ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর টেকসই উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুক্রবার জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) এ তথ্য জানিয়েছে।
আঙ্কটাড প্রধান রেবেকা গ্রিনস্প্যান বলেন, উন্নয়নশীল ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোর ৭০ থেকে ৮৫ শতাংশ ঋণ হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রায়। এতে এই দেশগুলো বড়ধরনের মুদ্রা সংকটের ঝুঁকিতে রয়েছে। যা জনসাধারণের জীবন-যাত্রার ব্যয়ে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।
তিনি আরও বলেন, বিষয়টি এমন এক সময় ঘটছে, যখন দেশগুলোর সরকারের কাছ থেকে জনগণের আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন।
সম্প্রতি জেনেভায় ১৩ তম আঙ্কটাড ঋণ ব্যবস্থাপনা সম্মেলনে বক্তব্য রাখার সময় রেবেকা বলেন, চলতি বছর এ পর্যন্ত অন্তত ৮৮টি দেশে শক্তিশালী মার্কিন ডলারের বিপরীতে মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটেছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক চাপের সময়েও যা (ডলার) অনেকের কাছে পছন্দের রিজার্ভ মুদ্রা। ৩১টি দেশে তাদের মুদ্রার মান ১০ শতাংশের বেশি কমে গেছে।
তিনি বলেন, যার ফলে আফ্রিকান অনেক দেশের ওপর ব্যাপ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
বৈশ্বিক সংকটের এই ঢেউ; অনেক উন্নয়নশীল দেশের নাগরিকদের সংকট (আর্থিক) মোকাবিলায় আরও ঋণ নিতে প্ররোচিত করে।
আঙ্কটাড জানায়, ২০১৯ ও ২০২১ সালের মধ্যে ১০০টিরও বেশি উন্নয়নশীল দেশে জিডিপির অংশ হিসেবে সরকারি ঋণের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। চীন বাদে এই বৃদ্ধি মোটামুটি দুই ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।
রেবেকা বলেন, ‘একটি দেশের নেতিবাচক কার্যক্রমের কারণে এমনটি হয়নি। এটি ঘটেছে ব্যবস্থাপনা জনিত ধাক্কার কারণে, যা একই সময়ে অনেক দেশে আঘাত হেনেছে।’
সুদের হার দ্রুত বৃদ্ধির সঙ্গে ঋণ সংকট জনসাধারণের ওপর ব্যাপক আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, অর্থনীতি ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
ঋণের বোঝা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশের সরকারগুলো একটি দুষ্ট চক্রের মধ্যে পড়ে। তারা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বিনিয়োগ করতে পারে না এবং তাদের অর্থনৈতিক ব্যয় আরও বৃদ্ধি পায়; যার ফলে তাদের ঋণ পরিশোধ করা আরও কঠিন হয়।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে জেনেভায় দেশটির স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত গোথামি সিলভা প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই সমস্যাগুলো ন্যায়সঙ্গতভাবে সমাধান করা দরকার। এটি এমনভাবে করা দরকার যাতে ঋণগ্রস্ত দেশগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যতের ঋণের বাধ্যবাধকতাগুলো পূরণ করার ক্ষমতা বজায় রাখে। পাশাপাশি এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রার প্রতি তার প্রতিশ্রুতিও পূরণ করে।’
জাতিসংঘের সংস্থাটির এক প্রতিবেদন অনুসারে, এর (ঋণের অর্থ) পরিমাণ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমনের জন্য প্রয়োজনীয় আনুমানিক বার্ষিক বিনিয়োগের ২৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রায় চারগুণ বেশি।
আরও পড়ুন: ৩৬০ কোটি মানুষ অপর্যাপ্ত পানির সমস্যার সম্মুখীন: জাতিসংঘের সংস্থা
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণে বাংলাদেশ রোল মডেল: প্রধানমন্ত্রী