অবৈধভাবে পাচার হওয়া সম্পদ গচ্ছিত রাখতে সুযোগ দেওয়া দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে ওই সম্পদ প্রকৃত মালিকদের ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বিশ্বের বিদ্যমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা উন্নয়নশীল দেশ থেকে সম্পদের এই অবৈধ পাচার কার্যকরীভাবে প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে ৮০তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে (ইউএনজিএ) বক্তব্য দিতে গিয়ে এসব বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘যেসব দেশ ও প্রতিষ্ঠান এ পাচারকৃত সম্পদ গচ্ছিত রাখবার সুযোগ দিচ্ছে, তাদের আমি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন এই অপরাধের শরিক না হয়— এ সম্পদ তার প্রকৃত মালিককে অর্থাৎ কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ করদাতাদের নিকট ফিরিয়ে দিন।’
তা ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়মই বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ ট্যাক্স হেভেনে পাচার করতে সুযোগ করে দিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন অধ্যাপক ইউনূস।
তিনি বলেন, দেশের পাচার হওয়া অবৈধ সম্পদ পুনরুদ্ধার করা বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম শীর্ষ অগ্রাধিকার।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘গত ১৫ বছরে দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি ডলার অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। আমরা নিরলসভাবে এই সম্পদ ফেরত আনার চেষ্টা করছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আইনি প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার কারণে আমাদের এই প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর দৃঢ় সদিচ্ছা ছাড়া বাংলাদেশ এই সম্পদ পুনরুদ্ধার করতে পারবে না বলে মনে করেন তিনি।
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের কিছু কর্মকাণ্ডের কারণে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে: অধ্যাপক ইউনূস
তিনি উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে সম্পদ পাচার ঠেকাতে এবং পাচার হওয়া সম্পদ ফেরত আনতে শক্তিশালী আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের পর আমরা একে একে আবিষ্কার করি দুর্নীতি ও জনগণের সম্পদ চুরি কি ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছিল এবং তার ফলশ্রুতিতে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা কি ভয়ানক নাজুক ও ভঙ্গুর হয়ে পড়েছিল। আমরা এর অবসান ঘটাচ্ছি যেন আর কখনোই উন্নয়নকে জনগণের সম্পদ আত্মসাতের অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা না যায়।‘
তিনি আরও বলেন, দেশের নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মজবুত করতে তারা কঠিন হলেও প্রয়োজনীয় সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থার সংস্কার।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সংস্থাকে পৃথক করার জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে, এবং রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি পাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এসব পদক্ষেপ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এফএফডি৪ সম্মেলনে গৃহীত সেভিলা অঙ্গীকারের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ যেভাবে সেভিলা অঙ্গীকার অনুযায়ী সংস্কার বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে, সেভাবে উন্নত দেশগুলোও যেন তাদের যৌথ অঙ্গীকার পূরণ করে— এমন আশা প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক ইউনূস।
তিনি বলেন, `আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ব্যবস্থায় বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থাপনার সংস্কার, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক আন্তর্জাতিক কর সহযোগিতার বৈশ্বিক কাঠামো, অবৈধ আর্থিক প্রবাহ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সমন্বিত বৈশ্বিক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং অবৈধ ও দুর্নীতিলব্ধ অর্থ ও পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধারেও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।‘