পাইকারি গ্রাহকদের জন্য বিদ্যুতের নতুন দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি ইউনিট ৭ টাকা ৪ পয়সা করেছে সরকার। এর আগে ইউনিট প্রতি দাম ছিল ৬ টাকা ৭০ পয়সা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিট (প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা) ৩৪ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বিদ্যুতের নতুন দাম কার্যকর করা হয়েছে।
বাল্ক গ্রাহক মূলত বিতরণ সংস্থা ও বৃহৎ শিল্প, যারা সরাসরি ৩৩ কেভি, ১৩২ কেভি ও ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইনের বিদ্যুৎ গ্রহণ করে। এ ছাড়া প্রধান সংস্থা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ নেয় তারা।
বিপিডিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, সরকার খুচরা গ্রাহকদের জন্য নতুন ট্যারিফ ঘোষণা না করা পর্যন্ত খুচরা গ্রাহকদের জন্য প্রযোজ্য বিদ্যুতের দামের উপর এর কোনো প্রভাব পড়বে না।
ছয়টি বিতরণ সংস্থা হলো- বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো), নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি পিএলএস (নেসকো), ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) এবং বিপিডিবি।
২৯ ফেব্রুয়ারির প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বিপিডিবি থেকে ২৩০ কেভির প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ৮ টাকা ৪৪ পয়সা দরে, ১৩২ কেভির বিদ্যুৎ ৮ টাকা ৪৭ পয়সা এবং ৩৩ কেভির বিদ্যুৎ ৭ টাকা ৬২ পয়সা দরে বিদ্যুৎ কিনবে বিতরণ সংস্থাগুলো।
এছাড়া সঞ্চালন চার্জ বাড়ানোর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আলাদা প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ১ মার্চের পরিবর্তে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসের বিল থেকেই নতুন দাম কার্যকর হবে।
তবে দু'দিন আগে তিনি জানিয়েছিলেন, ১ মার্চ থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর হবে।
তিনি বলেন, সব ধরনের গ্রাহকের জন্য প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ০.৩৪ টাকা থেকে ০.৭০ পয়সা পর্যন্ত বাড়ানো হবে এবং শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম প্রতি ইউনিট ০.৭৫ টাকা বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, ১ মার্চ থেকে গ্রাহক পর্যায়ে জ্বালানির নতুন মূল্য চালু করা হবে। এর অধীনেই আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পেট্রোলিয়ামের দাম বাড়ানো বা কমানো হবে।
তিনি বলেন, 'প্রতি মাসে গ্রাহকদের জন্য জ্বালানি তেলের দাম ঘোষণা করা হবে।' প্রতিবেশী ভারত প্রতিদিনই এটি করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ডলারের দর বৃদ্ধির কারণে সরকারের যে ক্ষতি হয়েছে তা কমিয়ে আনতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘এ বছর কম দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করায় সরকারের ৪৩ হাজার কোটি টাকা লোকসান হবে।’
বিদ্যুৎ খাতে এখন যে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে, তা থেকে বেরিয়ে আসার সরকারি পদক্ষেপের অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
বিপিডিবির ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৯৮ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮৭ হাজার ২৪ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে।
এর প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ১১ টাকা ৩৩ পয়সা এবং প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করতে খরচ হয়েছে ৬ টাকা ৭০ পয়সায়। এতে লোকসান হয়েছে প্রায় ৪ টাকা ৬৩ পয়সা।
এই ভারসাম্যহীনতার কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪৭ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, কারণ বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক উৎস থেকে অতি উচ্চ মূল্যে বিদ্যুৎ কিনেছে সরকার।
বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে ৮২ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকার বিদ্যুৎ কিনে ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়েছে সরকার। একই সময় নিজস্ব কেন্দ্র থেকে ১৩ হাজার ৩০৭ কোটি টাকার বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে।
বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিপিডিবির নিজস্ব কেন্দ্রগুলো থেকে গড়ে প্রতি ইউনিট উৎপাদন খরচ ৭ টাকা ৬৩ পয়সা, সেখানে স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী বা আইপিপির (বেসরকারি খাত) বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ পড়েছে ১৪ টাকা ৬২ পয়সা। এ ছাড়া রেন্টাল প্ল্যান্টে প্রতি ইউনিটে খরচ হয়েছে ১২ টাকা ৫৩ পয়সা, পাবলিক প্লান্টে ৬ টাকা ৮৫ পয়সা এবং ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের খরচ ৮ টাকা ৭৭ পয়সা।
সরকার বেসরকারি খাত ও ভারত থেকে ডলারে বিদ্যুৎ কেনে।