বাংলাদেশের সংবিধান পুনর্লিখন ছাড়া রাজনীতিকরণ থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের (সিজিএস)অ্যাডভাইজরি বোর্ডের সদস্য ড. আলী রীয়াজ।
ক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রক্রিয়া ভেঙে দেওয়ার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
ড. রীয়াজ বলেন, মৌলিক বিষয়গুলো চিহ্নিত না করে তড়িঘড়ি করে কোনো নির্বাচন আয়োজন করলে তা কোনো ভালো ফল বয়ে আনবে না।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কারের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলো নিয়ে ধারাবাহিক সংলাপের ঘোষণা দিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক নীতিমালার সংস্কার না করে কাঠামোগত সংস্কার অসম্ভব। সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষায় তাদের উচিত নিজেদের একটি প্লাটফর্ম গঠন এবং বর্তমান সংগঠনগুলোর সংস্কার।
ড. রীয়াজ আরও বলেন, ভয়ের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে সব প্রতিষ্ঠানকে, একই সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে এগিয়ে না এলে তা থেকে বের হয়ে আসা প্রায় অসম্ভব।
এতে আরও উপস্থিত ছিলেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেরই গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন প্রয়োজন। একজন আবু সাঈদ দেখিয়ে দিয়েছেন, সাহস করে এগিয়ে এলে সবকিছুই অর্জন সম্ভব।
তিনি বলেন, সাংবাদিকতাকে সম্মানীয় পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। দলীয়করণের মাধ্যমে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে পঙ্গু করে ফেলা হয়েছে। সেই সঙ্গে ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, সংস্কার নয় গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের প্রতি আমাদের বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। সব রাজনৈতিক দলের উপস্থিতিতেই আমরা সবার কথা শুনতে চাই।
আরও পড়ুন: বর্তমান ‘রাজনৈতিক সংকট’ যেকোনো সময়ের চেয়ে গভীর: আলী রীয়াজ
ড. আলী রীয়াজ বলেন, ৫ আগস্ট গণঅভ্যুথানের সময় সাড়ে ৭০০ এর বেশি প্রাণহানি হয়েছে এবং দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশাল পরিবর্তন সূচিত হয়েছে।
তিনি বলেন, বিগত সময়ে তৈরি করা নীতিমালাগুলো জনগণের কল্যাণের পরিবর্তে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়েছে। ঋণ খেলাপিদের বিচার থেকে রক্ষা করা হয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে কার্যত বিপদাপন্ন করেছে।
অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে একে একে ধ্বংস করা হয়েছে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু, এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজন এবং গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় দেশকে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি, সংবিধানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। গণজাগরণের মাধ্যমে তৈরি হওয়া এই আশা ও প্রত্যাশা পূরণ করতে সরকারের ওপর বিশাল দায়িত্ব আরোপ করা হয়েছে।
সিজিএসের উদ্যোগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ আয়োজনের কথা বলেন ড. রীয়াজ। যার মাধ্যমে ভবিষ্যতের জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ প্রণয়ন করা সম্ভব হবে, যা গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করবে এবং দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।
আলী রীয়াজ জাতীয় পর্যায়ে ঢাকায় সংবিধান, মানবাধিকার ও গুরুতর আইন লঙ্ঘনের ভুক্তভোগীদের বিচার নিশ্চিতকরণ, বিচারব্যবস্থা, নাগরিক প্রশাসন, সংবিধানিক সংস্থাসমূহ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ, অর্থনৈতিক নীতিমালাসহ ব্যাংকিং খাত ও বৈদেশিক ঋণ এবং গণমাধ্যমসহ আটটি বিষয়ে জাতীয় সংলাপ করার কথা বলেন। আঞ্চলিক পর্যায়েও একই ধরনের সংলাপ আয়োজনের কথা বলেন তিনি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা ও প্রয়োজনে চাপ প্রয়োগ করতে নাগরিকদের এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরে ড. রীয়াজ বলেন, শুধু সরকারের উপর নির্ভর না করে নিজ নিজ জায়গা থেকে সবার দায়িত্ব পালন করা আবশ্যক। ভারতীয় গণমাধ্যম এখন পর্যন্ত যত অপতথ্য বা গুজব ছড়িয়েছে, তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো সত্য তথ্য, প্রকৃত তথ্য উপস্থাপন করা। তাদের অপপ্রচারণার বিরুদ্ধে সাংবাদিকদেরই এগিয়ে আসতে হবে।
আরও পড়ুন: ঢাবিতে ‘আলী রীয়াজ স্নাতকোত্তর গবেষণা পুরস্কার ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠন