পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় এক ভিডিও বার্তায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম রবিবার তাদের আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। এদিকে এমনটাই হওয়ার কথা ছিল উল্লেখ করে পুলিশ হেফাজতের বাইরে থাকা সমন্বয়কারীরা বলেছেন, সে কারণে তারা আগেই প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন তাদের সহকর্মী সমন্বয়কারীদের যেকোনো বিবৃতি প্রত্যাখ্যান বা উপেক্ষা করতে আগেই একমত হয়েছিলেন তারা। তাদের চাপের মুখে এই বিবৃতি দিতে বাধ্য করা হয়েছে।
শুক্রবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে নাহিদ ইসলামসহ দুজনকে হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে আসে। নাহিদ ইসলামের মাসহ পরিবারের পক্ষ থেকে অনুরোধ সত্ত্বেও আটক সমন্বয়কারীদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি।
পরে সন্ধ্যায় একটি ভিডিও বার্তা দেওয়া হয়, যেখানে নাহিদ ইসলাম কোটা সংস্কার আন্দোলনের কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেন। লিখিত বক্তব্যে নাহিদ রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় অগ্নিসংযোগসহ আন্দোলনের সময় সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচার দাবি করেন।
ওই ভিডিওতে দেখা যায় নাহিদ ক্ষীণ স্বরে বলেন, 'আমাদের যৌক্তিক দাবি ছিল কোটা সংস্কার, যা সরকার ইতোমধ্যে সমাধান করেছে। শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা সরকারকে দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আহ্বান জানাচ্ছি। বৃহত্তর স্বার্থে আমরা এই মুহূর্ত থেকে আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।’
ভিডিও বার্তায় ডিবি হেফাজতে থাকা আরও পাঁচজন সমন্বয়কারীকে তার পাশে বসে থাকতে দেখা যায়।
তবে লুকিয়ে থাকা অপর দুই সমন্বয়কারী দাবি করেছেন, জবরদস্তির মাধ্যমে এই বক্তব্য বের করা হয়েছে।
তবে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগ তুলে এর নিন্দা জানিয়েছেন আরেক সমন্বয়কারী আবদুল কাদের। তিনি বলেন, চাপের মুখে বক্তব্য আদায়ের জন্য সরকার জঘণ্য কাজে লিপ্ত হয়েছে।
আরেক সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ ক্ষুদে বার্তায় ব্ল্যাকমেইল ও হুমকির মাধ্যমে বক্তব্য পাওয়ার কথা প্রকাশ করেন, যা ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না বলেও দাবি করেন তিনি।
গত তিন দিনে নাহিদ ইসলামসহ কোটা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী ছয়জন সমন্বয়ককে হেফাজতে নিয়েছে ডিবি।
রবিবার বিকেলে ডিবি প্রধান হারুন-অর-রশিদ বলেন, 'নিরাপত্তাজনিত কারণে' সমন্বয়কারীদের আটক করা হয়েছে।
হারুনুর রশীদের ফেসবুক পেজে তার সঙ্গে খাবার টেবিলে বসা সমন্বয়কদের ছবি পোস্ট করা হয়। এর কিছুক্ষণ পর নাহিদ ইসলামের ভিডিও বার্তা প্রকাশ করা হয়। সঙ্গে ছিলেন আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ ও নুসরাত তাবাসসুম। প্রথম পাঁচজনকে সপ্তাহান্তে দুটি ড্রাইভে তুলে নেওয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে। নুসরাত তাবাসসুমের উপস্থিতি অবশ্য বিস্ময়কর ছিল।