চলছে বর্ষা মৌসুম। ধরণীর বুকে সূয্যিমামার অনলবর্ষী চোখরাঙানির ফলাফলে যে বিচূর্ণ মেদিনী, তাতে শান্তির পরশ বুলিয়ে ঝরে যাচ্ছে রিমঝিম ধারা। অবশ্য সবসময় তা না হলেও মাঝেমধ্যেই তা হয়ে উঠছে অবিরাম, তীব্র ঢল।
তবে এদেশের জনগণ তা আশীর্বাদ রূপেই গ্রহণ করেছে, হোক না সেটা নগরীতে মাঝেমধ্যে ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পুরো পৃথিবীতে, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় বিগত ৪ মাস ধরে যে তীব্র তাপপ্রবাহ চলেছে, তাতে এরকম বৃষ্টি মানুষের কাঙ্ক্ষিত, রীতিমতো প্রার্থনার বস্তু বৈকি!
বিগত ৫০ বছরেও বাংলার মানুষ গরমের কারণে এত ভোগান্তিতে পড়েনি, বলছেন ত্রিকালজ্ঞ দাদুভাই, দিদিভাইয়েরা। তাদের তো বটেই, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ বলছে, বাংলাদেশে এখন দরকার কমপক্ষে ১০ শতাংশ বনভূমি বাড়ানো। গবেষণা বলছে, ২৫ শতাংশ বনভূমি না থাকলে সেটা একটা দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই, দেশে বর্তমান ১৫ শতাংশ বনভূমিকে ২৫ শতাংশে নিয়ে যেতে সরকারের পাশাপাশি দরকার জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশ গ্রহণ।
তাই এখনই সময় আমাদের দেশকে আবার সবুজ-শ্যামল করে তোলা, দেশের আবহাওয়াকে মানুষের জন্য সহনীয় করে তোলা। দেশের বাস্তুতন্ত্রকে একটা স্বাভাবিক পরিবেশে নিয়ে যাওয়া। এজন্য প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষরোপণ। আর বৃক্ষরোপণের জন্য বর্ষাকালের চেয়ে উপযুক্ত সময় তো আর হতে পারে না! এর কারণ হলো- এ সময় মাটিতে আর্দ্র থাকে, বৃষ্টির পানি গাছের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। গাছ সহজে মরে না।
এ সময় গাছ লাগালে খুব দ্রুতই তা মাটিতে শিকড়। সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ষার মৌসুম।
আরও পড়ুন: ১ বছরে ৫ লাখ গাছ লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি: গণপূর্তমন্ত্রী
বর্ষাকালে আমরা যেসব গাছ লাগাতে পারি
পানি সহনশীল যে কোনো গাছই বর্ষাকালে লাগানো যেতে পারে। তবে পরিকল্পিতভাবে নির্দিষ্ট অঞ্চল ও মাটির ধরনের জন্য গাছের সঠিক প্রজাতি নির্বাচন করা বাস্তুতন্ত্রের টেকসই উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
মূলত এ সময় ফলজ, কাষ্ঠল উদ্ভিদ ও শোভাবর্ধক গাছ লাগানো যেতে পারে।
ফলজ গাছের মধ্যে অন্যতম হলো আম, কাঠাল, জাম, জামরুল, লিচু, পেয়ারা, আমড়া, বেল, নারিকেল, খেজুর, লেবু, জাম্বুরা, আমলকি, লটকন, কুল ইত্যাদি। এসব গাছ লাগালে একসঙ্গে দু’টি কাজ হবে। গাছগুলো আমাদের অক্সিজেন দেবার পাশাপাশি ফলও উপহার দেবে। এছাড়া পাখির জন্যও খাদ্যের একটা ভালো উৎস তৈরি হবে।
কাষ্ঠল গাছের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- দেবদারু, মেহগনি, সেগুন, শিশু, আকাশি, রেইনট্রি, শাল, শিমুল ইত্যাদি। গাছগুলো ভবিষ্যতে আমাদের ফার্নিচারের অভাব পূরণ করার পাশাপাশি অর্থেরও যোগান দেবে। তবে ইউক্যালিপটাস গাছের মতো ক্ষতিকর গাছ লাগানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
শোভাবর্ধক গাছের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কদম, বকুল, চেরি, পলাশ, টগর, গন্ধরাজ, কৃষ্ণচূড়া, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, অশ্বথ, ছাতিম, চালতা, কাঠগোলাপ ইত্যাদি।
এছাড়া এই বর্ষায় বিভিন্ন ঔষধি গাছ যেমন নিম, তুলশি, অ্যালোভেরা, বাসক, গাঁদা, পুদিনা, পাথরকুচি, অর্জুন নিসিন্দাসহ ত্রিফলা নামে পরিচিত বহেরা, হরিতকি ও আমলকি রোপণ করে আমাদের গ্রাম-বাংলার প্রাচীন ঔষধি গাছের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পারি।
আরও পড়ুন: ‘গাছ রোপণ করে আমরা সবুজ পরিবেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব’