������������������������������
বাজাজ পালসার এন-২৫০: বাংলাদেশের প্রথম ২৫০ সিসি বাইক
সেরা গতির বাইকটি অধিকারে থাকা আর আভিজাত্য ও দুঃসাহসিকতার যুগপৎ উন্মাদনা যেন একে অন্যের পরিপূরক। আর এই মর্যাদাকে আরও বাড়িয়ে দিতেই যেন দেশের সড়কে চলমান বাইকের সর্বোচ্চ ইঞ্জিন ক্ষমতার সীমা উন্নীত করা হয়েছে ৩৭৫ সিসিতে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, ২৭ নভেম্বর সোমবার চালু হলো বাজাজ পালসার এন-২৫০।
এর মধ্যে দিয়ে ২৫০ সিসির ইঞ্জিন দক্ষতার মাইলফলক স্পর্শ করল বাংলাদেশ অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি। চলুন, এর বিভিন্ন ফিচার, দাম, এবং সুবিধা-অসুবিধাগুলোর বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
বাজাজ পালসার এন-২৫০ এর ফিচার
ইঞ্জিন ও ট্রান্সমিশন
পালসারটি এন-২৫০ শক্তি পায় একটি সিলিন্ডার ও ৪-স্ট্রোক ইঞ্জিন থেকে। ইঞ্জিনটিকে পরিচালনা করে ২টি ভালভসহ একটি অত্যাধুনিক এসওএইচসি (সিঙ্গেল ওভারহেড ক্যামশ্যাফ্ট)।
এই মডেলের সঙ্গে থাকছে ৫-স্পিড কনস্ট্যান্ট মেশ গিয়ারবক্স। এছাড়া মোটরসাইকেলটি বিএস৬-২.০ নিঃসরণ মান মেনে চলে, যা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকরণে বাজাজের প্রতিশ্রুতিকে ন্যায্যতা দান করে।
আরও পড়ুন: উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হোম অফিস যেভাবে সাজাবেন
মাইলেজ ও জ্বালানি দক্ষতা
একবারে ১৪ লিটার জ্বালানি ভরতে পারে, যার প্রতি লিটারে এটি মাইলেজ পায় ৩৫ কিলোমিটার। এর সঙ্গে মডেলটি শক্তি এবং জ্বালানি দক্ষতার মধ্যে একটি সর্বোত্তম ভারসাম্য বজায় রাখে।
চ্যাসিস ও সাসপেনশন
এন-২৫০ স্পোর্টস নেকেড বাইকের ক্যাটাগরির অন্তর্গত, যেখানে আবরণে রয়েছে সতর্কতার সঙ্গে তৈরি একটি শক্তিশালী চেসিস।
৩৭ মিলিমিটারের টেলিস্কোপিক ফ্রন্ট সাসপেনশন এবং নাইট্রোক্স রিয়ার সাসপেনশনসহ মনোশক যে কোনো ঝাকুনি শোষণ করতে এবং একটি মসৃণ ও নিয়ন্ত্রিত রাইড প্রদানে ভূমিকা রাখে।
মাত্রা ও ক্ষমতা
১৪-লিটার জ্বালানি ধারণ ক্ষমতা একে দীর্ঘ পথ চলার প্রশ্রয় দেয়। এটি ৭৯৫ মিলিমিটার-এর স্যাডল উচ্চতা, ১৬৫ মিলিমিটার গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স, ১৩৫১ মিলিমিটার হুইলবেস। সব মিলিয়ে পুরো বডিটির ওজন ১৬২ কেজি।
লাইটিং ব্যবস্থা
এলইডি হেডলাইট ও টেইল লাইট থেকে শুরু করে টার্ন সিগন্যাল ল্যাম্প এবং ডিআরএল (ডেটাইম রানিং লাইট) পর্যন্ত প্রতিটি উপাদান সর্বোত্তম দৃশ্যমানতা প্রদানের জন্য ডিজাইনকৃত।
দূরত্ব, ও কম জ্বালানি সংক্রান্ত আশঙ্কাজনক নির্দেশকগুলো সর্বদা রাইডারকে বাইকের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে অবহিত রাখে।
আরও পড়ুন: কীভাবে এল বাংলা ক্যালেন্ডার: দিনলিপি গণনার ইতিবৃত্ত
টায়ার ও ব্রেক
এন-২৫০ এর ব্রেকিং সিস্টেমে একটি ৩০০ মিলিমিটার ফ্রন্ট ডিস্ক এবং একটি ২৩০ মিলিমিটার রিয়ার ডিস্ক রয়েছে। এছাড়াও, একটি ডুয়াল-চ্যানেল এবিএস সিস্টেম সুবিধা দিচ্ছে ইঞ্জিন কিল সুইচ ও পাস সুইচের।
টিউবলেস টায়ার (সামনে: ১০০/৮০-১৭, এবং পিছনে: ১৩০/৭০-১৭) যে কোনো রাস্তায় এর বডিকে শক্ত গ্রিপে ধরে রাখে। এই টায়ার এবং অ্যালয় হুইলগুলোর সংমিশ্রণ (সামনে: ৪৩১.৮ মিলিমিটার, ও পেছনে: ৪৩১.৮ মিলিমিটার) বাইকের তৎপরতা ও স্থিতিশীলতায় অবদান রাখে।
মোটর ও ব্যাটারি
চেইন ড্রাইভ এবং ম্যানুয়াল ট্রান্সমিশন ৮ হাজার ৭৫০ আরপিএম-এ সর্বোচ্চ ২৪.৫ হর্সপাওয়ার শক্তি প্রদান করতে সক্ষম। ৬ হাজার ৫০০ আরপিএম-এ ২১.৫ নিউটন মিটার্স পর্যন্ত টর্ক বল এর যে কোনো জড়তাকে কাটিয়ে উঠতে পারে।
আরও পড়ুন: বিশ্বের শীর্ষ ১০ পুলিশ কুকুরের প্রজাতি
কি কি সুবিধা থাকছে বাইকটিতে
নিরাপত্তার নিশ্চয়তা
এর ইঞ্জিন কিল সুইচ এবং পাস সুইচের ডুয়াল-চ্যানেল এবিএস সিস্টেম রাইডারের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার এক নতুন মাত্রা। এই সংমিশ্রণটি ধীরে সুস্থে থামার বিষয়টি নিশ্চিত করে, বিধায় থেমে থাকা বা চলন্ত উভয় অবস্থাতেই রাইডারের আত্মবিশ্বাস অটুট থাকে।
জ্বালানি বান্ধব
১৪-লিটার জ্বালানি ক্ষমতা এবং প্রতি লিটারে ৩৫ কিলোমিটার এর সামগ্রিক মাইলেজ, এন-২৫০কে শক্তি এবং জ্বালানি দক্ষতার মাঝে দারুণ এক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি মোটরযানটিকে আরোহীদের কাছে একটি লাভজনক পছন্দ হিসেবে উপস্থাপন করে।
বাইকের উপস্থিতি ও অবস্থা নির্দেশক
হেডলাইট, টেইল লাইট এবং টার্ন সিগন্যাল ল্যাম্পসহ উন্নত এলইডি লাইটিং সিস্টেম যে কোনো জায়গায় এর দৃশ্যমানতা বাড়ায়। এই লাইটিং জ্বালানি কমে আসা ও দূরত্ব নির্দেশক সম্বলিত গাড়ির বর্তমান অবস্থার ব্যাপারে রাইডারদেরকে সঠিক জানান দেয়।
গ্রিপিং টায়ার ও ব্রেক
এর ফ্রন্ট ডিস্ক, রিয়ার ডিস্ক এবং ডুয়াল-চ্যানেল এবিএস সিস্টেমের সমন্বয় নিয়ন্ত্রিত ব্রেকিংয়ের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। টিউবলেস টায়ার ও অ্যালয় হুইলগুলোর অন্তর্ভুক্তির কারণে যে কোনো রাস্তায় একে আরোহীর সেরা পছন্দে পরিণত করবে।
আরামদায়ক
স্প্লিট-সিট ডিজাইন, অ্যাডজাস্টেবল উইন্ডস্ক্রিন এবং প্যাসেঞ্জার ফুটরেস্ট বাইকে চড়ার সময় একটি আরামপ্রদ অভিজ্ঞতা দেয়। এলইডি-আলো ঘড়ি শুধুমাত্র একটি কার্যকরী উদ্দেশ্যেই কাজ করে না বরং গাড়ির সামগ্রিক নান্দনিকতায়ও গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন করে।
আরও পড়ুন: ব্লু জোন রহস্য: রোগহীন দীর্ঘজীবী সম্প্রদায়ের খোঁজে
বাইকটির কিছু অসুবিধা
দ্রুততায় গতির নিরবচ্ছিন্নতার ঘাটতি
সুপারবাইকটি প্রতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার অতিক্রম করার সময় নির্দিষ্ট গতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে অস্থিরতা অনুভূত হয়। এটি দ্রুততার ক্ষেত্রে রাইডারের আত্মবিশ্বাস এবং নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষ করে যারা হাইওয়েতে বাহনটির ক্ষীপ্রতা পরখ করতে চান, এই সীমাবদ্ধতা তাদের জন্য আশঙ্কার কারণ হতে পারে।
পুরনো মডেলের সঙ্গে সাদৃশ্য
২৫০ সিসি ইঞ্জিনের পূর্বসূরি এন-১৬০ এর মতো একই টায়ার রাখার সিদ্ধান্ত ক্রেতাদের যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ হতে পারে। একটি ২৫০ সিসি বাইক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ শক্তি পরিচালনা করতে এবং সর্বোত্তম গ্রিপ প্রদানের জন্য স্বাভাবিক ভাবেই একটি শক্তিশালী টায়ার কনফিগারেশনের দাবি রাখে। পূর্বসূরির মতো একই টায়ার ব্যবহার করাটা বাইকের চূড়ান্ত কর্মক্ষমতার সঙ্গে রীতিমত আপস করার শামিল।
ইঞ্জিনের সীমাবদ্ধতা
বহু প্রত্যাশিত এই যানটির ইঞ্জিনে মাত্র ২টি ভালভ দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে, যা সত্যিই এক অনাকাঙ্ক্ষিত ত্রুটি হিসেবে দেখা যেতে পারে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে একটি ৪-ভালভ ইঞ্জিন কনফিগারেশনকে প্রায়শই পাওয়ার ডেলিভারি সর্বাধিক করার জন্য আদর্শ হিসেবে ধরা হয়। ২টি ভালভের সীমাবদ্ধতা বাইকটির সঙ্গের অন্যান্য মোটরসাইকেলের সঙ্গে এর প্রতিযোগিতা করার ক্ষমতাকে আশঙ্কাজনকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
আরও পড়ুন: বিআরটিএ স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স যেভাবে করবেন
৫-স্পিড গিয়ারবক্সের পুনরাবৃত্তি
৬-স্পিড কনফিগারেশনে আপগ্রেড করার পরিবর্তে ঐতিহ্যবাহী ৫-স্পিড গিয়ারবক্সের সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে একটি বড় সুযোগ হাত ছাড়া করা। ৬-স্পিড গিয়ারবক্স ক্রমবর্ধমানভাবে এই ধরনের মোটরসাইকেলের জন্য অটোমোবাইল শিল্পে আদর্শ মান হয়ে উঠছে। এই অতিরিক্ত একটি মাত্র গিয়ারের অনুপস্থিতি বাইকের বহুমুখিতাকে সীমিত করতে পারে, বিশেষ করে দীর্ঘ ভ্রমণের সময়।
ব্লুটুথ সংযোগের অনুপস্থিতি
তথ্য-প্রযুক্তির যুগে যেখানে ডাটা স্থানান্তর বিক্রয় বাড়ানোর সেরা নির্ণায়ক, সেখানে ব্লুটুথ সংযোগের অনুপস্থিতি এই নতুন পালসারের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ত্রুটি। আধুনিক যানবাহন মানেই এখন রাইডারদের ন্যাভিগেশন, যোগাযোগ এবং বিনোদনের জন্য তাদের ডিভাইসগুলোকে নির্বিঘ্নে সংযুক্তকরণ। এই বৈশিষ্ট্যের অভাব সামগ্রিক রাইডিং অভিজ্ঞতা বাড়ানোর নিদারুণ সুযোগকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
বাইকটির মূল্য
লাল, নীল এবং কালো; এই তিনটি রঙের সঙ্গে নতুন চালুকৃত পালসারটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৯৯৯ টাকা। সেমি-ডিজিটাল মিটারে পুরনো ধাচের নির্দেশক কাটা এবং ২-ভালভ ইঞ্জিন ইতিমধ্যেই এন-২৫০-এর থেকে কম সিসি সম্পন্ন দেশের অন্যান্য বাইকগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমান বাজারে এখনো সরাসরি কোনো প্রতিযোগী না থাকলেও এই বিষয়গুলো দামের ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে।
এছাড়া কোনো কারণে ত্রুটি দেখা দিলে তার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যথেষ্ট টুল পাওয়া যাবে কি না তাতেও রয়েছে পর্যাপ্ত সন্দেহের অবকাশ। এরপরেও সুষ্পষ্ট ভাবে মূল্যটির তুলনা করার জন্য এর সমজাতীয় বাইকগুলোর বাজারে নামা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
পরিশেষে
দীর্ঘ যাত্রার প্রমোদ অভিযানে রোমাঞ্চপ্রিয়রা নির্দ্বিধায় বাজি ধরতে পারেন এন-২৫০-এর ওপর। তবে প্রকৃত পালসার প্রেমীরা খুব সহজেই ধরে ফেলতে পারবেন এন-১৬০-এর সঙ্গে সাদৃশ্যটা। এই নিরিখে দুয়েকটি পরিবর্তনের জন্য এমন বিনিয়োগের ব্যাপারে তাদের দ্বিতীয়বার চিন্তা করা উচিৎ।
এছাড়া দ্রুততার সময় এর গতির নিরবচ্ছিন্নতার ঘাটতিটা একটি গুরুত্বপূর্ণ ত্রুটি। তাই তরুণদের মধ্যে যাদের মোটরযানের সর্বশেষ গতির অভিজ্ঞতা নিতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য এই বাইক বেছে নেওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।
আরও পড়ুন: পুরুষদের ফরমাল পোশাক ও স্যুট বানানোর জনপ্রিয় কিছু দেশি ব্র্যান্ড
ঢাকায় সপ্তাহব্যাপী চায়না চিত্র ও ফটো প্রদর্শনী শুরু
চাইনিজ রোড অ্যান্ড বেল্ট ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) দশম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী চিত্র ও ফটো প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়।
সোমবার (২৭ নভেম্বর) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ন্যাশনাল আর্ট গ্যালারিতে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
ঢাকার চীনের দূতাবাস ও অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-চায়না অ্যালামনাই (অ্যাবকা) যৌথভাবে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
বাংলাদেশ-চীনের বিদ্যমান সম্পর্ককে আরও জোরদার করার লক্ষ্যে আয়োজিত এই প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (চাবি) চারুকলা অনুষদের ডিন প্রফেসর নিসার হোসেন এবং সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলি লাকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. ইয়াং হুই ও অ্যাবকার সাধারণ সম্পাদক ড. মো. সাহাবুল হক।
চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, বিআরআই প্রকল্পের মধ্যেদিয়ে বাংলাদেশ ও চীনের জনগণের মাঝে ব্যক্তিগত যোগাযোগ আরও শক্তিশালী হবে।
আরও পড়ুন: মেলবোর্নে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের ১৯ প্রতিষ্ঠান
১০ হাজার টাকা বাজেটে দেশের বাইরে কোথায় ঘুরতে যাবেন?
স্বপ্ন যখন বিদেশ ভ্রমণের, তখন তা পূরণের মূল্যও দুর্গম সীমান্ত অতিক্রমের সমান। আপন দেশ থেকে যতটা দূরে সেই জায়গাটি, ভ্রমণ খরচটাও যেন ঠিক ততটা প্রকাণ্ড হয়ে সামনে আসে। কিন্তু প্রকৃতিপ্রেম বলে কথা; অকৃত্রিম এই আদিম প্রবৃত্তি যেন কিছুতেই ম্লান হবার নয়! অনেকেই খুঁজে বেড়ান, কোথায় সাধ্যের মধ্যে বিদেশ বিভূয়ীয়ের স্বাদ পাওয়া যায়। তাদের জন্যই আজকের ভ্রমণ কড়চা। এখানে একত্রিত করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মন্ত্রমুগ্ধ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান। আলোচনা করা হয়েছে খুব অল্প বাজেটে কীভাবে এই গন্তব্যগুলোতে বিচরণ করবেন। চলুন বিস্তারিত জেনে নেই- মাত্র ১০ হাজার টাকা বাজেটে দেশের বাইরে কোথায় ঘুরতে যেতে পারেন।
১০ হাজার টাকায় দেশের বাইরে ভ্রমণের ১০টি দর্শনীয় স্থান
চেরাপুঞ্জি
মহকুমা শহটির স্থানীয় নাম সোহরা, যার অবস্থান ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব খাসি পাহাড়ে। এখানকার চেরাপুঞ্জি গ্রাম, সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হওয়া মওসিনরাম, ডাবল ডেকার রুট ব্রিজ, মোসমাই কেভ, মকডক ভিউ পয়েন্ট বহিরাগতদের প্রধান আকর্ষণ। ঝর্ণার মধ্যে মুগ্ধতা ছড়ায় নোহকালীকাই ফলস, থাংখারাং পার্ক, মোসমাই ফলস, কালিকাই ফলস, রেইনবো ফলস, ক্রাংসুরি ঝর্ণা, এবং সেভেন সিস্টার্স ফল্স।
সোহরায় যেতে হলে ঢাকা থেকে প্রথমে ট্রেনে করে সিলেট পৌঁছে সেখান থেকে বাসে তামাবিল যেতে হবে। ঢাকা থেকে সিলেট রেলপথে সর্বনিম্ন ভাড়া প্রায় ৪০০ টাকার কাছাকাছি, আর সিলেট থেকে তামাবিলগামী বাসে নিবে ৩৫ টাকা।
আরও পড়ুন: আপনি কি মার্কিন ডলার না কিনে বিদেশে ভ্রমণ করতে পারবেন?
তামাবিলে ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশ অভিবাসন এবং সীমান্ত পেরিয়ে ভারত কাস্টমসে চেকিং শেষ করতে হবে। তারপর সেখান থেকে ট্যাক্সি বা মিনি বাস ডাউকি বাজার দিয়ে নিয়ে যাবে শিলং। শিলংয়ের ওয়ার্ড্সলেকের গেট পার হয়ে কিছুটা সামনে এগোলেই চেরাপুঞ্জি।
সোহরা মার্কেটের সোহরা প্লাজার হোটেলগুলো কম খরচে থাকার জন্য বেশ ভালো। এ ছাড়া নৈংরিয়াত গ্রামেও হোম স্টে-র ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এখানে ৪ জনের জন্য রুম ভাড়া পড়তে পারে ১ থেকে দেড় হাজার রুপি, যা প্রায় ১ হাজার ৩৩০ থেকে ২ হাজার বাংলাদেশি টাকার সমান (১ রুপি = ১.৩৩ বাংলাদেশি টাকা)। খাবার খরচ একদিনে জনপ্রতি ১৬০ থেকে ২০০ রুপি (প্রায় ২১৫ থেকে ২৬৬ টাকা) পড়তে পারে।
সব মিলিয়ে, প্রায় ৮ থেকে ৯ হাজার টাকায় ৩ দিনের মধ্যে ঢাকা থেকে শিলং দিয়ে চেরাপুঞ্জি ঘুরে আবার ঢাকায় ফিরে আসা যাবে।
দিল্লি
যমুনা নদীর তীরে এই রাজধানী শহরটি একই সঙ্গে ধরে রেখেছে পরিব্রাজকদের জনপ্রিয়তা ও নিজস্ব প্রাচীনতা। দিল্লির জামে মসজিদ, কুতুব মিনার, চাঁদনী চক বাজার, ইন্ডিয়ান গেট, লাল কেল্লা, সম্রাট হুমায়ুনের সমাধি জনবহুল শহরটির সেরা দর্শনীয় স্থান।
স্বল্প খরচে দিল্লি দর্শনের জন্য ঢাকাবাসীদের প্রথমে বাসে করে কলকাতায় আসতে হবে। নন এসি কোচে একজনের জন্য খরচ নিবে ৮৯০ থেকে ৯০০ টাকা। এবার কলকাতার হাওড়া গিয়ে সেখানকার রেল স্টেশন থেকে দিল্লির ট্রেনে ধরতে হবে। ননএসি স্লিপারের জন্য খরচ পড়বে প্রায় ৬৫০ থেকে ৭০০ রুপি (প্রায় ৮৬৫ থেকে ৯৩১ টাকা)।
দিল্লির মোটামুটি সব দর্শনীয় জায়গাগুলো ঘুরে দেখতে ২দিনই যথেষ্ট। এর জন্যে কোনো ট্যুর এজেন্সির সাইট সিইং প্যাকেজ নেওয়াটা উত্তম। এগুলোতে একজনের জন্য ডে ট্যুরের প্যাকেজ থাকে সাধারণত ৩০০ থেকে ৫০০ রূপির (প্রায় ৩৯৯ থেকে ৬৬৫ টাকা) মতো।
এখানে খাবারের জন্য গড় খরচ প্রতিদিন ৩৯০ রুপি (প্রায় ৫১৯ টাকা)। পাহাড়গঞ্জে ৫০০ থেকে ৬৫০ রুপির (প্রায় ৬৫৫ থেকে ৮৬৫ টাকা) মধ্যে ডাবল-বেডের রুম পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: বিশ্বের সেরা ১০ মনোমুগ্ধকর জলপ্রপাত
বিয়ের শাড়ি, লেহেঙ্গা ঢাকার যেখানে পাবেন: বধূ সাজের সেরা গন্তব্য
বিয়ে মানেই একজন নারীর অনন্যা হয়ে ওঠার সাতকাহন। অলঙ্কার ও বস্ত্রের আভরণ অন্দরমহলের দেবীকে যেন উজাড় করে তুলে ধরে সুন্দরের পূজারিদের সামনে। পরিচ্ছেদের আড়ম্বরে যেখানে সম্ভ্রম ও মর্যাদার চিরমুক্তি, সেখানে প্রত্যাশিত দিনটির মধ্যমণি হয়ে থাকে সেই পোশাকটি।
সেই সূত্রে, বাংলা ভূ-খন্ডের কারিগররা যুগ যুগ ধরে ঐশ্বর্যমন্ডিত করেছেন ঐতিহ্যবাহী পোশাক শাড়িকে। সময় বিবর্তনে বিশ্বায়নের প্রভাবে এখন বউ সাজে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। বিগত তিন দশকে শুধুমাত্র এই বিয়ের সজ্জাকে ঘিরেই অনেকটা সমৃদ্ধ হয়েছে পোশাক শিল্প। চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাল ফ্যাশনে ভর করে ব্র্যান্ডে রূপ নিয়েছে বেশ কিছু যুগান্তকারী উদ্যোগ। এর পরিপ্রেক্ষিতে, চলুন, দেখে নেয়া যাক- বিয়ের শাড়ি ও লেহেঙ্গার জন্য ঢাকার সেরা কয়েকটি মার্কেট ও ব্র্যান্ড।
বিয়ের শাড়ি ও লেহেঙ্গার জন্য ঢাকার সেরা ১০টি মার্কেট ও ব্র্যান্ড
মিরপুর বেনারসি পল্লী
শাড়ি শব্দটির সঙ্গে সবচেয়ে পরিচিত বিশেষণটি হলো বেনারসি। আর ঢাকার মিরপুরস্থ বেনারসি পল্লীর ঠিকানা আলাদা করে মনে রাখা দরকার হয় না। বহু বছর ধরে অনেকটা পরিপূরক শব্দের মতই যেন লেগে আছে ঢাকাবাসীর মুখে।
