বিশ্ব
সোনার শহর মান্দালয় এখন ধ্বংসস্তূপ, দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে গৃহযুদ্ধ
সোনার শহর হিসেবে খ্যাত মিয়ানমারের মান্দালয় শহর যেন এখন এক মৃত্যুপুরী। সোনালী কারুকার্যে সুস্বজ্জিত মঠ ও বৌদ্ধ সমাধির সৌন্দর্যে ঝলমলে এই শহরটি ভয়াবহ ভূমিকম্পে পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে।
তবে এত বড় দুর্যোগও মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে টলাতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে অবিচল সেনাবাহিনী। বিদ্রোহীরা কোনো হামলা চালালে পাল্টা জবাবের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইং।
গত বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) মিয়ানমারে আঘাত হানে ৭.৭ মাত্রার শক্তিশালী এক ভূমিকম্প। এতে গৃহযুদ্ধকবলিত দেশটিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে এরইমধ্যে প্রায় তিন হাজারে দাঁড়িয়েছে। আহত সাড়ে চার হাজারের বেশি।
এর মধ্যে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিয়ানমারের সাবেক রাজধানী মান্দালয়। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ এই শহরটিতে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হওয়ায়, শহরের বাতাসে ভাসছে লাশের গন্ধ। ঝলমল শহরটির বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে পড়েছে, যার নিচ থেকে বেরিয়ে আসছে একের পর এক লাশ।
শহরটির জে নামের এক বাসিন্দা জানান, মৃতের সংখ্যা এত বেশি যে, তারা স্তূপ করে লাশগুলো দাহ করতে বাধ্য হয়েছেন।
বাসিন্দারা জানান, তাদের কাছে না আছে কোনো খাবার, না পানি। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই, রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তারা।
দুর্বল অবকাঠামো ও গৃহযুদ্ধের জটিল পরিস্থিতি ত্রাণ কার্যক্রমকে মারাত্বকভাবে ব্যাহত করছে বলে মনে করছেন অনেকে। এ ছাড়াও দেশটির সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে নিজস্বার্থে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র গোপন করার ইতিহাস রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
যখনই ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবন ও এলাকাগুলোতে উদ্ধারকারীদের প্রবেশ বাড়তে থাকবে, তখনই লাশের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
২৩ বছর বয়সী জে মান্দালয়ের মহাউংমেয়ে এলাকার বাসিন্দা। তিনি বলেন, ধ্বংসস্তূপ থেকে দুইদিন পর তার খালার লাশ বের করা হয়েছে। ঘুম, খাবার ও পানির সংকটে নাজেহাল দশার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঘুম না হওয়ায় আমার মাথা প্রচণ্ড ঘুরছে।’
জে’র মতো পরিস্থিতি অনেকেরই। নিজেদের বাড়ির আশেপাশের রাস্তায় অনেকেই তাঁবু টানিয়ে বা খোলা আকাশের নিচেই অবস্থান করছেন। আরেকটি আফটারশক (পরাঘাত) যেকোনো মুহূর্তে তাদের বাড়িঘরের অবশিষ্টাংশও ধ্বংস করে দিতে পারে এই আশঙ্কায় তারা রাস্তায় দিন কাটাচ্ছেন।
জে বলেন, ‘আমি অনেককেই রাস্তায় উবু হয়ে বসে চিৎকার করে কান্না করতে দেখেছি।’
তবে ভাঙা স্থাপনার নিচ থেকে লাশের পাশাপাশি জীবিতও অনেককে উদ্ধার করা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী জানান, গত চারদিনে মান্দালয় শহর থেকে ৪০৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, এ সময় ২৫৯টি লাশও বের করা হয়েছে।
তবে প্রকৃত হতাহতের সংখ্যা সরকারি তথ্যের থেকে অনেক বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১ তারিখ) এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে মিয়ানমার জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইং বলেন, ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে, ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভের (ইউজিএস) তথ্যমতে, মৃতের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি হতে পারে।
শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাতে মান্দালয়ের মানুষজন শারীরিক, অর্থনৈতিক ও মানসিক—সব দিক দিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এলাকাটির শিশুরা মানসিকভাবে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
দক্ষিণ মান্দালয়ের পাইগ্যিটাগন এলাকার এক পাদ্রি যিনি রুয়াতে নামে নিজের পরিচয় দেন, তিনি বিবিসিকে তার অভিজ্ঞতার কথা জানান।
