মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘স্বল্প খরচে নিরবচ্ছিন্ন দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা প্রাপ্তির প্রস্তাবনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে লেখক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ সংগঠনের দাবির সাথে একমত পোষণ করে বলেন, দেশে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় শিক্ষার্থীরা। তিনি সরকারের কর কমিয়ে ফ্রি অথবা স্বল্পমূল্যে হ্যান্ডসেটসহ সংযোগ প্রদান করতে প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিটিআরসির সাবেক চেয়ারম্যান মারগুব মোর্শেদ বলেন, কমিশন চাইলে ট্যারিফ শূন্য ঘোষণা করে তরঙ্গ বরাদ্দ দিতে পারে। তা কোনো আইনগত সমস্যা হবে না। এতে গ্রাহকরা উপকৃত হবে। সেই সাথে সকল শিক্ষার্থী মানসম্পন্ন দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা পাবে। রাষ্ট্রও পর্যাপ্ত রাজস্ব আদায় করতে পারবে।
সংবাদ সম্মেলনে সিপিবির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘কমিশনকে আমরা স্বাধীন দেখতে চাই। কমিশনের বক্তব্য সঠিক না। প্রধানমন্ত্রী বা অর্থমন্ত্রীর অনুমোদনই যদি প্রয়োজন হয় তাহলে কমিশন রেখে লাভ কী? প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আলাদা একটি সেল করেই তো কাজ চালানো যায়।’
ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র সহযোগী অধ্যাপক খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে আমরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছি। আরও অনেক আগেই সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন ছিল। দুই বা তিন বছরের চুক্তির ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মাঝে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে দ্রুতগতির ইন্টারনেটসহ হ্যান্ডসেট প্রদানে সকল প্রতিবন্ধকতা নিরসন করা উচিত।‘
সংবাদ সম্মেলনে বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ‘মজুদদার ব্যবসায়ীদের মতো আচরণ সরকারের কাছে আশা করি না। তরঙ্গ জিম্মি করে সরকার ব্যবসা করুক এটা আমরা চাই না। তাই দ্রুত জাতীয় সম্পদ তরঙ্গকে জাতীয় স্বার্থে ব্যবহার করা হোক।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, বর্তমানে করোনা মহামারিতে শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রশাসনিক, আদালত, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও দৈনন্দিন সকল কার্যক্রমের একমাত্র মাধ্যম টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা। করোনা মহামারিতে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে এ মাধ্যম। তাই প্রয়োজন পড়েছে নিরবচ্ছিন্ন দ্রুতগতির সেবার। চাহিদা বেড়েছে প্রায় ৫০ গুণ।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ইন্টারনেটর গ্রাহক বেড়ে হয়েছে প্রায় ১০ কোটি ২১ লাখ ১৩ হাজার। ডাটার ব্যবহার বেড়েছে ২৫ শতাংশ। বিপুল চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে গ্রাহক ভোগান্তিও বেড়েছে বহুগুণ। অন্যদিকে উচ্চমূল্য ও ইন্টারনেটের ধীরগতি থাকায় ৪৫ শতাংশ গ্রাহক এ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সবচাইতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের নতুন প্রজন্মের প্রায় সাড়ে ৪ কোটি শিক্ষার্থী।
তিনি বলেন, ‘অনলাইনে শিক্ষাকার্যক্রম চালানোর কথা থাকলেও ডিভাইস স্বল্পতা দুর্বল নেটওয়ার্ক ও ডাটার উচ্চমূল্য থাকার কারণে অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে ইউজিসি ডিভাইস ক্রয়ে অক্ষম শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রস্তুত করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু সড়ক তৈরি না করে গাড়ি ক্রয় করে যেমন গাড়ি ব্যবহার করা যায় না, তেমনি টেলিযোগাযোগের নেটওয়ার্কের মানোন্নয়ন না করে শুধু ডিভাইস দিয়ে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন।’
সংবাদ সম্মেলনে স্বল্প খরচে নিরবচ্ছিন্ন দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা প্রাপ্তিতে সংগঠনের পক্ষ থেকে পাঁচটি প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়। সেগুলো হলো, টেলিযোগাযোগ সেবার ওপর আরোপিত করের হার কমানো। ফাইবার অপটিক্যাল নেটওয়ার্কের যুক্তিসঙ্গত মূল্য নির্ধারণ করা। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন করা। নিরবচ্ছিন্ন দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা প্রদানে গ্রাহক অনুপাতে পর্যাপ্ত তরঙ্গ নিশ্চিত করা। সরকারের তরঙ্গের মূল্য কমিয়ে বা বিনামূল্যে প্রদান করে অপারেটরদের সাথে বিশেষ চুক্তিতে শিক্ষা, চিকিৎসা ও জরুরি প্রয়োজনের ক্ষেত্রে ফ্রি বা অধিকতর কম মূল্যে গ্রাহকদের সেবা প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা। সেই সাথে অব্যহৃত তরঙ্গসমূহ ব্যবহারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পেঁয়াজ আমদানির মতো দুই মাসের জন্য ফোর-জি ডিভাইস আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক প্রত্যাহার করে অপারেটরদের সাথে চুক্তিতে শিক্ষার্থীদের মাঝে ফ্রি অথবা ন্যূনতম মূল্যে সংযোগসহ হ্যান্ডসেট প্রদানের ব্যবস্থা করা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী আবু সালেহ, বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর ছিদ্দিক, বাংলাদেশ মোবাইল রিচার্জ ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলু, কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাবের আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।