চরম আর্থিক সংকটে ভুগতে থাকায় চাহিদামতো নতুন খেলোয়াড় কিনতে পারছে না বার্সেলোনা। দানি অলমোকে দলে টানলেও লা লিগায় এখনও তাকে নিবন্ধন করাতে পারেনি ক্লাবটি। এদিকে একপ্রকার বাধ্য হয়েই গত মৌসুমে দলের সবচেয় গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ইলকাই গুন্ডোগানকে বিনামূলে ছেড়ে দিতে হয়েছে তাদের। এমতাবস্থায় লা মাসিয়ার তারুণ্যনির্ভর দল নিয়ে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে জয় পেয়েছে হান্সি ফ্লিকের দল।

শনিবার (২৪ আগস্ট) রাতে বার্সেলোনার অলিম্পিক স্টেডিয়ামে আথলেতিক বিলবাওয়ের বিপক্ষে ২-১ গোলের কষ্টের জয় পেয়েছে কাতালুনিয়ার ক্লাবটি। প্রথম ম্যাচেও একই ব্যবধানে ভালেন্সিয়ার মাঠ থেকে জয় নিয়ে ফিরেছিল তারা।

শুরুতে চমৎকার এক গোল করে দলকে এগিয়ে নেন লামিন ইয়ামাল। তবে বিরতির আগেই পেনাল্টি থেকে গোল করে বিলবাওকে সমতায় ফেরান ওইয়ান সানচেত। এরপর ম্যাচের ৭৫ মিনিটে জয়সূচক গোলটি করেন গত ম্যাচে জোড়া গোল করা রবের্ট লেভানডোভস্কি।

আরও পড়ুন: ঘুরে দাঁড়িয়ে জিতে বার্সার ‘ফ্লিক অধ্যায়’ শুরু

এদিন মুহূর্মুহূ আক্রমণের মাধ্যমে শুরু থেকেই ম্যাচ জমিয়ে তোলে দুই দল। তবে কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পাচ্ছিল না কেউই। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের মধ্য দিয়ে ম্যাচের ২৪তম মিনিটে লামিনের গোলে ম্যাচে প্রথম এগিয়ে যায় বার্সেলোনা।

বাঁ পাশে বিলবাওয়ের বক্সের বেশ বাইরে ফ্রি কিক পায় বার্সেলোনা। সেখান থেকে পেদ্রি বক্সের মধ্যে ক্রস দিলে এগিয়ে এসে গ্লাভস দিয়ে ঠেলে বল ক্লিয়ার করার চেষ্টা করেন চোটের কারণে উনাই সিমোনের পরিবর্তে মাঠে নামা বিলবাও গোলরক্ষক আলেক্স পাদিয়া। তবে বল বক্সের বাইরে থাকা লামিনের কাছে পৌঁছালে তিনি মাঝামাঝি স্থানে এগিয়ে এসে বক্সের সামান্য বাইরে থেকে বাঁকানো শট নেন। ছয় গজ বক্সের মধ্যে থেকে বিলবাও ডিফেন্ডার ইয়ারাই আলভারেস হেড দিয়ে শটটি ক্লিয়ার করতে গেলে বল তার মাথায় লেগে পাদিয়ার নাগালের বাইরে দিয়ে জালে জড়িয়ে যায়।

পিছিয়ে পড়ার পরের মিনিটেই বাঁ পাশ দিয়ে দুর্দান্ত এক পাল্টা আক্রমণে ওঠেন নিকো উইলিয়ামস। তবে বার্সার এক ডিফেন্ডারকে পরাস্ত করে দূরের পোস্টে শট নিলেও তার সেই শট পোস্টের বেশ বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়।

পাঁচ মিনিট পর ইনিয়াকি উইলিয়ামস বিপরীত পাশ দিয়ে বার্সার বক্সে ঢুকে গোলের ভালো সম্ভাবনা জাগালেও শেষ মুহূর্তে আক্রমণটি নিষ্ক্রিয় করে দেয় ডিফেন্ডাররা।

৩৬তম মিনিটে ভাগ্যের ফেরে ব্যবধান দিগুণ করার সুযোগবঞ্চিত হয় বার্সেলোনা। নিজেদের বক্সের সামনে থেকে সতীর্থের দেওয়া পাস ধরেই দ্রুতগতিতে এগোতে থাকেন ফেররান তোরেস। এরপর বক্সের বাইরে থেকে প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জ সামলে বাঁ পাশ ধরে উঠে আসা রবের্ট লেভানডোভস্কির সামনে বাড়ান তিনি। সেখান থেকে এক ডিফেন্ডারকে পরাস্ত করেই দূরের পোস্টের উপরের কোণার দিকে শট নেন এই পোলিশ তারকা। তবে বল উপরের পোস্টে লেগে ফিরে আসে।

