আদালত
ধর্ষণ মামলা: ৬২ বছরে আসামি, ৮৫ বছরে খালাস
‘আমি যখন মামলার আসামি হই, তখন আমার বয়স ছিল ৬২ বছর। মনে মনে ভাবতাম আসামি হয়েই হয়তো মরতে হবে। আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া যে মৃত্যুর আগেই আমাকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।’
মঙ্গলবার দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল হবিগঞ্জ-১ এর রায়ে খালাস পেয়ে আইনজীবীর কক্ষে বসে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে কথাগুলো বলছিলেন প্রায় ৮৪ বছরের বৃদ্ধ দরছ মিয়া।
বিচারক সুদীপ্ত দাশ ধর্ষণ মামলার দায় থেকে তাকে বেকসুর খালাস দেন।
আরও পড়ুন: কলাবাগানে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ-হত্যা: দিহানের জামিন আবেদন খারিজ
তিনি বলেন, ‘কবরে যাওযার বয়সে এসে ধর্ষণের মতো একটা খারাপ মামলায় জড়িয়ে পড়ায় ছেলে মেয়ে নাতি নাতনীদের কাছে নিজেকে খুব ছোট মনে হতো।’
দরছ মিয়ার বাড়ি বাহুবলের পুটিজুরী ইউনিয়নের হরিশচন্দ্রপুর গ্রামে। পেশায় কৃষক।
তাঁর পাঁচ ছেলে চার মেয়ে। আছে ১২ জন নাতি নাতনী।
১৯৯৯ সালে ১৮ জুলাই আদালতে একটি ধর্ষণ মামলা হয় তিনিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে। মামলাটি করেন একই গ্রামের রাজা মিয়ার স্ত্রী লতিফা বিবি।
ওই মামলায় অপর দুই আসামি হলেন-দরছ মিয়ার খালাতো ভাই মঙ্গলকাপন গ্রামের বুলু মিয়া এবং একই গ্রামের জনৈক ইমান উল্লা (৩৫)।
মামলার ঘটনার সময় ১৯৩৭ সালে জন্ম নেয়া দরছ মিয়ার বয়স ছিল ৬২ বছর।
দরছ মিয়া বলেন, লতিফার স্বামী রাজা মিয়া তার এক কন্যাকে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করে। বিয়ে মেনে না নেযায় রাজা মিয়া আমার বিরুদ্ধে এর আগে মিথ্যা মামলা দিয়ে হেনস্থা করে। পরবর্তীতে তার কন্যা স্বামীর সংসার থেকে চলে আসে। রাজা মিয়া পেশায় একজন গাছচোর ও জুয়ারী ছিল।
তিনি বলেন, গ্রামের কতিপয় অসৎ লোকের সহযোগিতায় রাজা মিয়ার বর্তমান স্ত্রী লতিফা বিবি বাদী হয়ে ১৯৯৯ সালের ২১ জুলাই আদালতে ১৯৯৫ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন (বিশেষ বিধান) আইনে একটি ধর্ষণ মামলা করেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, ওই বছরের ১৮ জুলাই রাতে প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে ঘর থেকে বের হলে দরছ মিয়া, বুলু মিয়া ও ইমান আলী তাকে ধরে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেন।
২০০১ সালের ২৪ জানুয়ারি পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। মামলায় ১২ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়। মামলা চলাবস্থায় গত দুই বছর আগে আসামি বুলু মিয়া মারা যান।
দরছ মিয়া জানান, প্রায় ২৪ বছর আইনী লড়াইয়ে ১০/১২ একর জমি বিক্রি করতে হয়েছে। আমাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে বাদী লতিফা বিবি ভাল নেই। এখন স্বামী হত্যা মামলায় ছেলে জুয়েলকে নিয়ে নিজেই পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
আরও পড়ুন: বাসাইলের সাবেক ইউএনও মঞ্জুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
নাটোরে ধর্ষণচেষ্টা মামলায় বৃদ্ধের ১০ বছরের কারাদণ্ড
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ১১ মামলা: হাজিরার জন্য ১৫ মে দিন ধার্য আদালতের
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা হত্যা ও রাষ্ট্রদ্রোহ ১১টি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির তারিখ পিছিয়ে আগামি ১৫ মে ধার্য করেছেন আদালত।
সোমবার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের ২ নম্বর ভবনে স্থাপিত অস্থায়ী ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো.আছাদুজ্জামানের আদালতে মামলাগুলো শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু খালেদা জিয়ার পক্ষে অধিকাংশ মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।
এজন্য খালেদা জিয়ার আইনজীবী শুনানি পেছানোর আবেদন করেন। আদালত সময়ের আবেদন মঞ্জুর করেন এবং আগামী ১৫ মে নতুন তারিখ ধার্য করেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল এতথ্য জানান।
মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- রাজধানীর দারুস সালাম থানায় করা নাশকতার আটটি, যাত্রাবাড়ী থানার দুটি ও রাষ্ট্রদ্রোহের একটি মামলা। সব মামলার কার্যক্রম খালেদা জিয়ার পক্ষে স্থগিত করেন হাইকোর্ট।
১১ মামলার মধ্যে যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র গ্রহণের বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। অপর ১০ মামলা ছিল অভিযোগ শুনানির জন্য।
আরও পড়ুন: দুটি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ বাড়াল হাইকোর্ট
মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যে করার অভিযোগে ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাটি দায়ের করা হয়।
এদিকে যাত্রাবাড়ী থানার মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি রাতে যাত্রাবাড়ীর কাঠেরপুল এলাকায় গ্লোরি পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাসে পেট্রোল বোমা হামলা হয়। এতে বাসের ২৯ যাত্রী দগ্ধ হন। পরে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ১ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নূর আলম (৬০) নামের এক যাত্রী।
ওই ঘটনায় ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন থানার উপ-পরিদর্শক এসআই কে এম নুরুজ্জামান।
ওই বছরের ৬ মে খালেদা জিয়াসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক বশির আহমেদ।
অন্যদিকে, ২০১৫ সালে দারুস সালাম থানা এলাকায় নাশকতার অভিযোগে আটটি মামলা দায়ের করা হয়। এই আট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আসামি করা হয়।
২০১৭ সালের বিভিন্ন সময়ে মামলাগুলোয় অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। সবগুলো মামলায় খালেদা জিয়াকে পলাতক দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়। পরে খালেদা জিয়া মামলাগুলোয় আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন।
আরও পড়ুন: নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে আর কারাগারে পাঠাবে না সরকার: আইনমন্ত্রী
গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা: খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন শুনানি ২৯ জানুয়ারি
চট্টগ্রাম আদালত থেকে পালিয়ে যাওয়া আসামি গ্রেপ্তার
চট্টগ্রাম আদালত থেকে হাতকড়াসহ পালিয়ে যাওয়া আসামি শামসুল হক ওরফে বাচ্চুকে (৭১) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রবিবার (২২ জানুয়ারি) সকাল সোয়া ১০টার দিকে সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী বাস-স্ট্যান্ড থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ৩৭ পিস ইয়াবা জব্দ করার দাবি করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম।
এর আগে একটি মাদক মামলায় গ্রেপ্তারের পর ৫ জানুয়ারি বিকালে তাকে চট্টগ্রাম জেলা জজ আদালতে হাজির করলে সেখান থেকে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: প্রবাসীকে কুপিয়ে হত্যা, ১১ আসামি গ্রেপ্তার
গ্রেপ্তার শামছুল হক কুমিল্লার কালীবাজার ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর এলাকার মৃত রহমত আলীর ছেলে। থাকতেন রাজধানীর কেরানীগঞ্জ পৌরসভা এলাকায়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় সাতটি মামলা রয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন।
পুলিশ জানায়, ৪ জানুয়ারি চন্দনাইশ পৌরসভা উত্তর গাছবাড়িয়া এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিশেষ চেকপোস্ট বসায় পুলিশ। ওইদিন দুপুরে একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যাত্রীবাহী বাস থেকে এক হাজার পিস ইয়াবাসহ শামসুল হককে গ্রেপ্তার করে।
এরপর তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করে পরদিন ৫ জানুয়ারি তাকে আদালতে পাঠানো হয়।
আদালতে তাকে মাদক মামলার জিআরও শাখায় বুঝিয়ে দেয় চন্দনাইশ থানা পুলিশ।
এরপর তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালতের আদেশের পর শামসুলকে কোর্ট হাজতে রাখা হয়।
আসামিকে হাজতে রাখার পর ওইদিন সন্ধ্যায় তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য হ্যান্ডকাফ লাগানো হয়।
এরপর তাকে হাজতখানার সামনে সেরেস্তা টেবিলের পেছনে একটি বেঞ্চে বসিয়ে রাখার পর এক ফাঁকে শামসুল পালিয়ে যায়।
৫ জানুয়ারি বিকালে এ ঘটনা ঘটলে পরদিন ৬ জানুয়ারি নগরের কোতোয়ালি থানায় সদর কোর্ট পরিদর্শক জাকের হোসাইন মাহমুদ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের দায়িত্বে অবহেলা ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখতে চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল ও ডিবি) আসাদুজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করে জেলা পুলিশ।
আরও পড়ুন: ১০ বছর আত্মগোপনের পর মিরপুরে ২২ মামলার আসামি গ্রেপ্তার
রাজধানীতে সাজাপ্রাপ্ত ২ পলাতক আসামি গ্রেপ্তার
দুদকের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া ৪৭৩ নথি আদালতে দাখিলের নির্দেশ
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের শেষ পাঁচ মাসে ৪০৮টি দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধানে কোনো তথ্য-প্রমাণ না থাকায় অনুসন্ধানের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
এছাড়া ৬৩টি মামলার তদন্ত শেষে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে।
এদিকে অনুসন্ধানের পরিসমাপ্তি ঘোষিত ও চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া মোট ৪৭৩টি নথি দুদককে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এক সুয়োমটো রুলের শুনানিকালে রবিবার বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন।
আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন খুরশীদ আলম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
আদেশের পর দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত যে ৪০৮টি অনুসন্ধানের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে প্রতিটির ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিয়েছি।
তিনি বলেন, কেন অনুসন্ধান পরিসমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে তা তুলে ধরেছি। তখন আদালত এই ৪০৮টিসহ মোট ৪৭৩টি নথি দেখতে চেয়েছেন।
আমরা বলেছি, আমাদের কোন আপত্তি নেই। ১২ই ফেব্রুয়ারি এই নথিগুলো দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
এছাড়া আমরা ওইদিন অনুসন্ধান করে পরিসমাপ্তি ঘোষণা করাও চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া মোট ৪৭৩টি নথি দাখিল করবো।
আরও পড়ুন: ধানমন্ডিতে অননুমোদিত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান: চারজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় দুদক ২০২০ থেকে ২০২১ সালে অনুসন্ধান পর্যায়ে ৪১০টি অভিযোগের পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছেন এবং ৬৩টি মামলায় তদন্ত করে চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়েছেন।
তিনি বলেন, হাইকোর্ট সেই নথিগুলো দাখিল করতে বলেছেন। পত্রিকায় যে অভিযোগ এসেছে ‘দুদক অনুসন্ধান বাণিজ্য করেছেন’, সেটা জনসম্মুখে এসেছে। এই অভিযোগের একটা সুরাহা হওয়া দরকার।
এজন্য হাইকোর্ট অনুসন্ধানের পরিসমাপ্তি ঘটানো এবং চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া মোট ৪৭৩টি নথি দুদককে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এছাড়া আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে ফের শুনানি হবে।
২০২১ সালের ১৪ মার্চ দৈনিক ইনকিলাবে ‘দুদকে অনুসন্ধান বাণিজ্য’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদায়ের আগে দুর্নীতির বহু রাঘব-বোয়ালকে ছেড়ে দেন দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।
তাদের দায়মুক্তি আড়াল করতে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেন কিছু নিরীহ ও দুর্বল ব্যক্তিকে। সব মিলিয়ে শেষ পাঁচ মাসে তিনি দুই শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি (দায়মুক্তি) দেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড’ এবং ‘সফার্স’র মালিক দিলীপ কুমার আগরওয়ালাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সোনা এবং হীরা চোরাচালানের মাধ্যমে রাজস্য ফাঁকিসহ শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ছিল। এটি ‘নথিভুক্ত’ করা হয় ২৩ নভেম্বর। এটি স্বাক্ষর করেন মহাপরিচালক সাঈদ মাহবুব খান। কয়েকবার কর্মকর্তা পরিবর্তনের পর উপপরিচালক মোশাররফ হোসাইন মৃধার নেতৃত্বে একটি টিম অভিযোগটি অনুসন্ধান করে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (এফএফডি) ও সেলস ডাটা কন্ট্রোলারসহ (এসডিসি) ফিসক্যাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ইএফডিএমএস) কেনার দরপত্রে অভিজ্ঞতাহীন চীনা কোম্পানি এসজেডজেডটিকে ২৪৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকার কার্যাদেশ পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ ছিল প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
এর সঙ্গে ভ্যাট অনলাইন প্রজেক্টের ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর শামীম আরা বেগম, ডেপুটি কমিশনার মো. খায়রুল আলম ও ডেপুটি কমিশনার রাবেয়া খাতুন, এনবিআরের সদস্য ও সিস্টেম ম্যানেজার মো. শফিকুর রহমান, ভ্যাট অনলাইনের প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ মুশফিকুর রহমান, আইসিটি ডিভিশনের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট মো. নবীর উদ্দীন, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর সুমন কুমার পাটওয়ারী, বৃহৎ করদাতা ইউনিটের কমিশনার মোহাম্মদ মুবিনুল কবীর, এনবিআর-এর মূসক ও ভ্যাট নীতি মেম্বার ড. আব্দুল মান্নান শিকদার ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন।
২০১৬ সালের ১০ মার্চ ইকবাল মাহমুদ দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন।
এছাড়া ২০২১ সালের ১০ মার্চ তিনি অবসরে যান।
প্রকাশিত এই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে হাইকোর্টের উপরোক্ত বেঞ্চ ২০২১ সালের ১৬ মার্চ দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ শেষ পাঁচ মাসে কতজনকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি (দায়মুক্তি) দিয়েছেন তার তালিকা চান হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রতিবেদককে এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য আদালতে দাখিল করতে বলা হয়।
ওই আদেশ অনুযায়ী রবিবার দুদক একটি প্রতিবেদন দাখিল করে হাইকোর্টে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শেষ পাঁচ মাসে চার হাজার ৪৮১টি অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন ছিল। এই সময়ে কমিশন নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ১৫৪টি অভিযোগের বিপরীতে মামলা দায়েরের এবং সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের অভাবে ৪০৮টি অভিযোগ পরিসমাপ্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
দুটি অভিযোগ কমিশন অন্যভাবে নিষ্পত্তি করে।
এছাড়া একই সময়ে এক হাজার ৫৭৮টি মামলা তদন্তাধীন ছিল, তার মধ্যে ৫৭টি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
১৬৫টি মামলায় চার্জশীট দাখিল করা হয় এবং ছয়টি মামলা অন্যভাবে নিস্পত্তি করা হয়।
এসবের বিস্তারিত বিবরণী তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে।
আদালত প্রতিবেদন দেখে পরিসমাপ্তি ঘোষণা, অন্যভাবে নিস্পত্তি করা এবং চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া মোট ৪৭৩টি নথি দাখিলের নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন: ডিবি প্রধান ও আরও ৯জনের বিরুদ্ধে বিএনপির অভিযোগ আদালতে খারিজ
তারেক-জোবায়দাকে আদালতে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির নির্দেশ
ডিবি প্রধান ও আরও ৯জনের বিরুদ্ধে বিএনপির অভিযোগ আদালতে খারিজ
বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে ‘ভাঙচুর’ করার অভিযোগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার প্রধান হারুন অর রশীদ এবং আরও নয়জনের বিরুদ্ধে বিএনপির দায়ের করা অভিযোগ রবিবার খারিজ করে দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
এর আগে এদিন সকালে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরীর (সিএমএম) আদালতে এ অভিযোগ করেন।
আরও পড়ুন: ‘নয়াপল্টন কার্যালয় ভাঙচুর’: ডিবি প্রধান ও আরও ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের বিএনপির
তবে আদালত অভিযোগ খারিজ করে দেন বলে ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী আরমান হোসেন ইউএনবিকে জানান।
গত বছরের ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা নিহত এবং অর্ধশতাধিক আহত হন।
সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ৪৭০ বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে পল্টন ও মতিঝিল থানায় দুটি মামলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: নয়াপল্টনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ
নয়াপল্টনের ঘটনায় ৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি বিএনপির
গভীর উদ্বেগের কথা জানিয়ে আদালতের নিরাপত্তায় ১১ দফা নির্দেশনা প্রধান বিচারপতির
দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে গভীর উদ্বেগের কথা জানিয়ে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ১১ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন এতথ্য জানায়।
হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উপর্যুক্ত বিষয়ে নির্দেশিত হয়ে জানানো যাচ্ছে যে, অধস্তন সকল আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে প্রধান বিচারপতি মহোদয় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সুপ্রিম কোর্ট থেকে ইতোপূর্বে একাধিকবার দেশের প্রত্যেক আদালতের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছিল।
এতে আরও বলা হয়েছে, অধস্তন দেওয়ানী আদালতে মোকদ্দমাসমূহের নথিতে বিচারপ্রার্থী জনগণের মূল দলিল বা ডকুমেন্টসহ বিভিন্ন ধরণের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র থাকে। আদালতের হেফাজতে থাকা এসব দলিলাদি ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র চুরি বা নষ্ট হলে আদালতের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে। তাই অধস্তন সকল আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্য প্রধান বিচারপতি মহোদয় সংশ্লিষ্ট সকলকে নিম্নোক্ত নির্দেশনা প্রদান করেছেন:-
(ক) আদালত ও বিচারকের বাসভবনের সীমানা প্রাচীর সুসংহত করা।
(খ) আদালত ও ট্রাইব্যুনালের এজলাস বিভাগ, প্রতিটি ফটক ও আদালতের বাহিরে সিসিটিভি স্থাপন করা।
(গ) আদালত ভবনের বাইরে ও ভিতরে নিরাপত্তা প্রহরী দ্বারা সার্বক্ষণিক পাহারা দেয়া।
(ঘ) আদালত ভবনের দরজা ও জানালাগুলি গণপূর্ত দরজা ও জানালাগুলি নতুন করে স্থাপন করা।
(ঙ) আদালত চত্বরে পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা করা।
(চ) মামলা সংশ্লিষ্ট নথিপত্রের নিরাপদ সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা করা।
(ছ) আদালতে ব্যবহারের নিমিত্ত মানসম্মত ফার্নিচার ও লকার নিশ্চিত করা।
(জ) আদালত সীমানার চারিদিকে সিকিউরিটি পোস্ট স্থাপন করা।
(ক) জরুরি ভিত্তিতে সারাদেশের আদালত এলাকায় রাতে সার্বক্ষণিক পুলিশের টহল জোরদার করা।
(ঞ) অবকাশকালীন সময়ে আদালত ভবনের বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
(ট) প্রত্যেক আদালত ও ট্রাইব্যুনালের কর্মকালীন সময়ে পর্যাপ্ত পুলিশ প্রহরার ব্যবস্থা করা।
আজকের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে যে, উপরিউক্ত নির্দেশনাসমূহ আবশ্যিকভাবে প্রতিপালন করত দেশের প্রত্যেক আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইনজীবী সমিতির আদালত বর্জন প্রত্যাহার
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির আদালত বর্জন কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে। রবিবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল থেকে জেলা জজের আদালত ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল-১ আদালত ছাড়া সকল আদালতের বিচারিক কার্যক্রমে অংশ নেন আইনজীবীরা।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠকের পর এ কর্মসূচি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতি।
এতে করে বিচারপ্রার্থীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
তারা জানান, এতদিন কোর্ট বন্ধ থাকার কারণে তাদের অর্থ ও সময় উভয় নষ্ট হয়েছে। সেসঙ্গে তাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তবে আবারও আদালতের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হওয়ায় তাদের আর হতাশ হয়ে ফিরতে হবে না।
এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. তানভীর ভুইয়া জানান, আইনজীবীদের তিনটি দাবি মেনে নেয়ায় রবিবার থেকে আইনজীবীরা আদালতের বিচারিক কাজে অংশ নিচ্ছেন। তবে জেলা ও দায়রা জজ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারকের বদলির আগ পর্যন্ত তাদের আদালত বর্জন অব্যাহত থাকবে।
এছাড়া, নাজির মোমিনুল ইসলামকে দ্রুত সময়ের মধ্যে বদলি করা হবে।
আগামী ২৪ জানুয়ারির মধ্যে ওই দুই বিচারকসহ নাজিরকে অপসারণ করা না হলে সাধারণ সভা থেকে পরবর্তী কর্মসূচি নেয়া হবে।
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২ বিচারকসহ নাজিরের অপসারণ চেয়ে আইনজীবীদের আদালত বর্জন
