প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক যুক্তরাজ্য সফরকে ‘অত্যন্ত সফল’ বলে বর্ণনা করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে শেষ মুহূর্তে সাক্ষাৎ করতে না পারার জন্য কিছু কারণও উল্লেখ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের বিবেচনায়, এই সফর অত্যন্ত সফল ছিল।’
সচিব (পূর্ব) ড. মো. নজরুল ইসলাম ও মহাপরিচালক (জন কূটনীতি) শাহ আসিফ রহমানও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক সফরের আগে তার সঙ্গে এক প্রাতঃরাশের বৈঠকে জানিয়েছিলেন যে, এই সফরকে একটি সরকারি সফরে উন্নীত করা হয়েছে।
পড়ুন: ড. ইউনূসকে মর্যাদাপূর্ণ ‘হারমনি অ্যাওয়ার্ডে’ ভূষিত করলেন কিং চার্লস তৃতীয়
পরে, তিনি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন এবং বাংলাদেশ পক্ষকে একই বার্তা দেন।
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলামকেও যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে এটি একটি সরকারি সফর।
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এটি এক সরকারি সফর। তারা মনে করেন কিছু কর্মকাণ্ডে জড়িত হবে, যার মধ্যে রয়েছে দুই দেশের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের একটি বৈঠক।
সিদ্দিক বলেন, প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত বৈঠকটি এজেন্ডায় ছিল কিন্তু নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা হয়নি। ‘শেষ মুহূর্তেও আমাদের প্রত্যাশা ছিল যে বৈঠকটি হবে। শেষ মুহূর্তে, যেকোনো কারণে বৈঠকটি হয়নি।’
তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ব্যতীত প্রধান উপদেষ্টা পরিকল্পনার চেয়ে বেশি বৈঠক করেছেন এবং তাকে পূর্ণ প্রোটোকল দেওয়া হয়েছে।
তবে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব স্বীকার করেন যে, তাদের কাঁধে কিছু দায়িত্ব আসে কারণ তারা (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) সফরের প্রস্তুতির অংশ ছিলেন।
এই সফরকে কেন অত্যন্ত সফল হিসেবে দেখা হচ্ছে তা ব্যাখ্যা করে তিনি পাচার করা সম্পদ পুনরুদ্ধার, প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক কিং চার্লস তৃতীয় হারমনি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ এবং রাজার সঙ্গে একান্ত বৈঠকের ক্ষেত্রে বাস্তব অগ্রগতির কথা উল্লেখ করেন।
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘একটি ইস্যুতে সফল সফরের পর দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিষয়টিকে জটিল করে তোলার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ তিনি দেখছেন না।’
বৃহস্পতিবার লন্ডনের সেন্ট জেমস প্যালেসে প্রধান উপদেষ্টা কিং চার্লস তৃতীয় হারমনি পুরস্কার গ্রহণ করেন।
মানুষ, প্রকৃতি এবং পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে, প্রান্তিক সম্প্রদায়ের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে এবং একটি শান্তিপূর্ণ ও টেকসই বিশ্ব গড়ে তুলতে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অধ্যাপক ইউনূসকে এই পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়।
পড়ুন: হারমনি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণের আগে রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে দেখা করবেন ড. ইউনূস
পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের আগে রাজা চার্লস বাকিংহাম প্যালেসে একান্ত সাক্ষাতকালে প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান।
আো ঘন্টাব্যাপী একান্ত বৈঠকে তারা পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন।
যুক্তরাজ্য সফরকালে অধ্যাপক ইউনূস বিবিসিকে বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে একটি বৈঠকের ব্যবস্থা করতে পারেননি।
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি জানি না তার হতাশ হওয়া উচিত নাকি একটি সুযোগ হাতছাড়া।’ ‘এজন্যই আমি বলছি বাংলাদেশে আসাটা হবে সহজ, সেই মুহূর্তটি দেখার এবং অনুভব করার একটি ভালো সুযোগ।’
ডাউনিং স্ট্রিট স্টারমারের সঙ্গে বৈঠকের সময়সূসি নির্ধারণ না করার কোনো কারণ জানিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না আমরা এই ধরণের কোনো ব্যাখ্যা পেয়েছি। সম্ভবত তিনি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ব্যস্ত।’