টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২২ এর জন্য গত মাসে বাংলাদেশের দল ঘোষণা করেছিলেন নির্বাচকরা। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং নিউজ্যিলান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের পর বিশ্বকোপের আগে চূড়ান্ত স্কোয়াড দেয়ার সুযোগ ছিল নির্বাচকদের হাতে। প্রত্যাশিতভাবেই সাব্বির রহমান ও মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের পরিবর্তে দলে জায়গা পেয়েছেন সৌম্য সরকার ও শরিফুল ইসলাম। মূল ইভেন্টের জন্য টাইগারদের টি-টোয়েন্টি স্কোয়াড কতটা শক্তিশালী তা এক নজরে দেখে নেয়া যাক।
সৌম্য ও শরিফুলকে কেন বিশ্বকাপ দলে রাখল বিসিবি?
পেস অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন এবং হার্ড হিটার সাব্বির রহমানকে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলের মূল স্কোয়াড থেকে বাদ দিয়ে ওপেনার সৌম্য সরকার ও পেসার শরিফুল ইসলামকে নেয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক সিরিজে পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে সাইফুদ্দিন ও সাব্বিরকে বাদ দেয়া কি ঠিক হয়েছে? সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং নিউজিল্যান্ডে গত দুটি আন্তর্জাতিক সিরিজে সাইফুদ্দিনের বোলিং ইকোনমি রেট ১০.৫১, যা বোলারদে মধ্যে সর্বনিম্ন। অন্যদিকে সাব্বির রহমান ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বনিম্ন স্ট্রাইক রেট (৮৬.৬৬)। তাই চূড়ান্ত দল থেকে তাদের বাদ দেয়াই ছিল সঠিক সিদ্ধান্ত।
সৌম্য সরকার ও শরিফুল ইসলাম কি করেছেন? তারা কি স্কোয়াডে থাকার যোগ্য? সাম্প্রতিক দুটি টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক সিরিজে সৌম্য মাত্র দুটি ম্যাচ খেলে ১২৮.৫৭ স্ট্রাইক রেটে ২৭ রান করেন, যেখানে শরিফুল ইসলাম ৮.৪৫ ইকোনমি রেট সহ চার ইনিংসে পাঁচ উইকেট তুলে নেন। স্পষ্টতই বুঝা যাচ্ছে শরিফুল প্রমাণ করেছেন যে তিনি এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সেরা পেসারদের একজন।
সৌম্যর ব্যাপারটা একটু অন্যরকম। নির্বাচকরা সব সময় ব্যাটিং লাইনআপে বাঁ-হাতি ব্যাটার চেয়েছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক মঞ্চে সৌম্যের ক্রমাগত ব্যর্থতা ম্যানেজমেন্ট তাকে স্ট্যান্ডবাই খেলোয়াড়দের মধ্যে রাখতে বাধ্য হয়েছিল।
পড়ুন: ২০২২ টি-২০ বিশ্বকাপ লাইভ স্ট্রিমিং কোথায় দেখবেন?
প্রাথমিক মূল স্কোয়াডের কাউকে সৌম্যের জন্য পথ তৈরি করতে খারাপ খেলতে হয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত, সেই ক্রিকেটার হলেন সাব্বির রহমান, যিনি আবারও ব্যাট হাতে নির্বাচকদের মুগ্ধ করতে ব্যর্থ হন। তবে ত্রিদেশীয় সিরিজে দুটি ম্যাচে কার্যত কিছুই না দেখালেও কেন সৌম্যকে নেয়া হল? একটি কারণ দ্রুত ও বাউন্সি পিচে তার রেকর্ড।
শক্ত পিচে খেলার সময় সৌম্যর ব্যাট সাধারণত জ্বলে উঠে। নিউজিল্যান্ডের উইকেটে টি-টোয়েন্টিতে তার ১৫৩.৯৮ স্ট্রাইক রেট বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে সেরা। নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে তিনি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক (১৭৪)। এটা অজানা নয় যে অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশন নিউজিল্যান্ডের মতোই হবে। সৌম্যকে নিয়ে নির্বাচকদের প্রত্যাশা তিনি ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টপ-অর্ডারে ভালো করবেন। সৌম্য কি প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবেন? সেটা শিগগিরই হয়তো প্রমাণ হবে।
এক নজরে বাংলাদেশের টি-২০ বিশ্বকাপ ২০২২ স্কোয়াড
দুটি পরিবর্তন ছাড়া স্কোয়াড একই রয়ে গেছে বাংলাদেশের। টাইগারদের দলে মূল ব্যাটসম্যান পাঁচজন, চারজন অলরাউন্ডার এবং ছয়জন বোলার রয়েছে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেবেন সাকিব আল হাসান এবং সহকারী হিসেবে হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান।
দলের সবচেয়ে ইন-ফর্ম ব্যাটার হলেন লিটন দাস। তিনি গত ৬ ইনিংসে ১৪০.৬২ স্ট্রাইক রেটসহ ১৮০ রান করেছেন। আফিফ হোসেন ৬ ইনিংসে ১৫৯ রান নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে, সাকিব আল হাসান ৩ ইনিংসে ১৫০.৯৮ স্ট্রাইক রেটে ১৫৪ রান করে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন।
বোলারদের মধ্যে পেসার শরিফুল ইসলাম গত দুই আন্তর্জাতিক সিরিজে সবচেয়ে বেশি পাঁচ উইকেট নিয়েছেন। হাসান মাহমুদ, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ এবং এবাদত হোসেনও দুটি সিরিজে সন্তোষজনক ইকোনমি রেটে বোলিং করেছেন।
বিশ্বকাপে ২৪ অক্টোবর বাংলাদেশ প্রথম সুপার ১২ ম্যাচ খেলবে গ্রুপ এ-এর রানার আপের বিপক্ষে। তিনদিন পর ২৭ অক্টোবর দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে সাকিব আল হাসানের দল। বাংলাদেশের তৃতীয় ম্যাচটি ৩০ অক্টোবর বি গ্রুপের চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে হবে। এরপর টাইগাররা ২ নভেম্বর ভারত এবং ৬ নভেম্বর পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে তাদের গ্রুপ পর্বের ম্যাচ শেষ করবে।
২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ১৫ সদস্যের দল
সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), সৌম্য সরকার, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, আফিফ হোসেন, ইয়াসির আলী, মোসাদ্দেক হোসেন, নুরুল হাসান, মেহেদি হাসান মিরাজ, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, এবাদত হোসেন, হাসান মাহমুদ, শরিফুল ইসলাম
শেষাংশ
সাম্প্রতিক সময়ে টি-২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশের বাজে পারফরম্যান্স সত্ত্বেও নির্বাচকরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২২-এর জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী দল দেয়ার চেষ্টা করেছেন। খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে কাজ করতে হবে যাতে তারা মাঠে সবকিছু দিতে পারে। খেলোয়াড়রেরা প্রত্যাশা পূরণ করতে পারলে বাংলাদেশ একটি ভালো সাফল্য পেতে পারে।
পড়ুন: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২২: বাংলাদেশের সম্ভাব্য সেরা একাদশ