উপজেলার রামকৃঞ্চপুর ইউনিয়নে রবিবার এ ঘটনা ঘটলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্রী ও তার স্বজনদের মারধরের ভিডিও ভাইরাল হলে বিষয়টি জানাজানি হয়।
শিক্ষার্থীর বাবা জানান, তার মেয়ে নানাবাড়িতে থেকে স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। স্কুলে আসা যাওয়ার পথে প্রায়ই তাকে প্রতিবেশী রানা, হৃদয়, সজিব, কালাম, আসিফ ও রাকিবসহ কয়েকজন বখাটে উত্যক্ত করত। বিষয়টি ওই ছাত্রী তার নানিকে জানালে বখাটেরা তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়।
রবিবার সন্ধ্যায় ওই ছাত্রীর তিন বন্ধু তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসলে বাইরে থেকে ঘরে তালা লাগিয়ে দেয় বখাটেরা এবং মেয়েটিকে চরিত্রহীন অপবাদ দিয়ে গ্রামের মাতব্বর ও লোকজনকে ডেকে আনে। রাতেই স্থানীয় স্কুল মাঠে এ নিয়ে গ্রাম্য সালিশের আয়োজন করা হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহাব আলী, সাবেক সদস্য আয়নাল, জনাব আলী, মাতব্বর কাঞ্চন মাস্টার, লুৎফর, খলীল কাজী ও আবুলসহ অর্ধশতাধিক মানুষ রাত ১০টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত চলা সালিশে উপস্থিত ছিলেন। এতে তিন বন্ধুকে ২০ হাজার টাকা করে ৬০ হাজার এবং ওই ছাত্রীকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
সোমবার জরিমানা আদায়ে ছাত্রীর বড়িতে যান মাতব্বর লুৎফরসহ কয়েকজন। কিন্তু মেয়েটির পরিবার জরিমানার টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তাকেসহ তার নানি, খালা ও খালাতো বোনকে বাঁশ ও রড দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করা হয়। মারপিটের এ ভিডিও সবার হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়েছে।
মিথ্যা অপবাদ আর মারপিটের ঘটনায় লজ্জা আর ক্ষোভে হারপিক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় ওই শিক্ষার্থী। সে এখন সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য মাহাব আলীসহ অন্য মাতব্বরদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
রামকৃঞ্চপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন জানান, তিনি চেয়ারম্যান হলেও সালিশের আয়োজন এবং জরিমানার বিষয়টি তাকে জানানো হয়নি। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।
হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) মোশারফ হোসেন জানান, মারপিটের ঘটনায় নয়জনকে আসামি করে মেয়েটির বাবা থানায় মামলা করেছেন। তিনজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলেও তারাসহ সব আসামি আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন।