উৎপাদন সংস্থা থেকে কম বিদ্যুৎ পাওয়ায় অধিকাংশ বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি লোডশেডিং করতে হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা তাদের এলাকায় লোডশেডিংয়ের সময়সূচি আগে থেকেই প্রকাশ করে আসছেন। কিন্তু সরবরাহ কম থাকায় তা পালনে ব্যর্থ হয়েছেন তারা।
সরকারি সূত্র অনুযায়ী, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) প্রায় ১৬০০ মেগাওয়াটের সর্বোচ্চ চাহিদা মেটাতে ১১৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং করার পরিকল্পনা করেছিল।
ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ‘কিন্তু আমাদের পরিকল্পিত ১১৫ মেগাওয়াটের পরিবর্তে বৃহস্পতিবার ১৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করতে হয়েছে।’
উৎপাদন সংস্থা থেকে কম সরবরাহ পাওয়ায় লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বাড়াতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, সাধারণত গ্রীষ্মকালে ডিপিডিসির আওতাধীন অঞ্চলে ১৫০০ থেকে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, কম তাপপ্রবাহের সঙ্গে আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে অনুকূল থাকলে চাহিদা কিছুটা কমে।
ঢাকা শহরের দক্ষিণ-পশ্চিম, দক্ষিণ-পূর্ব, মধ্যাঞ্চল এবং নারায়ণগঞ্জের একটি অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ডিপিডিসি।
ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) আওতাধীন এলাকায় পরিস্থিতি তুলনামূলক খারাপ। কারণ পরিকল্পনার চেয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ লোডশেডিং করতে হচ্ছে সংস্থাটিকে।
ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাউসার আমীর আলী বলেন, ‘বৃহস্পতিবার মাত্র ৮০ মেগাওয়াটের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ডেসকোকে ১৮০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে।’
তিনি জানান, ডেসকোর গ্রাহক প্রধানত আবাসিক ও বাণিজ্যিক হওয়ায় সংস্থাটিকে দিনের বেলায় সর্বোচ্চ লোড সরবরাহ করতে হয়।
ডেসকো ঢাকা শহরের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম, উত্তর-পূর্ব অংশ এবং গাজীপুরের টঙ্গী এলাকার একটি অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে।
বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি), বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডব্লিউজেডপিডিসি ও নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো) সহ অন্যান্য বিতরণ সংস্থার গ্রাহকরা বিদ্যুৎ সরবরাহে প্রায় একই রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। কেননা তাদেরও সময়সূচির বাইরে লোডশেডিংয়ের ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে।
বিপিডিবির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৪ হাজার ২০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ১২ হাজার ৫৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ধারণা করা হয়। এতে ঘাটতি থাকে ১৬৩০ মেগাওয়াট।
চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ব্যবধান মেটাতে বৃহস্পতিবার ১৩৬৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং হওয়ার কথা ছিল।
তবে অধিকাংশ কর্মকর্তা ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের সরকারি পরিসংখ্যানের ওপর আস্থা নেই। কারণ তাদের বিশ্বাস ধারণার চেয়ে চাহিদা আরও বেশি।
এদিকে, বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ সংস্থার একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারের নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
সভায় বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলোকে লোডশেডিংয়ের সময়সূচি তাদের গ্রাহকদের জানাতে বলা হয়েছে।