নিউক্যাসলের মাঠে গিয়ে ১-১ গোলে ড্রয়ের মতো উলভারহ্যাম্পটনের মাঠেও একইভাবে ড্র করার সম্ভাবনা জাগিয়েছিল ম্যানচেস্টার সিটি। তবে একেবারে শেষ মুহূর্তে গোল করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন জন স্টোন্স।

মলিনো স্টেডিয়ামে প্রিমিয়ার লিগের অষ্টম রাউন্ডের ম্যাচে উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্সকে ২-১ গোলে হারিয়েছে বর্তমান লিগ চ্যাম্পিয়ন সিটি।

এদিন ইয়োর্গেন স্ট্রান্ড লারসেনের গোলে ম্যাচের সপ্তম মিনিটেই এগিয়ে যায় সিটি। এরপর ৩৩তম মিনিটে দলকে সমতায় ফেরান সিটি ডিফেন্ডার ইয়োশকো গেভারদিওল। এরপর দ্বিতীয়ার্ধে পাঁচ মিনিট যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে গোল করে সিটি সমর্থকদের আনন্দে ভাসান স্টোন্স।

৭৮ শতাংশ সময় বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ রেখে ম্যাচজুড়ে সিটি একক আধিপত্য বিস্তার করলেও সুযোগ পেলে তাদের ছেড়ে কথা বলেনি উলভস। তবে তাদের আক্রমণগুলোর বেশিরভাগই শট নেওয়ার আগেই নিষ্ক্রিয় করে দেন সিটির ডিফেন্ডাররা।

সিটির মোট ২২ শটের সাতটি ছিল লক্ষ্যে, যেখানে মাত্র তিনটি শট নিয়ে দুটি লক্ষ্যে রাখতে পারে উলভারহ্যাম্পটন।

আরও পড়ুন: দুর্দান্ত জয়ে নিজেদের রেকর্ড ছুঁয়েছে সিটি

এদিন উলভস গোলরক্ষক জোসে সায়ের কথা বিশেষ করে না বললেই নয়। চোটের কারণে চলতি মৌসুমে দলটির নিয়মিত গোলরক্ষক স্যাম জনস্টোন্সের পরিবর্তে আজ মাঠে নামেন সা। আর নেমেই অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন তিনি। তার কল্যাণেই অন্তত পাঁচটি নিশ্চিত গোলবঞ্চিত হয়েছে সিটি। সায়ের দক্ষতার কারণেই সিটির কাছ থেকে পয়েন্ট ছিনিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখছিল উলভস। তবে শেষ মুহূর্তে স্টোন্সের হেডারটিতে প্রকৃতপক্ষে তার করার কিছু ছিল না। ফলে হতাশাই সঙ্গী হয়েছে এই পর্তুগিজ গোলরক্ষকের।

ম্যাচের সপ্তম মিনিটেই দারুণ এক গোলে এগিয়ে যায় উলভারহ্যাম্পটন। ডান পাশ দিয়ে আক্রমণে উঠে টাচলাইনের কাছ থেকে বক্সের মধ্যে উড়ন্ত ক্রস বাড়ান নেলসন সেমেদো। এরপর পেনাল্টি স্পটের কাছ থেকে বলে প্রথম ছোঁয়াতেই ঠিকানা খুঁজে নেন স্ট্রান্ড লারসেন।

এর দুই মিনিট পরই অবশ্য সমতায় ফিরতে পারত সিটি, তবে উলভস গোলরক্ষক জোসে সায়ের নৈপুণ্যে ব্যবধান ধরে রাখতে সক্ষম হয় তারা। নবম মিনিটে হঠাৎ আক্রমণে উঠে বক্সের মধ্যে পাস পেয়ে নিচু শটে তা থেকে গোল আদায়ের চেষ্টা করেন বের্নার্দো সিলভা, কিন্তু ডান পাশে ঝাঁপিয়ে হাত প্রসারিত করে বল বাইরে বের করে দেন সা।

ঊনবিংশ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে উঠে ব্যবধান দ্বিগুণ করার ভালো সম্ভাবনা তৈরি করেন সেমেদো, তবে প্রতিক্ষ ডিফেন্ডারদের চ্যালেঞ্জ সামলে বক্সের মধ্যে ঢুকে গোলরক্ষককে একা পেয়েও সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন তিনি।

আরও পড়ুন: এবার নিউক্যাসলের বিপক্ষেও সিটির হোঁচট

গোল খেয়ে আক্রমণে ধার বাড়ায় সিটিও। এরই ধারাবাহিকতায় ম্যাচের ৩৩তম মিনিটে ইয়োশকো গেভার্দিওলের অসাধারণ এক শটে সমতায় ফেরে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।

সতীর্থের বাড়ানো পাস বাঁ পাশে প্রতিপক্ষের বক্সের সামান্য বাইরে থেকে ধরে এক কদম এগিয়ে গিয়েই দূরের পোস্টে শট বাঁকিয়ে দেন ২২ বছর বয়সী ক্রোয়াট ডিফেন্ডার। এরপর বল গোলরক্ষকের আওতার বাইরে দিয়ে জালে ঢুকে যায়।

প্রথমার্ধের যোগ সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে আরও একটি দারুণ সম্ভাবনা জাগায় সিটি। প্রতিপক্ষের বক্সে জটলার মধ্যে বল পেয়ে নিচু শট নেন ২০ বছর বয়সী ব্রাজিলীয় উইঙ্গার স্যাভিনিও, কিন্তু এবারও ঝাঁপিয়ে তা ঠেকিয়ে উলভসকে ম্যাচে ধরে রাখেন সা। ফলে স্কোরলাইন ১-১ সমতায় রেখেই বিরতিতে যায় দুদল।

বিরতির পর সায়ের আরও একটি অসাধারণ সেভ দেখে উলভস সমর্থকরা। ম্যাচের ৫৪তম মিনিটে প্রতিপক্ষের বক্সের কিছুটা বাইরে থেকে পোস্টঘেঁষা জোরালো নিচু শট নেন সিটির পর্তুগিজ ডিফেন্ডার রুবেন দিয়াস। তবে এবারও ঝাঁপিয়ে শটটি প্রতিহত করে ঘরের মাঠের সমর্থকদের প্রশংসা কুড়ান সা। দুই মিনিট পর উলভসের একটি দূরের শট সিটির পোস্টের বেশ বাইরে দিয়ে চলে যায়।

৬৮তম মিনিটে গোলের দারুণ একটি সুযোগ তৈরি করে উলভারহ্যাম্পটন, কিন্তু ফের ফিনিশিংয়ের ব্যর্থতায় ম্যাচে এগিয়ে যাওয়া হয়ে ওঠে না তাদের।

বাঁ পাশ ধরে আক্রমণে উঠে বক্সের মধ্যে বিপরীত দিকে নিচু ক্রস দেন এক মিনিট আগে মাঠে নামা কার্লস ফর্বস, ডান পাশ দিয়ে এগিয়ে গিয়ে বলে পা ছোঁয়ালেই গোল, কিন্তু ক্রসে গতি কিছুটা বেশি থাকায় এগিয়ে গিয়েও নাগাল পাননি স্ট্রান্ড লারসন।

এরপর নির্ধারিত সময়ের তিন মিনিট বাকি থাকতে সিটির আরও একটি আক্রমণ ঠেকিয়ে দেন সা, পরের মিনিটে আরও একটি।

নির্ধারিত সময় শেষে যোগ করা পাঁচ মিনিটের তৃতীয় মিনিটে সিটির আরও একটি শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। তবে শেষ মিনিটের গোলে উলভারহ্যাম্পটন সমর্থকদের হতাশ করে গোল পেয়ে যায় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।

যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে কর্নার থেকে আসা ক্রসে দারুণ এক হেডারে বল লক্ষ্যে পাঠিয়ে দেন স্টোন্স। শুরুতে গোলটি অফসাইডের কারণে বাতিল করলেও রিভিউ দেখে গোলটি বহাল রাখেন রেফারি। ফলে হতাশ হতে হতেও জিতে মাঠ ছাড়ে পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা।

এই জয়ে আট ম্যাচে ৬টি জয় ও দুটি ড্রয়ে ২০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে উঠল সিটি। এক ম্যাচ কম খেলে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে লিভারপুল রইল দুইয়ে। এছাড়া ৮ ম্যাচে সমান ১৭ পয়েন্ট করে নিয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে রয়েছে আর্সেনাল ও অ্যাস্টন ভিলা।

গতরাতে ম্যাচের ত্রিশ মিনিট পরই লাল কার্ডের কারণে দশজনের দলে পরিণত হওয়া আর্সেনাল বোর্নমাউথের কাছে ২-০ গোলে হেরেছে। অন্য ম্যাচে দুই পক্ষের দুজন লাল কার্ড দেখার পর ফুলহ্যামের বিপক্ষে ৩-১ গোলের জয় পেয়েছে উনাই এমেরির ভিলা।

কিছুক্ষণের মধ্যে নিজেদের অষ্টম রাউন্ডের হাই ভোল্টেজ ম্যাচে অ্যানফিল্ডে লিভারপুলের বিপক্ষে খেলতে নামবে চেলসি। ম্যাচটি জিতে ফের শীর্ষস্থানে ওঠার সুযোগ থাকবে লিভারপুলের। অন্যদিকে, চেলসি জিতলে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে তিন নম্বরে উঠবে এনসো মারেসকার দল।