মিরপুর ১০-এ অবস্থিত এই মার্কেটের প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৯৫ সাল। বেনারসির পাশাপাশি এখানে সবচেয়ে আকর্ষণীয় কাতান ও সিল্ক। এখানে সব মিলিয়ে শাড়ির দোকানের সংখ্যা প্রায় ২০০ টি।
অন্যান্য শাড়ির মধ্যে আছে ঢাকাই মসলিন, জামদানি, টাঙ্গাইল তাঁত, রাজশাহী সিল্ক, টাঙ্গাইল হাফ সিল্ক, কাটা শাড়ি, ও জর্জেট। প্রতিটি শাড়িতেই রয়েছে আভিজাত্যের ছোঁয়া। পরিণত রং, হাল্কা ওজন, আর ন্যায্য দামের কারণে উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নমধ্যবিত্ত সবারই ভীড় হয় এখানে। বধূ সাজসজ্জায় শাড়ির জন্য প্রথম পছন্দ মিরপুরের এই বেনারসি পল্লী।
আরও পড়ুন: নতুন পোশাক কেনার আসক্তি কমানোর উপায়
ধানমণ্ডি হকার্স মার্কেট
মধ্যবিত্ত রাজধানীবাসীর সাধ্যের মধ্যে উপযুক্ত গন্তব্য হচ্ছে ধানমণ্ডির হকার্স মার্কেট। গাউছিয়া মার্কেটের উল্টো পাশে অবস্থিত এই মার্কেটে প্রচুর দোকান থাকায় একসঙ্গে অনেক সংগ্রহ থেকে পছন্দ করা যায়।
ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল ও জামদানি শাড়ির প্রসিদ্ধ দোকান তো আছেই। সেই সঙ্গে মসলিন, নেটশাড়ি, পার্টি শাড়ি, অলগেঞ্জ, পার্টি লেহেঙ্গা, ফ্লোরাল প্রিন্ট, ও টিশ্যুসহ বাহারি রকমের শাড়ি আকৃষ্ট করে ক্রেতাদের। কাতানের মধ্যে রয়েছে মন্থানের কাতান, বেনারসি কাতান, ভেলোর কাতান, ও বেলগা কাতান।
আরও পড়ুন: শীতে ছেলেদের ত্বকের যত্ন
নিউ মার্কেট
কেনাকাটা যখন বিয়ের জন্য তখন নিউ মার্কেটে অবশ্যই একবার ঘুরে আসা উচিত। আজিমপুরের উত্তরাংশের এই বিশাল মার্কেটটি স্থাপিত হয়েছিলো ১৯৫৪ সালে।
সেই শুরু থেকেই সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি জিনিসের সংগ্রহ থাকার কারণে সবার কাছে এক নামে পরিচিত এই পুরনো মার্কেটটি। আর তাই শুধু শাড়ির জন্যই নয়, বিয়েতে দরকারি যাবতীয় জিনিসপত্রের জন্যও আসতে হবে এখানে।
এখানে কেনাকাটায় সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে সাশ্রয়ী মূল্য এবং স্বাধীনভাবে দর কষাকষির সুযোগ। বড় বড় শপিং মলের হাজার টাকার পণ্যও মাত্র কয়েকশো টাকাতেই কেনা সম্ভব এখান থেকে। এছাড়া এখানকার বেশ কিছু ব্যবসায়ী অনেক বছর ধরে কাপড় বিক্রি করে আসছেন। ফলশ্রুতিতে, এখানে দীর্ঘ মেয়াদী ক্রেতা-বিক্রেতা সুসম্পর্ক দেখা যায়।
বেইলি রোড
দীর্ঘ ২৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে গড়ে ওঠা শতাধিক শাড়ির দোকান বেইলি রোডকে শাড়ির বিশাল বাজারে পরিণত করেছে। এখানে পরিধেয় যেমন বাহারি, দামটাও তেমন মেলানো মেশানো।
বেইলি রোডের আশপাশ সহ দূর-দূরান্ত থেকে এখানে ক্রেতারা আসেন প্রধানত টাঙ্গাইলের তাঁত ও ঢাকাই জামদানির টানে। তবে মিরপুর, কুমিল্লা, ডেমরা, সিরাজগঞ্জ, ও পাবনাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তাঁতের শাড়িও এখানে পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: প্যারিস ফ্যাশন উইক: বেলা হাদিদের শরীরে জাদুকরী 'স্প্রে প্রিন্টেড' পোশাক
এছাড়া দোকানগুলোতে মসলিন, রাজশাহী সিল্ক, টাঙ্গাইলের সিল্ক, মিরপুরের কাতান, পাবনার কাতানের চাহিদাও আছে। জামদানি, বালুচুরি, সুতি, জুট কটন, জুট কাতান এবং হাফ সিল্কও কোন অংশে পিছিয়ে নেই।
বিদেশি শাড়ির মধ্যে দেখা যায় কাঞ্জিভরম, পঞ্চমকলি, শিফন, ক্র্যাফট, জর্জেট, অপেরা কাতান, কাঁঠাল কাতান, আলাপ কাতান, খাদি কাতান, ভোমকা কাতান। হাতের কাজ করা এবং ভেজিটেবল ডাই করা শাড়িও পাওয়া যায় এখানে।
জ্যোতি
১৯৯০ সাল থেকে শুরু হওয়া জ্যোতি মূলত রেডিমেড পরিধান বিক্রি করে থাকে। প্রথমে ভারতীয় শাড়ি, কামিজ এবং বধূ সজ্জার সরঞ্জাম নিয়ে নূর ম্যানশন শোরুমের মাধ্যমে এর কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে তারা তাদের বিয়ের সাজসজ্জায় দোপাট্টা যুক্ত করে।
তাদের বিশেষ পণ্যগুলো হলো বিয়ের শাড়ি, লেহেঙ্গা, এবং প্রসাধনী। ঢাকা শহর জুড়ে জ্যোতির মোট ১১টি শাখা রয়েছে।
আনজারা
২০১৪ সালে একটি অনলাইন শপ দিয়ে যাত্রা শুরু হয় আনজারার। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন নওরীন ইমান ইরা এবং আবিরুল ইসলাম চৌধুরী। খুব ছোট থেকে ইরার ডিজাইনার হতে চাওয়ার স্বপ্নের ফসল এই আনজারা। আবির সম্পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠানটির অর্থায়ন এবং বিপণনের কাজটি দেখাশোনা করেছেন।
তাদের দক্ষতার জায়গা হচ্ছে লেহেঙ্গা, গাউন, শাররা, এবং ঘাররাসহ বিভিন্ন ধরনের বধূর পোশাকে।
আরও পড়ুন: লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড ক্যাটস আইয়ের সঙ্গে টুর্যাগ অ্যাক্টিভের অংশীদারিত্ব
আনজারা এখন কেবল ইন্টারনেটেই সীমাবদ্ধ নেই। তাদের এখন ঢাকায় তিনটি শাখা, যার প্রত্যেকটিরই রয়েছে ভিন্ন শৈলীর পোশাক। প্রধান শাখাটি থেকেই মূলত বিয়ের পোশাক বিক্রি করা হয়। আর অন্য দুটিতে তোলা হয়েছে বিভিন্ন পার্টিতে পরিধানের পোশাক।
পুরুষদের ফরমাল পোশাক ও স্যুট বানানোর জনপ্রিয় কিছু দেশি ব্র্যান্ড
শুধু কর্মক্ষেত্রেই নয়, নানা সামাজিক অনুষ্ঠানের ধরন ভেদেও প্রয়োজন পড়ে ফরমাল পোশাকের। কার্যক্ষেত্রের ভাব-গাম্ভীর্যের অনেকাংশই নিজেদের পরিধানে বজায় রাখার চেষ্টা করেন পুরুষেরা। কেউ কেউ এমন পরিপাটি পরিধেয় নিজেদের স্টাইলের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে বেধে নেন।
ফলশ্রুতিতে নৈমিত্তিক জমায়েতেও তাদের প্রায় সময়ই দেখা যায় স্যুট বা অন্যান্য ফরমাল বেশভূষায় হাজির হতে। রেডিমেড বা টেইলারিং যেমনি হোক না কেন, এমন পোশাক শিল্পের গ্রাহক শ্রেণি মোটেই সংকীর্ণ নয়। তাই এদেরকে উদ্দেশ্য করে দেশ জুড়ে গড়ে উঠেছে নানা প্রকার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। চলুন, এগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় দেশি ব্র্যান্ডগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পুরুষদের ফরমাল পোশাক বানানোর সেরা ১০টি দেশি ব্র্যান্ড
ক্যাট্স আই
বর্তমানের এই স্বনামধন্য ব্র্যান্ডটি নেপথ্যে রয়েছে ১৯৮০ সালে গ্রীন সুপার মার্কেটে ছোট্ট একটি দোকান। সেখানে ক্যান্ডি থেকে শুরু করে অলঙ্কার পর্যন্ত প্রায় সবকিছুই বিক্রি করা হতো।
দোকানের একটি ছোট অংশ শার্টের জন্য রেখেছিলেন প্রতিষ্ঠাতা দম্পতি সাঈদ সিদ্দিকী রুমি এবং আশরাফুন সিদ্দিকী ডোরা, যেগুলোর নকশা তারা নিজেরাই করতেন।
আরও পড়ুন: সাদমুআ: বাংলাদেশের প্রথম পুরুষ বিউটি ব্লগার
১৯৮৩ সালে তারা এলিফ্যান্ট রোডের মনসুর ভবনে একটি ফ্লোর স্পেস ভাড়া নিয়ে আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটান ক্যাট্স আইয়ের। সে সময় বিশেষ করে পুরুষদের ফ্যাশন মার্কেটে কর্মজীবীদের জন্য ফরমাল বলতে তেমন ভালো কিছুই ছিল না। তখন সিদ্দিকী দম্পতির এই প্রতিষ্ঠানটিই ছিল তাদের একমাত্র ভরসা। এরপর থেকে কয়েক দশক ধরে দাপটে ব্যবসা করেছেন সিদ্দিকী দম্পতি।
পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে অবশ্য তারা পুরুষদের ক্যাজুয়াল পণ্যগুলোর সংগ্রহ নিয়ে চালু করে মনসুন রেইন। ১৯৯৮ সালে এই গ্রাহক শ্রেণিটিকে আরও সংকীর্ণ করে আবির্ভাব হয় ক্যাট্স আই আনলিমিটেডের।
সাধারণ ক্যাট্স আই সংগ্রহ বলতে ফরমাল সাদা ও নীল রঙের শার্ট এবং ফরমাল প্যান্টগুলোকেই বোঝানো হয়। এছাড়া তাদের শেরওয়ানি, পাঞ্জাবি এবং ম্যান্ডারিন ভেস্টগুলো তাদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট ধারণ করে।
আরও পড়ুন: গহনায় ব্যবহৃত মূল্যবান কিছু রত্নপাথর
রিচম্যান
দেশের সমসাময়িক ফ্যাশনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রিচম্যানের শুরুটা হয়েছিল ২০০৩ সালে ৩ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটদের হাত ধরে। তারা হলেন- মোহাম্মদ জুনায়েদ, নাজমুল হক খান এবং নাইমুল হক খান। রিচম্যানের উদ্ভূত হয়েছিল লুবনান ট্রেড কনসোর্টিয়াম লিমিটেড কোম্পানি থেকে।
বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে শুরু হওয়া প্রথম রিচম্যানে পুরুষের ফরমাল ও ক্যাজুয়াল দুটো পরিধেয়ই তোলা হয়েছিল। কিন্তু নকশা অনবদ্য হওয়ায় শিগগিরই সেগুলোর আলাদা অবস্থান তৈরি হয়ে যায় বাজারের অন্যান্য পোশাকগুলো থেকে।
তরুণদের পক্ষ থেকে ধারাবাহিক ইতিবাচক সাড়াগুলোর ওপর ভিত্তি করে একের পর এক চালু হতে থাকে তাদের আউটলেটগুলো। বর্তমানে তাদের শাখা ঢাকার বাইরে চট্টগাম ও সিলেটে বিস্তৃতি লাভ করেছে।
তাদের সংগ্রহে রয়েছে নৌবাহিনীর জ্যাকেট, নেভি স্ট্রাইপ করা সুতির ফুল হাতা সোয়েটার, ধূসর প্রিন্টের হাফ হাতা হাওয়াই শার্ট, এবং হাই নেক মেরুন রঙের সোয়েটার। সাধারণ ফরমাল শার্ট ও প্যান্টের সঙ্গে রয়েছে শ্যু এবং পুরুষের ব্যবহৃত প্রসাধনী।
আরও পড়ুন: শীতে ছেলেদের ত্বকের যত্ন
বেলমন্ট ফেব্রিক্স
ফরমাল পরিধেয়ের ক্রমবর্ধান চাহিদার বিপরীতে বেলমন্ট ফেব্রিক্স লিমিটেডের আগমন ছিল বাংলাদেশ পোশাক শিল্পে এক অনন্য সংযোজন। দেশে স্যুট ও ব্লেজারসহ ফরমাল প্যান্ট ও শার্টের টেইলারিং সেবা নিয়ে এর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ২০০৭ সালের ১০ নভেম্বর।
বেলমন্ট ফেব্রিকস লিমিটেডের উদ্যোক্তা মোহাম্মদ বাদশা শরীয়তপুরে জন্ম নেওয়া একজন প্রতিভাবান ব্যবসায়ী। বেশ ছোট পরিসরে শুরু করা কোম্পানিটির এখন তার জন্মস্থান ছাড়িয়ে গোটা বাংলাদেশ ব্যাপী বিস্তৃত। শরীয়তপুর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর মিলে বেলমন্টের মোট ১৯টি আউটলেট রয়েছে।
গাজীপুরে ৮ হাজার বর্গফুটের ওপর এই কাস্টমাইজড সেলাই প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব একটি টেইলারিং ফ্যাক্টরি রয়েছে, যা সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতিতে পরিপূর্ণ।
আরও পড়ুন: এই গরমে ট্যানিং এড়াতে কিছু টিপস
ফিট এলিগেন্স
বাংলাদেশি ব্র্যান্ড ফিট এলিগেন্স-এর জন্ম ২০০১ সালের ২৬শে মার্চ। স্যুট, ব্লেজার এবং ট্রাউজারের চাহিদা পূরনে নিবেদিত এই প্রতিষ্ঠান মুলত ইস্ট-ওয়েস্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক লিমিটেডের একটি সহযোগী উদ্যোগ। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত এক্সেকিউটিভ পরিচ্ছদ খাতের অন্যতম পথপ্রদর্শক ইস্ট-ওয়েস্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক ১৯৮৫ সাল থেকে স্যুট তৈরি করে আসছে।
ফিট এলিগেন্ডের বর্তমানে ঢাকায় ৯টি এবং চট্টগ্রামে একটি এক্সক্লুসিভ স্টোর রয়েছে। তাদের বিশেষ সংগ্রহ তালিকায় রয়েছে প্রিন্স কোট, ওয়েইস্ট কোট, ব্লেজার, মুজিব কোট, ট্রাউজার, ওভারকোট, শেরওয়ানি এবং সাফারি।
নজরুলের ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ বিতর্ক: ক্ষমা চাইল পিপ্পা টিম
সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত 'পিপ্পা' সিনেমায় ব্যবহৃত বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের 'কারার ঐ লৌহকপাট' গানটির বিকৃতি নিয়ে দুই বাংলায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ার পর এবার ক্ষমা চেয়েছেন সিনেমাটির নির্মাতারা।
সোমবার এক্সে (পূর্বে টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে প্রোডাকশন হাউস রায় কাপুর ফিল্মস কাজী নজরুল ইসলামের 'কারার ঐ লৌহকপাট'গানটি এ আর রহমানের পরিবেশনের বিতর্কের বিষয়ে ক্ষমা চেয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে।
রাজা কৃষ্ণ মেনন পরিচালিত ইশান খট্টর, মৃণাল ঠাকুর, প্রিয়াংশু পাইনুলি ও সোনি রাজদান প্রমুখ অভিনীত ছবিটি ১০ নভেম্বর অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওতে মুক্তি পায়। চলচ্চিত্রটিতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার যুদ্ধকে তুলে ধরা হয়েছে।
আরএসভিপি মুভিজ এবং রায় কাপুর ফিল্মস প্রযোজিত এই ছবিতে নজরুলের গান 'কারার ঐ লৌহকপাট' -এর রিমেক করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: কারার ঐ লৌহকপাট বিতর্ক: কাজী নজরুল ইসলামের নাতনির প্রতিবাদ
অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমানের রিমেক সংস্করণে অভিনয় করেছেন ভারতীয় গায়ক রাহুল দত্ত, তীর্থ ভট্টাচার্য, পীযূষ দাস, শ্রায়ী পাল, শালিনী মুখার্জি ও দিলাসা চৌধুরী।
গানটি প্রকাশের পর বাংলাদেশ ও ভারতের সাধারণ শ্রোতাদের পাশাপাশি নজরুল সংগীতশিল্পী ও ভক্তরা রিমেক নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় ছবির নির্মাতারা বলেন, ‘আমরা শ্রোতাদের আবেগ বুঝতে পারছি। মূল রচনার প্রতি তাদের একটা অন্য আবেগ রয়েছে। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটিকে ঘিরে নানা আলোচনা চলেছে চারিদিকে। পিপ্পা ছবির প্রযোজক, পরিচালক ও সংগীত সুরকাররা বলেছেন, গানটির উপস্থাপনাটি একটি আন্তরিক শৈল্পিক ব্যাখ্যা, যার পিছনে অন্য কোনো কারণ ছিল না। এবং কাজী নজরুল ইসলামের পরিবারের থেকে যাবতীয় স্বত্ব নিয়ে তবেই গানটির পর্যালোচনা করা হয়েছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘প্রয়াত কল্যাণী কাজীর সই নিয়ে এবং অনির্বাণ কাজীকে সাক্ষী রেখে গানটির জন্য লাইসেন্স চুক্তির চিঠি উভয়ই নিয়েছি আমরা।’
নির্মাতারা বলেন, তাদের উদ্দেশ্য ছিল চুক্তিতে উল্লেখ করা শর্তাবলী মেনে চলার সময় গানের সাংস্কৃতিক তাৎপর্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো। এর পিছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।
বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, ‘আমাদের মূল রচনা এবং প্রয়াত কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশের সংগীত, রাজনৈতিক ও সামাজিক কল্যাণে যার অবদান অপরিসীম। এই অ্যালবামটি তৈরি করা হয়েছিল সেই নারী-পুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, যারা যুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মুক্তির জন্য এবং তার স্বাধীনতা, শান্তি ও ন্যায়বিচারের সংগ্রামের অনুভূতির কথা আমরা ভুলিনি।
এর আগে শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডির কবি নজরুল ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গানটির 'বিকৃতির' বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেন দেশের বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট নজরুল সংগীতশিল্পী।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নজরুল সংগীত সংস্থার সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আনাম শাকিল,কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি মিষ্টি কাজী, নজরুল শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক, বরেণ্য নজরুল সংগীতশিল্পী শাহীন সামাদ, সংগীতশিল্পী বুলবুল ইসলাম প্রমুখ।
আরও পড়ুন: ‘কারার ঐ লৌহকপাট’: দুই বাংলায় তোপের মুখে এ আর রহমান
ইন্দোনেশিয়ার শীর্ষ ১০ দর্শনীয় স্থান: শীতের ছুটিতে সাধ্যের মধ্যে ভ্রমণ
ইন্দোনেশিয়াকে এশিয়ার সাগর পাড়ের স্বর্গ নাম দেওয়া হলে মোটেই বাড়িয়ে বলা হবে না। নিদেনপক্ষে রাজা আমপাত রিজেন্সি, বালি, জাভা, সুমাত্রা ঘুরে বেড়ানোর সময় এমনটাই অনুভব করেন প্রতিটি পর্যটক। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পরেও ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায় অভিজাত এই দর্শনীয় স্থানগুলো। তবে এই অবকাশ যাপনের সঙ্গে যে একদমই আপস করা যায় না তা কিন্তু নয়। জায়গা ভেদে প্রতিটি দেশেরই বিভিন্ন অঞ্চলে অর্থনৈতিক তারতম্য ঘটে। ইন্দোনেশিয়াও তার ব্যতিক্রম নয়। এমনকি জাকার্তার মতো ব্যয়বহুল শহরের কাছেই দারুণ কিছু জায়গা আছে হিসেবি পর্যটকদের জন্য। আজকের নিবন্ধে স্বল্প খরচে শীতের ছুটি কাটানোর মতো ইন্দোনেশিয়ার সেই অপূর্ব দ্বীপাঞ্চলগুলোকে একত্রিত করা হয়েছে।
স্বল্প খরচে ইন্দোনেশিয়ার ১০ মনোরম স্থানে কাটাতে পারেন শীতের ছুটি
গিলি দ্বীপপুঞ্জ
