বিশ্ব
গাজায় ধ্বংসস্তূপ থেকে ২৫ দিন বয়সী শিশু উদ্ধার
গাজা উপত্যকার খান ইউনিসের বাইরে সীমান্তের কাছে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় ভেঙেপড়া ভবনের ধ্বংসাবশেষ তন্নতন্ন করে খুঁজছিলেন উদ্ধারকারীরা। কেউ আটকে পড়েছে কিনা; তা দেখছিলেন তারা। তখনই ইট-পাথরের নিচ থেকে একটি নবজাতকের কান্না ভেসে আসে।
এ সময়ে বিস্ময়ে সবার মুখ থেকে ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি বেরিয়ে আসে। এক লোক দৌড়ে এসে একটি জীবন্ত শিশু কোলে তুলে নিল। তার শরীরে কম্বল মোড়ানো। এরপর তাকে অপেক্ষারত একটি অ্যাম্বুলেন্স ক্রুদের হাতে তুলে দিল।
প্যারামেডিকরা যখন শিশুটিকে পরীক্ষা করছিল, তখন সে থেমে থেমে নড়ে উঠছিল। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সেহরির সময় আকস্মিক ইসরাইলি বিমান হামলায় শিশুটির বাবা-মা ও ভাই নিহত হয়েছেন।
হাজেন আত্তার নামের একজন বেসামরিক প্রতিরক্ষাকর্মী বলেন, ‘স্থানীয় লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে আমরা জানতে পারি, শিশুটির বয়স ২৫ দিন। বিমান হামলার পর থেকেই ইট-পাথরের ভেতরে আটকাপড়ে সে।’আরও পড়ুন: গাজায় এমন হামলা হবে, যা আগে কেউ কখনো দেখেনি: ইসরায়েল
‘তখন থেকে শিশুটি কান্না করে যাচ্ছিল। ধীরে ধীরে তার গলার স্বর কমে নীরব হয়ে যায়। আর কাঁদতে পারছিল না। এরপর তাকে আমরা উদ্ধার করেছি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে সে এখন নিরাপদ,’ বলেন তিনি।
শিশুটির নাম ইল্লা ওসামা আবু দাগ্গা। ২৫ দিন আগে গাজায় নড়বড়ে যুদ্ধবিরতির মধ্যে শিশুটি জন্ম নিয়েছে। ফিলিস্তিনিরা ধরে নিয়েছিলেন, যুদ্ধ শেষ। যদিও পনেরো মাসের যুদ্ধে পুরো উপত্যকাটি ধ্বংস হয়ে গেছে। বাসিন্দারা বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছেন সবাই। নিহত হয়েছেন ৪৯ হাজারের বেশি মানুষ, যাদের বেশির ভাগ নারী-শিশু।
হামলায় শিশুটির দাদা ছাড়া পুরো পরিবার নিহত হয়েছেন। অর্থাৎ তার বাবা-মা ও ভাই বেঁচে নেই। তাদের সঙ্গে আরেকটি পরিবারের সাত বছরের শিশু ও তার বাবা নিহত হয়েছেন।
ধ্বংসস্তূপের ভেতরে একটি জাজিমের ওপর ঘুমিয়েছিল শিশুটি। সেখান থেকে তার ছোট্ট শরীরটি বের করে নিয়ে আসেন উদ্ধারকর্মীরা। শিশুকন্যাটিকে তাৎক্ষণিকভাবে কে আশ্রয় দিয়েছেন, তা জানা সম্ভব হয়নি।
মঙ্গলবার আকস্মিকভাবে গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। এতে দুপক্ষের যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে যায়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এরপর গেল দুদিনে ৬০০ ফিলিস্তিনি নিহত হন। নিহতদের বেশির ভাগ নারী-শিশু।
খান ইউনিসের বাইরে ইসরাইলি সীমান্তের কাছে আবাসান আল-কাবিরা নামের একটি গ্রামে শিশুটির বাড়ি। ইসরাইলি হামলায় সেখানে ১৬ জন নিহত হয়েছেন।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর দাবি, ‘তারা কেবল হামাস যোদ্ধাদের নিশানা করে হামলা চালাচ্ছে। বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার জন্য ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনটিই দায়ী। কারণ, আবাসিক এলাকার ভেতরে থেকে কার্যক্রম চালায় হামাস।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরাইলে আকস্মিক হামলা চালিয়ে এক হাজার ২০০ ইসরাইলিকে হত্যা করে হামাস। এ সময় ২৫১ জনকে জিম্মি করে তারা। এরপর থেকে হামাসকে ধ্বংস করতে অবিরত হামলা চালিয়ে আসছে ইসরাইলি বাহিনী।
২৮৪ দিন আগে
গাজায় এমন হামলা হবে, যা আগে কেউ কখনো দেখেনি: ইসরায়েল
হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিদের মুক্তি না দিলে গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎস। গাজায় এমন তীব্র হামলা চালানো হবে ‘যা আগে কেউ কখনো দেখেনি’ বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
