প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে কাজ করা ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান জানান, এ নিয়ে চলতি বছর প্রায় ১৮ হাজার বাংলাদেশি সৌদি আরব থেকে ফেরত এলো। দেশে ফেরা এসব কর্মীদের বরাবরের মতো প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহযোগিতায় বিমানবন্দরে জরুরি খাবার-পানিসহ নিরাপদে বাড়ি পৌঁছানোর সহায়তা প্রদান করেছে ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচি।
শনিবার রাতে ফেরত আসাদের মধ্যে ছিলেন একই পরিবারের দুই ভাই নড়াইলের নয়ন ও শুক্কুর মোল্লা। এর মধ্যে নয়ন চার বছর আগে সৌদি গিয়েছিলেন রং মিস্ত্রির কাজ নিয়ে। মাত্র দুই মাস আগে ছোট ভাই শুক্কুর মোল্লাকে একই কাজে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দুজনকেই শূন্য হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে।
নয়নের অভিযোগ, ছোট ভাই বাজার করতে বের হলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেন। এ খবর শুনে ছুটে যান তিনি। কিন্তু কোনো কথা না শুনে সৌদি পুলিশ তাদের দুই ভাইকেই দেশে পাঠিয়ে দেয়।
ভোলার ফুয়াদ হোসেন দুবছর আগে ছয় লাখ টাকা ব্যয় করে ‘ফ্রি ভিসার’ নামে গিয়েছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে।
তিনি বলেন, ‘কাজের বৈধ অনুমোদন (আকামা) থাকার পরেও তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হলো তিনি বুঝতে পারছেন না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে কথা বললে তাকে দূতাবাস থেকে বলা হয়, ‘আপনারা এভাবে আসেন কেন? যেভাবে আসছেন সেভাবেই সমাধান করেন।’
সৌদি আরবে ১০ বছর ধরে ব্যবসা করা কিশোরগঞ্জের শোয়েব হোসেন বলেন, তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ১ লাখ ৮০ হাজার রিয়ালের সমপরিমাণ পণ্যসামগ্রী ছিল। তার আকামার মেয়াদও ছিল দুই মাস, কিন্তু কোনো কিছুই তাকে রক্ষা করতে পারেনি। সৌদিতে সব সম্পদ ফেলে শূন্য হাতে দেশে ফিরতে হলো তাকেও।
স্বপ্ন ভঙ্গের এমন নানা সব ঘটনা প্রতিদিনই বিমানবন্দরে শুনতে হচ্ছে জানিয়ে ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, সাধারণত ফ্রি ভিসার নামে গিয়ে এক নিয়োগকর্তার বদলে আরেক জায়গায় কাজ করতে যাওয়ার প্রবণতা চলছে অনেকদিন ধরে। এভাবে কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়ে অনেকেই ফেরত আসত।
‘কিন্তু এবার অনেকেই বলছেন, তাদের আকামা থাকার পরেও ফেরত পাঠানো হচ্ছে। বিশেষ করে যাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই অনেককে ফিরতে হচ্ছে, যারা খরচের টাকার কিছুই তুলতে পারেননি,’ যোগ করেন তিনি।
শরিফুল হাসান বলেন, ‘এভাবে গিয়ে লোকজন যেন প্রতারিত না হয় সেটা সবাই মিলে নিশ্চিত করতে হবে। তার আগে দূতাবাস ও মন্ত্রণালয়ের উচিত ফেরত আসার কারণগুলো সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে যথাযথ প্রতিকার করা।’