আরও পড়ুন: বার্সেলোনা থেকে আবারও সিটিতে গুন্ডোগান

এরপরই মুহূর্তের ব্যবধানে দুটি পাল্টাপাল্টি আক্রমণ দেখা যায়। এতে দুই দলই বক্সের মধ্যে ফাউলের শিকার হয়েছে বলে পেনাল্টির আবেদন জানালে রিভিউ দেখে বিলবাউকে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন রেফারি হিল মানসানো।

৪২তম মিনিটে স্পট কিকে টের স্টেগেনকে ভুল দিকে পাঠিয়ে দলকে সমতায় ফেরান ওইয়ান সানচেত।

এরপর আরও দুটি দারুণ আক্রমণে যায় বার্সেলোনা, কিন্তু ভালো ফিনিশিংয়ের অভাবে সেগুলো থেকে আর গোল পায়নি দলটি। ফলে ১-১ সমতা নিয়েই বিরতিতে যায় দুই দল।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ধৈর্য্য ধরে সুযোগ তৈরিতে মনোযোগী হয় দুই পক্ষ। ফলে খেলার গতি কিছুটা কমে যায়।

এর মধ্যে ৫৭তম মিনিটে দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম সুযোগ তৈরি করে বার্সেলোনা। বাঁ পাশে বক্সের বাইরে থেকে ভেতরে ঢুকতে গিয়ে ফাউলের শিকার হন আলেহান্দ্রো বালদে। সেখান থেকে ফ্রি কিকে দূরের পোস্টের দিকে পেদ্রির দেওয়া ক্রস উড়ন্ত হেডারে জাড়ে জড়ানোর চেষ্টা করেন লেভানডোভস্কি। কিন্তু এবারও বল পোস্টে লেগে ফিরে এলে আরও একবার হতাশ হন তিনি।

৬১তম মিনিটে দারুণ একটি পাল্টা আক্রমণে ওঠে বার্সেলোনা। তবে রাফিনিয়ার ফাইনাল পাসটিতে গতি বেশি থাকায় নিশ্চিত গোলের সুযোগ হাতছাড়া হয়। দুই মিনিট পর লেভানডোভস্কির আরও একটি দারুণ শট কোনোমতে ঠেকিয়ে দেন পাদিয়া।

আরও পড়ুন: বার্সা ছাড়ার গুঞ্জনের মাঝেই আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানালেন গুন্ডোগান

এরপর বিলবাওকে চেপে ধরে বার্সেলোনা। মাঝে সুযোগ পেয়ে পাল্টা আক্রমণে গিয়ে গোলের চেষ্টা করে সফরকারীরাও। তবে ৭৫তম মিনিটে ম্যাচে ফের এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। তৃতীয়বারের চেষ্টায় গোল পেয়ে যান লেভানডোভস্কি।

দুর্দান্ত এক আক্রমণে উঠে বক্সের বাইরে বাঁ পাশ থেকে ভেতরে ঢোকা পেদ্রির সামনে পাস দেন রাফিনিয়া। সেখান থেকে পেদ্রি  জোরালো শট নিলে ঝাঁপিয়ে তা প্রতিহত করেন পাদিয়া। কিন্তু বল ডান পাশে থাকা লেভানডোভস্কির কাছে গেলে বক্সের মধ্যে থেকে লাফিয়ে উঠে উড়ন্ত শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি। এর ফলে দুই ম্যাচে তার গোলসংখ্যা হলো তিনটি। প্রথম ম্যাচে ভালেন্সিয়ার বিপক্ষে পেনাল্টিসহ তার দুই গোলেই জেতে বার্সেলোনা।

৮৫তম মিনিটে ভালো সুযোগ তৈরি করে বিলবাও, তবে ফিনিশিংয়ের অভাবে সেই সুযোগটিও নষ্ট হয়ে যায়। এরপর দুই দলের কেউই আর তেমন কোনো সুযোগ তৈরি করতে না পারায় টানা দ্বিতীয় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বার্সেলোনা।

এই জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে লিগের শুভসূচনা অব্যাহত রাখল কাতালান জায়ান্টরা। বৃহস্পতিবার লিগের তৃতীয় ম্যাচে রায়ো ভাইয়োকানোর মুখোমুখি হবে হান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা।

অন্যদিকে, রবিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় রিয়াল ভাইয়াদোলিদের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামবে রিয়াল মাদ্রিদ। মায়োর্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ড্র করে লিগের শুরুতেই চাপে রয়েছে কার্লো আনচেলত্তির দল। এরইমধ্যে আবার দলের আক্রমণভাগের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় জুড বেলিংহ্যামকে হারিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।

এছাড়া দিনের অপর ম্যাচে রাত দেড়টায় জিরোনার মুখোমুখি হবে আতলেতিকো মাদ্রিদ। কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে দল গঠন করেও ভিয়ারিয়ালের সঙ্গে প্রথম ম্যাচে ২-২ ব্যবধানে ড্র করে তারা। ফলে কিছুটা চাপ নিয়েই গত মৌসুমে দুর্দান্ত পারফর্ম করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা করে নেওয়া জিরোনার বিপক্ষে খেলতে নামবে দিয়েগো সিমিওনের শিষ্যরা।