ক্রেতাদের চাহিদা টেকসই পণ্যের দিকে ঝুঁকে পড়েছে এবং অনেক প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে সুইডেনের বড় বড় ব্র্যান্ড, জলবায়ু ইস্যুতে উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডিশ রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস।
তিনি বলেন, ‘প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পণ্য সরবরাহকারীদের পরিবেশবান্ধব ব্যবসা মডেল গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক।’
সোমবার (১২ মে) অনুষ্ঠিত ‘সাসটেইনেবল ফ্যাশন প্ল্যাটফর্মের চতুর্থ উচ্চপর্যায়ের নীতিগত সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। সুইডেন ও বাংলাদেশের মধ্যে পোশাক খাতে টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে সহযোগিতা জোরদার করাই ছিল সংলাপের মূল লক্ষ্য।
রাষ্ট্রদূত উইকস নিজেই এ সংলাপের আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সুইডেনের বৈশ্বিক উন্নয়ন সহযোগিতা এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কের মূল ভিত্তি হলো টেকসই ব্যবসায়িক মডেল। বাংলাদেশে এই দৃষ্টিভঙ্গি সবচেয়ে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতে, যেখানে এইচঅ্যান্ডএম গ্রুপ, আইকেয়া ও লিন্ডেক্স-এর মতো সুইডিশ ব্র্যান্ডগুলো পরিবেশগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে কাজ করছে।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ রূপান্তরের ‘গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে’: রাষ্ট্রদূত ইয়াও
তিনি বলেন, টেকসই পানি ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগ বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে শক্তিশালী করবে, যা সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকার জন্য একটি শক্তিশালী ব্যবসায়িক ক্ষেত্র তৈরি করে।
এই পদ্ধতি শুধু অপারেশনাল ঝুঁকি কমাবে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করবে, জলবায়ু লক্ষ্যে অবদান রাখবে এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রাধিকার ও বৈশ্বিক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি-৬) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদীয়মান দায়িত্বশীল ব্যবসা নির্দেশিকার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখবে।
প্রযুক্তি স্থানান্তর, নীতিনির্ধারণী সংলাপ এবং যৌথ পদক্ষেপের মাধ্যমে এই রূপান্তরকে সহায়তা করতে সুইডেন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও জানান তিনি। রাষ্ট্রদূত বলেন, এই সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে প্রতিযোগিতা টিকিয়ে রাখা ও শক্তিশালী করা সম্ভব।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার নিয়ে প্রতিযোগী বিভিন্ন খাতের মধ্যে টেকসইভাবে পানি বণ্টনের জন্য নীতিমালার প্রয়োজন রয়েছে। আরএমজি শিল্পকে স্পষ্ট করতে হবে তারা কোন কোন মন্ত্রণালয় থেকে কী ধরনের নীতিগত সহায়তা চায় এবং দ্রুততম সময়ে ভূগর্ভস্থ ও ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানির ব্যবহারের ওপর একটি কার্যকর ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন জরুরি।
ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, ‘পানি ব্যবস্থাপনায় কার্যকর দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে হবে যাতে শিল্প, কৃষি এবং সাধারণ জনগণের পানির প্রয়োজন পূরণ হয়—এবং এই ভারসাম্য বজায় রেখে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পরিষ্কার পানি নিশ্চিত করা যায়।’
এই উচ্চপর্যায়ের সংলাপের উদ্দেশ্য ছিল শিল্প খাতে, সরকারি নীতিতে এবং সরবরাহ চেইনে টেকসই পানি ব্যবহারের চর্চা উন্নয়নের জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীজনদের একত্র করা।
এটি ব্যবসায়িক স্বার্থ, নীতিগত সমাধান এবং বিস্তৃত উন্নয়ন লক্ষ্যের মধ্যে সমন্বয় তৈরির মাধ্যমে প্রতিযোগিতা, সঙ্গতি ও পরিবেশগত সততা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাভিদ শফিউল্লাহ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. লুৎফর রহমান, স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পানি সরবরাহ উইং) মো. ফজলুর রহমান, পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ লুৎফর রহমান এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ডিপিএইচই) প্রধান প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার তুষার মোহন সাধু খান।
আরও পড়ুন: ঢাকা-বেইজিংয়ের বাণিজ্য সম্পর্ক নতুন স্তরে উন্নীত হবে: রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন
সাসটেইনেবল ফ্যাশন প্ল্যাটফর্মটি বাংলাদেশে সুইডিশ দূতাবাস, বিজনেস সুইডেন, এইচঅ্যান্ডএম গ্রুপ, আইকেয়া, লিন্ডেক্স, নর্ডিক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এনসিসিআই), সুইডেন-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল (এসবিবিসি) এবং সুইডিশ এনার্জি এজেন্সির (এসইএ) একটি যৌথ উদ্যোগ।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে সুইডিশ পক্ষগুলোর টেকসই কার্যক্রমকে একটি প্ল্যাটফর্মের অধীনে আনা এবং বাংলাদেশ-সুইডেন অংশীদারত্বকে আরও শক্তিশালী করাই এই নীতিনির্ধারণী সংলাপের লক্ষ্য। এটি ইউনিসেফের সহায়তায় আয়োজন করা হয়।