এ বিষয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল বলেন, আইনজীবীরা আদালতের বিচারিক কাজে অংশ নিচ্ছেন। এতে করে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে। এছাড়া আদালতের এজলাসগুলোতে বিচারকেরা বিচারকাজ পরিচালনা করছেন।
উল্লেখ্য, গত ১ ডিসেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ আইনজীবীরা মামলা দাখিল করতে গেলে বিচারক মোহাম্মদ ফারুক মামলা না নিয়ে আইনজীবীদের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ করেন আইনজীবীরা।
এ ঘটনায় ২৬ ডিসেম্বর সমিতির সভা করে আইনজীবীরা ১ জানুয়ারি থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জনের ঘোষণা দেয়।
এদিকে বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগে ৪ জানুয়ারি কর্মবিরতি পালন করেন আদালতের কর্মচারিরা। এ অবস্থায় জেলা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ ও আদালতের নাজির মোমিনুল ইসলামের অপসারণ চেয়ে ৫ জানুয়ারি থেকে পুরো আদালত বর্জনের লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন আইনজীবীরা।
এছাড়া বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণ ও অশালীন স্লোগান দেয়ার অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ২৪ আইনজীবীকে দু’দফায় তলব করেছেন উচ্চ আদালত।
আরও পড়ুন: আইনমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতের সঙ্কট নিরসন
আদালত স্বাধীনভাবে তাদের কাজ করে: আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতের সঙ্কট নিরসন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে বিচারক ও আইনজীবীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের ঘটনায় রাজধানীতে বৃহস্পতিবার রাতে জেলা বার অ্যাসোসিয়েশন ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মধ্যে বৈঠকে আট দিন পর স্থবিরতা অপসারণ করা হয়েছে।
অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন যে রবিবার থেকে দুই বিচারপতি ছাড়া বিচারিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন তারা। তাদের তিনটি দাবি মেনে নেয়ায় রবিবার থেকে আইনজীবীরা তাদের কর্মকাণ্ডে যোগ দেবেন
তিনি আরও বলেন, জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের অপসারণ না হলে তারা আদালত বয়কট করবেন। এ ছাড়া মোহাম্মদ ফারুকের আদালতের নাজির মমিনুল ইসলামকে অপসারণ করা হবে।
আরও পড়ুন: হাইকোর্টের বিচারক নিয়োগে নতুন আইন আসছে: আইনমন্ত্রী
মফিজুর রহমান জানান যে আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করে শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেবেন তারা।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে আইনমন্ত্রীর বাসায় অচলাবস্থা নিয়ে দুই ঘণ্টা বৈঠক হয়। যেখানে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ফকির ও সাধারণ সম্পাদক আবদুন নুর দুলাল।
গত বছরের ১ ডিসেম্বর আদালতে মামলা করতে আসা আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য করেন বিচারক ফারুক। ওই মন্তব্যের প্রতিবাদে গত ২৬ ডিসেম্বর বিচারপতি ফারুকের আদালত বয়কটের ঘোষণা দেন আইনজীবীরা।
অন্যদিকে, চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি বিচারকের সঙ্গে আইনজীবীদের অসদাচরণের প্রতিবাদে আদালতের কর্মকর্তারা কর্মবিরতি পালন করেন। এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে পরদিন সব আদালত বর্জন করে লাগাতার কর্মসূচি পালন করেন আইনজীবীরা।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারকদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগে বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ২৪ জন আইনজীবীকে দুবার তলব করেন হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: আদালত স্বাধীনভাবে তাদের কাজ করে: আইনমন্ত্রী
নির্ধারিত সময়েই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবে: আইনমন্ত্রী
বিএনপির আসলাম চৌধুরীর জামিন চেম্বার আদালতে স্থগিত
ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্টের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার উৎখাতের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
একইসঙ্গে বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ৩০ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত।
আরও পড়ুন: দুদকের মামলায় বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) চেম্বার জজ আদালতের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। আসলাম চৌধুরীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আমিনুল ইসলাম।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, ৫ জানুয়ারি এ মামলায় হাইকোর্ট তাকে (আসলাম চৌধুরী) জামিন দেন। আমরা সেই জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করি। আমাদের আবেদনের শুনানি নিয়ে চেম্বার জজ আদালত সেই জামিন স্থগিত করেছেন।
এছাড়া ৩০ জানুয়ারি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদস্যের সঙ্গে ভারতে আসলাম চৌধুরী বৈঠক করেছেন। এমন খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের পর আসলাম চৌধুরীকে ২০১৬ সালের ১৫ মে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তার বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৫ মে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করে পুলিশ। মামলায় অবৈধভাবে সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়।
আরও পড়ুন: ৩২৫ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা বাতিলে আসলাম চৌধুরীর আবেদন খারিজ
বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর জামিন স্থগিত
আদালত স্বাধীনভাবে তাদের কাজ করে: আইনমন্ত্রী
বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসের হাইকোর্টের জামিনের বিরুদ্ধে সরকারের আপিলের বিষয়ে শুক্রবার আইনমন্ত্রী বলেন, সরকার বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করে না।
শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা প্রেসক্লাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আদালত স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের মুক্তিতে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।’
অ্যাটর্নি জেনারেলের বরাত দিয়ে মন্ত্রী বলেন, দুই নেতার হাইকোর্টে জামিন প্রক্রিয়ায় আইন লঙ্ঘন হয়েছে। তাই হাইকোর্টের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়।
আরও পড়ুন: দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকার প্রশংসনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে: আইনমন্ত্রী
গত ৯ ডিসেম্বর রাজধানীতে পৃথক অভিযান চালিয়ে ফখরুল ও আব্বাসকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে বিচারকের সঙ্গে অসদাচরণের বিষয়ে আনিসুল বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন, এখন হাইকোর্ট বিষয়টি তার এখতিয়ারে নিয়েছে। ‘এ বিষয়ে আমি কোনো কিছু বলব না।’
তিনি বলেন, ‘আমি ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখেছি এবং যদি এটি সত্য হয় তবে আমি লজ্জিত ও দুঃখিত। একজন আইনজীবী পরিবারের সদস্য হিসেবে আমি বিশ্বাস করি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সব আইনজীবী এ যে ঘটনা ঘটেছে তা আইনজীবীরা করতে পারেন না। আমি এটা বিশ্বাস করি না।’
বৃহস্পতিবার জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ তিন আইনজীবীকে তলব করেন বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
তলব করা ব্যক্তিরা হলেন-আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ ভূঁইয়া, সচিব (প্রশাসন) অ্যাডভোকেট মো. আক্কাস আলী ও অ্যাডভোকেট জুবায়ের ইসলাম।
এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ৪ জানুয়ারি জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ ফারুক হাইকোর্টে লিখিত অভিযোগ পাঠান। পরে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বিচারপতির লিখিত অভিযোগ হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
গত ২ জানুয়ারি আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. তানভীর ভূঁইয়া, সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মো. আক্কাস আলী এবং জুবায়ের ইসলামসহ প্রায় ১০-১৫ জন আইনজীবী এসে বিচারককে অভদ্রভাবে আদালত কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন।
অভিযোগে বলা হয়, অ্যাডভোকেট তানভীর আদালতে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
আরও পড়ুন: নির্ধারিত সময়েই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবে: আইনমন্ত্রী
চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো শেষ করাই নতুন বছরের চ্যালেঞ্জ: আইনমন্ত্রী