আছরের নামাজ শেষে ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদে দ্বিতীয় ও শেষ জানাজা নামাজের পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাকে তার স্ত্রীর কবরের পাশে দাফন করা হয়।
তার জানাজায় ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক লুৎফর রহমান এবং অন্যান্য সিনিয়র শিক্ষকরা, বিএনপি নেতা এজেডএম জাহিদ হোসেন, খায়রুল কবির খোকন, হাবিবুর রহমান হাবিব, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এবং ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর প্রমুখ অংশ নেন।
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ উপাচার্যের প্রথম জানাজা জুমার নামাজের পর কাঁটাবন ঢাল মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। এতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে শুক্রবার সকালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।
রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালে সকাল ৬টার দিকে এমাজউদ্দীন আহমদ মারা যান বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত সচিব অমর চন্দ্র মিস্ত্রি।
তিনি জানান, প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এমাজউদ্দীন রাত আড়াইটার দিকে তার এলিফেন্ট রোডের বাসায় বুকে ব্যথা অনুভব করেন। পরে তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
অমর বলেন, হাসপাতালে ভর্তির পর অধ্যাপক এমাজউদ্দীন ভালো বোধ করছিলেন। কিন্তু ভোর সাড়ে ৪টার দিকে বমি হওয়ার পর সকালের দিকে তিনি ‘ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’-এ আক্রান্ত হন এবং পরে হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলে ও দুই মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
এমাজউদ্দীন আহমদ ১৯৩৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মালদা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ভারত ভাগের পর সপরিবারে এমাজউদ্দীন চাপাঁইনবাবগঞ্জে চলে আসেন।
তিনি রাজশাহীতে তার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেছিলেন। তিনি শিবগঞ্জের আদিনা সরকারি ফজলুল হক কলেজ এবং রাজশাহী কলেজে পড়াশুনা করেছেন।
পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেন অধ্যাপক এমাজউদ্দীন।
পড়াশোনা শেষে এমাজউদ্দীন রাজশাহী কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। কানাডার ওন্টারিওতে কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় তাকে বৃত্তি প্রদান করে এবং সেখান থেকে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পিএইচডি অর্জন করেন।
বিদেশে উচ্চতর পড়াশোনা শেষে ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
১৯৯২ সালের ১ নভেম্বর থেকে ১৯৯৬ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১তম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য ১৯৯২ সালে একুশে পদক পান তিনি।
প্রখ্যাত এ রাজনীতি বিজ্ঞানী ১৯৯৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরে যান। পরবর্তীতে তিনি ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সাথেও কাজ করেছেন এমাজউদ্দীন।
বিএনপিতে তার সরাসরি অবস্থান না থাকলেও শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সাথে তার সুসম্পর্ক থাকার কারণে তিনি বিভিন্ন সময়ে দলের অনেক কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন এবং দলের নীতি নির্ধারণে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।
গবেষণা ও সৃজনশীল লেখার জন্যে দেশ-বিদেশে সম্মানিত এমাজউদ্দীন বিএনপিপন্থী ‘শত নাগরিক’ জাতীয় কমিটির আহ্বায়কও ছিলেন।
তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান, তুলনামূলক রাজনীতি, গণতান্ত্রিক সংকট, গণতন্ত্রের ভবিষ্যত, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং জাতীয় সুরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ৫০টিরও বেশি বই রচনা করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীনের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির অন্য অনেক নেতা।
পৃথক শোক বার্তায় মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান তারা।