দৈনিক মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে করা আন্দোলন নিয়ে সাধারণ চা শ্রমিক ও ইউনিয়ন নেতারা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। সোমবার সকাল থেকে কাজে ফিরে যাওয়ার জন্য সরকারের সঙ্গে ইউনিয়নের নেতাদের করা চুক্তি সাক্ষরকে কেন্দ্র করে এই বিভক্তির সৃষ্টি হয়।
এর আগে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের ও মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের মধ্যে রবিবার রাতে হওয়া বৈঠকে আগের মজুরিতেই চলমান আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বৈঠকের পর ইউনিয়ন নেতারা ঘোষণা করেন, শ্রমিকরা তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করবে এবং তাদের আগের মজুরিতেই কাজে ফিরে যাবে।
তারা আরও জানান, দুর্গাপূজার আগে কোনো এক সময়ে প্রধানমন্ত্রী নিজে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন।
এদিকে সোমবার সকালে চা শ্রমিক ইউনিয়নের দুই নেতা শ্রীমঙ্গলের কালীঘাট চা বাগানের শ্রমিকদের ধর্মঘট স্থগিত করে কাজে ফেরার আহ্বান জানাতে গেলে সাধারণ শ্রমিকরা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এসময় বিভিন্ন স্থানে নেতাদের সঙ্গে শ্রমিকদের বাক-বিতণ্ডা সহ হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে।
অল্প কয়েকজন সাধারণ শ্রমিক চুক্তি অনুযায়ী কাজে ফিরে গেলেও, অধিকাংশ শ্রমিক এ সিদ্ধান্ত মানতে অস্বীকার করে ধর্মঘট অব্যাহত রাখে।
আরও পড়ুন:দৈনিক ১৪৫ টাকা মজুরি নির্ধারণে ধর্মঘট প্রত্যাহার, মানতে নারাজ সাধারণ চা শ্রমিকেরা
চা শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের সভাপতি রিদেশ মোদী বলেন, ‘আমাদের আগের মজুরি নিয়ে কাজে ফিরতে হলে এতদিন ধর্মঘট কেন করলাম?’
বর্তমান পরিস্থিতি নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রবিবার রাতে চা শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের জরুরি বৈঠক হয়।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের নেতৃত্বে সভাশেষে পাঁচটি শর্তে উভয় পক্ষের স্বাক্ষরিত যৌথ বিবৃতি জারি করা হয়।
লিখিত বিবৃতি অনুসারে, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি নং-বি ৭৭’ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রেখে সোমবার থেকে তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে কাজে যোগদান করবে’।
মজুরির বিষয়ে বলা হয়েছে, শ্রমিকরা আপাতত বর্তমান মজুরি অর্থাৎ দৈনিক ১২০ টাকা মজুরিতে আবার কাজে যোগ দেবেন।
ইউনিয়ন নেতারা দাবি করেছেন, তারা এই বছর দুর্গাপূজা উদযাপনের আগে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তাদের দাবি উপস্থাপনের আবেদন করেছেন।
নেতারা জানান, মৌলভীবাজারের ডিসি লিখিতভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের দাবি জমা দেয়ার শর্তে এবং সকল চা শ্রমিককে ধর্মঘট চলাকালীন সময়ের মজুরি পরিশোধের শর্তে বিবৃতিতে সাক্ষর করা হয়েছে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল বলেন, ইতোপূর্বে গত ২০ আগস্ট শ্রম অধিদপ্তরের সঙ্গে বৈঠকে আমরা প্রথমতো প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে সাময়িক সময়ের জন্য ১৪৫ টাকা মজুরিতে কাজে যোগ দেয়ার শর্তে আমাদের পূর্বঘোষিত নির্দিষ্টকালের পূর্ণদিবস কর্মবিরতির প্রত্যাহার করি এবং শ্রকিদেরকে কাজে যোগ দেয়ার পরামর্শ দেই। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী দ্রুততম সময়ের মধ্যে পুনরায় চা শ্রমিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে শ্রকিদের ন্যায্য মজুরি বিষয়ে পুনঃবিবেচনার বিষয়টিও আলোচনায় রাখা হয়।
বৈঠক শেষে আন্দোলনরত সাধারণ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা হলে তারা আমাদের এই প্রস্তাব না মেনে বরং প্রধানমন্ত্রী যতক্ষণ না পর্যন্ত শ্রমিকদের চুড়ান্ত মজুরি নির্ধারণ করে দিচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত ১২০ টাকা মজুরিতে কাজে যাবে না উল্লেখ করে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন তারা। সাধারণ শ্রমিকদের সঙ্গে একমত পোষণ করেই আমরা বিবৃতি দিয়েছি।
চা শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনরত এক কর্মী মোহন রবিদাস বলেন, শ্রমিক নেতারা কোথায় কি করেছেন, আন্দোলনরত কর্মীদের সঙ্গে তারা কখনো কোনো পরামর্শ করেন নি।
আরও পড়ুন:চা শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহার, আগের মজুরিতেই ফিরছেন কাজে