় আনার চেষ্টা করব। কিন্তু সবটা পারা যাবে না। ব্যক্তি মানুষ একটা ফেক আইডি খোলে, এখন তো এটি চর্চিত বিষয় হয়েছে, যেমন: আনোয়ার টিভি লোগোর মতো করে ব্যবহার করে। (এসব ক্ষেত্রে) আপনি তো আইনগত কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবেন না, কারণ সে বসে আছে অস্ট্রেলিয়ায় বা অন্য কোনো জায়গায়। এটা আমাদের একটা সংকট।’
যতটুকু পারা সম্ভব একটটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এগুলোকে নীতিমালার আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানান মাহফুজ আলম।
৮১ দিন আগে
আইএমএফ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নাম ব্যবহার করে ভুয়া ঋণের ফাঁদ, সতর্কতা জারি
বাংলাদেশ ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নাম ও লোগো ব্যবহার করে ওয়েবসাইট ও অ্যাপের মাধ্যমে ঋণ দেওয়ার ভুয়া প্রলোভন দেখাচ্ছে একটি প্রতারক চক্র। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এই সতর্কতা জারি করে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’ ও ‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল’-এর নাম ও লোগো ব্যবহার করে https://dbbloan.com, https://bblloan.com ও https://www.bdloan71.com নামের কিছু ভুয়া ওয়েবসাইট ও অ্যাপ চালানো হচ্ছে। এসব প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক বা আইএমএফ–এর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
এই সব অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশনের সময় ব্যবহারকারীর নাম, ঠিকানা, জন্মতা রিখ, মোবাইল নম্বর, ই-মেইল, ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরসহ নানা সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে করে সাধারণ মানুষ আর্থিক প্রতারণার শিকার হতে পারেন বা আইনি ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া জনসাধারণের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া বা দেওয়ার উদ্দেশ্যে অনলাইন বা অফলাইন যেকোনো প্ল্যাটফর্ম পরিচালনা করা আইনত দণ্ডনীয়।
পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা আইন, ২০২৪-এর ১৫(২) ধারা অনুযায়ী, এই ধরনের প্রতারণার জন্য কোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড অথবা ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
সাধারণ জনগণকে এ ধরনের ভুয়া ওয়েবসাইট ও অ্যাপে কোনো ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান বা আর্থিক লেনদেন না করার জন্য পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
৮১ দিন আগে
গুমের দুই মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গুমের মাধ্যমে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক দুই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী এবং আরও ২৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
বুধবার (৮ অক্টোবর) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই পরোয়ানা জারি করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপক্ষ বুধবার সকালে ট্রাইব্যুনাল-১-এ অভিযোগপত্র দাখিল করে। শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল অভিযোগগুলো গ্রহণ করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।
অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ এবং সাবেক র্যাব মহাপরিচালক এম খুরশিদ হোসেন।
এর মধ্যে র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে আটকে রেখে নির্যাতনের মামলায় ১৭ জন এবং জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) বন্দি রেখে নির্যাতনের মামলায় ১৩ জন আসামি।
দুই মামলাতেই প্রধান আসামি করা হয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিকীকে।
দ্বিতীয় মামলায় ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচ মহাপরিচালকের নাম রয়েছে আসামির তালিকায়।
টিএফআই সেলে বন্দি রেখে নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। আর জেআইসিতে বন্দি রেখে নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
৮২ দিন আগে
১৫-১৬ অক্টোবর জুলাই সনদে সই হবে: আশা আলী রীয়াজের
আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে সরকারের কাছে চূড়ান্ত সুপারিশ পেশ করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলো ১৫ ও ১৬ অক্টোবরের মধ্যে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এ আনুষ্ঠানিকভাবে সই করবে বলে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
বুধবার (৮ অক্টোবর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পঞ্চম দিনের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে এসব কথা জানান তিনি।
আলী রিয়াজ বলেন, “সব দল একভাবে সম্মতি না দিলেও জনগণের চূড়ান্ত মত নেওয়ার সময় এসব আপত্তির বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে জানাতে হবে। জুলাই জাতীয় সনদে যে বিষয়গুলো আছে সেখানে যেহেতু কিছু ‘নোট অব ডিসেন্ট’ আছে, সেটাকে আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে।
“সবগুলো বিষয় একভাবে বিবেচনা করা যাবে তা আমরা মনে করছি না। কারণ যেসব রাজনৈতিক দল ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছেন তারা তাদের অবস্থানের দিক থেকে দিয়েছেন, তাদের শুধুমাত্র দলীয় অবস্থান নয়, আমরা আশা করি যে তারা অন্যান্য বিবেচনা থেকেও দিয়েছেন।”
তিনি বলেন, ‘জনগণের সম্মতি নিশ্চিত করার সময় এসব ভিন্নমত যেন যথাযথভাবে জানানো হয়, সেটিই হবে গণভোটের মূল উদ্দেশ্য। আমাদের দেখতে হবে জনগণের যে সম্মতি, সে সম্মতির ক্ষেত্রে যেন তারা এটা জেনেশুনেই সম্মতি নিতে পারেন যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছু দলের এ বিষয়ে আপত্তি আছে।’
কমিশন সব দলের মতামত ও আপত্তির পর্যালোচনার ভিত্তিতে চূড়ান্ত প্রস্তাব তৈরি করে সরকারকে তা সুপারিশ করতে চায় বলে জানান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি।
তিনি বলেন, ‘আপনাদের পক্ষ থেকে যদি সুনির্দিষ্ট সুস্পষ্ট একটি জায়গায় একটি প্রস্তাব আসে, কমিশন সরকারকে সেটাই উপস্থাপন করবে এবং কমিশন চাইবে যে সেটাই বাস্তবায়িত হোক।’
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়ে ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মৌলিক ঐকমত্য তৈরি হয়েছে এবং কমিশন এখন চূড়ান্ত কাঠামো নির্ধারণে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের এই প্রচেষ্টায় অনেকদূর অগ্রগতি হয়েছে এই অর্থে যে গণভোটের ক্ষেত্রে আমরা সকলেই একমত জায়গায় আসতে পেরেছি।’
অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, ‘১০ অক্টোবরের মধ্যে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবগুলো আমরা সরকারের কাছে দিতে চাই। আমরা আগামী ১৫-১৬ অক্টোবরের মধ্যে সইয়ের আয়োজনটা শেষ করতে চাই।
বৈঠকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি বাংলাদেশ (এলডিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন— বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
৮২ দিন আগে
চলতি অর্থবছরের শেষার্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি: বিশ্বব্যাংক
২০২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের ধাক্কা কাটিয়ে বছরের শেষার্ধে দৃঢ়ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, রেকর্ড রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির ফলে অর্থনীতিতে ইতিবাচক গতি এসেছে।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত এক নতুন প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিশ্বব্যাংকের দ্বিবার্ষিক প্রকাশনা বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট–এর সর্বশেষ সংস্করণে বলা হয়েছে, আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির ধারা ঊর্ধ্বমুখী থাকবে। প্রতিবেদনে জিডিপি প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরের ৪.০ শতাংশ থেকে বেড়ে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৪.৮ শতাংশ এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ৬.৩ শতাংশে পৌঁছাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ বিশ্বব্যাংকের ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট’-এর অংশ। প্রতিবছর দুবার এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এটি দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, সম্ভাবনা এবং দেশগুলোর নীতিগত চ্যালেঞ্জ বিশ্লেষণ করে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার নীতির কারণে বৈদেশিক চাপ কমেছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল হয়েছে এবং চলতি হিসাব ঘাটতি কমেছে। এছাড়া, রপ্তানিও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
কঠোর মুদ্রানীতি, প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের কম আমদানি কর এবং ভালো ফলনের কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে কম রাজস্ব আদায়, বেশি ভর্তুকি এবং ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে বাজেট ঘাটতি সম্প্রসারিত হয়েছে।
তবে পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত সত্ত্বেও দারিদ্র্য ও কর্মসংস্থান পরিস্থিতিতে উদ্বেগজনক প্রবণতা তুলে ধরেছে প্রতিবেদনটি।
এতে বলা হয়েছে, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে দারিদ্র্য বেড়েছে। মোট শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ কমে ৬০ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে ৫৮ দশমিক ৯ শতাংশে নেমেছে, যেখানে নারীরা বেশি প্রভাবিত হয়েছেন। শ্রমবাজারের বাইরে থাকা ৩০ লাখ অতিরিক্ত কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে ২৪ লাখ নারী।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের বিভাগীয় পরিচালক জ্যঁ পেম বলেন, ‘অর্থনীতি দৃঢ়তা দেখিয়েছে, কিন্তু এটিকে স্বাভাবিক ধরে নেওয়া যায় না।’
