সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পুরোটা হাইকোর্ট বাতিল করেননি বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেছেন, সংবিধানে জাতির জনক, সাতই মার্চসহ কয়েকটি অনুচ্ছেদ সংসদের জন্য রেখে দেওয়া হয়েছে। এসব ব্যাপারে সংসদই সিদ্ধান্ত নেবে।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) রায় ঘোষণার পর নিজ কার্যালয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এই মন্তব্য করেন।
সাংবাদিকদের অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘রিটকারীরা সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর পুরোটাই অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আদালত পুরো সংশোধনীটা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেননি। আদালত বলেছেন, পুরোটা সংবিধান পরিপন্থী বলছি না। দ্বিতীয়ত বলেছেন, সংবিধানের ৭(এ) ও ৭(বি) এই দুটো সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটি সংবিধানে ছিলোই না- এভাবে ধরে নিতে হবে।’
আরও পড়ুন: কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ দেবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন
তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করাটি আদালত অবৈধ বলেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটি বাতিল করা হয়েছে। রেফারেন্স হিসেবে আদালত বলেছেন, গত তিনটি নির্বাচন কীভাবে হয়েছে, কীভাবে গণতন্ত্র নির্বাসিত হয়েছে, কীভাবে আইনের শাসন ভূলুন্ঠিত হয়েছে, কীভাবে বিচার বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কীভাবে সংবিধানের মূল ভিত্তিতে আঘাত হানা হয়েছে- এগুলো উনারা বলেছেন। এরপর সংবিধানের ৪৪(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, সরকার ইচ্ছে করলেই যে কোন জায়গায় হাইকোর্ট বসাতে পারবেন। এটাও অবৈধ।’
‘কারণ, এটা অষ্টম সংশোধনীর রায়ে বলা হয়েছে, এখানে একটি সুপ্রিমকোর্ট থাকবে। এই একটি সুপ্রিমকোর্টকে ভেঙেচুরে টুকরো টুকরো করবেন- এর সুযোগ নেই। তৃতীয়ত, গণভোটে জনগণের যে পাওয়ার সরকার যেভাবে সংকুচিত করেছিলেন, সেটা অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করেছেন।’
‘পঞ্চদশ সংশোধনীর বাকি বিষয়গুলো নিয়ে আদালত কিছুই বলেননি। বাকি বিষয়গুলো বৈধ নাকি অবৈধ- কিছুই বলেননি। সেগুলো সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সংসদ সিদ্ধান্ত নেবে- সেগুলো রাখবে কি রাখবে না।’
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকার ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে এবং সংবিধানে জাতীয় চার মূলনীতি- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনে। একইসঙ্গে তখন সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রেখে অন্যান্য ধর্মের সমমর্যাদা নিশ্চিত করার বিধান আনা হয়। পাশাপাশি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণ, ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে।
অবৈধ ক্ষমতা দখল করলে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা ও সংরক্ষিত নারী আসন ৫০-এ উন্নীত করা এবং জাতির পিতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় ২০২১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে।
মঙ্গলবার পৃথক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া রায়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তি-সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত ৭ক, ৭খ, ৪৪ (২) অনুচ্ছেদ বাতিল ঘোষণা করেন আদালত।
আরও পড়ুন: পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারে বাধা নেই