শিশু যক্ষ্মারোগী শনাক্ত হয়েছে ১২ হাজার ৩৫০ জন। ২০১৯ সালে প্রতি হাজারে আনুমানিক ৫.৯ জন এমডি আর টিবি শনাক্ত হয়েছে।
বুধবার রাজধানীর দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সরকারের পাশাপাশি দাতা সংস্থা, সংশ্লিষ্ট সকল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্টেকহোল্ডারদের সমন্বিতভাবে কাজ করার কথা বলা হয়। পাশাপাশি যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে ওষুধের গুণগত মান ও সঠিক শনাক্তকরণ জরুরি এবং এ নিয়ে প্রচারণা বাড়ানো ও সচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যম সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে অভিমত দেন বক্তরা।
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, ইংরেজী দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার ও বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক যৌথভাবে এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মেডিকেল অফিসার নাজিস আরেফিন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের টিবি কন্ট্রোল কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক ডা. মাহফুজা রিফাত।
টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক শামীম আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. এম এ ফয়েজ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. ইকবাল আর্সেনাল, ব্র্যাকের কমিউনিকেবল ডিজিজেস ও ওয়াশ কর্মসূচির পরিচালক ড. মো. আকরামুল ইসলাম, বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, গাজী টিভির এডিটর ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, বিশিষ্ট সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ, অভিনেত্রী ত্রপা মজুমদার, সুমাইয়া শিমু, বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী মুনমুন আহমেদ, বিখ্যাত জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, নাট্য পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী প্রমুখ।
অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলাম বলেন, ‘এটা সত্যি যে, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে আশাব্যঞ্জক কাজ হচ্ছে। কারণ জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনটিপি) সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বেসরকারি সংস্থা সফল অংশীদারীত্বে কাজ করছে। তবে এখন আমাদেরকে রোগ প্রতিরোধে আরও বেশি কাজ করতে হবে। এজন্য প্রচারণা বাড়ানো ও সচেতনতা সৃষ্টিতে আরও কাজ করতে হবে। তবে তার আগে দরকার সংশ্লিষ্ট সকলের জোরালো প্রতিশ্রুতি।’
প্রফেসর ডা. এম এ ফয়েজ বলেন, ‘যক্ষ্মা চিকিৎসায় সফলতা আসলেও মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ এখনও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি। তাই আমাদের এক্ষেত্রে যে সকল চ্যালেঞ্জ আছে, তা নিয়ে আরও বেশি কাজ করতে হবে। স্ব স্ব অবস্থান থেকে কাজ করলে আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা আছে তা পূরণ করা কঠিন কিছু নয়।’
তিনি আরও বলেন, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে ওষুধের গুণগত মান ও সঠিক শনাক্তকরণ জরুরি।
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘এক সময় এক বাড়িতে যক্ষ্মা হলে আমিসহ সবাই আতঙ্কিত হতাম। এখন আর সে অবস্থা নেই। তবে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে আর সফলতা আনতে হলে আমদের সামাজিক গবেষণায় আরও বেশি করে মনোযোগ দিতে হবে।’
ড. মো. আকরামুল ইসলাম বলেন, ‘যক্ষ্মা চিকিৎসা বাংলাদেশ সরকার বিনামূল্যে করছে। এট একটা বড় সাফল্য ও সরকারের প্রশংসার ব্যাপার। তবে অনেকে এ তথ্য জানেন না। এ তথ্য প্রচারে আমাদের আরও উদ্যোগ নিতে হবে।’
ডা. মাহফুজা রিফাত বলেন, যক্ষ্মার ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক সফলতা সত্বেও এটি এখনও বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্য সমস্যা। সেটাকে বিবেচনায় নিয়ে সরকারের সহযোগী হিসেবে ব্র্যাক বিস্তৃত পরিসরে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
নৃত্যমিল্পী মুনমুন আহমেদ, অভিনেত্রী ত্রপা মজুমদার, সুমাইয়া শিমু, জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, নাট্য পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণের জন্য সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার নেতাদেরকে আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনটিপি) তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ২ লাখ ৯২ হাজার ৯৪২ জন যক্ষ্মারোগী শনাক্ত হয়েছে। শিশু যক্ষ্মারোগী শনাক্ত হয়েছে ১২ হাজার ৩৫০ জন। ২০১৯ সালে প্রতি হাজারে আনুমানিক ৫.৯ জন এমডি আর টিবি শনাক্ত হয়েছে।