তিনি বলেন, তার আট বছরের ছেলে গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকবার চিৎকার করে কান্না করে উঠেছেন।
চোখের সামনে মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকা ধ্বংস হতে দেখে ছেলেটি অত্যন্ত আতঙ্কিত হয়েছে, এ কারণেই তার মানসিক অবস্থার অবনতি হয়েছে বলে মত দেন শিশুটির বাবা।
রুয়াতে বলেন, ‘ভূমিকম্পের সময় আমার ছেলে উপরে তার শোবার ঘরে ছিল। আমার স্ত্রী তার বোনের দেখাশোনা করছিল। বেরিয়ে আসার সময় তার (ছেলে) ওপর কিছু ধ্বংসাবশেষও পড়েছিল।’
তিনি বলেন, গতকাল নিজ এলাকা থেকে তিনি অনেককে লাশ হয়ে বের হতে দেখেছেন। বুধবার (২ এপ্রিল) ভূমিকম্পের পাঁচদিন পরে রাজধানীর নেপিদোর একটি ভবন থেকে জীবিত একজনকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে।
এই ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তিনি। ভারাক্রান্ত মনে বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক। মিয়ানমার একের পর এক দুর্যোগের মুখে পড়ছে, এরমধ্যে কিছু প্রাকৃতিক, কিছু মানবসৃষ্ট। দেশের প্রতিটি মানুষ এখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আমরা হতাশ ও অসহায় বোধ করছি।’
গত বৃহস্পতিবারের ভূমিকম্পে মান্দালয়ের ১২ তলাবিশিষ্ট ‘স্কাই ভিলা’ ভবনটির ছয়তলা ধ্বসে পড়েছে। ওই ভবনের নিকটস্থ এক বাসিন্দা জানান, যদিও কয়েকজনকে সেখান থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, তবে গত ২৪ ঘণ্টায় কেবল লাশই বের হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই দুর্যোগ শিগগিরই শেষ হবে আশা করছি। এখনো অনেক লাশ ভিতরে চাপা পড়ে আছে মনে হচ্ছে, সংখ্যাটা শতাধিক হতে পারে।’ মান্দালয়ের আশপাশের কবরস্থানগুলোতে আর জায়গা অবশিষ্ট নেই। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লাশের ব্যাগসহ খাবার ও পানি সরবরাহের ব্যাপক অভাব দেখা দিয়েছে।
শহরজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে মঠ ও সোনালী চূড়ার ভাঙা অংশগুলো। এক সময় মান্দালয় সোনার পাত উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র ও পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ ছিল। তবে গত কয়েক বছরে মিয়ানমারের অন্যান্য অঞ্চলের মতো এখানেও দারিদ্র্য বেড়েছে, ফলে শহরটি অনেকাংশে তার জৌলুস হারিয়েছিল।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্পে মিয়ানমারে নিহত প্রায় ৩ হাজার, জীবিতদেরও উদ্ধার করা হচ্ছে
ভূমিকম্পের পরে দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি
গত সপ্তাহে মিয়ানমার ছাড়াও থাইল্যান্ড ও চীনেও আঘাত হেনেছে ভূমিকম্প। তবে গৃহযুদ্ধ, খাদ্যসংকট ও অর্থনৈতিক অবনতির মধ্যে মিয়ানমারে নতুন বিপর্যয় ডেকে এনেছে সাত দশমিক সাত মাত্রার ভয়াবহ এক ভূমিকম্প। ২০২১ সালের পর থেকে দেশটির ক্ষমতায় আছে জান্তা সরকার।
গতকাল নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করে জান্তা সরকার, পাশাপাশি পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। এছাড়াও গণমাধ্যমের সম্প্রচার বন্ধ রাখা হয়।
তবে দারিদ্র্যপীড়িত দেশটি থেকে ভূমিকম্পের আগেই প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। জোরপূর্বক সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ থেকে বাঁচতে অনেক তরুণ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এতে এই দুর্যোগের মুহূর্তে প্রয়োজনীয় লোকবল মিলছে না বলে দেশটির বাসিন্দাদের অভিযোগ।
রাশিয়া ও চীন সহায়তা করলেও উদ্ধারকাজ ধীরগতিতে এগোচ্ছে বলে মন্তব্য করেন জে। তিনি বলেন, ‘উদ্ধারকর্মীরা চারদিন ধরে একটানা কাজ করে যাচ্ছে। তারাও এখন ক্লান্ত, তাদেরও কিছুটা বিশ্রাম প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন: জুমার নামাজের সময় ভূমিকম্প, মিয়ানমারে নিহত অন্তত ৭০০ মুসল্লি
২৭০ দিন আগে
ভূমিকম্পে মিয়ানমারে নিহত প্রায় ৩ হাজার, জীবিতদেরও উদ্ধার করা হচ্ছে
উদ্ধারকর্মীরা যখন মিয়ানমারের ধ্বংসস্তূপ থেকে ৬৩ বছর বয়সী এক বৃদ্ধাকে উদ্ধার করছিলেন, তখন তার মতো আরও অনেকের ফিরে আসার আশা ফিকে হয়ে গেছে। গৃহযুদ্ধকবলিত দেশটিতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে এরইমধ্যে প্রায় তিন হাজারে দাঁড়িয়েছে। সময় যত গড়াচ্ছে, এই সংখ্যাটা বেড়ে কোথায় গিয়ে ঠেকবে; তা এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে আশার কথা, এখনো জীবিতদের উদ্ধার করা হচ্ছে।
