বাবর আজমের অধিনায়কত্ব নিয়ে এবার প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন পাকিস্তানের ওপেনার আহমেদ শেহজাদ ও ইমাম-উল-হক। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিশনে নামার আগে এ দ্বন্দ্ব সামনে এসেছে।
পাকিস্তানে জিও টিভিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বিল্ড-আপ শো চলাকালে শেহজাদকে জিজ্ঞেস করা হয়, জাতীয় দলের জন্য খেলোয়াড় বাছাই করার সময় বাবর পক্ষপাতিত্ব করেন কি না। এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বাবরকে ধুয়ে দেন শেহজাদ। খবর হিন্দুস্তান টাইমস
এমনকি চলমান বিশ্বকাপের আগে সাদা বলের অধিনায়ক হিসেবে বাবরকে পুনর্বহাল করায় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) নিন্দা করেন তিনি।
তার দাবি, ‘খেলোয়াড় নির্বাচনে সে (বাবর) বন্ধুত্বকে তো গুরুত্ব দেয়ই। এভাবেই সে দীর্ঘদিন ধরে খেলোয়াড় নির্বাচন করে আসছে। অথচ তাদের বেশিরভাগই দীর্ঘদিন ধরে ফর্মের বাইরে। এটা ভালো বিষয় নয়।’
‘আমি যদি ম্যাচের সংখ্যা গুনতে শুরু করি, তাহলে দেখতে পাবেন, ওইসব খেলোয়াড়রা কত লম্বা সময় ধরে রান পাচ্ছে না। যদি অন্য কোনো অধিনায়ক থাকত, তবে ৩০-৪০টি ম্যাচ ধরে অফ ফর্মে থাকার পর, কোনো খেলোয়াড়কে সে দলে রাখত না।’
আরও পড়ুন: নিউ ইয়র্কের স্টেডিয়ামে পুলিশের স্নাইপার!
তিনি বলেন, ‘আমরা দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জেতার জন্য ক্রিকেট খেলি না, খেলি আইসিসির ইভেন্ট জেতার জন্য। কিন্তু গত ৪-৫ বছরে আমরা কি কোনো ইভেন্ট জিতেছি? যদি আমরা না জিতি, তাহলে আমি বলব গ্যাং আছে, বন্ধুত্ব আছে; আর আছে একজন এজেন্ট যে গত ৪-৫ বছর ধরে নানা কারসাজি করছে।’
যখন শেহজাদকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, পাকিস্তানের স্কোয়াডে থাকা বহু খেলোয়াড়ই সরফরাজ আহমেদের অধিনায়কত্বে অভিষেক হয়েছিল। তখন আক্রমণাত্মক ওপেনার বলেন যে, আহমেদ ২০১৭ সালে ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতিয়েছিলেন। কিন্তু বাবর কোনও আইসিসি টুর্নামেন্ট জেতাতে পারেননি।
তিনি বলেন, ‘ওরা (সরফরাজ আহমেদ অ্যান্ড কোং) ফলাফল করে দেখিয়ে দিয়েছে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছে। এটি ন্যায়সঙ্গত। আপনাকে দীর্ঘ সময় সুযোগ দেওয়া হয়েছে, জেতাতে না পারলে অধিনায়ককে সরতেই হবে। কিন্তু তার পর আবার বাবরকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আমি বুঝতাম, যদি ও এমএস ধোনি হত, তবে ওকে ফিরিয়ে আনার কারণ। কিন্তু শাহিনের সঙ্গে যেটা করা হয়েছে, সেটা অন্যায় করা হয়েছে। দু'টি ম্যাচের জন্য ক্যাপ্টেন করে ওকে সরিয়ে দেওয়া হল।’
ওই শোতে ছিলেন পাকিস্তানের সাবেক ওপেনার ইমাম-উল-হক। তিনি আবার শেহজাদের কথা সমর্থন দেননি।
বাবরকে সমর্থন করে ইমাম বলেন, ‘বাবরকে তার সম্মতি ছাড়াই অপসারণ আবার সম্মতি ছাড়াই পুনর্বহাল করা হয়েছে। নিজেদের সিদ্ধান্তে তাকে পুনরায় অধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বোর্ড।’
আরও পড়ুন: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ‘গেম চেঞ্জার’ হতে পারেন যারা
তিনি বলেন, ‘২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আমরা সেমিফাইনালে পৌঁছাই। পরে ২০২২ সালে, ফাইনাল খেলি। ওই ম্যাচটি আমরা জিততে পারিনি- এ নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে। তবে বাবর এই খেলোয়াড়দের পছন্দ করে, এটিকে বন্ধুত্ব হিসেবে আখ্যায়িত করা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত।’
এর পরই ইমাম ও শেহজাদের মধ্যে বাকযুদ্ধ শুরু হয়।
শেহজাদ বলেন, ‘বুঝতে পারছি ইমাম (পিসিবির) চুক্তিতে আছেন; তিনি তরুণ। ওনার বয়সে থাকলে আমরাও একই কথা বলতাম। তবে ৩৪ বছর বয়সে এসে এই বিষয়গুলি নিয়ে আমি হতাশ। আপনি যখন ৪-৫ বছর ধরে ফর্মে না থাকা খেলোয়াড়দের ধরে রাখছেন, তখন কিন্তু যারা ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো পারফর্ম করছে, তাদের সঙ্গে অন্যায় করছেন।’
জবাবে ইমাম বলেন, ‘আমি কেন্দ্রীয় চুক্তিতে আছি সত্যি। তবে আমিও কিন্তু গত ৬-৭ বছর ধরে খেলছি। তারপরও আমি আপনাকে জানাতে চাই যে, আমার বয়স যখন ৩৬ হবে, তখনও এ বিষয়ে আমার অবস্থান একই থাকবে।
‘যদি কারও সমস্যা হয়, ২৮ বছর বয়স হলেও, তারা একই কথা বলতে পারে।’
২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তান অত্যন্ত খারাপ পারফর্ম করার পর পাকিস্তানের অধিনায়কের পদ ছাড়েন বাবর। এরপর শান মাসুদকে টেস্ট অধিনায়ক এবং শাহীন আফ্রিদিকে টি-টোয়েন্টি দলের দায়িত্ব দেয় পিসিবি।
কিন্তু শাহিনের নেতৃত্বে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তান পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ১-৪ ব্যবধানে হারার পর তাকেও নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর সাদা বলের নেতৃত্বে ফের বাবরকে নিয়ে আসে পাকিস্তান।