আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও উপাসনা বিষয়ক মন্ত্রী সান্তিয়াগো আন্দ্রেস ক্যাফিয়েরো আশা প্রকাশ করেছেন যে ঢাকায় আর্জেন্টিনার দূতাবাস পুনরায় খোলার পর তার দেশ ও বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সহযোগিতা আরও বাড়বে।
মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য লেখক মো. নজরুল ইসলাম।
সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী অল্প সময়ের মধ্যে ঢাকায় পুনরায় মিশনটি চালু করতে পারায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আর্জেন্টিনা ঢাকায় তার দূতাবাস পুনরায় চালু করতে পেরে খুশি।’
‘আমাদের দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে,’ ক্যাফিয়েরোকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে।
দূতাবাস পুনরায় চালু হলে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সহযোগিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বন্ধুত্ব আরও জোরদার হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আর্জেন্টিনা প্রথম ১৯৭৪ সালে ঢাকায় তার দূতাবাস খোলে কিন্তু ১৯৭৮ সালে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির সামরিক জান্তা শাসক এটি বন্ধ করে দেয়। গতকাল ঢাকার বনানীতে আর্জেন্টিনা দূতাবাস আবার খুলে দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ আর্জেন্টিনার সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে খুবই আগ্রহী।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও আর্জেন্টিনার মধ্যে বাণিজ্য ও পর্যটন বাড়ানোর বিশাল সুযোগ রয়েছে।’
তিনি বলেন, আর্জেন্টিনা বাংলাদেশ থেকে পোশাক ও ওষুধ সামগ্রী, পাট ও সংশ্লিষ্ট পণ্য এবং চামড়াজাত পণ্য আমদানি করতে পারে।
বাংলাদেশ প্রধানত ভোজ্যতেল, বিশেষ করে সয়াবিন তেল, প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ চর্বি, বীজ, ফল, শস্য, দুগ্ধজাত দ্রব্য, ডিম এবং প্রাকৃতিক মধু আমদানি করে।
বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়নে আর্জেন্টিনার সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা খেলাধুলা, শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও সহযোগিতা করতে পারি।
শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে সারা বিশ্ব অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সারা বিশ্বে খাদ্যদ্রব্যের দাম এবং মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাওয়ায় শুধু বাংলাদেশ নয়, অনেক উন্নত দেশ প্রভাবিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ঢাকায় ফের আনুষ্ঠানিকভাবে দূতাবাস খুলল আর্জেন্টিনা
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা ও সম্পর্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে জনদুর্ভোগ লাঘব করা যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের ওপর জোর দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ায় একটি বিপণন কেন্দ্র।
সফররত আর্জেন্টিনার মন্ত্রী বলেন, তার দেশের জনগণও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং কোভিড-১৯ মহামারির কারণে উচ্চ মূল্যস্ফীতির ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, প্রভাব মোকাবিলায় গ্লোবাল সাউথ ফোরামের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করা যেতে পারে।
বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আমরা অত্যন্ত মুগ্ধ।
বাংলাদেশে এটাই তার প্রথম সফর উল্লেখ করে আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এত সুন্দর হবে তা তিনি কল্পনাও করেননি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম) শাব্বির আহমদ চৌধুরী এবং বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত হুগো গোবি উপস্থিত ছিলেন।
সোমবার আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাফিয়েরো ঢাকায় তার দেশের নতুন দূতাবাস উদ্বোধন এবং বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গভীর করতে বাংলাদেশে আসেন। কূটনৈতিক ক্রিয়াকলাপ, যেমন ভ্রমণের জন্য ভিসা, এখন পর্যন্ত ভারতে আর্জেন্টিনা দূতাবাস দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছিল।
আরও পড়ুন: দূতাবাস চালু ও সম্পর্ক গভীর করতে আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায়