প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহযোগিতায় বরাবরের মতো এদিনও ফেরত আসা বাংলাদেশিদের ব্র্যাক অভিবাসন প্রোগ্রাম থেকে জরুরি সহায়তা প্রদান করা হয়।
সৌদি আরব থেকে ফেরা ২২৪ জনের মধ্যে শনিবার রাত ১১টা ২০ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইন্সের বিমানযোগে ১০৮ জন, তার আগে দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে সৗদি এয়ারলাইন্সের অপর বিমান যোগে জেদ্দা থেকে ফেরেন আরও ১১৬ জন। এ নিয়ে চলতি বছরের প্রথম ১৮ দিনে এক হাজার ৮৩৪ জন বাংলাদেশি সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরলেন।
বরিশালের আগৈলঝরা উপজেলার শামিম (৩০) জানান, মাত্র তিন মাস আগে তিন লাখ টাকা খরচ করে সৌদি আরব গিয়েছিলেন ড্রাইভিং ভিসা নিয়ে। সেখানে দুই মাস কাজ করলেও কোন বেতন পাননি। পরে মালিককে (কফিল) বারবার অনুরোধ করলে তিনি অন্য জায়গায় কাজের ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু সেখানে কর্মরত অবস্থায় পুলিশ তাকে আটক করেন।
নরসিংদীর মো. মিন্টু মিয়া চার লাখ টাকা খরচ করে পাঁচ মাস আগে ক্লিনারের কাজ নিয়ে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে কাজ শেষে বাসায় ফেরার সময় পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। আকামা (কাজের অনুমতি পত্র) দেখানোর পরেও তাকে দেশে ফিরতে হয়।
পটুয়াখালীর শাহিন সরদার, ময়মনসিংহের মো. আশরাফুল, মো. সুমন ও শফিক, নরসিংদীর সালাউদ্দিন, মানিকগঞ্জের আমিনুল, মুন্সিগঞ্জের মামুন কবিরসহ আরও অনেকেই ফিরেছেন যাদের এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ফিরতে হলো।
ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান জানান, দেশে ফেরত আসা কর্মীরা বরাবরের মতো অভিযোগ করেছেন, তাদের প্রত্যেককে নানা স্বপ্ন দেখিয়েছিল দালাল ও রিক্রটিং এজেন্সি। কিন্তু সৌদি আরবে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়েন তারা। অনেকে বেতন পাননি। অনেকে সৌদি আরবে যাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে ফেরত এসেছেন। তারা সবাই ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায়।
শরিফুল হাসান আরও জানান, গত বছরে (২০১৯) ২৫ হাজার ৭৮৯ বাংলাদেশিকে সৌদি আরব থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। নতুন বছরের শুরুর ১৮ দিনে এক হাজার ৮৩৪ জন বাংলাদেশি ফিরলেন দেশটি থেকে। ফেরত আসাদের বর্ণনা প্রায় একইরকম। প্রায় সবাই খালি হাতে ফিরেছেন। কয়েকমাস আগে গিয়েছিলেন এমন লোকও আছেন।
প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে মোট ৬৪ হাজার ৬৩৮ কর্মী দেশে ফিরেছেন। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে ২৫ হাজার ৭৮৯ জন, মালয়েশিয়া থেকে ১৫ হাজার ৩৮৯ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ছয় হাজার ১১৭ জন, ওমান থেকে সাত হাজার ৩৬৬ জন, মালদ্বীপ থেকে দুই হাজার ৫২৫ জন, কাতার থেকে দুই হাজার ১২ জন, বাহরাইন থেকে এক হাজার ৪৪৮ জন ও কুয়েত থেকে ৪৭৯ জন।
শরিফুল হাসান বলেন, ‘কেউ যখন বিদেশে যান তখন পরিবার স্বজন সবাই খুশি হন। কিন্তু ফেরত আসা মানুষগুলোর পাশে থাকেন না। এমনকি পরিবারের সদস্যরাও তাদের নানা কটু কথা বলেন। অথচ এই সময় তাদের পাশে সবার দাঁড়ানো উচিত।’
‘ফেরত আসা প্রবাসীদের আমরা শুধু বিমানবন্দরে সহায়তা দিয়েই দায়িত্ব শেষ করছি না, তারা যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেজন্য কাউন্সিলিং, দক্ষতা প্রশিক্ষণ ও আর্থিকভাবেও পাশে থাকার চেষ্টা করছি। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা সবাই মিলে কাজটি করতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।
তবে ফ্রি ভিসার নামে প্রতারণা বন্ধ করা উচিত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এভাবে যেন কাউকে শূন্য হাতে ফিরতে না হয় সেজন্য রিক্রুটিং এজেন্সিকে দায়িত্ব নিতে হবে। দূতাবাস ও সরকারকেও বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে হবে।’