অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বাস্থ্যসেবার উপর জোর দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ যাতে অনলাইনে চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন—সেজন্য সরকার ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় স্পেসএক্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ার তার সঙ্গে দেখা করার সময় প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, তাদের চিকিৎসার ইতিহাস ডিজিটালভাবে সংরক্ষণ করা হবে, যা ভবিষ্যতে পরামর্শ দেওয়াকে সহজ করে তুলবে।
তিনি বলেন, ‘গর্ভাবস্থায় এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের প্রায়শই চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার জন্য পুরুষদের সহায়তার প্রয়োজন হয়। ডিজিটাল পরিষেবার মাধ্যমে তারা বাড়ি থেকে চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, স্পেসএক্সের গ্লোবাল এনগেজমেন্ট কনসালট্যান্ট রিচার্ড গ্রিফিথস, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে স্টারলিংক কার্যকরভাবে চালু করার জন্য বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বের ১৫০টি দেশ এবং অঞ্চলে কাজ করি। আমরা কখনও এত দক্ষতা এবং সিদ্ধান্তমূলক মনোভাব দেখিনি। স্পেসএক্সে আমার সকল সহকর্মীর পক্ষ থেকে আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমরা আপনার দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার জন্য আগ্রহী।’
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ সফরের জন্য স্পেসএক্সের ভাইস প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান। ‘এটি চলতি বছরের একটি সুন্দর সময়, বর্ষাকাল। সর্বত্র সবুজ ও জলরাশি।’
পড়ুন: স্পেসএক্সের প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসছে শুক্রবার
একই সঙ্গে আমরা বন্যা এবং জলাবদ্ধতার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হই, যা সংযোগ বজায় রাখার জন্য নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের পার্বত্য অঞ্চলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে উন্নত সংযোগ জরুরি প্রয়োজন। এই অঞ্চলগুলোতে উপযুক্ত স্কুল, শিক্ষক এবং চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। আমরা ১০০টি স্কুলে অনলাইন শিক্ষা চালু করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি, যা দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীদের উপকার করবে।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশীরাও ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা থেকে উপকৃত হবেন।
তিনি বলেন, ‘ভাষাগত প্রতিবন্ধকতার কারণে অনেকেই বিদেশে চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করতে দ্বিধা করেন। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে তারা বিদেশ থেকে বাংলাদেশি চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারবেন। আমরা এখানে ছোট ছোট উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছি— তবে আপনি এই প্রকল্পগুলোকে সারা বিশ্বে নিয়ে যেতে পারেন।’
লরেন ড্রেয়ার অধ্যাপক ইউনূসের দূরদৃষ্টির প্রশংসা প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনি এখানে যে উদাহরণ স্থাপন করছেন— তা অন্যান্য নেতাদের কাছে তুলে ধরা যেতে পারে। যদি অধ্যাপক ইউনূস তার দেশে এটি করতে পারেন—তাহলে অন্যরাও করতে পারেন।’
তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অধ্যাপক ইউনূসের প্রচেষ্টারও প্রশংসা করেন।
স্পেসেএক্সের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘জনগণের কাছে জনসেবা পৌঁছানোর আপনার উদ্যোগগুলো অত্যন্ত প্রশংসনীয়। বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ করা আমার কাজের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ।’
ড্রেয়ার আরও বলেন, আমি বুঝতে পারি দুর্নীতি কতটা গুরুতর সমস্যা হতে পারে। পরিষেবা বিকেন্দ্রীকরণ এবং শাসনব্যবস্থা উন্নত করার জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করা একটি অর্থপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি।