অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ দৃঢ়ভাবে বলেছেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দুটি স্বতন্ত্র সত্তা—কর ও শুল্ক বিভাগ হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ক্যাডার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পর পৃথকীকরণ নিয়ে আগের সব বিভ্রান্তির সমাধান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ মে) সচিবালয়ে ক্যাডার সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এ কথা বলেন।
সালেহউদ্দিন বলেন, ‘কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে জাতীয় স্বার্থ, জনস্বার্থ ও ব্যবসায়িক মূল্যায়নের ভিত্তিতে এনবিআর বিভক্ত করার যেমন সিদ্ধান্ত আছে—তেমনই থাকবে।’
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাস্তবায়নের জন্য এখনও বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ বাকি আছে। কতজন কর্মকর্তার দাবি পূরণ করা যেতে পারে—তা সরকার বিবেচনা করবে।
তিনি বলেন, এনবিআরের নবগঠিত দুটি বিভাগের জন্য নীতিমালা প্রণয়নের সময় কর্মকর্তাদের উদ্বেগ বিবেচনায় থাকবে। ‘নতুন নিয়ম তৈরির সময় আমরা তাদের দাবি যতটা সম্ভব অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করব,’ বলেন অর্থ উপদেষ্টা।
আরও পড়ুন: এনবিআরের কলমবিরতি রাজস্ব সংকট গভীর করবে: অর্থনীতিবিদদের অভিমত
তবে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, এই বিষয়ে এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আর কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে না। ‘ইতোমধ্যেই একটি উপদেষ্টা কমিটি রয়েছে। কর্মকর্তারা সেই কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করে অগ্রসর হবেন।’
আজকের বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘হ্যাঁ, বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে।’
এনবিআরের নতুন পৃথক বিভাগগুলো কবে থেকে কার্যক্রম শুরু করবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রথমে একটি গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে। তার আগেও অনেক প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করতে হবে।’
পুর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে কত সময় নেবেন জানতে চাইলে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করছি।’
বাজেটের আগে না পরে এটি বাস্তবায়ন হবে সে বিষয়ে তিনি মন্তব্য করে বলেন, ‘বাজেট ২ জুন উপস্থাপন করা হবে। এর আগে আমরা কীভাবে এটি করতে পারি?’
এনবিআর কর্মকর্তারা আজকের বৈঠকে সন্তুষ্ট কিনা এবং তারা তাদের আন্দোলন শেষ করবে কিনা এমন প্রশ্নে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করতে বলেছি। তারা করবে কিনা তা আমার চিন্তার বিষয় নয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান বলেন, ‘অর্থ উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টারা কর্মকর্তাদের উদ্বেগ শুনেছেন। মন্ত্রণালয় এখন পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।’
বৈঠকে জ্বালানি ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান এবং অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রাজস্ব নীতি এবং রাজস্ব প্রশাসন নামে আনুষ্ঠানিকভাবে এনবিআরকে দুটি বিভাগে ভাগ করে গত ১২ মে একটি সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এনবিআর কর্মকর্তারা এই পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে দাবি করেন যে, নতুন কাঠামোতে কর ও শুল্ক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সরিয়ে রাখা হয়েছে এবং অযাচিত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে।
সরকারের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় সংস্থাটির অনেক কর্মকর্তা সম্প্রতি কলমবিরতিতে যান।
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব সংস্কার উপদেষ্টা কমিটি, বিসিএস (কর) ক্যাডার এবং বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি) ক্যাডারের প্রতিনিধিরা ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব প্রশাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ সম্পর্কে সভায় তাদের মতামত উপস্থাপন করেছেন।
অধ্যাদেশ নিয়ে কর্মকর্তাদের উদ্বেগ, পরামর্শ ও মতামত যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে শোনা হয়েছে।
উপদেষ্টা আশ্বস্ত করেছেন যে, উত্থাপিত বিষয়গুলো যথাযথভাবে বিবেচনা করা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।