তিনি বলেন, ‘শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে এবং আরও ভালো ও বেশি কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে সাহসী সংস্কার ও দ্রুত বাস্তবায়নের পথে এগোতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বাড়ানো, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা দূর করা, জ্বালানি ভর্তুকি কমানো, নগরায়ণের পরিকল্পনা করা এবং বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করা।’
গত দুই দশকে শিল্পখাতের চাকরি ঢাকায় ও চট্টগ্রামে কেন্দ্রীভূত হয়েছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি আঞ্চলিকভাবে সমান উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার দিকটি তুলে ধরে। এতে দেশব্যাপী সার্বজনীন চাকরি সৃষ্টি নিশ্চিত করতে স্থানীয় উন্নয়ন কৌশল পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়েছে।
একই দিনে সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদনের সহ-প্রকাশনা হিসেবে ‘চাকরি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও বাণিজ্য’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এতে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬ শতাংশে শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জও রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট জোহানেস জুট বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যাপক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে। তবে প্রবৃদ্ধির ঝুঁকিগুলো মোকাবিলায় দেশগুলোকে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা সর্বাধিকভাবে কাজে লাগানো এবং বিশেষ করে মধ্যবর্তী পণ্যের জন্য বাণিজ্য বাধা কমানোর মাধ্যমে দেশগুলো উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারবে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে এবং অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান শ্রমশক্তির জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি এখনও বিদেশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য খুব বেশি উন্মুক্ত নয়। অনেক খাতে উচ্চ শুল্ক থাকায় সেগুলোতে চাকরি কমছে। অন্যদিকে, কম শুল্কযুক্ত খাত, যেমন: সেবা খাত, গত দশকে নতুন চাকরির বড় অংশ তৈরি করেছে।
এছাড়া, উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধি করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) রূপান্তরমূলক সম্ভাবনার দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রমশক্তির বড় অংশ নিম্নদক্ষ, কৃষিভিত্তিক ও শ্রমনির্ভর খাতে নিয়োজিত; তবে এআই মানবশ্রমের পরিপূরক হিসেবে নতুন খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রানজিস্কা ওন্সর্গ বলেন, ‘বাণিজ্য উন্মুক্ততা ও এআই গ্রহণের গতি বাড়ানো দক্ষিণ এশিয়ার জন্য রূপান্তরমূলক হতে পারে। কর্মীদের প্রতিষ্ঠান, খাত ও অঞ্চলভিত্তিক স্থানান্তর সহজ করতে সহায়ক নীতিমালা গ্রহণ করা জরুরি—যা উৎপাদনশীল খাতে সম্পদ প্রবাহ বাড়াবে এবং বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানকে ত্বরান্বিত করবে।’
৮২ দিন আগে
মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তরা নির্বাচনের অযোগ্য, অধ্যাদেশ জারি
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল করা হলে তিনি সংসদ সদস্য (এমপি), স্থানীয় সরকার পরিষদ বা প্রতিষ্ঠানের সদস্য, কমিশনার, চেয়ারম্যান, মেয়র বা প্রশাসক অথবা সরকারি কোনো পদ বা দায়িত্বে থাকতে পারবেন না।
সোমবার (৬ অক্টোবর) ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট, ১৯৭৩ সংশোধন করে এ সংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে।
সংশোধিত অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর অভিযুক্ত ব্যক্তি নিম্নলিখিত অবস্থানগুলোতে থাকার জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন:
· তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়া বা থাকার যোগ্য হবেন না।
· স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোর সদস্য, কমিশনার, চেয়ারম্যান, মেয়র বা প্রশাসক হিসেবে নির্বাচিত বা নিয়োগপ্রাপ্ত হতে বা থাকতে পারবেন না।
· প্রজাতন্ত্রের কোনো চাকরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হতে পারবেন না। এছাড়া অন্য কোনো সরকারি পদে অধিষ্ঠিত হতে পারবেন না।
তবে ট্রাইব্যুনাল কোনো ব্যক্তিকে অব্যাহতি বা খালাস দিলে ওই ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই ধারা প্রযোজ্য হবে না বলেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ১০ জুলাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ছাড়াও অনেক সরকারি এবং পুলিশ কর্মকর্তার বিচার চলছে। এছাড়া জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ দাখিল করা হয়েছে। সংশোধিত অধ্যাদেশ জারির ফলে এখন থেকে এসব ব্যক্তি নির্বাচনে অযোগ্য হবেন।