গিলি ট্রাওয়াঞ্জান, গিলি মেনো এবং গিলি এয়ার- ছোট্ট এই তিন দ্বীপ মিলে গিলি দ্বীপপুঞ্জ অবস্থিত ইন্দোনেশিয়ার লম্বকে। এই তিনটিই বিশ্বমানের ডাইভিং এবং স্নরকেলিংয়ের জন্য বিখ্যাত। দ্বীপগুলোর যে কোনো স্থান থেকে পানিতে নেমেই উপভোগ করা যায় পানির নিচের মন্ত্রমুগ্ধকর জগত।
বাংলাদেশ থেকে লম্বক পর্যন্ত আকাশপথে যাত্রায় মাথাপিছু সর্বনিম্ন বাজেট রাখতে হবে ৩৩৪ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৬ হাজার ৬৮৯ দশমিক ৯৭ টাকা (১ মার্কিন ডলার = ১০৯ দশমিক ৮৫ বাংলাদেশি টাকা)।
লম্বকে থাকার খরচ জনপ্রতি সাধারণত ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৫৫ ইন্দোনেশীয় রুপিয়া বা ১ হাজার ২৭ দশমিক ২১ টাকা (১ ইন্দোনেশীয় রুপিয়া = ০ দশমিক ০০৭ বাংলাদেশি টাকা)। একদিনের খাবারের জন্য বাজেট রাখতে হবে ৪৯ হাজার ৯৯৩ ইন্দোনেশীয় রুপিয়া যা ৩৪৯ দশমিক ৯৩ টাকার সমতুল্য।
সাধ্যের মধ্যে মালদ্বীপের বিকল্প হতে পারে এশিয়ার যেসব ট্যুরিস্ট স্পট
উবুদ
ইন্দোনেশিয়াতে বিশ্ব পরিব্রাজকদের জনপ্রিয় গন্তব্য বালিতে অবস্থিত এই উবুদ। শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত রয়্যাল প্যালেসে দর্শনার্থীরা বিনামূল্যেই পরিদর্শন করতে পারেন। রাস্তার ঠিক নিচেই রয়েছে মাঙ্কি ফরেস্ট। এছাড়া রয়েছে গোয়া গাজাহর উদ্দেশ্যে যাত্রা করা বেমো রাইড। বেদুলু গ্রামের ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হাতির গুহার মূল আকর্ষণ এর জটিল খোদাইগুলো।
উবুদে থাকার খরচ সাধারণত ২১ লাখ ৪২ হাজার ১৫১ ইন্দোনেশীয় রুপিয়া যা ১৪ হাজার ৯৯৩ দশমিক ৯৪ টাকার সমান। সাশ্রয়ী হোটেলগুলোর মধ্যে আগুং ত্রিস্না বাংলো এবং ইনাং ভিলা সেরা পছন্দ হতে পারে। উবুদে খাওয়া-দাওয়ার জন্য দৈনিক চার্জ প্রায় ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৫৯ ইন্দোনেশীয় রুপিয়া (১ হাজার ৩২৯ দশমিক ৬১ টাকা)।
ঢাকা থেকে উবুদের নিকটতম নুগুরা রাই বিমানবন্দর পর্যন্ত যেতে সবচেয়ে কম বিমান ভাড়া ২৫২ মার্কিন ডলার (২৭ হাজার ৬৮২ দশমিক ২৫ টাকা)।
‘অরোরা বোরিয়ালিস’ বা ‘উত্তরের আলো’ দেখার সেরা ১০টি দেশ
সাধ্যের মধ্যে মালদ্বীপের বিকল্প হতে পারে এশিয়ার যেসব ট্যুরিস্ট স্পট
শুধু নব দম্পতিদেরই নয়; পরিবার, বন্ধু-বান্ধব এমনকি সলো ট্রাভেলারদেরও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পছন্দের তালিকায় শীর্ষে মালদ্বীপ। আদিম প্রবাল প্রাচীরের সঙ্গে সখ্যতা গড়তে কাঁচ রঙের পানিকে দৃষ্টি সীমানায় বন্দি করাটাই যথেষ্ট নয়। পরম মমতায় ডুব দিয়ে জলজ অধিবাসীদের সঙ্গে চড়ুই ভাতিতে না মজলে, পুরো আনন্দটাই বাকি থেকে যাবে এই দ্বীপদেশ ভ্রমণের।
গোটা এশিয়া জুড়ে গাল্ফ বা উপসাগরীয় শহরগুলোর দেখা মিললেও মালে বা হুলহুমালের বিকল্প খুঁজে পাওয়া সত্যি দুষ্কর। কিন্তু এই দুষ্প্রাপ্যতার ছোঁয়া পেতে পকেটটাও যারপরনাই ভারি হওয়া জরুরি। আর একটু খরচ বাঁচিয়ে যারা মালদ্বীপের বিকল্প খুঁজছেন আজকের নিবন্ধটি তাদের জন্য। চলুন, এশিয়ার অন্য কিছু উপকূলবর্তী ট্যুরিস্ট স্পটে মালদ্বীপকে খুঁজে দেখা যাক।
স্বল্প খরচে এশিয়ার যে দর্শনীয় স্থানগুলোতে পাবেন মালদ্বীপ ভ্রমণের স্বাদ
ফি ফি দ্বীপপুঞ্জ, থাইল্যান্ড
আন্দামান সাগরে অবস্থিত এই দ্বীপটি শ্বেত-শুভ্র পাথর ও বালির এক মনোমুগ্ধকর সংমিশ্রণ। ছয়টি স্বতন্ত্র দ্বীপের মধ্যে ফি ফি ডন মাঙ্কি সৈকত ও মায়া বে-এর জন্য ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়।
এখানকার কাছাকাছি বিমানবন্দরটি হল ফিৎসানুলক। আকাশপথে বাংলাদেশ থেকে এখানে আসার ভাড়া শুরু হয় জনপ্রতি ২৩০ মার্কিন ডলার বা ২৫ হাজার ২৬৪ দশমিক ৬৫ টাকা (১ মার্কিন ডলার = ১০৯ দশমিক ৮৫ বাংলাদেশি টাকা) থেকে।
খাবারের জন্য প্রতিদিন আনুমানিক ৪১৭ থাই বাত বা ১ হাজার ২৮৯ দশমিক ৪৫ টাকা (১ থাই বাত = ৩ দশমিক ০৯ বাংলাদেশি টাকা) খরচ হয়। স্থানীয় পরিবহন খরচ দৈনিক ২৫৩ থাই বাত বা ৭৮২ দশমিক ৩৩ টাকা।
কোহ ফি ফিতে দম্পতিদের জন্য হোটেল খরচ গড়পড়তায় ২ হাজার ৯৫৬ থাই বাত, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯ হাজার ১৪০ দশমিক ৫৮ টাকার সমান।
থাইল্যান্ডের ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য ন্যূনতম ৬ মাস মেয়াদী ও কমপক্ষে ২টি খালি পৃষ্ঠা সম্বলিত পাসপোর্ট দিয়ে আবেদন করতে হবে।
আরও পড়ুন: বিশ্বের সেরা ১০ মনোমুগ্ধকর জলপ্রপাত
কোহ লিপে, থাইল্যান্ড
আন্দামান সাগরে বুকে আরও একটি নৈসর্গিক সৌন্দর্য কোহ লিপে, যেটি রোমাঞ্চপ্রেমিদের হাতছানি দিয়ে ডাকে এর পাহাড়গুলো আরোহনের জন্য। দ্বীপের অভিজাত খোলা-জায়গার রেস্তোরাঁ ও ক্যাফেগুলো প্রতিদিন-ই দ্বীপকে লোকারণ্য করে রাখে।
‘অরোরা বোরিয়ালিস’ বা ‘উত্তরের আলো’ দেখার সেরা ১০টি দেশ
নর্দার্ন লাইটস (উত্তরের আলো) বা অরোরা বোরিয়ালিস পৃথিবীর সবচেয়ে অনন্য প্রাকৃতিক ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি। পৃথিবীর অনেক মানুষেরই সবুজ কিংবা নিয়ন আকাশের নিচে শুভ্র তুষারের ওপর রাত কাটানোর স্বপ্ন রয়েছে।
যদিও ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দারা প্রতি বছর উত্তরের আলো দেখতে পাওয়ার মতো ভাগ্যবান, তবে পৃথিবীর বাকি অংশের মানুষের জন্য এটি জীবনের অনন্য এক অভিজ্ঞতা।
প্রাকৃতিক এই আলোকে পৃথিবীর সবচেয়ে মনোরম আলো বললেও ভুল হবে না।
নর্দার্ন লাইটস/অরোরা বোরিয়ালিস/উত্তরের আলো কী?
