ভারত মহাসাগর অঞ্চলে ‘স্থিতিশীল, নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ’ পরিবেশ নিশ্চিত করতে এবং অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে প্রস্তুত বাংলাদেশ। পাশাপাশি কোনো অবস্থাতেই কোনো বহিরাগত বা অভ্যন্তরীণ শক্তিকে সুযোগ দেওয়ার সামর্থ্য বাংলাদেশের নেই বলে জানিয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) দিল্লিতে কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভের (সিএসসি) জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সপ্তম সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তৃতার সময় এ কথা বলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা।
ড. খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষ কিংবা সমাজের কোনো অংশের নিরাপত্তা ও কল্যাণকে চ্যালেঞ্জ জানায়—এমন কোনো বহিরাগত বা অভ্যন্তরীণ শক্তিকে সুযোগ দেওয়ার সামর্থ্য আমরা রাখি না।
‘আঞ্চলিক নিরাপত্তার জটিলতা মোকাবিলায় আমরা পারস্পরিক বিশ্বাস ও সম্মান, অভিন্ন স্বার্থ এবং সুবিধা ভাগাভাগির নীতিতে আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করি। একটি স্থিতিশীল, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ অঞ্চল নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ হাতে হাত মিলিয়ে একসঙ্গে পথ চলতে ও কাজ করতে প্রস্তুত।’
ভারত মহাসাগর অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার এবং গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা বিষয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ, ভারত ও অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে নয়াদিল্লিতে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।
স্বাগতিক দেশ ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল মালদ্বীপ, মরিশাস, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের স্বাগত জানান। এ ছাড়া পর্যবেক্ষক দেশ হিসেবে সম্মেলনে অংশ নেয় সেশেলস এবং আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিল মালয়েশিয়া।
সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়া ড. খলিলুর রহমান বলেন, কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভকে ‘উন্মুক্ত আঞ্চলিকতাবাদের’ ভিত্তিতে একটি উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আঞ্চলিক বহুপক্ষীয় সংস্থা হিসেবে বিকশিত দেখতে চায় বাংলাদেশ।
কনক্লেভের পাঁচটি চিহ্নিত কর্মস্তম্ভকে বাংলাদেশ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে এবং সেগুলোর মাধ্যমে সমষ্টিগত নিরাপত্তা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং সদস্য দেশগুলোর পারস্পরিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধিতে সিএসসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে এমন মূল্যবোধ ও নীতিমালা অনুসরণ করে, যা সবার যৌথ সমৃদ্ধির জন্য একটি স্বাধীন, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভারত মহাসাগর নিশ্চিত করার দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করে। যেখানে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সমতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি, আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ সনদের নীতিমালা—এসবকে অবশ্যই প্রধান ভিত্তি হিসেবে থাকতে হবে। টেকসই উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, মানবিক সহায়তা এবং মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষায় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।
খলিলুর রহমান আরও বলেন, ‘আমাদের অঞ্চলের সামুদ্রিক ক্ষেত্র আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ তার দায়িত্ব পালনে অটল। জলদস্যুতা, অবৈধ মাছ ধরা, সামুদ্রিক সন্ত্রাসবাদ ও অপরাধ মোকাবিলায় আমরা মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। অতীতে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদের কিছু চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশও মোকাবিলা করেছে। আমরা যেকোনো পরিস্থিতিতে সব প্রকার সন্ত্রাসবাদের প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করি।’
সম্প্রতি বাংলাদেশ ভুয়া তথ্য ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের (মিসইনফরমেশন ও ডিসইনফরমেশন) হুমকির মুখোমুখি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। বাংলাদেশের অঙ্গীকার হলো নিজস্ব সাইবার স্পেস, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও প্রযুক্তিকে সুরক্ষিত রাখা; শুধু নাগরিকদের নিরাপত্তা, গোপনীয়তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্যই নয়, বরং নিশ্চিত করার জন্য যে বাংলাদেশ থেকে কোনো কর্মকাণ্ড যেন আঞ্চলিক বা বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের জন্য হুমকিস্বরূপ না হয়।
আঞ্চলিক নিরাপত্তার জটিলতা মোকাবিলায় পারস্পরিক বিশ্বাস ও সম্মান, অভিন্ন স্বার্থ এবং সুবিধা ভাগাভাগির নীতিতে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘একটি স্থিতিশীল, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ অঞ্চল নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ হাতে হাত মিলিয়ে একসঙ্গে পথ চলতে ও কাজ করতে প্রস্তুত।’
তিনি আরও বলেন, ‘পারস্পরিক বিশ্বাস ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে যেকোনো বিষয়ে অভিন্ন সমাধান খুঁজে পেতে আমরা প্রস্তুত। বাংলাদেশ এই কনক্লেভকে একটি উন্মুক্ত আঞ্চলিকতাবাদচালিত, উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আঞ্চলিক বহুপক্ষীয় সংস্থা হিসেবে গড়ে ওঠার প্রত্যাশা করে।’
এর আগে, বুধবার নয়াদিল্লিতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠক করেন ড. খলিলুর রহমান। বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, তারা সিএসসি-এর কাজ এবং গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন।