ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৫ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। ত্রাণের টিন আনতে সপরিবারে ফরিদপুর যাচ্ছিলেন তারা।
মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে ফরিদপুর সদরের উপজেলার কানাইপুরের তেঁতুলতলা এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে তাদের মৃত্যু হয়। এই সড়ক দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ জনে।
হতাহতদের সবাই জেলার বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
একই পরিবারের নিহত পাঁচজন হলেন- ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ছত্রকান্দা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা তারা মিয়ার ছেলে রফিকুল ইসলাম মিলন মোল্যা, তার স্ত্রী সুমি বেগম, বড় ছেলে রুহান (৯), ছোট ছেলে হাবিব ছিনান (৬) এবং মিলনের নানি শাশুড়ি মর্জিনা বেগম। মিলন মোল্যা ঢাকা সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে লিফট অপারেটর পদে কর্মরত ছিলেন।
নিহত মিলন মোল্যার চাচাতো ভাই রুহুল আমীন বলেন, ফরিদপুর ডিসি অফিসের ত্রাণ শাখা থেকে ত্রাণের টিন আনার জন্য মঙ্গলবার সকালে পিকআপে করে সপরিবারে মিলন মোল্যা ফরিদপুর যাচ্ছিলেন। পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
বোয়ালমারী শেখর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, এর আগে কোনো দুর্ঘটনায় আমাদের এই ইউনিয়নের একই পরিবারের এতগুলো মানুষের প্রাণহানি হয়নি। নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের লাশ ঘরে নেওয়া হয়েছে।
রাকিবুল ইসলাম মিলনের মামাতো ভাই নুরুজ্জামান খসরু বলেন, ঢাকা থেকে কয়েকটি দরিদ্র পরিবারের জন্য ত্রাণের টিনের ব্যবস্থা করে সোমবার বিকালে বাড়িতে আসে মিলন। সকালে ফরিদপুর রওনা হয়। তার আগে গতরাতে সর্বশেষ কথা হয়েছিল তার সঙ্গে। তখন বলেছিল, ত্রাণের টিনগুলো বুঝিয়ে দিয়ে ওই পথেই চলে যাবে ঢাকা। কিন্তু এটিই যে তার শেষ যাওয়া সেটি কি কেউ জানত।
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা তারা মিয়ার ৩ ছেলের মধ্যে রাকিবুল ইসলাম মিলন মেঝো ছিলেন। তার বড় ভাই ফরিদুল ইসলাম একজন স্কুল শিক্ষক। আর ছোট ভাই হাবিবুর রহমান মাস্টার্স পাস করে আলফাডাঙ্গা সদরে ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করেন।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরের সড়ক দুর্ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে মাগুরাগামী ইউনিক পরিবহনের সঙ্গে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থেকে আসা একটি পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে ১১ জন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুজন মারা যান।
এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে কানাইপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বেলায়েত ফকির জানান, যাত্রীবাহী বাস ও পিকআপ অতিরিক্ত গতিতে ছিল। পরস্পর বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ি দুটি নিজেদের লেন থেকে বাইরে যাওয়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। তবে এমন অপমৃত্যু অপ্রত্যাশিত।
ফরিদপুর জেলার ত্রাণ কর্মকর্তা আবু নাসের বাবুর সঙ্গে মোবাইলে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে তার অফিস সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে সরকারি এাণের টিন দেওয়ার কথা ছিল আজ। এজন্য আলফাডাঙ্গা ও বোয়ালমারী থেকে তালিকাভুক্ত ক্ষতিগ্রস্ত ওই পরিবারের সদস্যরা পিকআপে করে ফরিদপুর আসছিল।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার জানান, খবর পেয়েই আমরা ছুটে এসেছি। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া নিহতদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ৫ লাখ এবং আহতদের পরিবারের জন্য ৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ও সহায়তা হিসেবে দেওয়া হবে।
জেলা পুলিশ সুপার মোরশেদ আলম বলেন, সড়কে আমাদের চলাচলে আরও সচেতন হতে হবে, তা না হলে থামবে না মৃত্যুর মিছিল। শুধু যাত্রীদেরই নয়, মালিক ও শ্রমিকদের বড় ভূমিকা পালন করতে হবে।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে বাস ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের ৫ জনসহ নিহত ১৩