গাজার নেতজারিম করিডোরের একটি অংশ ফের দখলে নেওয়ার পর এ হুমকি দেন কাৎস। স্থানীয় সময় বুধবার (১৯ মার্চ) উত্তর ও দক্ষিণ গাজাকে বিভক্তকারী কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলটিতে সেনা মোতায়নের তথ্য নিশ্চিত করেছে ইসরায়েল প্রশাসন।
জিম্মি ইসরায়েলিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত ও গাজার শাসনক্ষমতা না ছাড়া পর্যন্ত গাজায় হামলার তীব্রতা বাড়তে থাকবে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)।
নেতজারিম করিডোর দখলে নেওয়ার পর বুধবার এ সংক্রান্ত এক বিবৃতিতে আইডিএফ জানায়, জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপ কার্যকর হওয়ার পর এই অঞ্চলটি থেকে ইসরায়েলি সেনাপ্রত্যাহার করা হয়েছিল। এখন আবার সেখানে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: যুদ্ধে জন্ম নিয়ে, যুদ্ধেই শহীদ শিশুটি
এর আগে মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সেহরির সময় নতুন করে আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। এতে নারী-শিশুসহ চার শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হন বলে জানিয়েছে হামাসশাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এতে করে ভেঙে পড়েছে চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তি।
দীর্ঘ পনেরো মাসের সংঘাত শেষে যে একটু আশার আলো দেখতে শুরু করেছিলেন গাজার বাসিন্দারা। মানবিক সাহায্য আসতে শুরু করেছিল, ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন কয়েকশত ফিলিস্তিনি। যাদের মধ্যে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিও ছিলেন।
তবে মঙ্গলবারের হামলায় আশার সব আলো নিভে গেছে। এরইমধ্যে নেতজারিম করিডোরের দখল দুইপক্ষকে ফের সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও মঙ্গলবারের ইসরায়েলি বিমান হামলার পর এখন পর্যন্ত হামাসের কোনো পাল্টা হামলার খবর পাওয়া যায়নি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর পরবর্তী যুদ্ধে প্রায় ৪ মাইল (৬ কিলোমিটার) দীর্ঘ এই করিডোরটিকে একটি সামরিক অঞ্চল হিসেবে ব্যবহার করেছে ইসরায়েল। এটি ইসরায়েলি সীমান্ত থেকে উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত।
আরও পড়ুন: সেহরির সময় ইসরায়েলি হামলা, গাজায় নারী-শিশুসহ নিহত ৪ শতাধিক
যুদ্ধকালীর উত্তর গাজার অনেকেই পালিয়ে দক্ষিণ গাজায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। পনেরো মাসের সংঘাত শেষে করিডোর থেকে আইডিএফ সেনারা সরে গেলে অনেকেই উত্তর গাজায় ফিরেছিলেন।
নেতজারিম করিডোর দখলের পর অঞ্চলটি থেকে সব ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎস। তিনি জানান, ‘মঙ্গলবারের বিমান হামলা তো কেবল শুরু।’
কাৎস বলেন, ‘হামাস যদি জিম্মিদের মুক্তি না দেয়, তাহলে এমন ভয়াবহ হামলা চালানো হবে যা আগে কেউ কখনো দেখেনি।’
ফের আগ্রাসন শুরু করে নিজ দেশেও বিক্ষোভের মুখোমুখি হয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। নিজ দেশের নাগরিকদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে নিজের গদি বাঁচাতে পুনরায় হামলা শুরু করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।
হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে গতকাল (বুধবার) নেসেটের (ইসরায়েলের পার্লামেন্ট) সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন জিম্মিদের স্বজনরা। এরপর তারা জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর বাসভবনের সামনেও বিক্ষোভ করেন।
তবে এসবকে পাত্তা না দিয়েই হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলের সেনারা। মঙ্গলবারের হামলায় নিহতদের প্রতি শোক জানাতে জড়ো হওয়া মানুষের ওপরও ইসরায়েল হামলা করেছে বলে জানান গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ফারেস আওয়াদ।
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ২০০
