জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় প্রস্তুতি ও ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা জোরদার করতে গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর জেলার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ও পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি ঋণ চুক্তি সই করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
শনিবার (২০ এপ্রিল) ঢাকায় এই চুক্তি সই হয়। এতে সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী এবং এডিবির পক্ষে সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং এই ঋণ চুক্তিতে সই করেন।
এডিমন গিন্টিং বলেন, 'বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ও পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সহায়তা করতে এডিবির নতুন প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন এই প্রকল্প।’
এডিবির কর্মকর্তা গিন্টিং আরও বলেন, 'এই অঞ্চলে আমাদের পূর্ববর্তী সফল প্রকল্পগুলোর উপর ভিত্তি করে নতুন প্রকল্পটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উৎপাদনশীলতা আরও বৃদ্ধি করবে। একই সঙ্গে নারী ও দুর্বল গোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধি এবং টেকসই জীবিকা নির্বাহে সহায়তা করবে। এছাড়া বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গ্রামীণ এলাকায় দারিদ্র্য হ্রাস করবে।’
পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য জলবায়ু-সহনশীল সমন্বিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চরের প্রকল্পটি ৬ লাখেরও বেশি মানুষকে উপকৃত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি জলবায়ু-সহনশীল বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন এবং সেচ (এফসিডিআই) ব্যবস্থা চালু করবে এবং লবণাক্ত অনুপ্রবেশও হ্রাস করবে।
এডিবি জানায়, এফসিডিআই অবকাঠামো শক্তিশালী করতে এবং চারটি সাববেসিনের ড্রেনেজ উন্নত করতে প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান গ্রহণ করা হবে।
প্রকল্পটি সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা, পানি ব্যবস্থাপনা সংস্থার জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং অন্যান্য কমিউনিটি অবকাঠামো নির্মাণ করবে।
প্রকল্পটি স্থানীয় মালিকানা বৃদ্ধি এবং স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে অংশগ্রহণমূলক পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে উৎসাহিত করবে।
এটি সুবিধাগুলোর নকশা, নির্মাণ এবং পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে পানি ব্যবস্থাপনা গোষ্ঠীগুলোর ক্ষমতা জোরদার করবে এবং যৌথ ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে।
নারী সদস্যপদকে টার্গেট করে চারটি উপপ্রকল্প এলাকায় পানি ব্যবস্থাপনা সংগঠন গঠনে সহায়তা বাড়ানো হবে।
প্রকল্পটি পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় উন্নয়ন, পানি ব্যবস্থাপনা সংস্থাগুলোর কার্যক্রম তত্ত্বাবধান এবং এর কার্যক্রমে জলবায়ু অভিযোজন সমন্বিত করতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি সূচকের ভিত্তিতে জলবায়ু ঝুঁকির দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। বাংলাদেশ চরম আবহাওয়া এবং ধীরগতির জলবায়ু ঘটনাগুলোর ক্রমবর্ধমান পুনরাবৃত্তি এবং তীব্রতার মুখোমুখি হচ্ছে।
কার্যকর অভিযোজন ব্যবস্থার ঘাটতি, জলবায়ু পরিবর্তনশীলতা এবং গ্রামীণ সম্প্রদায়গুলো- বিশেষত যেসকল নারীরা তাদের জীবিকার জন্য জলবায়ু সংবেদনশীল কৃষি অনুশীলন এবং প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভর করে এমন চরম ঘটনাগুলোর কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষির মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় ৩০ শতাংশ হারাতে পারে।