ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেছেন, সড়ক, রেল, অভ্যন্তরীণ নৌপথ এবং উপকূলীয় জাহাজ চলাচলকে কার্যকর বহুমুখী যোগাযোগে রূপান্তরের মধ্যেই বাংলাদেশ ও ভারতের অংশীদারিত্বের ভবিষ্যৎ নিহিত রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সংযোগের দর্শনটি সহজ। আমাদের ভৌগলিক নৈকট্য আমাদের দেশ এবং সমগ্র অঞ্চলের জন্য নতুন অর্থনৈতিক সুযোগে রূপান্তরিত করার বিষয়।’
হাইকমিশনার বলেন, তাদের সংযোগ এজেন্ডাটি কেবল স্থল সংযোগের বাইরেও রয়েছে। ‘এর মধ্যে জ্বালানি সংযোগ এবং ডিজিটাল সংযোগও রয়েছে।’
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সুলতানগঞ্জ, গোদাগাড়ী বন্দর উদ্বোধন এবং সুলতানগঞ্জ থেকে মাইয়া পর্যন্ত একটি পণ্যবাহী জাহাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাইকমিশনার এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, টানা দুই বছর এশিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানির বৃহত্তম গন্তব্য হিসেবে ভারত আবির্ভূত হয়েছে।
ভারতের দিক থেকে মাইয়া থেকে সুলতানগঞ্জ পর্যন্ত একই ধরনের একটি জাহাজের যাত্রার উদ্বোধন করা হয়।
তিনি বলেন, 'যোগাযোগ বৃদ্ধির একই সময়ে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের অর্থনীতি উচ্চ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অভিজ্ঞতালব্ধভাবে প্রমাণ করে যে, আমাদের অর্থনীতির মধ্যে বৃহত্তর আন্তঃসংযোগ পরস্পরকে পুরস্কৃত করেছে এবং একে অপরের প্রবৃদ্ধিকে শক্তিশালী করেছে।’
গত দশ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দূরদর্শী নেতৃত্বে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে রূপান্তরমুখী পরিবর্তনের ঘটনাকে তার আরেকটি শক্তিশালী উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি।
হাইকমিশনার বলেন, 'আমাদের অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা এবং আমাদের যোগাযোগ সংযোগের দ্রুত অগ্রগতিতে এই রূপান্তর সবচেয়ে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান।’
তিনি বলেন, উভয় পক্ষের দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছার কারণে তারা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যোগাযোগের দৃশ্যপট দ্রুত পরিবর্তন করছে।
আরও পড়ুন: 'স্থিতিশীল, প্রগতিশীল ও সমৃদ্ধ' বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে প্রস্তুত ভারত: প্রণয় ভার্মা
হাইকমিশনার বলেন, 'আমাদের পারস্পরিক ভৌগোলিক অবস্থান এবং অভিন্ন ইতিহাস ও সংস্কৃতির মাধ্যমে আমরা আসলে আমাদের দুই দেশকে পুনরায় সংযুক্ত করছি।’
প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ ট্রেড অ্যান্ড ট্রানজিট (পিআইডব্লিউটিটি) ভারত ও বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থা ব্যবহারে পারস্পরিক স্বার্থে এগিয়ে যেতে সহায়তা করছে।
ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, 'মাইয়া-সুলতানগঞ্জ রুটটি পুনরায় চালু করা বাণিজ্য ও ভ্রমণের জন্য নৌ পরিবহনকে আরও বেশি ব্যবহারের দিকে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় সংকল্পের প্রতিফলন।’
বাংলাদেশ ও ভারত অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞানসমৃদ্ধ অর্থনীতি পরিচালিত হয়ে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ রূপান্তর করতে চায়।
২০৪৭ সালের মধ্যে বিশ্বের উন্নত অর্থনীতির কাতারে যুক্ত হয়ে 'বিকশিত ভারত' হয়ে উঠতে বদ্ধপরিকর ভারত।
হাইকমিশনার বলেন, 'উন্নয়নের এই ওভারল্যাপিং দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের নতুন ক্ষমতা এবং নতুন আকাঙ্ক্ষার উপর নির্মিত আমাদের সহযোগিতার জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করে।’
ভার্মা বলেন, কিছু গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে উন্নত বাণিজ্য ও পরিবহন বিধিবিধান এবং অবকাঠামোর পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন পরিবহন সংযোগের ফলে ভারতে বাংলাদেশি রপ্তানি প্রায় ৩০০ শতাংশ বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ ২০২৬ সালে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উত্তরণ অর্জন করেছে, আমরা বাংলাদেশকে আরও মূল্যবান অর্থনৈতিক অংশীদার হিসাবে দেখছি।’
এই নতুন প্রসঙ্গে ভার্মা বলেন, তারা শিগগিরই একটি বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সিইপিএ) নিয়ে আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছেন। এর মাধ্যমে উভয় দেশ পারস্পরিক সুবিধার জন্য একে অপরের ক্রমবর্ধমান সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সক্ষম হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সহযোগিতার সত্যিকারের সম্ভাবনাকে উন্মোচন করা অগ্রাধিকার রয়েছে। আমাদের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং উভয় দেশের মানুষের সংযোগকে একবিংশ শতাব্দীর আশা, প্রত্যাশাও রয়েছে। এছাড় আমাদের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি নতুন যুগে নিয়ে যাওয়ার মূল চাবিকাঠি হ'ল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করা। বহুমাত্রিক সংযোগের উৎসাহ দেওয়া বর্তমান নেতৃত্বের দুটি মূল অগ্রাধিকার।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি অনন্য এবং বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে যা অন্য কোনও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মতো নয় বলেও পুনর্ব্যক্ত করেন হাইকমিশনার।
তিনি বলেন, ‘এটি একটি কৌশলগত অংশীদারিত্বের চেয়ে বেশি কিছু। আমাদের সম্পর্ক অভিন্ন ইতিহাস, ভাষা, সংস্কৃতি এবং গভীর পারস্পরিক সহমর্মিতায় নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। এটির ভিত্তি অভিন্ন মূল্যবোধ এবং স্বার্থের।’
হাইকমিশনার ভার্মা বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হলো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের যৌথ আত্মত্যাগের শিকড় রয়েছে।
তিনি বলেন, 'আমাদের যোগাযোগ উদ্যোগ আমাদের জনগণ এবং আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের কল্যাণ ও মঙ্গলকে কেন্দ্র করে পারস্পরিক সহানুভূতি এবং পারস্পরিক নির্ভরশীলতার একই চেতনায় পরিচালিত।’
আরও পড়ুন: ভারতের আইটেক কর্মসূচিতে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে: প্রণয় ভার্মা