মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে প্রাগৈতিহাসিক তীর্থস্থান রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ের সীতাঘাট শ্রী শ্রী মাতা সীতা মন্দিরে মহা বারুণী স্নান উপলক্ষে রবিবার (১৯ মার্চ) হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটেছে।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা সনাতন ধর্মের ভক্তরা কর্ণফুলি নদীতে স্নান, সীতা মন্দির, শম্ভুনাথ মন্দির, কালি মন্দিরে পূজা দেয়া এবং মহাপ্রসাদ গ্রহণের মাধ্যমে সীতা দেবীর কাছে তাদের মনের বাসনা ব্যক্ত করেছেন।
এ উপলক্ষে রবিবার সকাল থেকে অষ্টপ্রহরব্যাপী তারকব্রহ্ম মহানামযজ্ঞ ও সীতা মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
জাতি,ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে একটি মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে সীতা মন্দির। ঐতিহাসিক এই মন্দিরে বিভিন্ন নির্দশন ঘুরে ফিরে দেখছেন ভক্তরা।
মহাবারুণী স্নানে আসা অনেক ভক্ত জানান, ‘ঐতিহাসিক এই পবিত্র তীর্থ স্থানে আসতে পেরে নিজেদেরকে পূণ্যবান মনে হচ্ছে। আমরা মা সীতা দেবীর বিভিন্ন নিদর্শন ঘুরে ফিরে দেখছি এবং মহাবারুণী স্নানে স্নাত হয়ে পবিত্র হচ্ছি।’
আরও পড়ুন: লোহাগড়ায় জগন্নাথ মন্দির থেকে দেব-দেবীর মূর্তি চুরি!
সীতাঘাট মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি রতন দাশ জানান, ‘ঐতিহাসিক এই সীতা মন্দিরে দূর- দূরান্ত থেকে ভক্তরা আসছেন। সীতা মন্দির, শম্ভুনাথ মন্দির ও কালি মন্দিরসহ মা সীতার বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখছেন ভক্তরা। গত শনিবার থেকে শুরু হয়ে সোমবার সকাল পর্যন্ত এই উৎসব চলবে।’
মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দাশ জানান, ‘এই মন্দিরে মা সীতার অনেক নিদর্শন আছে। মা সীতা যে ঘাটে স্নান করেছেন, আজ সে ঘাটে ভক্তরা স্নান করেছেন। এই স্থানে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে আমাদের অনেক প্রতিকূলতা সৃষ্টি হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরপরও এমপি দীপংকর তালুকদার, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ,রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ,পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরাকারি সংস্থার সহায়তায় আমরা এই অনুষ্ঠান করতে পারছি।’
শ্রী শ্রী মাতা সীতাদেবী মন্দির এর অধ্যক্ষ শ্রীমৎ জ্যোতির্ময়ানন্দ পুরী মহারাজ জানান, এটি একটি প্রাগৈতিহাসিক তীর্থস্থান। আমি বিশ্বের সকল ভক্তের কাছে অনুরোধ জানাই, সকলে মিলে এই তীর্থস্থানকে জাগিয়ে তোলেন।
এদিকে মহাবারুণী স্নান উপলক্ষে রবিবার (১৯ মার্চ) বেলা ১২টায় মন্দির প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে রাঙ্গামাটি সংসদ সদস্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ। আর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার দল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সনাতন সম্প্রদায়সহ সকল ধর্মের মঠ-মন্দিরের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু কিছু অবৈধ অস্ত্রধারী ও চাঁদাবাজ এই পার্বত্যঞ্চলকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি করতে চাই সবসময়। তাই তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
এর আগে প্রধান অতিথি রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ এর অর্থায়নে ১ কোটি টাকা ব্যয়ে সীতারঘাট মন্দির কমপ্লেক্স ভবনের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করেন।
এছাড়া মহাবারুণী স্নান উপলক্ষে গত শনিবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন এবং রাত ৮টায় মহানামযজ্ঞের শুভ অধিবাস অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর: সুষ্ঠু তদন্তের দাবি ফখরুলের