বন্যা পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংস্কারসহ এই খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিশিষ্টজনরা।
তারা বলেছেন, বন্যার সময়ে এবং পরবর্তী সময়ে খাদ্য, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে যেভাবে আলোচনা বা উদ্যোগ নেয়া হয় দুঃখজনক হলেও সত্য শিক্ষা খাতের ক্ষতি বা বন্যা পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সেভাবে কোনো আলোচনা বা উদ্যোগ চোখে পড়ে না। অথচ বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থী এবং পুরো শিক্ষা সেক্টর। তাই বন্যা পরবর্তী সময়ে শিক্ষা খাতের সংকট কাটিয়ে উঠতে সরকারকে এখনি কার্যকর উদ্যোগ এবং সেই লক্ষ্যে শিক্ষা বাজেটে অতিরিক্ত বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বন্যা পরবর্তী শিক্ষাখাতের দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে করনীয় ও বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়ে এসব সুপারিশ উঠে আসে।
‘আমাদের শিক্ষা বাজেটের গতি প্রকৃতি ও আগামীর প্রত্যাশা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গণসাক্ষরতা অভিযান।
আরও পড়ুন: বিয়ানীবাজারে ১২৯ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি, খোলা হয়েছে ২৮ আশ্রয়কেন্দ্র
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া দরকার শিক্ষা সেক্টরের কাঠামোগত পরিবর্তনে। বর্তমান সরকার সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে। আমরাও চাই শিক্ষা খাতে নতুন কিছু উপহার দিতে।
তিনি বলেন, একটি সময় ছিল যখন শুধু শিক্ষার্থীদের মোমেরি বা মুখস্থ বিদ্যা বাড়ানোর ওপরেই জোর দেয়া হতো। আমরা এর পরিবর্তন করে নতুন শিক্ষা নীতিতে পঠন ও শিখনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে দক্ষ ও মেধাবী হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর যে কথা বলা হচ্ছে এটা মূলত কোনো ব্যয় নয় বরং এটাই হচ্ছে বড় একটি বিনিয়োগ। এই বিনিয়োগ বাড়ানো সম্ভব হলেই শিক্ষা সেক্টরে বড় একটি পরিবর্তন আসবে।
তিনি বলেন, শিক্ষা খাতের বাজেটে কিংবা সরকারের ব্যয় না বাড়ানো হলেও অভিভাবক বা পরিবারের পক্ষ থেকে কিন্তু শিক্ষাখাতে ব্যয় ঠিকই বাড়ছে। অনেক পরিবার আছে যারা সন্তানের ব্যয় মেটাতে না পারার কারণেই পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কোচিং নির্ভরতা কমিয়ে ক্লাসরুমে ঠিকমতো যত্ন নিয়ে পড়ানো হলে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক অতিরিক্ত কিংবা ফরমায়েশি কিছু বইয়ের বোঝা বাড়িয়েও শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারকে অতিরিক্ত খরচের চাপে ফেলে দেয়া হচ্ছে।
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, করোনার ধকল কাটতে না কাটতেই এখন আবার বন্যার কবলে পড়ে অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনই বিগ্নিত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তিনি করোনরা দুই বছরকে শর্ত হিসেবে নিয়ে এই দুই বছরে যেসব মেয়ে শিক্ষার্থীদের বিয়ে হয়েছে তাদেরকে পুনরায় শিক্ষা উপবৃত্তির আওতায় আনারও সুপারিশ করেন। একই সঙ্গে বন্যা পরবর্তী সময়ে দ্রুততার সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডাটা সংগ্রহ করে সরকারিভাবেই সমস্যা সমাধান বা সংস্কার করতে উদ্যোগ নিতে হবে। যেসব শিক্ষার্থীর পাঠ্যবই পানিতে নষ্ট হয়েছে তাদেরকে পুনরায় বই সরবরাহ করতে হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম বলেন, শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়লেই শুধু মানের উন্নয়ন হবে বিষয়ই এমন নয়। তবে শিক্ষার গুনগত মান রক্ষায় কম বরাদ্দ নিয়েও আবার কাজ করা যায় না। শিক্ষা খাতে যেসব প্রকল্পগুলো চালু ছিল সেগুলো পুনরায় চালু করতে বা রাখতেও সরকার বদ্ধপরিকর। তিনি প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্যে মিড ডে মিল প্রকল্পটি চালু রাখার বিষয়ে দাতা সংস্থার সঙ্গে সরকারও কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন: চবিতে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার দাবিতে শিক্ষার্থীদের রেল অবরোধ
ইউনিসেফ বাংলাদেশের শিক্ষা বিভাগের প্রধান দীপা সরকার বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষাখাতের বিভিন্ন প্রকল্প সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তিনি শিক্ষার উন্নয়নে কোয়ালিটি শিক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়েও সরকারের অংশীজনদের সমন্বয়ে কাজ করার সুপারিশ করেন।
অনুষ্ঠানে গণসাক্ষরতা অভিযানের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড.মোস্তাফিজুর রহমান প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে শিক্ষক প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষা সেক্টরের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।