ওই হামলায় ১৭ জন নিহত হয়েছেন বলে জানান তিনি। ইসরায়েলি হামলায় এ অবধি প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৪৯ হাজার ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্য অধিকাংশ নারী ও শিশু।
তবে ইসরায়েলের দাবি, তারা কেবল সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করেই হামলা চালায়, হামাস ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করে বলে অভিযোগ করেন তারা।
গত ১ মার্চ গাজায় প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি শেষ হয়। এরপর প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়িয়ে জিম্মিদের মুক্ত করতে চাইছিল ইসরায়েল।
হামাস সদস্যরাও জানিয়েছে, তারা অবশ্যই ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেবেন। তবে তা কেবল যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে। যেখানে মুক্তি পাবেন ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিরা। এছাড়াও হামাসের দাবি, একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও গাজা থেকে ইসরায়েলের সেনাপ্রত্যাহার।
২৮৪ দিন আগে
যুদ্ধে জন্ম নিয়ে, যুদ্ধেই শহীদ শিশুটি
তেরো মাস আগে যুদ্ধের মধ্যেই প্রথম সন্তানের জন্ম দেন আফনান আল-গানাম। তখন তার পরিবার গাজা উপত্যকায় নিজেদের বাড়িতে বাস করতেন।
চলতি বসন্তে তিনি দ্বিতীয়বার সন্তানসম্ভবা হয়েছেন। এই সময়ে এসে তারা একটি দারিদ্র্যপীড়িত তাঁবুর নিচে বাস করতেন। পনেরো মাস যুদ্ধ শেষে একটি নাজুক যুদ্ধবিরতি তাদের মধ্যে কিছুটা প্রশান্তি এনেছিল।
কিন্তু মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) বিমান হামলায় তাদের তাঁবুটি মাটিতে মিশে যায়। সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা আফনান আল-গানাম ও তাদের প্রথম সন্তান মোহাম্মদ—দুজনেই নিহত হয়েছেন।
সেদিন সেহরির সময় আকস্মিকভাবে ঝাঁকে ঝাঁকে যুদ্ধবিমান এসে গাজায় বোমা ফেলতে শুরু করে। এতে চার শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরবাগ নারী ও শিশু। ভূখণ্ডটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে। জিম্মিদের ছেড়ে দিতে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসকে বাধ্য করতে গাজায় হামলা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে ইসরাইল।
২৮৪ দিন আগে
লুইজিয়ানায় প্রথম নাইট্রোজেন গ্যাস দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানায় কয়েক দশক আগের একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে একটি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যায় অঙ্গরাজ্যটিতে প্রথমবারের মতো এ ধরনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
যদিও গেল ১৫ বছরে অঙ্গরাজ্যটিতে এটি প্রথম কোনো মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) খবর বলছে, লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্য কারাগারে মঙ্গলবার বিকাল ৫টা ৫০ মিনিটে তার মৃত্যু ঘোষণা করা হয়েছে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, ১৯ মিনিট ধরে নাইট্রোজেন গ্যাস প্রবাহিত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। তারা এটিকে নিখুঁত মৃত্যুদণ্ড হিসেবে অভিহিত করেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির নাম জেসি হফম্যান জুনিয়র (৪৬)।
এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘মৃত্যুর সময় হফম্যানের শরীরে অনিচ্ছাকৃত ঝাঁকুনি দেখা গেছে। এ সময়ে তার শরীরে খিঁচুনিও হয়েছে।’
তবে এভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার মধ্য দিয়ে অসাধারণ কিছু দেখছেন না বলে জানিয়েছেন আরও দুই প্রত্যক্ষদর্শী। এটিকে আবেগহীন ও পদ্ধতিগত মৃত্যুদণ্ড বলে আখ্যায়িত করেছেন ডব্লিউডিএসইউয়ের প্রতিবেদক গিনা সোয়ানসন।
তিনি বলেন, ‘এখানে এমন কিছু ঘটেনি, যা দেখে তার মাথায় চিন্তা আসবে—এটা কী সঠিক ছিল? এটা কী এভাবেই হওয়ার কথা ছিল?’
আরও পড়ুন: আমি যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক বন্দি: মাহমুদ খলিল
মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কক্ষে বসে শেষ ইচ্ছার কথা জানাতে অস্বীকার করেছেন হফম্যান। শেষ খাবারও খেতে চাননি তিনি।
নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রে পঞ্চম মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা ছিল এটি। বাকি চারবার এই একই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে এবং সবগুলোই হয়েছে আলবামায়।
নিউ অরলিন্সে ২৮ বছর বয়সী মলি ইলিওট নামের এক বিজ্ঞাপন কর্মকর্তাকে হত্যাকাণ্ডের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন হফম্যান। এই অপরাধ সংঘটনের সময় তার বয়স ছিল ১৮ বছর।
তার জীবনের অধিকাংশ সময়ই দক্ষিণপূর্ব লুইজিয়ানার একটি কারাগারে কাটাতে হয়েছে, মৃত্যুদণ্ডও সেখানে কার্যকর করা হয়েছে।
হফম্যানের আইনজীবী যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে নাইট্রোজেন গ্যাস প্রয়োগের মধ্য দিয়ে একজন ব্যক্তি অক্সিজেন থেকে বঞ্চিত হবেন, যা সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর লঙ্ঘন ঘটবে। কারণ এতে নিষ্ঠুর ও অস্বাভাবিক শাস্তি দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু তার এই যুক্তি ধোপে টেকেনি।
২৮৫ দিন আগে
তুরস্কের ইস্তানবুলের মেয়র গ্রেপ্তার
তুরস্কের জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ ও রাজধানী ইস্তানবুলের মেয়র একরেম ইমামোলুসহ বেশ কয়েকজন বিরোধীদলীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী কর্মাকাণ্ডের অভিযোগে বুধবার (১৯ মার্চ) তাদের গ্রেপ্তার করে দেশটির পুলিশ।
মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের খবর বলছে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের বড় প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে অন্যতম একরেম ইমামোলু। তিনি যাতে আগামীতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে এরইমধ্যে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ বাতিল করা হয়েছে।
তুরস্কের আইন অনুসারে, কাউকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে তার বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অপরিহার্য।
হঠাৎ করেই দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর ধারপাকড় বেড়েছে। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদুলু জানিয়েছে, ইস্তানবুলের মেয়রসহ আরও ১০০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন কৌঁসুলিরা। আটকদের মধ্যে একরেম ইমামোলুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী মুরাত অনগুনও রয়েছেন।
আরও পড়ুন: আইসিসির পরোয়ানায় ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট দুতার্তে গ্রেপ্তার
ইস্তানবুলের বেশ কয়েকটি সড়ক বন্ধ করে দিয়েছেন তুরস্কের কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও শহরে সব ধরনের বিক্ষোভের ওপর চার দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
সমালোচকরা বলছেন, গত বছরের স্থানীয় নির্বাচনে এরদোগানের ক্ষমতাসীন দলের বড় ধরনের পরাজয় ঘটেছে। এজন্য দেশটিতে আগামী নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে। এ কারণে বিরোধীদের ওপর ধারপাকড় বেড়েছে।
দেশটির আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করছে বলে দাবি করেছেন সরকারি কর্মকর্তারা। তারা বলেন, এই গ্রেপ্তার কোনোভাবেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত না। গ্রেপ্তারের আগের দিন সামাজিকমাধ্যমে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় একরেম ইমামোলু বলেন, ‘আমরা ব্যাপক অত্যাচারের মধ্যে আছি। কিন্তু কোনোভাবেই আমরা থেমে যাব না।’
সরকার মানুষের ইচ্ছাশক্তিকেও কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী কিংবা প্রেসিডেন্ট হিসেবে তুরস্কের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এরদোগান। দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি শাসকও তিনি। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার বর্তমান মেয়াদ ২০২৮ সাল পর্যন্ত। কিন্তু ভবিষ্যতে আর দীর্ঘসময় তিনি ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছেন।
২৮৫ দিন আগে
আমি যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক বন্দি: মাহমুদ খলিল
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্মকর্তাদের হাতে গ্রেপ্তার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিল নিজেকে একজন রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে দাবি করেছেন। এ সময় মার্কিন প্রশাসনের অভিবাসীদের এভাবে আটকে রাখার প্রক্রিয়াকে ইসরায়েলের বিচারবহির্ভূত আটক ব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করেছেন এই ফিলিস্তিনি যুবক।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানার আটককেন্দ্র থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছেন তিনি।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রকাশ্যে দেওয়া এটিই তার প্রথম কোনো বিবৃতি। গত শনিবার (৮ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসভবন থেকে খলিলকে গ্রেপ্তার করে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) কর্মকর্তারা।
বিবৃতিতে খলিল বলেন, ‘আমি একজন রাজনৈতিক বন্দি। লুইজিয়ানার শীতের সকালে ঘুম ভাঙার পর আমার দীর্ঘ দিন কাটে এখানে আটক বহু মানুষদের দেখে, যারা আইনের সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত।’
খলিল বর্তমানে লুইজিয়ানার জেনা শহরে একটি অভিবাসী আটককেন্দ্রে রয়েছেন। সেখানেই তিনি বিচারের মুখোমুখি হওয়ার অপেক্ষায় আছেন। তাকে এভাবে আটকে রাখার ঘটনাকে তিনি ইসরায়েলের কারাগারে বিনা বিচারের বছরের পর বছর ফিলিস্তিনিদের আটকে রেখে নির্যাতনের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
আরও পড়ুন: খলিল মাহমুদকে আটক: ট্রাম্প টাওয়ারে ইহুদিদের বিক্ষোভ
খলিল বলেন, ‘ফিলিস্তিনের ভূমি থেকে দূরে থাকলেও ভাগ্য সেই সীমানা অতিক্রম করে ফেলেছে। নিজেদের অধিকারের জন্য তাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হয়।’
বিনা অপরাধে, বিচারে তাদের আটক থাকতে হয়, তিনিও এর বাইরে নন বলে মন্তব্য করেন বিবৃতিতে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিবাসন কেন্দ্রে কেউই নিজের অধিকার পেতে পারেন না বলেও নিজের অভিমত জানান মাহমুদ খলিল।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসে ফিরেই অঙ্গীকার করেছিলেন, গত বছর কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনিপন্থি প্রতিবাদী আন্দোলনে জড়িত কিছু বিদেশি শিক্ষার্থীকে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেবেন। এই আন্দোলনকে তিনি ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে অভিহিত করেন।
ট্রাম্পের তথাকথিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদিবিদ্বেষী বিক্ষোভ বন্ধের অভিযানের প্রথম শিকার ৩০ বছর বয়সী এই ফিলিস্তিনি যুবক। মাহমুদ খলিল কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের শিক্ষার্থী। যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের গ্রিনকার্ড রয়েছে তার। কিন্তু তার গ্রিনকার্ড বাতিলের প্রক্রিয়া চলমান বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। আপাতত তাকে নিবার্সিত করার প্রক্রিয়া স্থগিত করেছেন এক ফেডারেল জজ।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সেই যুবক এখন বিপাকে
নিজের বন্ধু ও পরিবারের মাধ্যমে পাঠানো ওই বিবৃতিতে আটককেন্দ্রে অভিবাসীদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের অমানবিক আচরণের প্রতিবাদ করেছেন মাহমুদ খলিল। গাজায় পুনরায় ইসরায়েলের হামলা শুরু করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। পাশাপাশি প্রশাসনের কাছে নতজানু হয়ে নিজেদের শিক্ষার্থীকে শাস্তির মুখে ঠেলে দেওয়ায় কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমালোচনাও করেছেন খলিল।
ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, খলিলকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে ইহুদি শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করায় অভিযুক্ত বিদেশি শিক্ষার্থীদের দেশ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযানের শুরু হয়েছে।
তবে ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় আঘাত ও ফিলিস্তিনপন্থি মতামত দমনের চেষ্টা বলে অভিহিত করেছেন অনেক মানবাধিকার কর্মী ও খলিলের আইনজীবীরা।
বিবুতিতে খলিলও বলেছেন, তাকে গ্রেপ্তারের ঘটনা সরাসরি তার বাকস্বাধীনতা লঙ্ঘন। তিনি কোনো অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন না। তিনি বলেন, ‘আমি শুধু চেয়েছিলাম ফিলিস্তিনে গনহত্যা বন্ধ হোক। সেজন্য আমাকে গ্রেপ্তার করা হলো।’
খলিল জানান, তার আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী নূর আবদাল্লার সামনে থেকে তাকে নিয়ে আসা হয়েছে। এমনকি কোনো পরোয়ানাও দেখানো হয়নি, নাম-প্রতীকহীন একটি গাড়িতে তাকে নিয়ে আসা হয়েছে। তার গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত ছিলেন বলে জানান খলিল।
তিনি বলেন, গত বসন্তে তারা গাজায় ইসরায়েলি যে আগ্রাসন বন্ধে আন্দোলন করেছেন, তা যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন নসাৎ করে দিয়েছে, এখন নতুন করে বর্বরতা শুরু করেছে ইসরায়েল।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনি অ্যাক্টিভিস্ট আটক: যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন
আবার সীমাহীন দুর্ভোগ ও স্বজন হারানোর বেদনা সইতে হবে ফিলিস্তিনিদের বলে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। এদিকে, খলিলের আটক সংবিধানের পুরোপুরি লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন তার আইনজীবীরা। গত সপ্তাহে এ লক্ষে একটি সংশোধিত পিটিশন দায়ের করেছেন তারা। খলিলকে কোনো অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়নি, তিনি কোনো আইন অমান্য করেননি বলে উল্লেখ করেন তারা।
ট্রাম্প প্রশাসন অন্যায়ভাবে খলিলের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা। সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল রাইটসের সদস্য ও খলিলের আইনজীবী বলেন, ‘খলিলকে দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের এই তথাকথিত ইহুদিবিদ্বেষী অভিযানের শুরু মাত্র। ভবিষ্যতে আরও অনেকে এই সমস্যায় পড়বেন। তবে শুরুতেই তারা একজন নির্ভীক ও নীতিনিষ্ঠ সংগঠককে আটক করেছেন, যিনি কিনা নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে অত্যন্ত ভালোবাসা ও বিশ্বাসের পাত্র।’
২৮৫ দিন আগে
সেহরির সময় ইসরায়েলি হামলা, গাজায় নারী-শিশুসহ নিহত ৪ শতাধিক
যুদ্ধবিরতির চলায় প্রাণশঙ্কা একপাশে রেখে পরিবার নিয়ে ভোর রাতে সেহরি খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল গাজার বাসিন্দারা, তখনই মুহুর্মুহু বোমা বর্ষণে কেঁপে ওঠে উপত্যকা। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) হামলা থেকে আবাসিক ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে শরণার্থী শিবির—কিছুই রেহাই পায়নি।
অন্তত চার শতাধিক ফিলিস্তিনি মঙ্গলবারের (১৮ মার্চ) এই বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে বহু নারী ও শিশু রয়েছে। এছাড়া ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়েছে আরও অনেকে। ফলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের।
ইউনিসেফের মুখপাত্র রোসালিয়া বোলেন বলেছেন, ‘ইসরায়েলি হামলায় ১০ লাখের বেশি (ফিলিস্তিনি) শিশুর জীবন ঝুঁকিতে পড়েছে। তাদের যুদ্ধের ধকল সহ্য করতে হচ্ছে। শিশুদের জীবন এভাবে হুমকিতে পড়ায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ২০০
গাজা সিটির কেন্দ্রস্থলে আত-তলিবিন নামের একটি স্কুলে বাস্তুহারা নারী ও শিশুরা আশ্রয় নিয়েছিল। ইসরায়েলি বিমান হামলায় মাটিতে মিশে গেছে স্কুলটি। এ সময় ঘটনাস্থলেই নারী-শিশুসহ অন্তত ২৫ জন প্রাণ হারান বলে মিডল ইস্ট আইয়ের খবর থেকে জানা গেছে।
গাজায় ইসরায়েল নতুন করে হামলা শুরু করায় দুমাসের অস্ত্রবিরতি চুক্তি ভেঙে গেছে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
খবর বলছে, হামাসের কাছ থেকে জিম্মিদের মুক্ত করতে আরও বলপ্রয়োগের হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর আকস্মিক হামলা চালিয়ে ২৫০ ইসরায়েলিকে জিম্মি করে হামাস, তাদের মধ্যে ৫৯ জন এখনও সশস্ত্র গোষ্ঠীটির কাছে রয়েছে। হামাস অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দিতে অস্বীকার করার পর এই ঘটনা ঘটল।
এই হামলার পর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অস্ত্রবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে হামাস। এর মাধ্যমে স্থায়ী শান্তি চুক্তির জন্য মধ্যস্থতাকারীদের প্রচেষ্টা আরও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি তাদের।
এদিকে, হামাসের বিরুদ্ধে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এই হামলাকে ‘নিবৃত্তিমূলক’ বলে আখ্যায়িত করেছে আইডিএফ।
হামাসের ‘মাঝারি সারির’ সামরিক কমান্ডার, শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ও বিভিন্ন অবকাঠামো হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে।
পুরোনো শত্রু হামাসকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার শপথ নিয়েছেন নেতানিয়াহু। স্থল হামলার পাশাপাশি আকাশ থেকে অবিরত বোমা ফেলা হচ্ছে।
গাজা সিটি ছাড়াও উপত্যকার উত্তর ও দক্ষিণে অবস্থিত বেসামরিক নাগরিকদের বাড়ি ও শরণার্থী শিবিরেও নতুন করে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
গাজা সিটির বাসিন্দা রাবিহা জামাল (৬৫) বলেন, ‘এটা যেন রাতের গভীরতা ভেদ করে নরকের আগুন জ্বলে উঠেছে। যুদ্ধের প্রথম দিনের মতোই হামলা করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ, সুপেয় পানির সংকটে পড়তে যাচ্ছেন গাজাবাসী
পাঁচ সন্তানের মা এই নারী বলেন, ‘সেহরি খাওয়ার জন্য আমরা যখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তখন বিস্ফোরণ শুরু হয় এবং ভবনগুলো কেঁপে উঠতে শুরু করে। ভেবেছিলাম যুদ্ধ শেষ, কিন্তু তা আবার ফিরে এলো!’
নতুন দফায় এই হামলায় নিহতদের মধ্যে হামাসের রাজনৈতিক শাখার দীর্ঘদিনের সদস্য ইসাম আল-দালিসও রয়েছেন। গাজার সরকারের প্রশাসনিক কমিটির প্রধান ছিলেন তিনি। এছাড়া উপ-বিচারমন্ত্রী আহমেদ আল-হাত্তা, উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আবু ওয়াতফাও নিহত হয়েছেন।
ব্যাপক পরিসরে এই হামলায় রমজান মাসেও নতুন করে প্রাণ সংকটে পড়ে গেল গাজাবাসী।
২৮৫ দিন আগে
গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ২০০
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়ার পর গাজার কয়েকটি লক্ষবস্তুতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ২০০ জন। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা এসব হতাহতের কথা নিশ্চিত করেছেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে আলোচনায় অগ্রগতি না হওয়ায় তিনি এসব হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অভিযানটি উন্মুক্ত ছিল এবং এটি বাড়বে হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, 'এখন থেকে ইসরায়েল সামরিক শক্তি বাড়িয়ে হামাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’
এই অতর্কিত হামলা মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাসে তুলনামূলকভাবে শান্ত সময়কে অস্থির করেছে। ফলে ১৭ মাস ধরে চলা যুদ্ধ পুরোপুরি আবার শুরুর সম্ভাবনা বাড়িয়েছে। বিগত ১৭ মাসের যুদ্ধে ৪৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই সময়ে গোটা গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার পর হামাসের হাতে জিম্মি থাকা ইসরায়েলি দুই ডজনের বেশি নাগরিকে বেঁচে থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যাদেরকে এখনো জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ, সুপেয় পানির সংকটে পড়তে যাচ্ছেন গাজাবাসী
হামাস এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের 'বিনা উস্কানিতে উত্তেজনা বৃদ্ধির' নিন্দা জানিয়ে বলেছে, তারা জিম্মিদের ভাগ্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।
তাৎক্ষণিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে মিশর ও কাতারের সঙ্গে মধ্যস্থতা প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেওয়া মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ সতর্ক করে বলেছেন যে, হামাসকে অবশ্যই জীবিত জিম্মিদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে ‘অন্যথায় কঠোর মূল্য দিতে হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা অভিযানের বিষয়ে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেন, হামাসের সামরিক, নেতা ও অবকাঠামোতে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এছাড়া বিমান হামলা ছাড়াও অভিযানের পরিসর বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। হামাসের বিরুদ্ধে নতুন করে হামলার পরিকল্পনা ও পুনর্গঠনের চেষ্টা করার অভিযোগ তোলেন ওই কর্মকর্তা।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে হামাস যোদ্ধা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত ফিরে আসে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, জিম্মিদের মুক্তি না দিলে গাজাকে নরকে পরিণত করা হবে। তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ না আমাদের সব জিম্মি ঘরে ফিরছে এবং আমরা যুদ্ধের সব লক্ষ্য অর্জন না করছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা লড়াই থামাবো না।’
গাজাজুড়ে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং সকালের বিমান হামলায় কমপক্ষে ২০০ জনের অধিক নিহত হয়েছে বলে লাশ গ্রহণকারী বিভিন্ন হাসপাতাল জানিয়েছে।
অঞ্চলটির বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, তাদের কর্মীরা উদ্ধার তৎপরতা চালাতে কঠিন সময় পার করছেন। কারণ, একই সঙ্গে বিভিন্ন এলাকাকে হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হচ্ছে।
২৮৬ দিন আগে
ট্রাম্পের সঙ্গে আমার গভীর যোগসূত্র আছে: মোদি
দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘অনেক বেশি প্রস্তুত’ বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই মেয়াদে ট্রাম্প নির্দিষ্ট রোডম্যাপ নিয়েও এগোচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। মোদি বলেন, ‘ট্রাম্পের আমার মধ্যে গভীর যোগসূত্র আছে।’
রবিবার (১৬ মার্চ) প্রকাশিত এক পডকাস্টে তাকে এসব কথা বলতে শোনা গেছে। সম্প্রতি ভারতসহ বেশকিছু দেশের পণ্যে শুল্কারোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এপ্রিল থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে এ শুল্ক। এতে কৃষি পণ্য থেকে শুরু করে গাড়ি রপ্তানিতে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।
এরইমধ্যে প্রচারিত এই সাক্ষাৎকার ট্রাম্প ও মোদির মধ্যে জোরালো সম্পর্কের আভাস দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর গত মাসে প্রথমবার তার (মোদি) সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেন নরেন্দ মোদি।
আরও পড়ুন: বাইডেনের পাওয়া উপহারের তালিকা প্রকাশ, সবচেয়ে দামি মোদির হীরা
বৈঠকে শুল্ক সংক্রান্ত বিরোধ নিরসনে ২০২৫ সালের শরতকালের মধ্যে একটি প্রাথমিক চুক্তি করতে সম্মত হয় দেশ দুটি। এর মধ্যে দিয়ে ২০৩০ সাল নাগাদ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৫০০ বিলিয়নে ( ৫০ হাজার কোটি টাকা) উন্নীত করার পরিকল্পনা করছে দিল্লি ও ওয়াশিংটন।
বৈঠক শেষে দেওয়া ওই সাক্ষাতকারে মোদি বলেন, ‘এ মেয়াদে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আগের তুলনায় বেশি প্রস্তুত মনে হয়েছে আমার। এবার তার (ট্রাম্প) একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ রয়েছে। সেটি অনুযায়ীই তিনি প্রতিটি পদক্ষেপ নির্ধারণ করে এগোচ্ছেন।’
এ সময় ট্রাম্পের উদারতা ও বিনয়ের প্রশংসা করেন মোদি। তিনি বলেন, ট্রাম্প যেমন ‘আমেরিকা ফার্স্ট নীতিতে বিশ্বাস করেন, আমিও একই নীতিতে বিশ্বাসী। আমার কাছে সর্বাগ্রে ভারত। এ কারণেই ট্রাম্পের সঙ্গে আমার গভীর যোগসূত্র রয়েছে।’
পডকাস্টে মোদি আলোচকের সঙ্গে তার ব্যক্তিজীবনের শুরুর দিকের ঘটনাপ্রবাহ, কূটনীতিসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। এ সময় প্রতিবেশী দেশ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও নানা প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
তিনি জানান, চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করছে তার প্রশাসন। ২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় চীন ও ভারতের সেনাদের সংঘর্ষের পর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছায়।
আরও পড়ুন: চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ: ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক শি জিন পিংয়ের
এ পরিস্থিতি নিরসনে গত বছর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন মোদি। ধীরে ধীরে হলেও দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কে বিশ্বাস ও আগ্রহ পুনরায় স্থাপিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
২৮৭ দিন আগে
মঙ্গলবার পৃথিবীতে ফিরছেন নাসার আলোচিত দুই নভোচারী
নয় মাসের বেশি সময় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) আটকে থাকার পর পৃথিবীতে ফিরে আসছেন নাসার আলোচিত দুই নভোচারী। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) তারা পৃথিবীতে পা রাখবেন বলে নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা।
রবিবার (১৬ মার্চ) এক বিবৃতির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে নাসা। আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী, বুধবার (১৯ মার্চ) সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোরের ফেরার কথা থাকলেও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৫টা ৫৭ মিনিট নাগাদই তারা পৃথিবীতে অবতরণ করবেন বলে জানায় নাসা।
নভোচারী সুনিতা ও বুচকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে গত শুক্রবার (১৪ মার্চ) একটি মিশন পাঠিয়েছে নাসা ও ইলন মাস্কের মহাকাশ প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স।
আরও পড়ুন: পৃথিবীতে ফিরছেন মহাকাশে আটকে পড়া সেই দুই নভোচারী
নভোচারীদের ফিরিয়ে আনতে ক্রু–১০ মিশনে ড্রাগন নামের মহাকাশযানটি (ড্রাগন ক্যাপসুল) ফ্যালকন ৯ রকেটে পাঠানো হয়েছে। নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে রকেটটি উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। এ মিশনে রয়েছেন নাসার নভোচারী অ্যান ম্যাকক্লেইন, নিকোল আয়ার্স, জাপানের মহাকাশ সংস্থার নভোচারী তাকুয়া অনিশি ও রুশ নভোচারী কিরিল পেসকভ।
সুনিতা ও বুচের পাশাপাশি নাসার মহাকাশচারী নিক হেগ এবং রাশিয়ান মহাকাশচারী আলেকজান্ডার গরবুনভও ড্রাগন ক্যাপসুলে করে ফিরবেন বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
হেগ ও গরবুনভ গত সেপ্টেম্বরে স্পেসএক্সের একটি ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুলে আইএসএসে যান। ক্যাপসুলটিতে সুনিতা ও উলমোরের জন্য দুটি সিট ফাঁকা রাখা হয়েছিল। ওই মহাকাশ যানটিও আইএসএসের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে।
এদিকে, গত বছরের জুন মাসে বোয়িং স্টারলাইনারের তৈরি একটি ক্যাপসুলে মহাকাশে গিয়েছিলেন সুনিতা ও বুচ। ওই বছরের ২২ জুন তাদের পৃথিবীতে ফিরে আসার কথা থাকলেও মহাকাশযানটির হিলিয়াম গ্যাস লিক হওয়ার কারণে তাদের ফিরতি যাত্রা স্থগিত হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: নাসার স্পেসএক্স মিশনের নভোচারীরা পৃথিবীতে ফিরছেন
নাসা সেই সময় জানায়, তাদের ফিরতে আট মাস সময় লাগতে পারে। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়। মহাকাশ স্টেশনে তাদের জীবন কেমন কাটছে তা নিয়ে জানতে আগ্রহী ছিল সারা বিশ্বের মানুষ।
তবে চলতি বছরের মার্চের শেষ কিংবা এপ্রিলের শুরুতে তাদের ফিরে আসার কথা থাকলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও স্পেসএক্স প্রধান ইলন মাস্কের তৎপরতায় মার্চের মাঝামাঝিতেই তাদের ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয় নাসা ও স্পেসএক্স।
ক্ষমতা গ্রহণের পরই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং স্পেসএক্সের ইলন মাস্ক নভোচারীদের ফিরিয়ে আনার গতি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তাদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার সময় এগিয়ে নিয়ে আসে নাসা।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
২৮৭ দিন আগে