ইউরোপিয়ান ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, জাপান থেকে বলিভিয়া হয়ে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সোমবার (২২ জুলাই) বিশ্বব্যাপী সর্বকালের উষ্ণতম দিন হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। এর ফলে রবিবার (২১ জুলাই) গড়া বিশ্বের উষ্ণতম দিনের রেকর্ড পরদিনই ভেঙে নতুন রেকর্ড হয়েছে।
বুধবার (২৪ জুলাই) কোপার্নিকাস স্যাটেলাইটের প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, রবিবারের রেকর্ড করা তাপমাত্রার রেকর্ড (১৭.০৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ভেঙে সোমবার ০.০৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস (০.১ ডিগ্রি ফারেনহাইট) বেশি হয়েছে।
জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবী এখন ১ লাখ ২৫ হাজার বছর আগের মতোই উষ্ণ হয়ে উঠেছে। কৃষিকাজ বিকাশের অনেক আগে থেকেই পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা এত বেশি ছিল না।
মানুষ যদি ক্রমবর্ধমান হারে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়াতে থাকে, তবে সাম্প্রতিক দশকগুলোতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়ে বিজ্ঞানীদের যে আশঙ্কা, তার সঙ্গে মিলে যাবে।
আরও পড়ুন: ৫ দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেটিওরোলজির জলবায়ু বিজ্ঞানী রক্সি ম্যাথিউ কোল বলেন, ‘আমরা এমন একটি যুগে রয়েছি যেখানে আবহাওয়া ও জলবায়ুর রেকর্ড প্রায়ই আমাদের সহনীয় পর্যায়ের বাইরে চলে যাবে। ফলে জীবন ও জীবিকা অবর্ণনীয় ক্ষতি মুখে পড়বে।’
কোপার্নিকাসের প্রাথমিক তথ্যে দেখা গেছে, সোমবার বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ছিল ১৭.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৬২.৮৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট। এই সপ্তাহের আগে গড়া রেকর্ডটি ছিল এক বছর আগের। তার আগে ২০১৬ সালের গড় তাপমাত্রা ছিল ১৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৬২.২৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট।
১৯৪০ সাল থেকে কোপার্নিকাসের রেকর্ড রাখা শুরু হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সরকারের তাপমাত্রা পরিমাপ ও রেকর্ড রাখা শুরু হয় আরও আগে, ১৮৮০ সালে।
গাছের ছাল ও বরফের কেন্দ্রের মতো নমুনা বিশ্লেষণ করে অনেক বিজ্ঞানী বলছেন, গত বছরের রেকর্ড ছিল আমাদের গ্রহের প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণতম। ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে সেই রেকর্ডও ভেঙে গেল।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানবসৃষ্ট কারণ ছাড়া প্রাকৃতিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তন ও চরম তাপমাত্রার রেকর্ড এত ঘন ঘন ভাঙে না।
আরও পড়ুন: ২৫ বছরের ইতিহাসে খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১.৮ ডিগ্রির রেকর্ড, সতর্কতা জারি
জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক সাবেক প্রধান ক্রিস্টিয়ানা ফিগেরেস বলেছেন, বিশ্ব জলবায়ুর গতিপথ যদি এখনই পরিবর্তন না হয়, তাহলে অতি শিগগিরই আমরা পুড়ে মরব।
তার মতে, বিশ্বব্যাপী উৎপাদিত বিদ্যুতের এক-তৃতীয়াংশ শুধু সৌর ও বায়ুর মাধ্যমে উৎপাদন করা সম্ভব। তবে এ বিষয়ে বিভিন্ন দেশের জাতীয় নীতিগুলো সেভাবে রূপান্তর করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।