গৃহযুদ্ধের কারণে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটির মানবিক সংকট বহু পুরোনো। এই ভূমিকম্প সেই সংকটকে আরও ভয়াবহ মাত্রায় নিয়ে গেছে। রাজধানী নেপিদোর উদ্ধারকর্মীরা বলছেন, সাত দশমিক সাত মাত্রার ভূমিকম্পে ভবন ধসে পড়ার পর ইট-পাথরের স্তূপের নিচে ঢাকা পড়েছিলেন ওই নারী। কিন্তু তাকে সফলভাবে তুলে আনা সম্ভব হয়েছে।
আরও পড়ুন: জুমার নামাজের সময় ভূমিকম্প, মিয়ানমারে নিহত অন্তত ৭০০ মুসল্লি
শুক্রবার দিনের মাঝামাঝিতে মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহৎ শহর মান্দালয়ে আঘাত হানে ভূমিকম্প। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পর জীবিতদের উদ্ধারের সম্ভাবনা ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে।
দেশটির রাজধানী নেপিদোর একটি ফোরামে জান্তা সরকারের প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দুই হাজার ৭১৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। চার হাজার ৫২১ জন আহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন ৪৪১ জন।’
মিয়ানমারের বিভিন্ন অংশ থেকে অনুভূত হয়েছে এই বিধ্বংসী ভূমিকম্প। এতে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। সড়ক ও সেতু ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে একদিকে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করাও কঠিন হয়ে পড়ছে।
বেশিরভাগ প্রাণহানি হয়েছে মান্দালয় ও নেপিদোতে। ইউনিসেফের মিয়ানমার প্রতিনিধি জুলিয়া রিস বলেন, ‘এখানে ব্যাপক সহায়তা দরকার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটা আরও বাড়ছে। জীবনরক্ষাকারী পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ কমে আসছে। আক্রান্ত এলাকাগুলোতে খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সরবরাহের মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে।’
উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য ভারী যন্ত্রপাতিরও ঘাটতি রয়েছে। এতে চল্লিশ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যেও হাত দিয়ে জীবিতদের উদ্ধার করতে হচ্ছে অনেককে।
মিয়ানমার ফর দ্য ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির প্রোগ্রাম উপ-পরিচালক লরেন ইলারি বলেন, ‘কী মাত্রায় ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, তা বর্তমান পর্যায়ে এসে আমরা পরিষ্কার হতে পারছি না। মান্দালয়ের আশি শতাংশ ভবন ভেঙে পড়েছে।’
আরও পড়ুন: মিয়ানমারে নিহত বেড়ে ২ হাজার, ধীর গতির উদ্ধার অভিযান
দেশটির তিনটি হাসপাতাল পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে ও ২২টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তারা বলছে, ‘আঘাত ও অস্ত্রোপচারের চিকিৎসার জন্য জরুরি সহায়তা দরকার। রক্ত সরবরাহ, চেতনানাশক, অপরিহার্য চিকিৎসা ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সহায়তা প্রয়োজন।’
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা জানিয়েছে, মিয়ানমারের উত্তরপশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ১০ হাজারের বেশি ভবন ধসে পড়েছে।
২৭২ দিন আগে
মিয়ানমারে নিহত বেড়ে ২ হাজার, ধীর গতির উদ্ধার অভিযান
মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দুই হাজারে পৌঁছেছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে উদ্ধার অভিযান ধীর গতিতে চলছে। গেল শুক্রবার দিনের মাঝামাঝিতে এশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছে দেশটিতে। এরপর থেকে নিহতের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে।
সোমবার (৩১ মার্চ) দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, একটি মঠ ভেঙে ২০০ বৌদ্ধ ভিক্ষু নিহত হয়েছেন। একটি প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় ধসে পড়লে ৫০টি শিশুর প্রাণহাটি ঘটেছে। আর জুমাতুল বিদার নামাজ আদায়ের সময়ে সাত শতাধিক মুসল্লি নিহত হয়েছেন।
সাত দশমিক সাত মাত্রার ভূমিকম্পটি উৎপত্তি স্থল দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ শহর মান্দালয়ে। এতে শহরের বিমানবন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সড়কগুলো ভেঙে চৌচির হয়ে গেছে। আর ভেঙে মাটিতে মিশে গেছে শত শত ভবন।
জাতিসংঘের সহায়তা সংস্থাগুলো হুঁশিয়ারি করে জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কারণে মিয়ানমারে খাদ্যসংকট ও রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। গৃহযুদ্ধে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় আগে থেকেই প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়ে আছে সেখানে। এই দুর্যোগ সেই পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে।আরও পড়ুন: জুমার নামাজের সময় ভূমিকম্প, মিয়ানমারে নিহত অন্তত ৭০০ মুসল্লি
বিদ্যুৎ বিভ্রাট, জ্বালানি সংকট ও যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য ভারী যন্ত্রপাতিরও ঘাটতি রয়েছে। এতে চল্লিশ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যেও হাত দিয়ে জীবিতদের উদ্ধার করতে হচ্ছে অনেককে।
ভেঙেপড়া মান্দালয়ের ইউ হ্লা থেন মঠের উদ্ধারকারীরা বলছেন, ‘তারা এখনো ১৫০ ভিক্ষুকের মরদেহ খুঁজে বেড়াচ্ছেন।’
মিয়ানমার ফর দ্য ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির প্রোগ্রাম উপ-পরিচালক লরেন ইলারি বলেন, ‘কী মাত্রায় ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, তা বর্তমান পর্যায়ে এসে আমরা পরিষ্কার হতে পারছি না। মান্দালয়ের আশি শতাংশ ভবন ভঙে পড়েছে।’
দেশটির তিনটি হাসপাতাল পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে ও ২২টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তারা বলছে, ‘আঘাত ও অস্ত্রোপচারের চিকিৎসার জন্য জরুরি সহায়তা দরকার। রক্ত সরবরাহ, চেতনানাশক, অপরিহার্য চিকিৎসা ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সহায়তা প্রয়োজন।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা জানিয়েছে, মিয়ানমারের উত্তরপশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ১০ হাজারের বেশি ভবন ধসে পড়েছে।
২৭২ দিন আগে
ভাঁড়ামির মাধ্যমে শিশুদের ইসালামি শিক্ষা দিচ্ছেন তিনি
রঙিন পোশাক, লাল নাক ও মাথায় পাগড়ি পরে ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ভাঁড়ামির অভিনয় করেন ইয়াহইয়া হেন্দ্রোয়ান। শিশু-কিশোরদের বিনোদন দেওয়ার ফাঁকে ইসলামের বিধিবিধান ও মূল্যবোধ শিক্ষা দেন তিনি।
অর্থ উপার্জনের জন্য বিভিন্ন সময় জন্মদিনের পার্টিতে কাজ করতেন ইয়াহইয়া। সেখানে অভিনয় করে মানুষকে মুগ্ধ করতেন। কিন্তু ২০১০ সালে তাকে আধুনিককালের আবু নুয়াস হতে অনুপ্রাণিত করেন তার ধর্মীয় শিক্ষক।
আরও পড়ুন: পর্যটক টানবে খাগড়াছড়ি, আশা সংশ্লিষ্টদের
আরবি ভাষার কিংবদন্তি কবি আবু নুয়াস বিখ্যাত ছিলেন বুদ্ধিমত্তা, প্রজ্ঞা, রসিকতা ও চমৎকার শব্দচয়নের জন্য। সমসাময়িক আরবি কাব্যের সব ধারার ওপর দক্ষ ছিলেন তিনি। লোককথায়ও আবু নুয়াসের উপস্থিতি রয়েছে। আরব্য রজনীতে বেশ কয়েকবার তার নাম পাওয়া যায়।
কবি আবু নুয়াসের মতো করেই রসিকতা ও প্রজ্ঞার সংমিশ্রণে ধর্মীয় শিক্ষায়তনে ভাঁড়ামির অভিয়ন করতে উৎসাহিত হন ইয়াহইয়া। বর্তমানে তাকে সবাই ইয়াহইয়া বাদুত বা ইয়াহইয়া ক্লাউন (ভাঁড়) নামে ডাকেন। এমন একটি স্বপ্নই তিনি বহুবছর ধরে লালন করছিলেন।
পাশাপাশি আরও কিছু সমমনা ক্লাউন নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন দ্য শরিয়া ক্লাউন ফাউন্ডেশন। নির্মল বিনোদনের সাথে ধর্মীয় শিক্ষা দিতেই তারা কাজ করছেন।
শিশুদের আনন্দ দিতে বিভিন্ন মজার গানও পরিবেশন করেন তারা। ইয়াহইয়া বলেন, ‘হাদিসে আছে, কেউ তার ভাইয়ের সামনে মুচকি হাসি দিয়ে কথা বললে তা সদকাস্বরূপ। কাজেই অবশ্যই মুচকি হাসিকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানাতে হবে। যখন বন্ধুদের সাথে আপনার দেখা হয়, হাসি দিয়ে করমর্দন করবেন।’
মজা ও আনন্দ নিয়ে পড়ালে শিশুরা সহজেই তা আয়ত্ত করতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।
আরও পড়ুন: ঈদের একাল-সেকাল: প্রজন্মের ধারাবাহিকতায় ত্রিমাত্রিক উদযাপন ঢাকায়
২৭৩ দিন আগে
জুমার নামাজের সময় ভূমিকম্প, মিয়ানমারে নিহত অন্তত ৭০০ মুসল্লি
মিয়ানমারে ৭.৭ মাত্রার বিধ্বংসী ভূমিকম্পে নিহতদের মধ্যে সাত শতাধিক মুসল্লি রয়েছেন। সোমবার (৩১ মার্চ) দেশটির একটি মুসলিম সংস্থা এমন তথ্য জানিয়েছে।
গত শুক্রবার (২৮ মার্চ) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে রমজানের শেষ দিকে জুমাতুল বিদার দিনে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তখন জুমার নামাজ আদায়ে মসজিদে ছিলেন বেশিরভাগ মুসল্লি।
জান্তা সরকার বলছে, এই দুর্যোগে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৭০০’র বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। উদ্ধার কাজ অব্যাহত রয়েছে।
তবে সেসব মুসল্লিদের নিহতের তথ্য সরকারি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কিনা, তা পরিষ্কার নয়।
দেশটির সংবাদমাধ্যম ইরাবতিতে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেছে, ভূমিকম্পে বেশ কিছু মসজিদ ভেঙে পড়ছে। লোকজন ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদ জায়গায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
মিয়ানমারের বসন্ত বিপ্লবের মুসলিম নেটওয়ার্কের পরিচালনা কমিটির সদস্য টুন কিই বলেন, মান্দালয়ের এই ভূমিকম্পে ৬০টির বেশি মসজিদ ধ্বংস কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবনগুলো অনেক পুরোনো হওয়ায় আগে থেকেই ঝুঁকিতে ছিল বলে জানান তিনি।
জান্তা সরকারের মুখপাত্র জো মিন তুন জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে ১ হাজার ৭০০ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছে আরও অন্তত ৩ হাজার ৪০০ জন। এখনও আরও ৩ শতাধিক মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। উদ্ধার কাজ অব্যাহত রয়েছে।
ভূমিকম্পে অসংখ্য ভবন মাটিতে মিশে গেছে, রাস্তাঘাট ভেঙে চৌচির হয়ে গেছে, সেতুগুলো ধসে পড়েছে। দেশটির সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন পড়েছে।
ব্রিট্শি দৈনিক গার্ডিয়ানের খবর বলছে, উদ্ধার কাজ পরিচালনার জন্য স্থানীয়দের কাছে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও হাতিয়ার নেই।
রেডক্রসের কর্মকর্তাদের দাবি, গত ১০০ বছরে এই মাত্রার বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়নি এশিয়া।
উদ্ধারকর্মীরা বলছেন, ‘যাদের সহায়তা দরকার, তারা আমাদের ডাকছেন। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে তাদের কাছে আমরা পৌঁছাতে পারছি না।’
এই ভূমিকম্পে মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডেও ১৮ জন নিহত হওয়ার খবর মিলেছে। দেশটির একটি নির্মাণাধীন বহুতল ভেঙে পড়ায় এই প্রাণহানি ঘটেছে।
২৭৩ দিন আগে
যুক্তরাষ্ট্রে শয়তান সংঘের সভায় হাতাহাতি, গ্রেপ্তার ৩
যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস অঙ্গরাজ্যে স্বঘোষিত শয়তানের ছোট একটি দলের নেতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার (২৯ মার্চ) অঙ্গরাজ্যটির স্টেটহাউসে ‘ব্ল্যাক মাস’ আয়োজনের চেষ্টা করলে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। পরে তাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সেদিন স্টেটহাউসের বাইরে জড়ো হয়েছিলেন কানসাস শহরের শয়তানের গ্রোটোর প্রায় ৩০ জন সদস্য। এখানে গ্রোটো বলতে সংঘ বোঝানো হয়েছে। এ সময়ে ভবনের ভেতরে খ্রীস্টানদের ঢুকতে দেওয়ার বিরুদ্ধেও তারা প্রতিবাদ করেন।
শয়তান সংঘের ব্ল্যাক মাস হচ্ছে এমন একটি অনুষ্ঠানের নাম, যা শয়তানের উপাসনার সময় অনুষ্ঠিত হয় এবং যা ক্যাথলিক মাসের একরকম প্যারোডি। গ্রোটোর সভাপতি মাইকেল স্টুয়ার্টের দাবি, ‘অঙ্গরাজ্যের আইনপ্রণয়ন ভবনে খ্রীস্টানদের ঢুকতে দেওয়ার মধ্য দিয়ে তাদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে যেতে হলে যেসব অধিকার সম্পর্কে জানতে হবে
এরইমধ্যে স্টেটহাউসের ভেতরে সাময়িকভাবে বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন অঙ্গরাজ্যটির গভর্নর লওরা কেলি। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পরে ভবনের ভেতরে অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় মাইকেল স্টুয়ার্টের দল। শয়তান সংঘের লোকজন জড়ো হওয়ার পর স্থানীয় কয়েক খ্রীস্টান এসে সেখানে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ দেখান।
শয়তানের চিত্রকল্প ও যিশু খ্রীস্টকে অস্বীকারসহ ভবনের ভেতরে অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেওয়ার প্রতিবাদ করেন তারা। যিশু খ্রীস্টকে ঈশ্বরের পুত্র হিসেবে বিবেচনা করেন খ্রীস্টানরা।
শয়তানের গ্রোটের লোকজনের জন্য জায়গা হলুদ টেপ দিয়ে চিহ্নিত করে রেখেছিল পুলিশ। শখানেক খ্রীস্টান এসে সেখানে জড়ো হন। এরপর দুটি পক্ষ পরস্পরের দিকে লক্ষ্য করে চিৎকার করতে থাকেন।
এ সময়ে খ্রীস্টানরা গান গেয়ে শয়তানের দলের লোকজনকে যিশু খ্রীস্টের পথে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। শয়তান সংঘের লোকজনের জন্য বরাদ্দ জায়গার বিপরীত পাশে আরও কয়েকশত খ্রীস্টানকে জড়ো হতে দেখা গেছে।
বহুদিন থেকে গ্রোটোর যেকোনো কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন রোমান ক্যাথলিক খ্রীস্টানরা। পরে চলতি মাসের শুরুতে স্টেটহাউসের মধ্যে তাদের কর্মসূচি নিষিদ্ধ করেন গভর্নর কেলি।
শয়তানের গ্রোটো নামের গোষ্ঠীটিকে ক্যাথলিকবিদ্বেষী গোঁড়ামি বলে আখ্যায়িত করেছেন অঙ্গরাজ্যটির ক্যাথলিক বিশপ। তারা ক্যাথলিক মাস নিয়ে মশকরা করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
কানসাস সিটির কিউর গির্জার যাজক জেরেমিয়া হিকস বলেন, ‘বাইবেলে বলা হয়েছে, শয়তান দুনিয়াতে এসেছে চুরি, হত্যা ও ধ্বংস করতে। কাজেই যখন একটি অঙ্গরাজ্যকে আমরা শয়তানের জন্য উৎসর্গ করে দিই, তখন আমরা সেটিকে ধ্বংসের জন্য উৎসর্গ করছি।’
গ্রোটো সদস্যরা বলেন, ‘তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিশ্বাসের মানুষ আছেন। কিছু নাস্তিকও আছেন তাদের দলে।’
মাইকেল স্টুয়ার্টের বন্ধু অ্যামি ডোরসি বলেন, ‘বাক ও ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারকে সমর্থন দিতেই তিনি শয়তানের গ্রোটোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। কারণ খ্রীস্টান গোষ্ঠীগুলোকে স্টেটহাউসে প্রার্থনার অনুমোদন দেওয়া হলেও তাদের দেওয়া হচ্ছে না।’
গ্রেপ্তার হওয়ার আগে স্টুয়ার্ট বলেন, ‘শুক্রবার ব্ল্যাক মাসের সময় নির্ধারণ করা ছিল তাদের। কারণ তখন কানসাস আইনসভার অধিবেশন হওয়ার কথা ছিল। যদিও বসন্তকালীন বিরতির জন্য বৃহস্পতিবার আইনসভার অধিবেশন মুলতবি করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের ৫ অঙ্গরাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে হাম, দুজনের মৃত্যু
আগামী বছর আবারও গোষ্ঠীটি তাদের কার্যক্রম নিয়ে ফিরে আসবে বলে জানান তিনি।
কেএসএনটি-টিভির ভিডিওতে দেখা গেছে, ভবনটির প্রথম তলায় নিজের দলকে পরিচালনার চেষ্টা করছেন স্টুয়ার্ট। তখন একজন তরুণ তার হাত থেকে বক্তৃতার কাগজ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে স্টুয়ার্ট তাকে ঘুষি মারেন। এরপর পুলিশ তাকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যায়।
তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় ‘স্বাগত, শয়তান’ বলে চিৎকার করছিলেন তিনি। স্টুয়ার্টের স্ত্রী মায়েনাদ বি বলেন, ‘তিনি কেবল সংবিধানের প্রথম সংশোধনের অধিকার চর্চা করছিলেন।’
২৭৪ দিন আগে
নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে হামাসের সম্মতি, পাল্টা প্রস্তাব ইসরায়েলের
মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতায় নতুন যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার কথা জানিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারীদের পূর্ণ সহযোগিতায় পাল্টা প্রস্তাব দেওয়ার কথা জানিয়েছে ইসরায়েল।
নিজেদের পাল্টা প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেয়নি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়। শনিবার (২৯ মার্চ) তারা জানিয়েছে, শুক্রবার আলাপ-আলোচনার পরই এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি, একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহারের বিনিময়ে অবশিষ্ট জিম্মিদের ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে হামাস।
নড়বড়ে অস্ত্রবিরতি চুক্তিকে পুনর্বহাল করতে চলতি সপ্তাহের শুরুতে একটি প্রস্তাব দিয়েছিল মিসর। যদিও তার আগেই গাজায় নতুন করে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। এতে কেবল গত ১৮ মার্চই চার শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
হামাস নেতা খলিল আল-হাইয়া নতুন যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার আগে তাতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি।
মিসরের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, জীবিত থাকা পাঁচ জিম্মিকে ছেড়ে দেবে হামাস, যাদের মধ্যে একজন আমেরিকান-ইসরায়েলিও রয়েছেন। বিনিময়ে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেবে ইসরায়েল। সামরিক আগ্রাসনেও সপ্তাহখানেকের জন্য বিরতি দেবে দখলদার বাহিনী। এছাড়া কয়েকশ ফিলিস্তিনি বন্দিকেও মুক্তি দেওয়ার কথা বলেছিল তারা।
হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের ২৪ জন এখনও জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের ছেড়ে দেওয়া না হলে যুদ্ধ তীব্রতর করার হুমকি দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এ ছাড়াও ইসরায়েলের শর্তের মধ্যে ছিল—হামাসকে নিরস্ত্র হতে হবে, গাজার ক্ষমতা ছাড়তে হবে এবং তাদের নেতাদের দেশের বাইরে নির্বাসনে পাঠাতে হবে।
শনিবার মিসর সীমান্তের কাছাকাছি রাফাহ শহরে স্থল অভিযান প্রসারিত করেছে ইসরায়েল।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার মধ্য দিয়ে গাজা যুদ্ধ শুরু হয়। তখন ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলিকে হত্যা করেছিল হামাস। পাশাপাশি ২৫১ জনকে জিম্মি করে উপত্যকায় নিয়ে যায় তারা। তারপর থেকে গাজাজুড়ে আগ্রাসন চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত উপত্যকার ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
২৭৪ দিন আগে
সৌদি আরবে ঈদ রবিবার
শনিবার সৌদি আরবে ঈদের চাঁদ দেখা গিয়েছে। ফলে আগামীকাল রবিবার সেখানে ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হবে বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার সন্ধ্যায় শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় রবিবার (৩০ মার্চ) ঈদুল ফিতরের প্রথম দিন উদযাপন করবে সৌদি আরব।
খবরে বলা হয়েছে, আজ (শনিবার) স্থানীয় সময় মাগরিবের নামাজের পর বিষয়টি নিশ্চিত করে সৌদির চাঁদ দেখা কমিটি। এর ফলে দেশটিতে ২৯ রোজার পর এ বছর ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
সৌদির রয়্যাল কোর্টের এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আজ (শনিবার) রমজানের শেষ দিন এবং আগামীকাল (রবিবার) রাজ্যজুড়ে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে।
এর ফলে বাংলাদেশে সোমবার ঈদ উদযাপনের সম্ভাবনা আরও জোরালো হলো। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ঈদ উদযাপনের পরের দিন সাধারণত বাংলাদেশে ঈদ উদযাপিত হয়ে থাকে। তবে সৌদির সঙ্গে মিল রেখেও দেশের অনেক জায়গাতে ঈদ উদযাপন করে থাকে দেশের অনেক মুসল্লি।
২৭৫ দিন আগে
ভূমিকম্পে মিয়ানমারে নিহত বেড়ে দেড় সহস্রাধিক, বাড়তে পারে আরও
মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে এক হাজার ৬৪৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এক বিবৃতিতে দেশটির জান্তা সরকার এমন তথ্য দিয়েছে।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) দিনের মাঝামাঝিতে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটির মধ্যাঞ্চলের সাগেইং শহরে সাত দশমিক সাত মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছে। পরবর্তীকে বেশ কয়েকটি আফটারশক (পরাঘাত) হয়েছে। এরমধ্যে একটি আফটারশকের মাত্রা ছিল ছয় দশমিক সাত মাত্রার।-খবর ডনের।
প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডও কেঁপে ওঠে ভূমিকম্পে। দেশটিতে ১০ জনের নিহতের খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।
ভূমিকম্পে মিয়ানমারের বহু ভবন ও সেতু ভেঙে পড়েছে। রাস্তায় ফাটল ধরে চৌচির হয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তর শহর মান্দালয়। শহরটিতে এক কোটি ৭০ মানুষ বাস করেন।
জান্তা সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পে তিন হাজার ৪০৮ জন আহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ১৩৯ জন।
গেল একশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে মিয়ানমারের যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার হওয়া সম্ভব হয়নি। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বিল্ডিং কোড-মহাপরিকল্পনা অনুসরণ না করলে বিপর্যয় ডেকে আনবে ভূমিকম্প
