বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিলেট মহানগর ও জেলার ১৩ উপজেলায় দুই কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার ২১৮ টাকার ত্রাণ সামগ্রী, শুকনা খাবার, শিশু খাদ্য ও গোখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া সুষ্ঠুভাবে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের জন্য হটলাইন চালু করা হয়েছে।
সোমবার সরকারি হিসাব মতে, সিলেট মহানগরসহ জেলার ১৩ উপজেলায় ১,৫৮৭ মেট্রিক টন জিআর চাল , জিআর (অর্থ) এবং প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল হতে প্রাপ্ত ৬৫ লাখ টাকাসহ মোট দুই কোটি ২৭ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, ১৭,২১৮ বস্তা শুকনা খাবার, ১০ লাখ টাকার শিশু খাদ্য এবং জন্য ১০ লাখ টাকার গোখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা: এবার ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু
এই বিষয়ে সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার আহসানুল আলম জানান, সিলেটে বিচ্ছিন্নভাবে হালকা বৃষ্টিপাত হলেও অধিকাংশ সময় আবহাওয়া রৌদ্রোজ্জল ছিল। জেলার নদও নদীর পানি হ্রাস পাচ্ছে। সুরমা নদী কানাইঘাট উপজেলায় এবং কুশিয়ারা নদী ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও অন্যান্য পয়েন্টে নদীগুলোর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সার্বিকভাবে জেলার বন্যা পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে লোকজন নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। বর্তমানে ৫৩০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪৫ হাজার ৭৯৬ জন লোক অবস্থান করছেন। ৬৯০টি গবাদিপশু রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জাহিদ মালেক সোমবার সিলেট জেলা সফর করেছেন। সফরকালে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, সিলেট সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। পরবর্তীতে সিলেট মহানগরে বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করেন।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো.মাহবুবউল আলম হানিফ সিলেট সফর করেন। দলের পক্ষ থেকে উপজেলা বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর, দক্ষিণ সুরমা ও সিলেট মহানগর এলাকার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন।
একইদিন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো.মজিবর রহমান গোয়াইনঘাট উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন।
ত্রাণ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, সিলেট সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য দপ্তর সমন্বিতভাবে কাজ করছে। সরকারি দপ্তরের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং ব্যক্তিরা ত্রাণ বিতরণ করছেন।
বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণসামগ্রী সুষ্ঠুভাবে বিতরণ নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি), সিলেটকে প্রধান করে সমন্বয় সেল গঠন এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও ত্রাণ বিতরণ সমন্বয় হটলাইন নম্বর (০১৯৭৯-০৬৭৪৫৪) চালু করা হয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে ত্রাণ গ্রহণপূর্বক বিভিন্ন উপজেলায় সুষ্ঠুভাবে তা বন্টন করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সিলেট বিভাগে বন্যায় ৭ দিনে ২২ জনের মৃত্যু: বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক
উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ সেনাবাহিনী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় প্রত্যন্ত এলাকায় তা বিতরণ করছেন। ত্রাণ বিতরণের সকল ক্ষেত্রে সুসমন্বয় রয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, সিলেট সিটি কর্পোরেশন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বন্যা উপদ্রুত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাজ করছে।
পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং ওয়াটার প্লান্টের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। ১৪০ টি মেডিকেল টিম বন্যা উপদ্রুত এলাকায় কাজ করছে।