প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আঞ্চলিক ও দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার সকল সম্ভাব্য ক্ষেত্র পুনরুজ্জীবিত করার গুরুত্ব তুলে ধরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের অগ্রগতি ও জনগণ সঙ্গে জনগণের, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে সংযোগের ভূমিকার উপর জোর দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি সার্ককে উৎসাহিত করি এবং আমি পাকিস্তান ও অন্যান্য সার্কের সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসাবে দেখি।’
রবিবার (২৪ আগস্ট) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনেটর মোহাম্মদ ইসহাক দারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।
দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার, বাণিজ্য বৃদ্ধি, তরুণ ও তরুণদের মধ্যে বিনিময়, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধি এবং সার্কের মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতা পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
উপপ্রধানমন্ত্রী দার প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ শাহবাজ শরীফের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী আপনাকে তার শুভেচ্ছা পাঠাচ্ছেন,’ বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, অধ্যাপক ইউনূস প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সঙ্গে অতীতের মতবিনিময়ের কথা স্মরণ করে উষ্ণ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
‘প্রধানমন্ত্রী শরীফ ও আমি যখনই দেখা করেছি, আমরা সার্ক সম্পর্কে কথা বলেছি। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি অভিন্ন এবং সার্ক আমাদের উভয়ের জন্যই শীর্ষ অগ্রাধিকার হিসেবে রয়ে গেছে,’ উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এবং পাকিস্তানের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
সহযোগিতার সুযোগ ও বাণিজ্য সম্পর্ক সম্প্রসারণের উপর জোর দিয়ে উপপ্রধানমন্ত্রী দার বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের দুটি অর্থনীতিই পরিপূরক। এমন অনেক ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি।’
তিনি দারিদ্র্য বিমোচন ও সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়নে অধ্যাপক ইউনূসের অবদানের প্রশংসা করে বলেন, ‘বাংলাদেশ ভাগ্যবান যে, আপনার মতো একজন সরকারপ্রধান পেয়েছে। এমন একজন নেতা যিনি বিশ্বকে অনুপ্রাণিত করেন।’
উপপ্রধানমন্ত্রী জ্বালানি ও বাণিজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাসহ বেশ কয়েকজন উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আলোচনায় দুই দেশের মধ্যে পুরোনো সংযোগ পুনরুজ্জীবিত করা, তরুণদের শিক্ষা বিনিময় জোরদার, যোগাযোগ উন্নত করা এবং বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি স্থান পেয়েছে।
বৈঠকের আলোচনায় এই অঞ্চলের সাম্প্রতিক উন্নয়ন এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা করা হয়।
পড়ুন: জামায়াত আমিরের সঙ্গে দেখা করলেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার
উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার প্রধান উপদেষ্টাকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা জানান।
তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে ঢাকায় তার ব্যস্ততা এবং তার সফরের প্রধান ফলাফলগুলো সম্পর্কে অবহিত করেন।
সফরকালে তার এবং তার প্রতিনিধিদলের জন্য চমৎকার ব্যবস্থা এবং উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ইসহাক দার।
কিছু সংবেদনশীল বিষয় রয়েছে স্বীকার করে অধ্যাপক ইউনূস ঘন ঘন সাংস্কৃতিক বিনিময়সহ সহযোগিতার বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রের উপর জোর দেন।
তিনি বলেন, ‘যখন পাকিস্তানি গায়করা বাংলাদেশে পরিবেশনা করেন, তখন সবাই তাদের প্রতিভার প্রশংসা করে। এই মনোভাব আমাদের গড়ে তুলতে হবে।’
১৩ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ সফরকারী প্রথম পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রী দার জানান, জাহাজ চলাচল ও বিমান চলাচল শুরু করাসহ যোগাযোগ উন্নত করার প্রচেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি আগামী অক্টোবরের মধ্যে ফ্লাই জিন্নাহ আমাদের দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু করবে। বিমান সংস্থাটি বেসরকারিকরণের পর পিআইএ ঢাকায় সরাসরি ফ্লাইট চালু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
বাণিজ্য বৃদ্ধি, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা আরও স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়ায় অবদান রাখবে বলেও উভয় নেতা আশা প্রকাশ করেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীও উপস্থিত ছিলেন।