অরোরা বোরিয়ালিস হলো অরোরা পোলারিস-এর উত্তরীয় সংস্করণ। এটি একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। সূর্য থেকে বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত কণা (প্রোটন ও ইলেকট্রন) পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে গ্যাসের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, তখন তারা একটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন ডিসপ্লে তৈরি করে, যা আকাশে দেখা যায়।
অর্থাৎ, পরমাণুর ইলেকট্রনগুলো উচ্চশক্তিসম্পন্ন অবস্থায় স্থানান্তরিত হয় এবং যখন ইলেকট্রনগুলো নিম্নশক্তির অবস্থায় ফিরে আসে, তখন তারা একটি ফোটন ছেড়ে দেয়, যা আমাদের কাছে আলোর মতো দেখায়।
আলোর পরিমাণ মূলত আগত কণার সংখ্যা এবং তাদের শক্তির উপর নির্ভর করে।
উত্তর গোলার্ধের মেরু আলো উত্তরের আলো বা অরোরা বোরিয়ালিস এবং দক্ষিণ অক্ষাংশে মেরু আলোকে দক্ষিণের আলো বা অরোরা অস্ট্রালিস নামে পরিচিত।
এই আলোর মধ্যে সাধারণত সবুজ, গোলাপি, সাদা, লাল ও হলুদ রং মিশে থাকে।
ভোরের রোমান দেবীর নামানুসারে অরোরা বোরিয়ালিস ইতিহাসে শত শত বছর ধরে প্রশংসিত হয়েছে।
অরোরা দেখার সেরা জায়গা কোথায়?
পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রটি সৌর কণাকে চৌম্বকীয় করে উত্তর ও দক্ষিণ চৌম্বকীয় (ভূ-চৌম্বকীয়) মেরুগুলোর চারপাশের মেরু অঞ্চলে যেখানে ক্ষেত্রটি সবচেয়ে শক্তিশালী। এইভাবে, সংঘর্ষের সংখ্যা ও আলো নির্গমন চৌম্বকীয় মেরুগুলোর কাছাকাছি বেশি।
চৌম্বক মেরুগুলো চৌম্বক অক্ষের শেষ প্রান্তে এবং কাছাকাছি অবস্থিত, কিন্তু ঠিক ভৌগলিক মেরুতে নয়।
অর্থাৎ, অক্ষাংশ যত বেশি হবে উত্তরের আলো দেখার সম্ভাবনা তত বেশি এবং পৃথিবীর যত উত্তর বা দক্ষিণে যাওয়া যায়, তত উজ্জ্বল মেরু আলো দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক অরোরা দেখা যায় এমন ১০টি দেশের নাম।
১. আইসল্যান্ড
আইসল্যান্ডে উত্তরের আলো দেখার সেরা সময় সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত। রাতগুলো তখন উত্তরের আলো দেখার জন্য আদর্শ থাকে।
আইসল্যান্ডে শীতকালে মাত্র ৪-৫ ঘণ্টা দিনের আলো থাকে। আইসল্যান্ডে এ সময়কালে শেষ বিকাল থেকে পরের দিন প্রায় দুপুর পর্যন্ত উত্তরের আলো দেখার অফুরন্ত সুযোগ পাওয়া যায়।
শীতের মাঝামাঝি সময়ে এখানে আসার আরেকটি সুবিধা হলো এসময় পুরো আইসল্যান্ড বরফের চাদরে ঢেকে থাকে। তাই সেসময় এখানে স্ফটিক নীল বরফের গুহাগুলো অন্বেষণ করা যায়, যা বিশ্বব্যাপী শুধুমাত্র কয়েকটি জায়গায় পাওয়া যায়।
যদিও শহুরে কৃত্তিম আলো প্রাকৃতিক দৃশ্যমানতাকে বাধা দেয়, তবে মাঝে মাঝে আইসল্যান্ডের রেকজাভিকের শহরের কেন্দ্র থেকেও উত্তরের আলো দেখা যায়।
আইসল্যান্ডে উত্তরের আলো দেখার জন্য এখানে কিছু সেরা জায়গা রয়েছে: ওয়েস্টফজর্ডস, জোকুলসারলোন হিমবাহ লেগুন, ভিক উত্তর আইসল্যান্ড, দক্ষিণ আইসল্যান্ড।
আরও পড়ুন: ২০২৩ সালে বিশ্বের শীর্ষ ১০ বিলাসবহুল গাড়ি
চুয়াডাঙ্গায় নামযজ্ঞের পঞ্চম দিনে মানুষের ঢল
চুয়াডাঙ্গায় তারকব্রহ্ম মহানামযজ্ঞ অনুষ্ঠানের পঞ্চম দিনে মানুষের ঢল নেমেছে। জমে উঠেছে অষ্টকালীন লীলা কীর্তন।
টানা পাঁচ দিন ধরে চলছে মহানাম সংকীর্তন। প্রতি তিন ঘণ্টা অর্থাৎ এক প্রহর পরপর ভারতসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৯টি সম্প্রদায় পালাক্রমে অখণ্ড মহানামযজ্ঞের সংকীর্তন পরিবেশন করছে।
বার্ষিক এ উৎসবকে ঘিরে চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী পান্না (রূপছায়া) সিনেমা হল প্রাঙ্গণের বিশাল এলাকাজুড়ে দেশি-বিদেশি গৃহস্থালি ও মনোহরি সামগ্রীর পসরাও সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। পাশাপাশি নানা রকম মিষ্টির সঙ্গে তেলে ভাজা লোভনীয় সব খাবারও এখানে পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে ভক্ত-অনুরাগী ও পূণ্যার্থীদের পদচারণায় মুখরিত মহানামযজ্ঞানুষ্ঠান ও অষ্টকালীন লীলা কীর্তন।
আয়োজকরা জানান, বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) মহানাম সংকীর্তনের পঞ্চম দিনে সকাল থেকেই ঢল নামে মানুষের। দেশের অন্যতম বড় এই মহানামযজ্ঞ ঘিরে তিন স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: রাঙ্গামাটিতে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপিত