বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৫ তারিখ দিবাগত রাতে অর্থাৎ ২৬ তারিখে গ্রেপ্তারের পূর্বে। এ বিষয়ে একাধিক দলিল বর্তমানে রয়েছে। কিন্তু তারপরও স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে বিএনপি বারবার জিয়াউর রহমানের কথা বলছে। সম্প্রতি তারেক রহমান আবারও জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বললে টুইট করলে শুরু হয় বিতর্ক। সম্প্রতি ফেসবুক ও টুইটার প্রকাশিত এক ভিডিওতে জিয়ার নিজের মুখ থেকেই জানা যায়, ২৭ তারিখ তিনি সহ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া সেনা সদস্যরা কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রের দখল নেন। তাহলে কী নিজের বাবার বক্তব্যকে অস্বীকার করছেন তারেক রহমান?
আওয়ামী লীগের ওয়েব টিমের সমন্বয়ক তন্ময় আহমেদ এ বিষয়ে তারেক রহমানের মিথ্যা তথ্য দিয়ে করা এ বিষয়ক টুইটের কমেন্টে ভিডিওটি দিয়ে লেখেন, 'হে আমার গল্পকার, শোন তোমার বাবা তৎকালীন মেজর জিয়া কি বলেছেন।'
এরপর এই ভিডিওটি তন্ময় আহমেদ তার অফিসিয়াল টুইটার ও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করেন। যেখানে জিয়াউর রহমানের সাক্ষাৎকারের ছোট একটি অংশ প্রকাশ করা হয়। সেখানে জিয়াউর রহমান বলেন, 'আমরা চট্টগ্রামের রেডিও স্টেশনের দখল নেই ২৭ তারিখে (২৭ মার্চ)।' অর্থাৎ ২৬ মার্চ তিনি কোন ঘোষণা প্রদান করেননি।
ভিডিওতে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমানের দেওয়া ভাষণের একটি ভয়েস রেকর্ডও প্রকাশ করা হয়। যেখানে তিনি বলেন, 'আমাদের দেশের মহান জাতীয় নেতা এবং বাংলাদেশের সুপ্রিম কমান্ডার শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিচ্ছি।'
ভিডিওতে আরও বলা হয়, ২৬ মার্চ কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমানের আগেই একজন বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তিনি হলেন চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান।
এই ভিডিওতে প্রশ্ন করা হয়, 'স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া হলে ২৭ তারিখের পরিবর্তে আমরা কেন ২৬ তারিখ স্বাধীনতা দিবস পালন করি।' আরও বলা হয় ঘোষণাপত্র পাঠ করলেই তিনি স্বাধীনতার ঘোষক হতে পারেন না।
আরও পড়ুন: সরকার বিদেশিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব চায় কিন্তু তাদের আধিপত্য চায় না: কাদের
ভিডিওটি শেয়ার দিয়ে তার বর্ণনায় টুইটারে তন্ময় আহমেদ লেখেন, বিএনপির গল্পকার এবং পলাতক আসামি দলীয় প্রধান তারেক রহমান বলেন, দেশের প্রথম সামরিক শাসক জেনারেল জিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক। কিন্তু তিনি নিজেই এক সাক্ষাৎকারে ২৭ মার্চ চট্টগ্রাম বেতারকেন্দ্র দখলের কথা জানায়। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভয়াবহভাবে পরাজিত বিএনপির ডামি নেতা ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের ইতিহাসের ক্লাসে ভর্তি হওয়া উচিত।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যখন গণহত্যা শুরু করে তখন ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৫ মার্চ রাত ১২টা ২০ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি বলেন, 'এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।' মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পাকিস্তানের একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, টেলিপ্রিন্টারে ইংরেজি বক্তব্য পাঠানো হয় বেশ কিছু স্থানে। এ ছাড়াও ওয়ারলেসে পাকিস্তান রেডিওর কাছাকাছি ফ্রিকোয়েন্সিতে বঙ্গবন্ধুর রেকর্ডকৃত স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করা হয়।
আরও পড়ুন: ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়ে দেশের বাজারকে অস্থিতিশীল করাই বিএনপির উদ্দেশ্য: পররাষ্ট্রমন্ত্রী