বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, একটি ছবি লাখ শব্দের সমান, বলে দেয় হাজারও কথা। আলোকচিত্র শুধু মুহূর্ত ধারণ করে না। তা হয়ে ওঠে ইতিহাসের সাক্ষী, সময়ের দর্পণ।’
বুধবার (২৮ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট এসোসিয়েশন আয়োজিত ‘রুপসী বাংলা জাতীয় আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতা’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফটোজার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম মহসিন। প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এস. শারমিন মুরশিদ।
আলোচনায় অংশ নেন প্রেস ক্লাব সভাপতি ও কবি হাসান হাফিজ, লেখক ও গবেষক ওবেইদ জায়গীরদার, সাধারণ সম্পাদক বাবুল তালুকদার ও নাসিম শিকদার।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘ছবি কখনো একটি গল্প বলে, কখনো একটি আন্দোলনের ভাষা হয়। ২০১৫ সালে ভূমধ্যসাগরের তীরে নিথর পড়ে থাকা শিশু শরণার্থী তিন বছর বয়সের আয়লান কুর্দির ছবি বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছিল। যুদ্ধ ও শরণার্থী সংকটের নির্মমতা এ এক ছবিতেই বিশ্বব্যাপী পৌঁছে গিয়েছিল।’
তিনি ১৯৯৩ সালে দক্ষিণ সুদানে দুর্ভিক্ষপীড়িত একটি শিশুকে অনুসরণকারী শকুনের সেই বিখ্যাত ছবির কথাও উল্লেখ করেন, যা বিশ্ববাসীকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল এবং আলোকচিত্রী কেভিন কার্টারকে এনে দিয়েছিল পুলিৎজার পুরস্কার।
কাদের গনী বলেন, ‘১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে দুর্ভিক্ষে রংপুরের বাসন্তী ও দুর্গা নামের দুই নারীর শতছিন্ন জাল জড়ানোর ছবি দেশ-বিদেশে আলোড়ন তোলে। ফেলানি হত্যাকাণ্ডের ছবি সীমান্তে ভারতীয় আগ্রাসনের নগ্ন চিত্র প্রকাশ করে। এসব ছবি শুধু দলিল নয়, প্রতিরোধ ও প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছে।’
তিনি বলেন, ‘ওই সময়ের অনেক দুর্ভিক্ষের অনেক ছবি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সেদিন বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত করেছিল। বিশেষ করে লঙ্গর খানায় ক্ষুধার্ত মানুষের ঢল ডাস্টবিনের খাবার নিয়ে কুকুর আর মানুষের টানাটানি ইত্যাদি।’
আরও পড়ুন: বিজাতীয় সংস্কৃতিকে ছুড়ে ফেলে সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা করতে হবে: কাদের গনি চৌধুরী
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব বলেন, ‘সংবাদ ভাষা দিয়ে সাজানো হলেও ছবি একটি তথ্যের প্রাণকেন্দ্র। একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এমনকি শব্দ চিত্রকে অনেক সময় ছাড়িয়ে যায় ক্যামেরার ভাষা। তাই, ক্যামেরা শুধু ছবি তুলে না- এতে ভাষাও দেয়, শিল্প সৌন্দর্য আনে, চিরন্তনতা দান করে। তাই, ফটোসাংবাকিতাকে সাংবাদিকতার একটা নিছক অনুজ অঙ্গ বলে অবহেলা করার অবকাশ নেই।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ফটোসাংবাদিকদের অর্জন অনেক। পৃথিবীর এমন কোনো প্রতিযোগিতা নেই, যেখানে বাংলাদেশের আলোকচিত্রীরা জয়ী হননি। ২০১৮ সালে পুলিৎজার জেতেন রয়টার্সের ফটোসাংবাদিক মোহাম্মদ পনির হোসেন।’
‘ইতোমধ্যে বাংলাদেশের দশজন আলোকচিত্রী ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো পুরস্কার জিতেছেন। বাংলাদেশের আলোকচিত্রীদের মুকুটে যুক্ত হয়েছে ইউজিন স্মিথ ফান্ড, মাদার জোনস, ন্যাশনাল জিওগ্রাফির অল রোডস, পাইওনিয়ার ফটোগ্রাফার এওয়ার্ড, হিপা, টাইম ম্যাগাজিন পারসন অব দ্য ইয়ারের মতো সম্মানসূচক পালক।’