ভারতের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশি হিসেবে বাংলাদেশের স্পর্শকাতর বিষয়গুলোতে জাতীয় সমঝোতা ও সমর্থন চেয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির রাজ্যসভায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অবস্থা সম্পর্কিত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে ভারত। পাশাপাশি তাদের সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিতে দেশের বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সংগঠনের উদ্যোগের খবরও তাদের কাছে রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
জয়শঙ্কর বলেন, ‘আমরা এটিকে স্বাগত জানাই, কিন্তু যতক্ষণ না (বাংলাদেশের) আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, ততক্ষণ স্বাভাবিকভাবেই আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন থাকব।’
কারফিউ থাকা সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীরা ঢাকায় জড়ো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই জটিল পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকেও ব্যতিক্রমী হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে 'শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক' উত্তরণ চায় জাতিসংঘ
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি এখনও বিকশিত হচ্ছে। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণে দায়িত্ব গ্রহণ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের কথা বলেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের যা বুঝেছি তা হলো, নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃশ্যত পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। খুব অল্প সময়ের নোটিশে তিনি তাৎক্ষণিক ভারতে আসার অনুমোদন চান। একইসঙ্গে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও আমরা ফ্লাইট ক্লিয়ারেন্সের জন্য একটি অনুরোধ পাই। এরপর সোমবার সন্ধ্যায় তিনি দিল্লি পৌঁছান।
গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার সঙ্গে ভারত নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
রাজ্যসভায় তিনি বলেন, বহু দশক ধরে বিভিন্ন সরকারের আমলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ব্যতিক্রমীভাবে ঘনিষ্ঠ রয়েছে। দেশটির সাম্প্রতিক সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতা সম্পর্কে রাজনৈতিকভাবে উদ্বেগ জানানো হয়েছে।
জয়শঙ্কর বলেন, ‘২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচনের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যথেষ্ট উত্তেজনা, গভীর বিভাজন এবং ক্রমবর্ধমান মেরুকরণ পরিলক্ষিত হয়েছে। জুনে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন অন্তর্নিহিত এই উত্তেজনাকেই বাড়িয়ে দিয়েছে।’
‘জুলাই মাসজুড়ে সহিংসতা অব্যাহত ছিল। এসময় সরকারি ভবন ও অবকাঠামোতে হামলার পাশাপাশি গণপরিবহন ও রেল অবরোধসহ সহিংসতা কেবল বেড়েছেই।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে অবস্থানরত নাগরিকদের জন্য ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ
এই সময়ের পুরোটাজুড়ে (বাংলাদেশের নাগরিকদের) তারা বারবার সংযমের পরামর্শ দিয়েছে এবং আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি শান্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন জানিয়ে জয়শঙ্কর বলেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, যাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ছিল, তাদের প্রতিও একই ধরনের তাগিদ দেওয়া হয়েছিল।’
‘২১ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের রায় সত্ত্বেও আন্দোলন থামেনি। বরং এরপর নেওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এই পর্যায়ে আন্দোলন একটি এক দফা কর্মসূচিকে ঘিরে একীভূত হয়, তা হলো- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ।’
তিনি বলেন, ‘৪ আগস্ট ঘটনা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। পুলিশ স্টেশন ও সরকারি স্থাপনাসহ পুলিশের ওপর হামলা তীব্র আকার ধারণ করে। একইসঙ্গে সামগ্রিকভাবে সহিংসতার মাত্রা বেড়ে যায়। সারা দেশে শাসকদলের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সম্পত্তি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হলো- সংখ্যালঘু, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মন্দিরগুলোও একাধিক জায়গায় হামলার শিকার হয়েছে। এর পূর্ণাঙ্গ ব্যাপ্তি এখনও স্পষ্ট নয়।’
জয়শঙ্কর বলেন, কূটনৈতিক মিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশে অবসিস্থত ভারতীয়দের সঙ্গে তারা ঘনিষ্ঠ ও অবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ রাখছেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে অন্তত ১৯ হাজার ভারতীয় নাগরিক রয়েছেন, যার মধ্যে প্রায় ৯ হাজার শিক্ষার্থী। হাইকমিশনের পরামর্শে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে (জুলাই মাসে) ভারতে ফিরে এসেছেন।’
তিনি জানান, কূটনৈতিক উপস্থিতির দিক থেকে ঢাকায় হাইকমিশন ছাড়াও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেটে ভারতের সহকারী হাইকমিশন রয়েছে। এটি তাদের প্রত্যাশা যে, আসন্ন সরকার এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
জয়শঙ্কর বলেন, ‘পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে আমরা সেগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করব বলে প্রত্যাশা করছি।’