চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়িতে বেসরকারি বিএম কন্টেইনার ডিপু বিস্ফোরণে দমকল বাহিনীর তিন কর্মীসহ ১৮ জন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। শনিবার রাতে ওই বিস্ফোরণে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীসহ কারখানার প্রায় দুই শতাধিক শ্রমিক দগ্ধ হয়েছেন।
নিহতদের মধ্যে মমিনুল হক (২৪) নামে একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তিনি বাঁশখালীর ছনুয়া মধুখালী গ্রামের ফরিদুল আলমের ছেলে। বাকীদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
জেলা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আলমগীর হোসেন ১৮ জন নিহতের বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, অনুমানিক রাত ১০টার দিকে সোনাইছড়ির কেশবপুরে অবস্থিত বিএম (প্রাইভেট) কন্টেইনার ডিপুতে (সাবেক কাসেম জুট মিলস) আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের নগরীর বিভিন্ন ফায়ার স্টেশন ও সীতাকুণ্ডের কুমিরা থেকে অন্তত আটটি গাড়ি আগুন নির্বাপণের কাজ করার সময় রাত ১১টার দিকে হঠাৎ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে সেখানে কর্মরত কয়েকশ শ্রমিক, ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও শিল্প পুলিশের সদস্যরা আহত হন। ভয়াবহ বিস্ফোরণের পরপরই আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং একের পর এক অন্যান্য কন্টেইনার বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে।
আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে অ্যালুমিনিয়াম কারখানায় বিস্ফোরণ, নিহত ১
স্থানীয়রা জানান, কন্টেইনারগুলোতে ক্যামিকেল ভর্তি ছিল। যার কারণে আগুন লাগার পর সেগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটেছে।
এদিকে ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং আহতদের নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসকারি হাসপাতালে ছুটে যায়।
এব্যাপারে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেন বলেন, বিস্ফোরণের পর পরই আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। বিস্ফোরণে অনেক মানুষ হতাহত হয়েছেন। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসতে আরও সময় লাগবে।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, রাত ১০টায় লাগা আগুন ভোর ৬টা পর্যন্ত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। প্রথমে ৮টি ফায়ার সার্ভিস ইউনিট কাজ করলেও পরে ২৪টি ইউনিট এক যোগে কাজ করেও আগুন নিয়েন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ফতুল্লায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণ: দগ্ধ ২ জনের মৃত্যু
আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন সিকদার বলেন, 'আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ডিপোতে প্রায় দেড়শো কন্টেইনার আছে। কিন্তু রাসায়নিক দ্রব্য থাকায় কন্টেইনার বারবার বিস্ফোরিত হচ্ছে। যে কারণে আগুনের কাছেও ঘেঁষতে পারছি না আমরা। প্রায় ১০০ গজ দূর থেকে নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।'
পুলিশ জানায়, বিস্ফোরণের সময় দায়িত্বে থাকা সীতাকুণ্ড থানা পুলিশের কনস্টেবল তুহিনের পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া অন্তত ৯ জন পুলিশ আহত হয়েছেন।এর মধ্যে একজন পরিদর্শক, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ও সাত জন কনস্টেবল রয়েছেন।
ভয়াবহ বিস্ফোণে ক্ষতিগ্রস্থ বিএম কনটেইনার ডিপোর মালিক শিল্প প্রতিষ্ঠান স্মার্ট গ্রুপের এমডি ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মুজিবুর রহমান।
রাতে এক বিবৃতিতে বিএম কন্টেইনার ডিপোর পরিচালক মুজিবুর রহমান বলেন, কী কারনে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে কন্টেইনার থেকেই আগুন ধরেছে বলে ধারণা করছি। নৈতিকতা ও মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে হতাহতদের পাশে থাকব আমরা। আহতরা যাতে সর্বোচ্চ চিকিৎসা পায় সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ফতুল্লায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ১০জন দগ্ধ
তিনি বলেন, চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার আমরা বহন করবো। এ দুর্ঘটনায় যারাই হতাহত হয়েছে তাদেরকে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরন দেয়া হবে। পাশাপাশি সকল হতাহতের পরিবারের দায়িত্ব নেয়া হবে। প্রশাসন যেভাবে সিদ্ধান্ত দিবে সেভাবেই সহায়তা করা হবে।