জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, শারীরিকভাবে সুস্থ করার পাশাপাশি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। যার যেটাতে আগ্রহ আছে, তারা যেন সে কাজটি আনন্দ নিয়ে করতে পারে, ধাপে ধাপে তার পথ তৈরি করে দিতে হবে।
বুধবার (১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় অভ্যুত্থানে আহতদের দেশের সব সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হেলথ কার্ড বিতরণ কর্মসূচি উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
হেলথ কার্ডের উদ্বোধন ঘোষণা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই হেলথ কার্ড থাকার অর্থ হলো, এক বা দুই বছর পরে হোক, যেকোনো সময় দেশের যেকোনো সরকারি হাসপাতালে কার্ডধারীরা চিকিৎসা পাবেন। এই কার্ড সবসময়ই থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘জুলাইয়ে আহত যোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সেটি আমরা করব। অভ্যুত্থানে শহিদ পরিবার ও আহতদের আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। তাদের আর্থিক নিরাপত্তা সরকার নিশ্চিত করবে।’
‘তবে এর পাশাপাশি তাদের মানসিক ও সামাজিকভাবে পুনর্বাসন করার বিষয়েও আমাদের ভাবতে হবে; এটিকে গুরুত্ব দিতে হবে। মানুষগুলো যেন আনন্দে জীবনযাপন করতে পারে, সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, সে বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।’
রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় অভ্যুত্থানে আহত দুই শিক্ষার্থীর হাতে হেলথ কার্ড তুলে দেন তিনি।
তারা হলেন— নরসিংদী ইউনাইটেড কলেজের শিক্ষার্থী ইফাত হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান ইমু।
গত ১৯ জুলাই আন্দোলনের সময় নরসিংদীতে পুলিশের গুলিতে দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান ইফাত। আর ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় গুরুতর আহত ইসরাত বর্তমানে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
অনুষ্ঠানে তাদের দুজনের সঙ্গে কথা বলে চিকিৎসাসেবা ও অন্যান্য বিষয়ে খোঁজ নেন প্রধান উপদেষ্টা।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত যোদ্ধাদের মাঝে প্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্ট জেলায় হেলথ কার্ড বিতরণ করা হবে।
এ সময় জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক খায়ের আহমেদ চৌধুরী প্রধান উপদেষ্টাকে (আহতদের) চিকিৎসা কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ১ হাজার ৭৪ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩৯ জনের দুই চোখ চিরতরে নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া প্রায় ৪৫০ জনের এক চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
তিনি জানান, চোখের ইনজুরির জন্য প্রায় ৬৫০টি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় ধাপে তিন শ’র বেশি রেটিনা সার্জারি হয়েছে। চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের বাইরে আরও দুটি হাসপাতালে ৬০ জন রোগীর অস্ত্রোপচার হয়েছে। কোনো কোনো রোগীর তৃতীয় ধাপেও অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত চীন, ফ্রান্স, নেপাল ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিকিৎসকরা চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেছেন এবং যে প্রক্রিয়ায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে তাতে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
পাশাপাশি, এখন পর্যন্ত চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসায় ৬৫ জন রোগীর চোখ ভালো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) পরিচালক ড. মুহাম্মদ আবুল কেনান জানান, এখন পর্যন্ত তাদের হাসপাতালে ২১ জন রোগীর হাত অথবা পা কেটে ফেলতে হয়েছে। কয়েকজন রোগীকে বিদেশে নেওয়ার জন্য বাছাই করা হয়েছে।
চিকিৎসাধীন অধিকাংশ রোগীই ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবে এবং তাদের কেউ মৃত্যু ঝুঁকিতে নেই বলেও জানান তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান, তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, স্বাস্থ্য সচিব মো. সাইদুর রহমান এবং জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ ও সম্পাদক সারজিস আলমসহ আরও অনেকে।