বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচারবিষয়ক উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেছেন, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে ‘অসহযোগিতা’ করছে।
তিনি প্রতিবেশী দেশকে উভয় দেশের জনগণকে রক্ষায় 'জনবিরোধী নীতি' থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘কোনো ধরনের পূর্ব সতর্কবার্তা ছাড়াই এবং আমাদের প্রস্তুতির কোনো সুযোগ না দিয়েই বাঁধটি খুলে দেওয়া হয়েছে।’
বৃহস্পতিবার(২২ আগস্ট) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন নাহিদ।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করছেন, সেখানে বাংলাদেশ বন্যার কারণ জানতে চাইবে।
রিজওয়ানা বলেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের বন্যা এড়ানোর উপায় খুঁজতে অফিসিয়াল চ্যানেলে আলোচনা চলছে।
নাহিদ বলেন, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে 'অমানবিক আচরণ' করছে এবং অসহযোগিতার পরিচয় দিয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। বন্যার কারণ ব্যাখ্যা করে দাবি করেছে, বাংলাদেশে যা বলা হচ্ছে তা তথ্যগতভাবে সঠিক নয়।
বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ত্রিপুরার গোমতী নদীর উজানে ডুম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তের জেলাগুলোতে বর্তমান বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে আমরা বাংলাদেশের উদ্বেগ প্রকাশের খবর পেয়েছি। এটি তথ্যগতভাবে সঠিক নয়।’
ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যবর্তী নদ-নদীতে বন্যা একটি অভিন্ন সমস্যা, যা উভয় পক্ষের জনগণের জন্য দুর্ভোগ সৃষ্টি করে এবং এর সমাধানে ঘনিষ্ঠ পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বিকাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ৮ জেলায় বন্যায় ২৯ লাখ ৪ হাজার ৯৬৪ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ফেনী ও কুমিল্লায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।
নাহিদ বলেন, ভারতের নীতির কারণে বাংলাদেশের মানুষ ক্ষুব্ধ এবং পানির ন্যায্য হিস্যা দাবি করছে।
নাহিদ বলেন, বন্যা পরিস্থিতি কার্যকরভাবে মোকাবিলার জন্য সরকার তিন বাহিনীর প্রধান- সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধানদের সঙ্গেও আলোচনা করছে।
তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। বলেন, 'আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।'
এদিকে ভারত উল্লেখ করেছে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গোমতী নদীর অববাহিকা এলাকায় গত কয়েকদিনে সবচেয়ে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এই পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, 'বাংলাদেশে এই বন্যা মূলত বাঁধের ভাটির দিকের এই বৃহৎ ক্যাচমেন্টের পানির কারণে ঘটেছে।’
ভারত জানায়, যেহেতু দুটি দেশের ৫৪টি অভিন্ন আন্তঃসীমান্ত নদী রয়েছে, তাই নদীর পানি-বিষয়ক সহযোগিতা আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পৃক্ততার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলে, 'আমরা দ্বিপাক্ষিক পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত আলোচনার মাধ্যমে পানি সম্পদ ও নদীর পানি ব্যবস্থাপনার সমস্যা ও পারস্পরিক উদ্বেগসমূহের সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
ডুম্বুর বাঁধ সীমান্ত থেকে বেশ দূরে। বাংলাদেশ থেকে ১২০ কিলোমিটার উজানে অবস্থিত। এটি কম উচ্চতার (প্রায় ৩০ মিটার) বাঁধ যা বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। ত্রিপুরার এই গ্রিড থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন: মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কোনো স্থান হবে না: নাহিদ ইসলাম
প্রায় ১২০ কিলোমিটার নদীপ্রবাহ বরাবর অমরপুর, সোনামুড়া ও সোনামুড়া-২ এ তিনটি পানির স্তর পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে।
গত ২১ আগস্ট থেকে ভারতের ত্রিপুরা ও পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশের জেলাগুলোতে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘ভারী প্রবাহের কারণে স্বয়ংক্রিয় প্রবাহ লক্ষ্য করা গিয়েছে।’
এতে বলা হয়, ‘অমরপুর স্টেশন একটি দ্বিপক্ষীয় প্রোটোকলের অংশ, যার অধীনে আমরা বাংলাদেশে তাৎক্ষণিক বন্যার তথ্য পাঠাচ্ছি।’
২০২৪ সালের ২১ আগস্ট বিকাল ১টা পর্যন্ত বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান প্রবণতার তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। ৬টার দিকে বন্যার কারণে, বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছিল যার ফলে যোগাযোগের সমস্যা দেখা দেয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ‘তবুও আমরা জরুরি ভিত্তিতে তথ্য সরবরাহের জন্য অন্যান্য উপায়ে যোগাযোগ বজায় রাখার চেষ্টা করেছি।’
উপদেষ্টা নাহিদ ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় মানবিক কারণে ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ‘পর্যাপ্ত প্রস্তুতি’ নিয়েছে। কারণ বেশ কয়েকটি জেলা এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, 'আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে।’
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও ফেনী খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এরই মধ্যে কিছু সংখ্যক মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে।
প্রেস সচিব বলেন, পর্যাপ্ত ওষুধ ও শুকনো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।
আবহাওয়া কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে আলম বলেন, ২৬ আগস্ট পর্যন্তভারী বৃষ্টিপাতসহ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। বৃষ্টির কারণে বন্যার দ্রুত উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই।
ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের আট জেলা প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
জেলাগুলো হলো- সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও খাগড়াছড়ি।
আরও পড়ুন: আন্দোলনের সময় যারা ছাত্র-মানুষ হত্যা করেছে তাদের শাস্তি হবে: উপদেষ্টা নাহিদ