দেশটিতে কয়েক শত বছরের পুরোনো একটি প্যাগোডা মাটিতে মিশে গেছে। প্যাগোডার পাশেই তল্লাশিচৌকিতে দাঁড়িয়ে থাকা এক সেনা বলেন, ‘হঠাৎ করে কম্পন শুরু হয়েছে। পরে তা মারাত্মক রূপ নিয়েছে। মঠও ভেঙে গেছে। একজন সন্ন্যাসী নিহত হয়েছেন। কয়েকজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
দীর্ঘদিন ধরে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধকবলিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে ব্যাপক মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। ভূমিকম্পের ফলে সড়ক ও সেতু ভেঙে পড়ায় চলাচলও কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে ত্রাণ কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না।
২৭৫ দিন আগে
দুর্যোগ থেকে মানুষকে উদ্ধারের সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের আর নেই: সাবেক ইউএসএইড প্রধান
ভূমিকম্প কিংবা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধ্বংসস্তূপ থেকে মানুষকে উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ বা লোকবল কোনোটিই আর মার্কিন প্রশাসনের নেই বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএইড) সাবেক প্রধান সারাহ চার্লস।
ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সহায়তার আশ্বাস দিলে এই মন্তব্য করেন সারাহ। স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৮ মার্চ) ওয়াশিংটনে ভূমিকম্প সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সহায়তা দেওয়ার কথা বলেন ট্রাম্প।
আরও পড়ুন: খাটের নিচে লুকিয়ে থাকা ‘দানব’ ধরিয়ে দিল শিশু
তবে দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরেই যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএইড) ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দেওয়া বৈদেশিক সহায়তায় ব্যাপক কাঁটছাট করেন ট্রাম্প।
এ কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দেশে সংঘটিত এই দুর্যোগ মোকাবিলায় ট্রাম্প প্রশাসন কতটুকু কার্যকর হবে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকে। মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের পরিস্থিতি ট্রাম্পের জন্য একটি কঠিন পরীক্ষা বলে অভিমত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
শুক্রবার দিনের মাঝামাঝিতে হওয়া এই ভূমিকম্পে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজারের বেশি। এখনো ধ্বংসস্তূপ থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হচ্ছে।
এ দুর্ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা তাদের সহায়তা করতে চলেছি। সংশ্লিষ্টদের এরইমধ্যে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। যা হয়েছে, তা সত্যিই খুব খারাপ হয়েছে।’
এই বক্তব্যের পরে বৈদেশিক সহায়তা কাঁটছাট ও কর্মীদের ব্যাপকভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করায় ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা করে সারাহ বলেন, ‘প্রশাসন এখন ধুঁকে ধুঁকে চলছে। ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত মানুষকে উদ্ধারের জন্য তাৎক্ষণিক সহায়তা দিতে হলে যে সম্পদ বা লোকবল প্রয়োজন, তা কোনোটিই এখন নেই যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের।’
অবশ্য সারাহর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউএসএইডের বর্তমান মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস। তিনি জানান, যেকোনো দুর্যোগে তাৎক্ষণিকভাবে খাবার ও নিরাপদ পানিসহ অন্যান্য সহায়তায় বিশেষজ্ঞ টিম প্রস্তুত রয়েছে।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্পে মিয়ানমারে সহস্রাধিক প্রাণহানি, ব্যাপক মানবিক সংকট
কর্মী ছাঁটাইয়ের কারণে সংস্থাটির কর্মদক্ষতার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব পড়েনি বলে জানান তিনি।
সারাহ বলেন, ভূমিকম্পের মতো ঘটনাগুলোতে সাধারণত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংস্থাটির একটি উদ্ধারকারী দল পৌঁছে যায়। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মী ছাঁটাইয়ের কারণে ওই দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এ ছাড়াও বৈদেশিক সহায়তা বন্ধ ও কাঁটছাট করার কারণে জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থাগুলোর জরুরি সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে অভিমত দেন সারাহ।
২৭৫ দিন আগে