এর আগে, গেল বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ওই সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠক-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট ১৯৭৩ একটি সেকশন যুক্ত করা হয়েছে। নতুন সংযোজিত ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে উক্ত আইনের সেকশন ৯-এর ১-এর অধীনে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র (ফরমাল চার্জ) দাখিল হলে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়া বা বহাল থাকার অযোগ্য হবেন।
তিনি আরও বলেন, একইভাবে অভিযুক্ত ব্যক্তি স্থানীয় সরকার পরিষদ বা প্রতিষ্ঠানের সদস্য, কমিশনার, চেয়ারম্যান, মেয়র বা প্রশাসক হিসেবে নির্বাচিত হওয়া বা বহাল থাকার অযোগ্য হবেন। এমনকি প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে নিয়োগ পাওয়া বা অন্য কোনো পাবলিক অফিসে অধিষ্ঠিত হওয়ারও অযোগ্য হবেন।
৮৩ দিন আগে
ভারত ভ্রমণে নতুন নিয়ম, বেনাপোলে যাত্রী যাতায়াত নেমেছে ২০ শতাংশে
বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতগামী যাত্রীদের যাতায়াত কমে নেমে এসেছে ২০ শতাংশে। ভিসা জটিলতা ও নতুন নিয়মের কারণে যাত্রী কমছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি পাসপোর্টধারী যাত্রীদের ভারত ভ্রমণের আগে অনলাইনে আগমন ফরম পূরণ করা বাধ্যতামূলক করেছে ভারতীয় দূতাবাস। গত ১ অক্টোবর থেকে এই নিয়ম কার্যকর হওয়ার পর থেকেই এটিকে ভোগান্তি ও হয়রানি বলে অভিযোগ করে আসছেন যাত্রীরা।
পাসপোর্ট যাত্রীরা জানান, ভ্রমণের ৭২ ঘণ্টা আগে ‘ইন্ডিয়ান ভিসা অনলাইন এরাইভেল’ ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করে ফরমের প্রিন্ট কপি সঙ্গে নিতে হচ্ছে। কিন্তু সার্ভার সচল না থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের।
আগে ভারতগামী যাত্রীদের ইমিগ্রেশনে গিয়ে হাতে লিখেই আগমন ফরম পূরণ করতে হতো বলেও জানান তারা।
গত বছরের ৫ আগস্ট-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণ দেখিয়ে ট্যুরিস্ট, বিজনেস ও স্টুডেন্ট ভিসা বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। মেডিকেল ভিসা চালু থাকলেও নানা শর্ত যুক্ত হওয়ায় সেই ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এছাড়া ভিসা ফি ও ভ্রমণ ফি বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
ভুক্তভোগী পাসপোর্টধারী সুনীতি পাল বলেন, স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য ভারতে নিতে গিয়ে নতুন ফরম পূরণে ১০০ টাকা খরচ করতে হয়েছে। সার্ভার সমস্যার কারণে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
আরেক এক যাত্রী উজ্জল কুমার অভিযোগ করে বলেন, ভিসা পেতে আমার প্রায় ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ভোগান্তির শেষ নেই। হয় ভিসা সহজ করুক, না হয় বন্ধ করে দিক। একের পর এক শর্তে ভ্রমণ ও ভিসা প্রাপ্তি দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক শামীম হোসেন বলেন, ভিসা প্রাপ্তির হার কমে আসায় পাসপোর্টধারী যাত্রী চলাচলও স্বাভাবিকভাবে কমে এসেছে। শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত তিনদিনে তিন হাজার ৭৮১ জন পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াত করেছেন।
তিনি জানান, একের পর এক শর্ত আরোপের ফলে ভারতগামী যাত্রীদের যাতায়াত কমে এখন ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করলেও বর্তমানে তা নেমে এসেছে এক হাজারের নিচে।
৮৩ দিন আগে
কর্মী নিয়োগে সৌদি আরবের সঙ্গে প্রথমবারের মতো চুক্তি সই
বাংলাদেশ থেকে সাধারণ কর্মী নিয়োগে সৌদি আরবের সঙ্গে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়েছে। সোমবার (৬ অক্টোবর) রিয়াদে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং সৌদি আরবের পক্ষে মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ বিন সোলাইমান আল-রাজী চুক্তিতে সই করেন।
রিয়াদে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সৌদি আরব-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের দীর্ঘ ৫০ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম সাধারণ কর্মী নিয়োগসংক্রান্ত কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি সই হলো।
বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবে ১৯৭৬ সাল থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে কর্মী নিয়োগ শুরু হলেও সাধারণ কর্মী নিয়োগসংক্রান্ত কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি ছিল না। ২০১৫ সালে গৃহকর্মী নিয়োগ এবং ২০২২ সালে দক্ষতা যাচাইসংক্রান্ত দুটি বিশেষ চুক্তি সই হয়।
দূতাবাস জানায়, নতুন চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে বিভিন্ন পেশায় দক্ষ কর্মী নিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং কর্মী ও নিয়োগকর্তার অধিকার ও স্বার্থ অধিকতর সুরক্ষিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এটি ভ্রাতৃপ্রতিম উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।
৮৩ দিন আগে