ঢাকা, সিরাজগঞ্জ, ভোলা, বগুড়া, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর, নেত্রকোনা ও সিলেটে এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে নয়জনই ছিলেন মোটরসাইকেল আরোহী।
ঢাকা: বৃহস্পতিবার দুপুরে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার থেকে পড়ে গিয়ে মোটরসাইকেল আরোহী এক কলেজছাত্র নিহত এবং দুজন আহত হন। নিহত ইমন (২২) শনির আখড়া এলাকার জেরিন মিয়ার ছেলে। তিনি সিদ্ধেশ্বরী কলেজেন শিক্ষার্থী ছিলেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, ইমন ও তার দুই বন্ধুর মোটরসাইকেলটি ফ্লাইওভার থেকে পড়ে গেলে তারা তিনজন গুরুতর আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক ইমনকে মৃত ঘোষণা করেন।
সিরাজগঞ্জ: উল্লাপাড়া ও রায়গঞ্জ উপজেলায় বৃস্পতি ও মঙ্গলবার পৃথক দুই সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জন মারা যান।
উল্লাপাড়া উপজেলার হরিণচড়া বাজার এলাকায় প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে চালকসহ এক ব্যাংক কর্মকর্তা নিহত হন। বৃহস্পতিবার সকালে হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার কলেন সরদিয়া গ্রামের আবদুল মালেকের ছেলে ও অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা এমারুল হোসেন (৪২) এবং প্রাইভেটকারের চালক রুবেল (৪৫)।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাদের জিলানী জানান, ব্যাংক কর্মকর্তা এমারুল সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় শ্বশুরবাড়ি থেকে প্রাইভেটকার যোগে ফরিদপুরে নিজ বাড়িতে যাচ্ছিলেন। পথে চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে প্রাইভেটকারটি হরিণচড়া এলাকায় খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই এমারুল নিহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ আহত চালককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনিও মারা যান।
এর আগে মঙ্গলবার ভোরে রায়গঞ্জ উপজেলার শিমলা নামক স্থানে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের বাস খাদে পড়ে চারজন নিহত ও ২৭ জন আহত হন।
নিহতরা হলেন- গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কিসমাত গ্রামের মৃত জয়নাল আবেদীনের ছেলে ফজলুল হক (৪৫), একই উপজেলার কুটিপাড়া গ্রামের বুলু মিয়ার ছেলে হামিদুল ইসলাম (৪০), তালুক সর্বানন্দ গ্রামের এলাহী বকসের ছেলে শাহজাহান মিয়া (৩৫) ও রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার উমায়েতপুর গ্রামের রহিম উদ্দিনের ছেলে আতাউর শেখ (৩০)।
রায়গঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, ঢাকা থেকে গাইবান্ধাগামী জারিফ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস ওই স্থানে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত ও ২৭ জন আহত হয়।
ভোলা: বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড় মানিকা এলাকায় বৃহস্পতিবার দুপুরে বাসের সাথে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে দুই ভাই নিহত হন। তারা হলেন- ইকবাল (২৬) ও সোহাগ (২০)। তাদের বাড়ি দৌলতখানের সৈয়দপুর ইউনিয়নে।
বোরহানউদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক জানান, ইকবাল ও সোহাগ দুপুর ২টার দিকে মোটরসাইকেল যোগে বোরহানউদ্দিন থেকে দৌলতখানে যাচ্ছিলেন। পথে ভোলা-চরফ্যাশন সড়কে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাসের সাথে তাদের মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে একজন নিহত হন। স্থানীয়রা গুরুতর অবস্থায় আরেক ভাইকে উদ্ধার করে বোরহানউদ্দিন হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তিনিও মারা যান।
বগুড়া: শেরপুর উপজেলার মাহিপুরে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বগুড়া-ঢাকা মহাসড়কে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন নিহত এবং আরও ২০ জন আহত হন। নিহত শহিদুল ইসলাম (৩৫) একই উপজেলার বাসিন্দা।
শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুর কবির জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বগুড়ামুখী একটি বাসের সাথে আরেকটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে।
বাগেরহাট: মোড়েলগঞ্জ উপজেলার মহেশপুরে বুধবার রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। আহত হন আরও দুই মোটরসাইকেল আরোহী। নিহতরা হলেন- পিরোজপুর জেলার মহাদেব সাহার ছেলে স্বপন সাহা (২৫) ও আফজাল খানের ছেলে শাওন খান (২৪)।
মোড়েলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আজিজুল ইসলাম জানান, রাতে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই একই মোটরসাইকেলের দুজন আরোহী নিহত এবং অপর মোটরসাইকেলের দুই আরোহী আহত হন।
ঝিনাইদহ: কোটচাঁদপুর উপজেলার খোর্দ্দ-খালিশপুর এলাকায় বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে গাছের সাথে ধাক্কা লেগে দুই আরোহী নিহত এবং একজন আহত হন। নিহতরা হলেন- উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের আলিম হোসেনের ছেলে বিপলু হোসেন (২০) ও চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার রায়পুর গ্রামের আসাদুল ইসলামের ছেলে রানা (১৩)।
কোটচাঁদপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সাব-অফিসার প্রদীপ মণ্ডল জানান, সকালে জগন্নাথপুর থেকে মোটরসাইকেল যোগে খালিশপুর শহরের দিকে আসছিলেন তিনজন। পথে খোর্দ্দ-খালিশপুরে মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে গাছের সাথে ধাক্কা খায়। এতে আহত তিনজনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে চিকিৎসক বিপলু ও রানাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফরিদপুর: সদর উপজেলায় ধুলদী রেলগেট এলাকায় বুধবার সকালে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ছয়জন নিহত এবং আরও ১৫ জন আহত হন।
ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. নুরুল আলম দুলাল জানান, সকাল পৌনে ৭টার দিকে একে ট্রাভেলসের একটি বাস ঢাকা থেকে ঘরমুখো ঈদের যাত্রীদের নিয়ে চুয়াডাঙ্গার দিকে যাচ্ছিল। পথে ধুলদী রেলগেট এলাকায় বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের একটি গাছের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা খায়। এতে ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হন। আহতদের উদ্ধার করে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পথে আরও একজন মারা যান। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেকজনের মৃত্যু হয়।
নেত্রকোনা: সদর উপজেলার চল্লিশা রেলগেট এলাকায় মঙ্গলবার বাসের চাপায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত এবং একজন গুরুতর আহত হন। নিহতরা হলেন- চাল্লিশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান ও বামনমোহন গ্রামের শফিকুল ইসলাম।
নেত্রকোনার পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী বলেন, বিকালে মোটরসাইকেলটিকে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাস চাপা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে আহতদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতাল ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নেয়া হলে সেখানে দুজন মারা যান।
সিলেট: ওসমানীনগর উপজেলার দক্ষিণ গোয়ালাবাজার ব্রাহ্মণগ্রাম এলাকায় সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে এক গৃহবধূ নিহত এবং কমপক্ষে ৩০ জন আহত হন। নিহত খুর্শেদা বেগম (২০) সুনামগঞ্জ সদর থানার বেড়িগাঁও গ্রামের ফারুক মিয়ার স্ত্রী।
শেরপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী শাহজালাল পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস ভোর সাড়ে ৫টার দিকে খাদে পড়ে যায়। এতে বাসের যাত্রী খুর্শেদা ঘটনাস্থলে নিহত হন। সেই সাথে আহত হন কমপক্ষে ৩০ যাত্রী।