তিনি বলেন, ‘কার নির্দেশে এ ঘটনাগুলো ঘটছে। আমরা অনুসন্ধানের পর তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানাব। এখন পর্যন্ত তদন্ত চলছে, তাই আমি তার নামটি বলছি না।’
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে আঘাতকারীদের শাস্তি পেতেই হবে: তথ্যমন্ত্রী
রবিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কুষ্টিয়ায় পৌরসভা চত্বরে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করেছিল। এটা পৌরসভা কর্তৃপক্ষই করেছিল। হঠাৎ করে দেখা গেল গভীর রাতে এসে ভেঙেছে। দু’জনের ভিডিও ফুটেজ দেখা গেছে। তারা দু’জন হাতুরি দিয়ে ভেঙেছে।
তিনি বলেন, ভাস্কর্য ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইতোমধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা ইবনে মাসউদ মাদরাসা থেকে বেরিয়ে এসে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। একজনের নাম আবু বক্কর, আরেকজনের নাম নাহিদ। বয়স এদের বেশি না। তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের নাম আল আমিন ও ইউসুফ।
‘এই যে উসকানি দিচ্ছে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে বের করে নিয়ে আসছে। এটা নিশ্চয়ই কারো কাম্য নয়। আমরা অবশ্যই এটা দেখব।’
এদিকে, বিকালে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে এক সংবাদ সম্মেলনে খুলনা রেঞ্জের উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) খন্দকার মহিউদ্দিন বলেন, স্পর্শকাতর এই ঘটনা ঘটার পর সিসিটিভি ফুটেজ এবং প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে পুলিশের সব ইউনিটকে কাজে লাগিয়ে ২৩ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ হামলায় অংশ নেয়া দুজন এবং তাদের মদদ দেয়া দুই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে।
ডিআইজি বলেন, ‘দেশের বিরুদ্ধে এবং দেশের রাষ্ট্রীয় সম্পদের উপর যে বা যারা আঘাত হানবে তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এ ঘটনার পেছনে কারা আছে, কারা ইন্ধন দিয়েছে, নেপথ্যে কেউ জড়িত রয়েছে কিনা পুলিশ সে সব বিষয়ও খতিয়ে দেখছে।’
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনায় করে চালানো সম্মিলিত অভিযানে কুষ্টিয়া মডেল থানার জুগিয়া পশ্চিমপাড়া মাদরাসা ইবনে মাসউদ (রা.) এর জামাত বিভাগের ছাত্র ও কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার মশানের (বাজারের পার্শ্বে) মোস্তফা কামাল ছেলে মো. আব্দুল্লাহ (১৫) এবং মো. আব্দুর রহমানকে (১৭) আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ ও ভিডিও ফুটেজ দেখালে তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর কারীদ্বয়কে চিনেন বলে জানান। তারা একই মাদরাসার হেফজ বিভাগে পড়াশোনা করে।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর: কুষ্টিয়ায় মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ গ্রেপ্তার ৪
তাদের দেয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে জেলা গোয়েন্দা শাখার একটি দল অভিযান পরিচালনা করে আবু বক্কর ওরফে মিঠুন এবং একই মাদরাসার শিক্ষার্থী দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গোলাবাড়ীয়া এলাকার সামছুল আলমের ছেলে সবুজ ইসলাম ওরফে নাহিদকে তাদের নিজ নিজ গ্রাম থেকে রবিবার গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জানায় মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক ও ফয়জুল করিমের বয়ানে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
এই ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার দিবাগত রাতে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে পৌরসভার উদ্যোগে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের মুখ ও হাতের অংশে ভাঙচুর করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে দেশব্যাপী ইসলামপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদের মধ্যেই কুষ্টিয়ায় এ ঘটনা ঘটে। পরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলার ঘটনায় কুষ্টিয়াসহ দেশব্যাপী তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে।